কি হচ্ছে এসব? প্রথমে নয়নাকে মেরে ফেলতে চাওয়া।এরপর তিস্তার পারে তাদের লাশ পাওয়া।অবশ্য তারেক রহমান এখনো শিউর না যে লাশ গুলো নয়নার মা-বাবা আর বোনেরই হবে.! কিন্তু লাশ গুলো যদি নয়নার বাবা-মা আর বোনেরই হয়? তাহলে নয়নার শশুরবাড়ির লোকেরা কোথায় গেছে? নাকি উনারাই নয়নার বাবা-মা আর বোনকে মেরে ফেলেছে?
"ঘোড় ষড়যন্ত্র।নিশ্চই কোনো বড়-সরো কাহিনী আছে এই খুনগুলোর পিছনে"-বিড় বিড় করে বললেন তারেক রহমান।
ফরেনসিক রিপোর্ট থেকে ফোন এসেছে। লাশ গুলোকে আইডেন্টিফাই করা গেছে।দুটো নয়নার মা-বাবার।আরেকটাকে এখনো আইডেন্টিফাই করা যায় নি।কিন্তু তার পরেও এই কেসের রহস্য থেকে কিঞ্চিৎ বেরুতে পারেন নি পুলিশ সুপার তারেক আর এসিপি ফাহাদ।
পুলিশ সুপার তারেক রহমান জানালার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আর এসিপি ফাহাদ চেয়ারে বসে কিউব মিলাচ্ছেন।
"বুঝলেন এসিপি ফাাহাদ।আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমরা ভুল পথে হাটছি?"
বারান্দা থেকে এসে সোফায় পা তুলে বসতে বসতে বললেন কথাটা।পুলিশ সুপারের কথায় এসিপি মাথা তুলে কিছুক্ষন তারেক রহমানকে বুঝতে চেস্টা করল।কিছু বুঝতে না পেরে অবশেষে বলল:
"আপনার এমন মনে হওয়ার কারন?"
"দেখুন,এসিপি ফাহাদ আপনার ভাষ্যে মতে সুধীর বাবু যখন রায় বাড়িতে অর্থাৎ নয়নাকে বাড়ির ফ্লোরে পায় তখন তার জ্ঞান ছিল।তবে দুর্বলতার কারনে গোঙাছিল,তাই তো?"
"এক্সাক্টলি,তাই।কিন্তু এর সাথে আপনার কথার কী সম্পর্ক?"
"দেখুন এসিপি ফাহাদ।নয়নার কথা অনুযায়ী নয়নার জ্ঞান ফেরে ওকে মারার তিনদিন পর।মানে ১৫ ই এপ্রিল।কিন্তু জ্ঞান ফেরার পর সে চিৎকার করা বাদ দিয়ে শুধু গোঙাছিল।সে তো ইচ্ছে করলে চিৎকার করতে পারত।সুধীর বাবু যদি নয়নাকে টর্চারের চিৎকার শুনতে পেয়েছে।সেহেতু নয়নার বাচার চিৎকারও শুনতে পাবে।তাই তো,এসিপি ফাহাদ?"
"হুম।সেটাই তো বুঝছি।"
"কিন্তু দেখুন,নয়না সেটা করেনি?"
"করেনি।তাতে কি হয়েছে? হয়তো বেশী দুর্বল ছিল।"
টেবিলে রুবিক্স কিউব রাখতে রাখতে কথাটা বলল এসিপি ফাহাদ।
"আহা।আপনি একটু বোঝার চেস্টা করুন,নয়না একটু চেস্টা করলেই কিন্তু নিজেকে বাচাতে পারত।কিন্তু সেটা করেনি।ভেবে দেখেছেন,কেন?"
এসিপি ফাহাদ মাথায় হাত দিয়ে চুলকতে চুলকতে বললেন -"নাতো?"
"কারন নয়না হয়তো চেয়েছে,নিজের এমন অবস্থা দেখিয়ে সবাইকে নিজের কথার ছলনায় ভুলাবে?"
"হোয়াট? কি বলছেন? নয়না এমনটা কেনই বা করতে যাবে? যাতে তার লস ছাড়া লাভ নেই।"-চমকে উঠে চিৎকার করে বললেন এসিপি ফাহাদ।
"হাসালেন এসিপি ফাহাদ।রায় পরিবারের দিকে একবার খেয়াল করেছেন? গোটা দশ কোটি টাকার সম্পত্তি আছে"
"তো কি হয়েছে? সামন্য কটা টাকার জন্য নিজের বাবা-মাকে মেরে ফেলবে? না,না।তারেক রহমান।আমি কিছুতেই আপনার কথায় একমত হতে পারছি না"
"আহা।আমি তো বলছিনা এমনটা হয়েছে।যদি এমনটা হয়.!"
