জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে একটা ভাঙাচুরা কবরের সাথে আবিষ্কার করলেন হেনা ভাই। শোয়া থেকে উঠে হাতঘড়ির দিকে তাকাতেই চমকে উঠলেন। টানা তিনঘন্টা অজ্ঞান ছিলেন তিনি।শোয়া থেকে উঠে গাঁ ঝাড়তে ঝাড়তে আশে-পাশটা একবার ভাল করে দেখে নিলেন। না তেমন সন্দেহজনক জিনিস দেখতে পেলেন না। হঠাৎই নীলান্তার কথা মনে হলো তার।
- ওহ মাই গড
বলেই হাসপাতালের দিকে দৌড় দিলেন হেনা ভাই।হাসপাতালে পৌছেই ভিতরের দিকে যতই পা বাড়াচ্ছেন ততই হৃৎপিন্ডের কম্পন বেড়ে যাচ্ছে। নিজের মনকে শক্ত করে নিয়ে মর্গের দিকে পা বাড়ালেন হেনা ভাই।কিন্তু সেখানে গিয়ে হেনা ভাই হেনা ভাইয়ের ভয়টা আর বেড়ে গেল। নীলান্তাকে কোথাও পেলেন না।কিছুক্ষন ভালো করে খোজার পরও নীলান্তাকে খুজে না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফোন দিলেন নীলান্তাকে।কিন্তু ফোন সুইচ স্টপ বলছে।হেনা ভাইয়ের ভয়টা বেশ খানিকটা গাঢ় হলো। এই অল্প সময়ে কি এমন ঘটে গেল যে,নীলান্তা উধাও হয়ে গেল.!
উপায় না পেয়ে কমিশনার স্যারকে ফোন দিলেন।
- হ্যা..হ্যালো স্যার, কাপা কাপা গলায় বললেন
- হ্যা। বলো হেনা,কি বুঝলে?
- স্যার,নীলান্তা নেই।
- হোয়াট,নীলান্তা নেই মানে?
হেনা ভাই কমিশনারকে সম্পূর্ন কাহিনী শুনালেন।কমিশনার ফখরুল সাহেব হেনা ভাইয়ের কথা শুনে বেশ অবাক হলেন। লাশ কিভাবে জীবিত হয়? এটাতো অসম্ভব।বঅনেকটা ইংলিশ হরর মুভির মতো হাঁ ছমছম কথা। অবাক হয়ে বললেন;
- হেনা তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে?
- না,স্যার। আমি নিজের চোখে দেখেছি। আর যাই হোক,আমার চোখ ভুল দেখে নি।
- হেনা তুমি একজন ডিটেকটিভ। কমছে কম তোমার কাছে এটা আশা করি নি।
- কিন্তু,স্যার। আমি তো....
- কিন্তু কিছু নয় হেনা।
একটু থেমে আবার বললেন। - ভুত বলে পৃথিবীতে কোন কিছুই নেই হেনা। আমরা যা দেখি যা শুনি সেটা নির্ঘাত কোন হ্যালুসুলেশন না হয় চোখের ভ্রম।তাছাড়াও যদি এর আড়ালে কোন রহস্য থাকে। তাহলে সেই রহস্য সমাধানের জন্য তোমার মতো ডিটেকটিভ রয়েছে।
হেনা ভাই এবার আর কিছু বললেন না। শুধু চুপ করে ভাবতে লাগলেন। কমিশনার ফখরুল আবার বলতে লাগলেন;
- দেখো হেনা,তোমাকে আবার বলছি পৃথিবীতে জ্বিন আর মানুষ ছাড়া কিচ্ছু নেই। আমরা যা দেখি সেটা হয়তো হ্যালুস্যুলেশন না হয় এর পিছনে কোন রহস্য আছে। এখন বুঝতে পারছ,হেনা?
- হু
- আচ্ছা,তুমি ওখানেই থাক আমি দুজন কনস্টেবল তোমার কাছে পাঠাচ্ছি?
