ইদানিং মর্গ থেকে প্রায়ই লাশ গায়েব হয়ে যাচ্ছে।হাসপাতাল কমিটি প্রথম প্রথম এটা দারোয়ানের দোষ মনে করত।
- "মনে হয়,দারোয়ানের গাফিলতির কারনেই কেউ লাশ চুরি করেছে।"
কিন্তু দারোয়ান পাল্টানোর পর সেম কাজ ঘটে যাচ্ছে।ব্যাপারটা অদ্ভুত। এ নিয়ে ১১৩ টা লাশ গায়েব হয়ে গেছে।তবুও পুলিশ আর ইনভেস্টিকেশন ব্যুরো কিছুই করতে পারছে না।তারা যে নাকে তৈল দিয়ে ঘুমাচ্ছে সেটাও নয়। মূল কথা হলো,তারা কোন ক্লু পাচ্ছে না।বাধ্যহয়ে কমিশনার ফখরুল সাহেব হেনা ভাই কে ডাকলেন।উনাকে সবাই ডাকে ডিটেকটিভ হেনা ভাই।হেনা নামটা অনেকটা মেয়েলি মনে হলেও সেটা যে একটা পুরুষের নাম অনেকে বিশ্বাসি করতে পারেন না।অবশ্য এটা নিয়ে কোন মাথাব্যাথাও নেই হেনা ভাইয়ের।
রাত ১০ টা। সিএনজি থেকে নামলেন হেনা ভাই।বোচকা-বুচকি নিয়ে পায়রার খোপের মতো একটা হোটেলে ঢুকলেন।এসিপি হারুন হেনা ভাইকে ফুলের তোরা দিয়ে অভ্যর্থ্যনা জানালেন।কিন্তু হেনা ভাই সেটা নিলেন না।ফুলে তার এ্যালার্জি আছে।এসিপি হারুন হেনা ভাইকে বললেন,
- স্যার,তোরাটা?
- ফুলে আমার এ্যালার্জি আছে
- ওহহহ
এসপি হেনা ভাইকে আর কিছু বললেন না।হেনা ভাই হনহন করে হোটেলের ভিতরে ঢুকলেন।হারুনের কাছ থেকে চাবি নিয়ে রুমে ঢুকে একটু ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলেন তিনি।হেনা ভাই খুব চুপচাপ স্বভাবের।কোলাহল তার পছন্দ নয়।ওদিকে এসিপি হারুন হেনা ভাইয়ের প্রতি প্রচন্ড বিরক্ত।এমন গম্ভীর মানুষ তিনি কখনো দেখেন নি।ডিটেকটিভ বলে এতো ভাব নাকি? এসিপি হারুন হেনা ভাইকে নিয়ে অহেতুক নিন্দায় মেতে উঠলেন।
হেনা ভাইয়ের খাওয়া শেষ।ব্যাগ থেকে সিসি টিভি ফুটেজ গুলো বের করলেন।এগুলো তাকে কমিশনার স্যার দিয়েছে।হাসপাতালের ফুটেজ।ল্যাপটপে চালিয়ে দেখতে লাগলেন সিসি টিভি ফুটেজ।অনেক্ষন ধরে দেখার পরও কোন ক্লু পেলেন না তিনি।মন খারাপ করে করে বসে থাকলেন তিনি।আজ তার স্ত্রীর সাথে চরমমাত্রায় দন্দ লেগেছে।তাই কোন কাজেই মন বসছে না তার।
·
কিছুক্ষন পর হঠাত কলিং বেল বাজল।হেনা ভাই কিছুটা বিরক্তি নিয়ে দরজার দিকে তাকালেন অসময়ে আবার কে বিরক্ত করতে এলো.! দ্বিতীয় বার বেল বাজার পর বাধ্য হয়ে দরজা খুললেন তিনি।দরজা খুলতেই তিনি দেখতে পেলেন এসিপি হারুন এক সুন্দরী রমনীর হাত ধরে দাড়িয়ে আছেন।মেয়েদের প্রতি একরকম এ্যালার্জি আছে হেনা ভাইয়ের।বিরক্তি নিয়ে বললেন
- কি হয়েছে? এত রাতে এখানে মি. হারুন?
