বায়োলজির রহস্য - ১


আশা করি সবাই ভাল আছো।আর ভাল না থাকলে দোয়া করি আল্লাহ যেন ভাল করে দেয়।
এই পোস্ট এ আমি বায়োলজির, স্পেশালি জুলজির কিছু ব্যাসিক নিয়ে আলোচনা করব।ব্যাসিক বলতে আসলে ব্যাসিক না।মূলত বায়োলজি কীভাবে ইজিলি আয়ত্ব করা যায় সেইটা নিয়েই বলব।
মূল কথায় আসা যাক। বিজ্ঞান রিলেটেড সব সাবজেক্ট এর মূল (Root) মূলত গ্রীক বা ল্যাটিন অথবা ইংরেজিতে রুপান্তরিত । So, science subject গুলো আয়ত্ব করার ক্ষেত্রে আমরা যদি ঐসব গ্রীক / ল্যাটিন শব্দগুলোর রহস্য উদঘাটন করতে পারি তাহলেই, একদম সব সহজ হয়ে যাবে।
এবার তাহলে চলো এরকম কতগুলো শব্দ নিয়ে ঘাটাঘাটি করি।
(বি.দ্র: পোস্ট টি পড়ার সময় আজমল স্যার এর জুলজি বইটি পাশে রাখলে ভাল হবে)
--------
শব্দঃ
১. Hypoglossal --- জিহ্বা সংলগ্ন। Hypo এর মানে কম, নিচে, সংলগ্ন ইত্যাদি। আর glossal শব্দটি আসছে -glosso- মূল শব্দ থেকে যার মানে জিহ্বা বা জিহ্বা সমন্ধীয়। এখন যদি বলি হাইপোগ্লোসাল করোটিক স্নায়ুর কাজ কি? হুম, ঠিক ধরেছ।জিহ্বা সমন্ধীয় কিছু হবে। তাইনা? আচ্ছা , দেখো, হাইপো মানে ত নিচে। জিহ্বার নিচে কি থাকে? গলা যাকে বই এর ভাষায় বলে গ্রীবা (neck) । তার মানে হাইপোগ্লোসাল স্নায়ুর বিস্তার জিহ্বা ও গ্রীবায় এবং কাজ হচ্ছে জিহ্বার বিচলন।
২. একই ভাবে Glossopharyngeal শব্দকে ভাঙ্গলে পাব glosso মানে জিহ্বা এবং pharynx থেকে pharyngeal ।ফ্যারিংস মানে গলবিল । অতএব glossopharyngeal স্নায়ুর বিস্তার জিহ্বা এবং গলবিল এ । যার কাজ হচ্ছে জিহ্বা এবং গলবিলের সন্চালন ও স্বাদ গ্রহন। এজ সিম্পল এজ দ্যাট।
৩. Myofibril ( মায়োফাইব্রিল কে ভাংলে প্রিফিক্স পাওয়া যাবে মায়ো এবং বাকি শব্দ ফাইব্রিল । মায়ো শব্দের মানে muscle বা পেশি / পেশি সমন্ধীয়। আর ফাইব্রিল ত তন্তু জানোই। অর্থাৎ মায়ো ফাইব্রিল মানে পেশিতন্তু।অতএব মায়ো রিলেটেড সবকিছুই পেশির সাথে সম্পৃক্ত।
৪. মায়োসিন ( Myosin) । বুঝতেই পারতেছ এইটা কি। এইটা হচ্ছে পেশি প্রোটিন। প্রোটিন বুঝলাম কিভাবে? ৩ য় অধ্যায়ে ট্রিপসিন এনজাইম এর নাম পড়ছিলা না? হুম এনজাইম গুলোই প্রোটিন। নামের শেষে ইন, সিন থাকলে এইগুলা প্রোটিন।আরেহ প্রোটিন শব্দের শেষেই ত ইন আছে। 
এরকম শব্দের খেলা বুঝে গেলেই পড়ালেখা তোমার হয়ে যাবে।