ফোনটা কেটে দিলেন কমিশনার। হেনা ভাই হাসপাতাল থেকে বের হয়ে বাইরে সিড়িতে বসে আছেন।বিজ্ঞানীদের মতে প্যারালাল ইউনিভার্স নামে আরো একটা জগত আছে।সেই জগতের সব কিছু পৃথিবীর মতো না। সেখানে সবকিছু অলৌকিক। কিন্তু হেনা ভাই কখনোই সেগুলো বিশ্বাস করেন নি। তবে আজ নিজের চোখে যা দেখলেন,সেটা তিনি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না।চোখ বন্ধ করলেই সবকিছু দেখতে পারছেন তিনি।
না আর বসে থাকা যাচ্ছে না। উঠে দাড়ালেন হেনা ভাই।ফোনের ফ্লাশ জালিয়ে আবারও হাসপাতালের ভিতর ঢুকলেন তিনি।হেনা ভাইয়ের হঠাত মনে পড়ল - আচ্ছা,নীলান্তা মর্গের ভিতর নেই তো.!থাকতেও পারে।কিন্তু নীলান্তা মর্গের ভিতরে যাবে কেন?এসব ভাবতে ভাবতে মর্গের সামনে এসে থেমে গেলেন। দরজার সামনে দাড়িয়ে মনে মনে বলতে লাগলেন;
- কি আছে কপালে? ভিতরে ঢুকবই?
দরজার খিল ধরে টানলেন। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার দরজা খুলছে না। হেনা ভাই আল্লাহর নাম ধরে গায়ের সর্ব শক্তি দরজার খিল ধরে টান দিলেন। কিন্তু দরজা কিছুতেই খুলল না। ফোনের ফ্লাশটা দরজার সামনে ধরলেন হেনা ভাই। কিন্তু এবার তিনি যা দেখলেন,তাতে তিনি পুরা আহম্মক হয়ে গেলেন। এতক্ষন ধরে দারজা খিল উল্টা পাশ থেকে টানছেন। এমন ভৌতিক পরিবেশও তার লজ্জা লাগছে। এবার আর ভুল করলেন না। ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলেন। দরজা খোলার সাথে সাথেই কোন কিছু যেন ধপ করে মাটিতে পড়ে গেল। আলো সেদিকে ঘুরাতেই তিনি চিৎকার করে উঠলেন;
- নীলান্তা
মেঝেতে নীলান্তা পড়ে আছে। গায়ে কোন আচরের দাগ নেই। তার মানে হয়তো অজ্ঞান হয়ে গেছে। হেনা ভাই নীলান্তার পালস আর শ্বাস পরীক্ষা করে দেখলেন।হ্যা,তিনি ঠিকই ধরেছেন।
- স্যার
হেনা ভাই চমকে উঠলেন। পিছনে তাকাতেই দেখলেন দুজন কনস্টেবল দাড়িয়ে আছে। হেনা ভাই বুঝলেন এদের হয়তো ফখরুল সাহেবই পাঠিয়েছেন।
- ও,তোমরা এসেছে। নীলান্তাকে একটু ধরোত। মনে হয় অজ্ঞান হয়ে গেছে।
এরপর নীলান্তাকে পাজকোল করে হাসপাতাল থেকে বের করে জিপে রাখলেন। একজন কনস্টেবলকে নীলান্তার কাছে রেখে আরেকজন নিয়ে হাসপাতালের ভিতরে ঢুকলেন হেনা ভাই। লাইট জ্বালিয়ে ভালো করে সম্পূর্ন হাসপাতাল পরখ করে নিতে লাগলেন।না,তেমন কিছু পেলেন না। এবার উদ্দেশ্য মর্গ। মর্গের ভিতরে ঢুকলেন হেনা ভাই এবং কনস্টেবল নীল। অদ্ভুত দুর্গন্ধে নাক ঢাকতে বাধ্য হলেন তারা। অদ্ভুত ব্যাপার এমন দুর্গন্ধ একটু আগেও ছিল না।হেনা ভাই বেশ অবাক হচ্ছেন।
আচ্ছা নীলান্তা কি প্রচন্ড ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে? নাকি অজ্ঞান করানো হয়েছে তাকে?
হঠাত পায়ের মধ্যে খরখর শব্দ হলো হেনা ভাইয়ের।নিচে তাকাতেই দেখতে পেলেন একটা গোল্ডেন ওয়াচ মাটিতে পড়ে আছে। হেনা ভাই সেটা চট করে তুলে পকেটে ঢুকালেন।বএরপর কনস্টেবল নীলকে নিয়ে বাইরে বের হলেন। ব্যাপরটা নীলকে বুঝতে দিলেন না।
নীলান্তার জ্ঞান ফিরেছে জেনে হেনা ভাই দৌড়ে নীলান্তার কাছে গেলেন।
- আমি কোথায়?,অস্পষ্ট স্বরে বলল নীলান্তা।
হেনা ভাই বুঝলেন অজ্ঞান হওয়ার ফলে নীলান্তার ব্রেইন একটু গোলমাল হয়ে গেছে। এরকম সবারিই হয়।এতে ঘাবরানোর কিছু নেই। হেনা ভাই অপেক্ষা করতে লাগলেন নীলান্তার পুরোপুরি হুশ আসার জন্য। নীলান্তা গাড়ি নেমে দাড়াল।হেনা ভাই বলল;
- কালরাতে এমন কি হয়েছিল নীলান্তা যে তুমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে?
হেনা ভাইয়ের কথায় নীলান্তা মাথায় দুই হাত দিয়ে ভাবতে লাগল। হঠাত "স্যার" বলে চিৎকার করে আচরে পড়ল হেনা ভাইয়ের গায়ে। হেনা ভাই তড়িঘড়ি করে নীলান্তাকে জড়িয়ে ধরলেন। আস্তে করে জিপে রাখল তাকে। হেনা ভাই কিচ্ছু বুঝতে পারলেন না? সম্ভবত কাল রাতে কোন কিছু একটা হয়েছে নীলান্তার সাথে। তাই বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে নীলান্তা।
·
হেনা ভাই নীলান্তাকে আবারও কনস্টেবল মতিনের সাথে রেখে রওনা হলেন।তবে এবার হাসপাতাল নয়।গোরস্থান।
এই শুনশান পথেও ধীরে ধীরে মানুষের আনা-গোনা বাড়ছে।
হেনা ভাই আর কনস্টেবল নীল গোরস্থানের সামনে দাড়িয়ে আছেন।
- বুঝলেন,মিঃ নিল। এখানে কিছু একটা তো আছেই।
না হলে লাশের ট্রলি এখানেই কেন উধাও হয়ে গেল।অন্য কোথাও হলো না কেন.!
- হবে হয়তো। তবে স্যার এই জায়গাটা ভাল না। জীন-ভুতের আচর আছে এতে।
- হোয়াট? কি সব বলছ। একজন পুলিশ হয়ে তুমি এসব বলছ। পাব্লিক শুনলে কি বলবে বলত?
একটু থেমে আবার বললেন;
- দ্যাখো,পৃথিবীতে ভুত বলতে কিছু নেই।আমরা যা দেখি তার পিছনেই লুকিয়ে থাকে রহস্য।বুঝতে পারছ ব্যাপারটা?
কথাটা বলার পর হেনা ভাই মনে মনে বেশ লজ্জা পেলেন। মনে মনে বললেন 'ছিঃ। আমিও কিনা একজন ডিটেকটিভ হয়ে এসব বিশ্বাস করেছিমাল।'
হেনা ভাইয়ের হঠাত মনে পড়ল কাল রাতের কথা। রাতে তিনি কিছু একটা জিনিসের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। কি সেই জিনিসটা? ছোট-খাটো কোন জিনিস নয় এটা তিনি বেশ বুঝতে পারছেন।
লাইট দিয়ে ভাল করে খুজতে থাকলেন।গাছের ডাল-পালা সরিয়ে ভাল করে দেখতেই তার চোখ কপালে উঠল।
- দরজা? ওহ মাই গড। হাইডিং ডোর। মিঃ নিল তাড়াতাড়ি আসুন এখানে।
হেনা ভাইয়ের ডাকে কনস্টেবল নিল দৌড়ে আসলেন।মাটির নিচে হাইডিং দরজা দেখে তিনি যেন আকাশ থেকে পড়লেন।মাটির নিচে দরজা.!তারমানে নিচে ঘড় আছে.! । কিন্তু এরই মধ্যে হেনা ভাইয়ের ফোনটা আবারও কেপে উঠল। স্ক্রিনে দেখতেই বুঝলেন নীলান্তা ফোন দিয়েছে।ফোন ধরতেই নীলান্তা চিৎকার করে বলল;
- স্যার,আমাকে বাচান। প্লিজ হেল্প মি স্যার
·
·
Written by- Sohanur Rahman Sohan