- স্যার,উনি?... মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল এসিপি হারুন।
- উনি কি?
- স্যার,উনাকে কমিশনার স্যার পাঠিয়েছেন।আপনাকে অ্যাসিস্ট করার জন্য।
- কিন্তু আমি তো তাকে আমাকে অ্যাসিস্ট করার জন্য কাউকে নিয়োগ করতে কিছু বলি নি?
এসিপি হারুন কিছু পরোয়া না করা ভাব নিয়ে বলল- সেটা কমিশনার স্যার জানে।আমি এখন আসি স্যার।
এই বলেই হারুন চলে গেল।হেনা ভাই মেয়েটিকে খুটিয়ে দেখতে লাগলেন।মেয়েটার গলায় তার স্ত্রীর মতো একটা তিল আছে।দেখতে ফর্সা।কিন্তু তার স্ত্রীর মতো ফর্সা না।পরনে একটা শার্ট আর ব্লাক কালারে গ্যাভাডিন প্যান্ট।
- স্যার,ভিতরে আসব?
মেয়েটার কথায় হেনা ভাই চমকে উঠলেন। আমতা-আমতা করে বললেন, -হ্যা,হ্যা,। আসো।
হেনা ভাইয়ের কথায় মেয়েটি ঘরে ঢুকে পড়ল।হেনা ভাই,বেশ অবাক হলেন।মেয়েটার ভয় করছে না। একা একটা মেয়ে,একটা পুরুষের সাথে এক ঘরে থাকবে।ব্যাপারটা তারই সুবিধার ঠেকছে না।আর তো মেয়েটা.! হেনা ভাই কমিশনার স্যারকে একটা ফোন দেওয়ার কথা ভাবছেন।কিন্তু তার আগে মেয়েটাকে ওর রুম দেখিয়ে দেয়া দরকার।মেয়েটাকে ওকে একটা রুম দেখিয়ে দিয়ে হেনা ভাই নিজের রুমে ঢুকে পড়লেন।ভাগ্যিস চারটা রুম নিয়েছিলেন।নাহলে যে কি হতো? এরিমধ্যে হেনা ভাইয়ের ফোনটা হঠাত কেপে উঠল।ফোন ধরতেই কমিশনার বললেন,
- হ্যালো ডিটেকটিভ হেনা। কি খবর? মিশনের জন্য তৈরী তো?
হেনা ভাই মুচকি হেসে বললেন - ডিটেকটিভ হেনা,মিশনের জন্য সবসময় তৈরি থাকে।
- হেনা,তুমি আমার শেষ ভরসা।তোমাকে এই মর্গ রহস্য বের করতেই হবে।
- আচ্ছা।সে দেখা যাবে ক্ষন।এখন রাখছি।আপনাকে যা বলেছি সেটার ব্যবস্থা করেছেন তো?
- হ্যা,করেছি। এখন রাখছি। কনগ্রাটস ফর উর মিশন।
এটুকু বলেই ফোনটা কেটে দিলেন কমিশনার।হেনা ভাই মেকি হাসলেন।যাক কাজের কাজ হয়েছে তাহলে...
·
·
ঘড়ির কাটা ক্রমশ বারোর দিকে এগুচ্ছে।হেনা ভাই আর এ্যাসিস্টেন্ট নীলান্তা হাসপাতালের ভিতরের প্রবেশ করল। নিস্তদ্ধ পরিবেশ। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।নীলান্তা একটু আধটু ভয় পাচ্ছে।
- স্যার,আমরা কি এখানে কোন গ্যাংকে ধরতে এসেছি?
- হোয়াটে? হাসপাতালে কেউ গ্যাংকে দরতে আসে?
- তাহলে স্যার?
- না,কিছু না।একদম চুপ হয়ে থাক।একটু পরে দেখতেই পাবে কিসের জন্য এসেছি.!
হেনা ভাইয়ের কথাশুনে নীলান্তা মুখে আঙুল দিয়ে চুপ মেরে গেল। নীলান্তা জানে না,তারা কিসের জন্য হাসপাতালে এসেছে। অবশ্য জানার কথাও না। কমিশনার ফখরুল সাহেব হেনা ভাইকে সিক্রেট ভাবে মিশনে পাঠিয়েছেন।তাছাড়াও হেনা ভাই নিজেকে আত্মগোপন করতে ভালোবাসেন।কাউকে নিজের সম্পর্কে জানাতে চান না।
হেনা ভাই আর নীলান্তা ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে মর্গের দিকে।হঠাৎ কোন কিছু আসার শব্দ পেলেন হেনা ভাই।নীলান্তাকে নিয়ে টুপ করে দরজার পিছনে লুকালেন।এবার তিনি যা দেখলেন,তাতে তার শরীরের রক্ত ঠান্ডা হয়ে যায়। একটা ট্রলি আপনা-আপনি লাশ নিয়ে সদর দরজার দিকে যাচ্ছে। নীলান্তা ভয়ে দেয়ালের সাথে কুকড়ে গেলো।হেনা ভাই নীলান্তার মুখ চেপে ধরেছেন।একবার চিৎকার দিলেই তাদের সব প্লান পন্ড হয়ে যাবে।হেনা ভাই দরজার ফাক দিয়ে দেখলেন,মর্গের লাশগুলো নিজে থেকেই উঠে দারাতে লাগল। ট্রলি থেকে নেমে হেটে আসতে লাগল হেনা ভাইয়ের দিকে। পচা-গলা লাশ আর ট্রলির খেচর খেচর শব্দ সব মিলে এক ভয়ঙ্কর অবস্থা। হেনা ভাই ভয়ে কাপতে লাগলেন। এমন অবস্থা তার কোনদিনও হয় নি।মর্গ থেকে মরা লাশ কিভাবে এমন করে হাটতে পারে।হঠাৎ খেয়াল করলেন যে মৃত লাশগুলো একটু আগে তার দিকে এগিয়ে আসতে ছিল,সেগুলো এখন ট্রলিতে করে লাশ নিয়ে যাচ্ছে। হেনা ভাই ভাবলেন চিৎকার করবেন তিনি। কিন্তু না? হঠাৎ করেই একটা অদ্ভুত কৌতূহল তাকে যেন আকর্ষন করল।তিনি কৌতূহলের সম্মোহনে আকৃষ্ট হলেন।শেষ পর্যন্ত তিনি দেখবেন। আসলে এখানে হচ্ছেটা কি? মর্গের দরজাটা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলো। হেনা ভাইয়ের ভয়টা আরো গাঢ় হতে থাকল। সামান্যে শব্দেই তিনি কেপে উঠলেন। কিন্তু নিজের অদম্য কৌতূহলের টানে ট্রলিগুলোকে অনুসরন করতে লাগলেন। অনেকটা দুরুত্ব থেকে ফলো করছেন ট্রলিগুলো কে। হেনা ভাই কখনো আত্মা-অশরীতে বিশ্বাস করেন নি।তার মতে মানুষের মৃর্ত্যুর পরে আখিরাতে ছাড়া কিছুই নেই। কিন্তু আজ তিনি প্যারালাল জগতের এক বড়-সড়ো বিষয়ে ধাক্কা খেয়েছেন। তার পা কাপছে।বুকের ধকধকানি বড় গেছে।ট্রলি গুলো বা পাশের গলি দিয়ে গোরস্থানের দিকে যাচ্ছে। রাস্তা একদম ফাকা। কোন জনমানুষের চিহ্ন নেই।হেনা ভাইয়ের মনে হচ্ছে,পিছন ফিরে দৌড় দিলে হয়ত ভাল হতো। কিন্তু কোন এক অদম্য শক্তি তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।গোরস্থানের ভিতরে সাথে সাথেই ট্রলি গুলো যেন ভেনিশ হয়ে গেলো। হেনা ভাই,মতি ভ্রম হচ্ছে। তিব্রো মনোসংযোগ করলেন। আল্লাহর নাম নিয়ে এক দৌড়ে গোরস্তানের ভিতরে ঢুকলেন। কিন্তু হঠাত কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন তিনি। চোখগুলো ঝাপসা হয়ে আসছে। জ্ঞান হারানোর আগে তার হঠাত মনে হলো নীলান্তাকে তিনি মর্গের সামনেই ফেলে এসেছেন।
·
.
Written by- Sohanur Rahaman Sohan
Tags:
Thriller