৫.Osteocyte- এই শব্দটির অর্থ হচ্ছে অস্থিকোষ। উহু। মুখস্থ করতে হবে না। চলো শব্দটাকে নাড়াচাড়া করে দেখি। Osteocyte এর দুটি অংশ। Osteo এবং Cyte . Osteo এই root word টির অর্থ হচ্ছে অস্থি বা অস্থি সমন্ধীয়। আর cyte মানে কোষ। অতএব অস্টিওসাইট মানে অস্থিকোষ।
চলো অরেকটু ডিপলি গবেষণা করি।
বলতো, osteoblast,osteoclast এগুলো কি? এগুলো ও অস্থিকোষ। Osteo দেখেই বুঝে গেছি।
৬. আচ্ছা এখন বলো তাহলে অস্থির আবরনকে কি বলে? নিশ্চই ভাবছ osteo related কিছু হবে। হুম। অস্থির আবরনকে periosteum বলে। দেখো এইখানে osteo root word এর সাথে prefix হিসেবে peri (পেরি) যুক্ত হয়েছে। পেরি মানে বাইরের পৃষ্ট বা সারফেইস বা স্তর বা আবরন। তাই Periosteum মানে অস্থির আবরন।মুখস্থ করা লাগবে আর?
৭. -Chondro- এই Root শব্দটির অর্থ হচ্ছে তরুনাস্থি সমন্ধীয় সবকিছু। এখন যদি এর সাথে cyte যোগ করি, তাহলে হবে chondrocyte- মানে তরুনাস্থিকোষ। যদি Root word এর সাথে peri যোগ করি তাহলে হবে Perichondrium যার মানে তরুনাস্থির আবরন। ব্যাপারগুলো সহজ না অনেক?
আবার তরুনাস্থির ম্যাট্রিক্স বা মাতৃকা chondrin এ গঠিত। কন্ড্রিন হবে না ত কি হবে! আচ্ছা বলতো কন্ড্রিন কোন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ? আমিই বলে দিচ্ছি । কন্ড্রিন হচ্ছে প্রোটিন। আগের পোস্ট এ বলেছিলাম, -ইন , সিন, যুক্ত শব্দগুলো প্রোটিন ই হয়। প্রশ্ন করবা না কেন এগুলোর নামের শেষে -ইন, সিন এরকম হয়।। শোনো তাহলে , প্রোটিন গঠিত হয় এমিনো এসিড থেকে। আচ্ছা, কয়েকটা এমিনো এসিডের নাম বলো। ফিনাইল এলানিন, লিউসিন এইগুলোইত, তাই না? দেখ এইগুলোর নামের শেষে ও ইন , সিন আছে।
এখন কি প্রশ্ন করবা, ভাইয়া অ্যামিনো এসিডের নামের শেষে ইন, সিন কেন হয়? আমার প্রশ্ন তোমার আব্বু আম্মু তোমার নাম রহিম করিম রাখছে কেনো।
৮. Pericardium - এটি হচ্ছে হৃৎপিন্ডের আবরন। উপরে বলেছি পেরি মানে বাইরের পৃষ্ঠ বা আবরন। আর Cardio- মানে হৃৎপিন্ড সংক্রান্ত।তাই পেরিকার্ডিয়াম মানে হৃদয়ের আবরন
১০. Myocardial Infarction ( মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন)---যাইহোক, চলো শব্দটাকে বিশ্লেষণ করি। আগেও বলেছিলাম Myo- root word এর মানে Muscle/Muscle related বা পেশি। তাই Myocardial মানে হৃৎপেশি(যেহেতু Cardio- মানে হৃৎপিন্ড সংক্রান্ত)। আর Infarction মানে হচ্ছে টিস্যুর মৃত্যু বা অকার্যকারিতা ( বিশেষ করে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহের অভাবে)। যদি টিস্যু কাজ না করে তাহলে পেশি ও কাজ করবে না। অতএব তখন হৃৎপিন্ড ও কাজ করবে না। আর এটাকেই আমরা বলি Heart Attack বা Myocardial Infarction. এইটা একটু কঠিন হয়ে গেছে তাই না? ব্যাপার না!
১১. Bicuspid – বাইকাসপিড কপাটিকা; Bi মানে ত ২ ,সবাই জানি। এবার আসি –cuspid নিয়ে। cuspid এর Origin হচ্ছে latin word Cuspidem/ -cusp থেকে।এর অর্থ হচ্ছে Parts বা অংশ। তাহলে বলতো Bicuspid valve মানে কি? বাই দ্যা ওয়ে ভাল্ভ মানে কিন্তু কপাটিকা, সোজা বাংলায় যাকে বলে দরজা বা জানালা। সুতরাং Bicuspid Valve মানে দ্বিপত্রী কপাটিকা। মনে রাখবা এর অপর নাম Mitral valve বা মাইট্রাল কপাটিকা।
এখান থেকে প্রশ্ন আসতে পারে বাইকাসপিড কপাটিকা /মাইট্রাল কপাটিকা কোথায় থাকে? উত্তর হবে বাম অলিন্দ নিলয়ের মাঝে ।
মনে রাখবা কিভাবে?* দেখো ব তে বাম, ব তে বাইকাসপিড, মনে থাকবে ত?
১৩. Granulocyte ( গ্রানুলোসাইট); চলো শব্দটাকে নিয়ে গবেষণা করি। প্রথমে ২ টি অংশ পাব। Granule এবং Cyte. মনে আছে Cyte – মানে কি ? হুম cyte মানে কোষ। এবার আসি Granule এ, latin granulum থেকে এটি এসেছে। granule এর root word হচ্ছে Grain. কেউ কি বলতে পারবা grain মানে কি? Grain মানে হচ্ছে দানা বা দানা জাতীয়। আর –ule হছে একটা suffix , যার অর্থ খুব ছোট বা খুদ্র। (আচ্ছা তোমাদের মনে আছে Lobule শব্দটা কোথায় পড়ছিলা? হুম অনেক জায়গায়, বিশেষ করে ফুসফুস, যকৃত এ। আসলে lobe মানে খন্ড, তাহলে lobule কি হবে কমেন্ট এ জানাও।) । অতএব Granulocyte হছে অতি খুদ্র দানাদার কোষ।
১৪. Agranulocyte; A-,An- এই prefix গুলোর মানে negative, মানে নাই বা না। তাহলে Agranulocyte কি হবে তোমরাই বলো।
এখন কথা হচ্ছে Granulocyte আর Agranulocyte মনে রাখব কিভাবে?
চলো দেখি কিভাবে মনে রাখতে পারি,
*নাম বড় যার সংখ্যা কম তার, আর নাম ছোট যার সংখ্যা বেশি তার*
Agranulocyte নামটা বড় , তাই এরকম কোষের সংখ্যা কম ;২টি। এগুলো হলো Lymphocyte আর Monocyte.
দেখো ২ টার নামের শেষেই cyte আছে। cyte থাকলেই Agranulocyte.
আবার Granulocyte নামটা ছোট, তাই এরকম কোষের সংখ্যা বেশি;৩ টি। যথাঃ ইওসিনোফিল, বেসোফিল, নিউট্রোফিল। খেয়াল করো সব গুলোর শেষেই ফিল(phil) আছে। মনে থাকবে ত?


Sayed Faysel Ahammad Rajo

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম