ব্যাক্টেরিয়া জিনিসটা সবসময়ই আমাকে খুব attract করে থাকে। আমার কাছে মনে হয় জীববিজ্ঞানের অন্য কোনো টপিক ভালো না লাগলেও ব্যাকটেরিয়া নিয়ে পড়াশোনা করলে কেউ বোরড হবে না। আর স্ত্রীরা যদি অর্ধাঙ্গিনী হয়, তাহলে ব্যাকটেরিয়ারা একদশমাংশীনি, হ্যা। কারণ আমাদের শুষ্ক ভরের (শরীর থেকে পানি অপসারণ করলে যে পরিমাণ ভর অবশিষ্ট থাকে) ১০% ব্যাক্টেরিয়া। অর্থাৎ আপনার ওজন যদি 70kg হয় তাহলে আপনার শরীরে 7kg ব্যাক্টেরিয়া বসবাস করছে।
তাছাড়া প্রতিটা হিউমেন সেল এর বিপরীতে ২০ টি ব্যাক্টেরিয়া(এককোষী) থেকে থাকে।
ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে জানার আগে একটা কুইজ হয়ে যাক।
আমরা জানি যে সালোকসংশ্লেষণের সময় গাছ অক্সিজেন তৈরি করে। আবার শ্বসনের সময় গাছ অক্সিজেন গ্রহণ করে। আর আমরা প্রাণীরা তো শ্বসনে অক্সিজেন নিয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড ত্যাগ করছিই। তাহলে বায়ুমন্ডলে কিভাবে অক্সিজেনের ভারসাম্য রক্ষা পাচ্ছে??
চলুন আগানো যাক। ওহ, বাই দ্যা ওয়ে, এই যে আমার লেখাটি আপনি যেই ফোনে পড়ছেন, সেই ফোনের স্ক্রিণে আপনার টয়লেট সিটের থেকে প্রায় ১০গুণ বেশি ব্যাক্টেরিয়া(E-coli, স্টেপট্রোকক্কাস, স্টেফাইলোকক্কাস, ফ্লু ইত্যাদি) আছে (Ref. University of Arizona)
ব্যাক্টেরিয়া সম্পর্কে প্রথমেই যা জানা দরকার তা হচ্ছে ব্যাক্টেরিয়ার গঠন। ব্যাক্টেরিয়া একটি আদিকোষী (Prokaryotic) জীব। আদিকোষীদের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এদের কোষে শুধু রাইবোসোম, আর কিছু বিচ্ছিন্ন DNA অণু (ক্রোমোজোম) থাকে। ব্যাক্টেরিয়া দেখতে অনেক ছোট। সাধারণত ০.২-০.৫ মাইক্রোমিটারের হয়ে থাকে (ব্যাক্টেরিয়া নামটিই এসেছে গ্রীক শব্দ Bakterion = little rod থেকে)। ব্যাক্টেরিয়ায় যে দ্বিসূত্রক DNA অণু থাকে সেটিই ব্যাক্টেরিয়ার বংশগতীয় উপাদান। ব্যাক্টেরিয়া বাইনারি ফিশন বা দ্বিবিভাজন (অনেকটা এমাইটোসিস এর মতো) পদ্ধতিতে বংশ বিস্তার করে। ব্যাক্টেরিয়া যেকোনো পরিবেশে মানিয়ে নিতে সক্ষম। তাই ব্যাক্টেরিয়া প্রকৃতির অনেক প্রাচীন একটি জীব। এছাড়াও ব্যাক্টেরিয়া অন্য কোনো প্রাণির সাথে সহজেই মিথোজীবিতা স্থাপন করতে পারে।
ব্যাক্টেরিয়ার গঠন সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার পর ব্যাক্টেরিয়ার কোষীয় গঠন ও এর স্বভাব বৈশিষ্ট্য নিয়ে জানা যাক।
ব্যাক্টেরিয়া এককোষী জীব। এককোষী জীবদের গঠন খুবই সরল, আসলে একটি সাধারণ কোষের গঠনের মতো।
>>১) কোষপ্রাচীরঃ ব্যাক্টেরিয়াম( ব্যাক্টেরিয়ার একবচন) এর কোষকে ঘিরে একটি জড় কোষপ্রাচীর থাকে। এই জড় কোষপ্রাচীর থাকে বলে ব্যাক্টেরিয়া উদ্ভিদের সাথে মিল সম্পন্ন। এই কোষপ্রাচীর মূলত একপ্রকার কার্বোহাইড্রেট পলিমার "পেপটিডোগ্লাইকান" দ্বারা গঠিত। গ্রাম স্টেইনিং দ্বারা ব্যাকটেরিয়াকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। গ্রাম পজিটিভ ও গ্রাম নেগেটিভ। গ্রাম স্টেইনিং এর সময় ব্যাক্টিরিয়াকে কিছু প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।তাদের উপর রঞ্জক প্রয়োগ করা হয়।প্রথমে ক্রিস্টাল ভায়োলেট ও পরে স্যাফ্রানিন রঙ প্রয়োগ করা হয়( প্রসেসটা আরো জটিল)শেষ পর্যন্ত যেসব ব্যাক্টেরিয়া ভায়োলেট রঙ ধরে রাখতে পারে তারা গ্রাম পজিটিভ। আর যেসব ব্যাক্টেরিয়া ভায়োলেট রঙ ধরে না রেখে লাল স্যাফ্রানিন রঙ ধরে রাখবে তারা গ্রাম নিগেটিভ ব্যাক্টেরিয়া।কিছু ব্যাক্টেরিয়ায় পেপটিডোগ্লাইকানস স্তরটি বেশ পুরু থাকে। তাই তারা ক্রিস্টাল ভায়োলেট রঙ ধরে রাখতে পারে। আর যেসব ব্যাক্টেরিয়ার পেপটোগ্লাইকান স্তরটি অনেক পাতলা। তাই তারা ভায়োলেট রঙ ধরে রাখতে পারে না। এই গ্রাম স্টেইনিং চিকিৎসাবিজ্ঞানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পেনিসিলিন জাতীয় ঔষধ গ্রাম পজিটিভ ব্যাক্টেরিয়ার পেপটোগ্লাইকান উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করে। আর স্ট্রেপ্টোমাইসিন, টেট্রাসাইক্লিন জাতীয় ঔষধ গ্রাম নিগেটিভ ব্যাক্টেরিয়ার প্রোটিন সংশ্লেষণ বন্ধ করে দিয়ে ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করে। তাই বুঝাই যাচ্ছে ব্যাক্টেরিয়ার কোষ প্রাচীর সম্পর্কে জানা ও গ্রাম স্টেইনিং কতোটা গুরুত্বপূর্ণ!
>>২) স্লাইম স্তরঃ এটি কোষপ্রাচীররের বাইরে থাকে। সাধারণত কার্বোহাইড্রেট বা পলিপেপটাইড দিয়ে গঠিত। প্রতিকূল অবস্থায় ব্যাক্টেরিয়াকে রক্ষা করাই এর কাজ।
>>৩) প্লাজমামেমব্রেনঃ এটি কোষপ্রাচীরের নিচের স্তর। এটি এক পর্দা বিশিষ্ট স্তর। ফসফোলিপিড আর প্রোটিন নিয়ে গঠিত। এই পর্দায় পকেটের মত অনেক খাঁজ দেখা যায়।
এই খাঁজ কে মেসোজোম বলে প্লাজমামেমব্রেনে ফসফোরাইলেটিক এনজাইম থাকায় এখানে কিছু ATP তৈরি হয়।
>>৪) ফ্লাজেলাঃ ফ্ল্যাজেলিন নামক প্রোটিন দ্বারা ফ্ল্যাজেলা গঠিত ।ব্যাক্টেরিয়ামে এক বা একাধিক ফ্ল্যাজেলা থাকতে পারে। এটি ব্যাকটেরিয়াকে চলাচলে সাহায্য করে।
>>৫) পিলিঃ কিছু গ্রাম নিগেটিভ ব্যাক্টেরিয়ায় চুলের মতো অংশ থাকে। এই অঙ্গকে পিলি বলে।পিলিন নামক প্রোটিন দিয়ে তৈরী। কোন বস্তুর সাথে আটকে থাকতে সাহায্য করে।
>>৬) সাইটোপ্লাজমঃ ব্যাকটেরিয়ার সাইটোপ্লাজম বর্ণহীন ও স্বচ্ছ। এতে শর্করা, চর্বি, প্রোটিন জাতীয় খাদ্য উপাদান থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এক ধরনের t-RNA ও দেখা যায়। সাইটোপ্লাজমে অবস্থিত উল্লেখযোগ্য অঙ্গাণু হলো মুক্ত রাইবোজোম ও পলি রাইবোজোম।সাইটোপ্লাজমে মুক্ত রাইবোজোম একসাথে অবস্থান করে না। যদি কখনো একসাথে অবস্থান করে তখন এদের পলিরাইবোজম বলে। এরা প্রোটিন ও RNA দিয়ে তৈরী। প্রকৃত কোষ থেকে ব্যাকটেরিয়ার রাইবোজম ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। কারন, এতে শুধু মাত্র 70S রাইবোজম দেখা যায়। কিছু ব্যাক্টেরিয়া সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে। তাদের সাইটোপ্লাজমে ক্রোম্যাটোফোর থাকে। নতুন তরুণ ব্যাক্টেরিয়ার সাইটোপ্লাজমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানাদার ভলিউটিন থাকে। পরিণত অবস্থায় এসব ভলিউটিন মিলে কোষ গহব্বর গঠন করে।
>>৭) ক্রোমোসোমঃ ব্যাকটেরিয়ার কোষের নিউক্লিয়ার বস্তুকে নিউক্লিওয়েড বলে। এটির কোন নিউক্লিয়ার মেমব্রেন, নিউক্লিওলাস থাকে না। শুধু মাত্র ক্রোমোসোম বা DNA থাকে। এটি একটি দ্বিসূত্রক DNA। সাইটোপ্লাজমের DNA সমৃদ্ধ অঞ্চলকে নিউক্লিয়য়েড বলে।
>>৮) প্লাসমিডঃ বহু ব্যাকটেরিয়ায় নিউক্লিয়ড ছাড়াও আরেক ধরণের বড় বৃত্তাকার DNA অণু থাকে। এই DNA অণু স্ববিভাজনসক্ষম ও এতে কিছু সংখ্যক জিন থাকে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফিল্ডে এই প্লাজমিডের অবদান অনস্বীকার্য! আমাদের প্রয়োজনীয় জিন এই প্লাজমিডে যুক্ত করে ব্যাক্টেরিয়া কালচার করা হয়। তারপর সেই জিনের কারণে ব্যাকটেরিয়া আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদন করে। এভাবেই কৃত্রিম ইনসুলিন তৈরি করা হয়( বিষয়টা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং টপিকের তাই বিস্তারিত আলোচনা করিনি)। তবে, এই প্লাজমিডের জন্যই ব্যাক্টেরিয়ার অনেক ভ্যারাইটি তৈরি হয়( অন্য পর্বে বিস্তারিত আলোচনা হবে)
Writer: Ishrak Hamim Mahi
Tags:
Biology