এসিপি ফাহাদ কিছুক্ষন কী যেন ভেবে বলল --" হতেও পারে"
·
রাত এগারো'টা।চারপাশে শুনশান নিরবতা।ফাহাদ আর তারেক রহমান একটু আগে ঘুমিয়েছেন।হালকা তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়েছে কেবল।তখনি এসিপি৷ ফাহাদের ফোনটা বেজে উঠল।এসিপি ফাহাদ ধড়-ফড় করে ঘুম থেকে উঠলেন।- "এত রাতে আবার কে ফোন দিল? "।
প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে কেউ বলল:
"স্যার,নয়না ম্যাডামকে কেউ মারার চেস্টা করেছে।উনার বুকের বা'পাশে গুলি করেছে।"
এসিপি ফাহাদ ধড়-ফড় করে শোয়া থেকে উঠলেন।উনার সমস্ত তন্দ্রা যেন হঠাত উবে গেছে।
"হোয়াট? তোমরা ডিউটিতে থাকতেও এটা কেমন করে হলো?"
"মনে হয়,স্নাইপার দিয়ে এ্যাটাক করেছে।"
"ওকে।টিমকে রেডি থাকতে বলো।আমি এক্ষুনি আসছি।"
"ওকে স্যার"
ফোন কেটে দিয়ে পুলিশ সুপার তারেক রহমানকে ডাকতে গিয়ে এসিপি ফাহাদ হুমড়ি খেয়ে পড়ল।সমস্ত ফ্লোর জুড়ে রক্তারক্তি অবস্থা।ফ্যানের সাথে তারেক রহমানের কাটা মাথাটা দোল খাচ্ছে।আর শরীরটা তিন টুকরা হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে।এসিপি দৌড়ে কালো মাক্স পড়া সুঠাম দেহের লোকটাকে ধড়তে গেল।কিন্তু ততক্ষনে অনেক দেড়ি হয়ে গেছে।কাচের জানালা খুলে খুনি পালিয়ে গেছে।
·
সকাল সাত'টা।পুলিশ সুপার তারেকের বাড়ি থেকে উনার মা,ভাই,সদ্য বিবাহিতা বউ এসেছে।তারেক রহমানের পরিবার শোকে কাতর হয়ে আছে।উনার মা আর স্ত্রী বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে।আর উনার ছোট ভাই দরজার এক পাশে পাথরের মতো এক গোয়ে হয়ে বসে আছে।ভাইয়ের হঠাত মৃর্ত্যুর খবরটা মেনে নিতে পারে নি হয়তো।পুলিশ সুপার তারেক রহমান এই অবস্থায় কী ভাবে উনাদের সান্তনা দিবেন সেটাই বুঝতে পারছেন না? সে নিজেই প্রচন্ড ক্রাইসিসে আছে।যে মানুষটা গতকাল রাত পর্যন্ত তাকে কত ধরনের লজিক দেখাচ্ছিল? কে জানতো হঠাত করে একটা উড়ো চিঠি এসে তাকেই লজিক ছাড়াই উপরে নিয়ে যাবে।
নয়নার অবস্থা মোটামুটি ভাল।বডি থেকে গুলি বের করা হয়েছে।সুধীর বাবু আর নয়নার এক দুঃসম্পর্কের পিশি মা নয়নাকে দেখতে এসেছে।
পুলিশ সুপার তারেক রহমানের বডি উনার পরিবারে কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।উপর মহল থেকে খুব চাপ আসছে এসিপি ফাহাদের উপর।এতো গার্ডের পরেও তারেক রহমান আর নয়নার উপর হামলা হলো কিভাবে? প্রত্যেকটা টিভি-চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ।
·
"আপনিই আফাফ?"
"হ্যা।আমিই আফাফ।সিক্রেট স্পাই এজেন্ট"
"ওহ।ভিতরে আসুন।কমিশনার স্যার আপনার কথা আমাকে বলেছে।"
কমিশনার রাশেদ খান নয়না আর তারেক রহমান কেসে স্পাই আফাফ আহমেদকে নিয়োগ করেছেন।যদিও প্রাইভেট এজেন্ট? তবে এই কথাটা ঘনিষ্ট কয়েকজন আর কেউ জানে না।
"কমিশনার স্যার হয়তো আপনাকে সবকিছু বলেই দিয়েছেন।এখন সরাসরি কাজের কথায় আসি।কি বলেন মি. আফাফ?"
"হ্যা,ঠিক আছে।আচ্ছা, চোর যে জানালাটা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছে সেই জানালাটা একবার দেখাতে পারবেন।"
"হ্যা।অবশ্যই।চলুন আমার সাথে।"
এসিপি ফাহাদ উঠে তারেক রহমান যে ঘরে ছিল সেই ঘরে যেতে লাগল।তরুন স্পাই এজেন্ট আফাফ আহমেদ চুপচাপ এসিপি ফাহাদকে অনুসরন করতে লাগল।
"এসিপি স্যার।এই জানালাটা কতদিন আগে পরিষ্কার করছিলেন?"
"এই দুই-তিন দিন আগে।কেনো বলুন তো?"
"বলছি।তার আগে বলুন এই বাড়িতে আর কে কে থাকে?" - জানালাটা ভাল করে চেক করতে করতে বলল আফাফ।
"আমি আর কাজের বুয়া রেহেনা খালা।"
"ওয়াও।তাহলে তো খুনিকে ধরা আরও সোজা হবে আমার জন্য.!আপনি এক্ষুনি জানালা থেকে সব ফিংগার প্রিন্ট তুলে আপনার আর রেহেনার খালার সাথে ম্যাচিং করাতে দিন।আমি নিশ্চিত এখান থেকে আপনাদের হাতের ছাপ বাদেও খুনির হাতের ছাপ নিশ্চই পাওয়া যাবে?"
"ওকে।এবার বুঝেছি ব্যাপারটা।আপনি চিন্তা করবেন না,আমি দেখছি।"
এই বলে এসিপি ফাহাদ বেরিয়ে গেল।স্পাই আফাফ সেখানেই বসে থাকল।
রেহেনা খালা এক কাপ কপি দিয়ে গেছে।আফাফ সেই ধোয়া উঠা কপির দিকে তাকিয়ে ভাবছে --'খুনি কে হতে পারে?'।
আচ্ছা,এমনটা নয়তো যা দেখছি সব মরিচিকা? এর পিছনে অন্য কারো হাত আছে? স্পাই আফাফ আহমেদ ঘটনাগুলো প্রথম থেকে ভাবতে লাগল।প্রথমে নয়নাকে টর্চার করা,তারপর খুনের চেস্টা,নয়নার শশুরর বাড়ির সবাই নিখোজ,এরপর তিস্তার পারে নয়নার পরিবারের লাশ পাওয়া,নয়নাকে আবারও মারার চেস্টা,এরপর পুলিশ সুপার তারেকের বিভৎস্য মৃর্ত্যু।সন্দেহের তালিকায় তিনজন।
প্রথমে নয়না কারন খুনির হাতে একটা স্নাইপার থাকা সত্বেও নয়নার বুকের বাম পাশে গুলি লেগে আহত হয়।তাও আবার গুরতর নয়।
দ্বিতীয়ত সুধীর বাবু।যে কিনা নয়নার আর্তনাদ শুনেও এগিয়ে আসেন নি?
তৃতীয়ত নয়নার বোন,আর শশুরবাড়ির লোক।যারা গত এক সপ্তাহ ধরে নিখোজ।
'এদের মধ্যে কে আসল খুনি হতে পারে?' নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করল আফাফ।
হঠাত ঠকঠক শব্দ হলো।আফাফ চট করে বসা থেকে উঠে দেয়ালের এক কোনায় লুকিয়ে পড়ল।কোমড়ে গুজে থাকা ডেজার্ট ঈগলটা দুই হাত দিয়ে ধরে দরজার দিকে তাক করল। খুনি নয়ত? তবে পুলিশের পোশাক পড়া লোকটাকে দেখে আফাফ মন থেকে খুনির ভয়টা কেটে গেল।লোকটা একটু এগিয়ে এসে বলল:
"স্যার,আমি কনস্টেবল দুর্জয়।এসিপি স্যার আমাকে পাঠিয়েছেন?"
"কেন?"
"স্যার,আমরা আরও তিনটা বস্তাবন্দী লাশ পেয়েছি নর্দমার মধ্যে।লাশ পচে গেছে।ডিএনএ টেস্টের জন্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে?"
"হোয়াট? কার লাশ?"-অবাক হয়ে বলল আফাফ।
" স্যার,সেটা এখনো জানা যায় নি।তবে শিঘ্রই জানা যাবে।এসিপি স্যার আপনাকে আমার সাথে যেতে বলেছে।"
কনস্টেবল দুর্জয়ের কথায় আফাফ কিছু বলল না।হন্তদন্ত হয়ে নেভী ব্লু ব্লেজার পড়তে পড়তে বলল-"চলো"
·
আফাফ আর এসিপি ফাহাদ তিন তিনটা লাশের সামনে দাড়িয়ে আছে।লাশগুলো সিলাই করা হয়েছে।তবুও কোন কোন জায়গায় গোশত পচে গিয়ে সেলাই খুলে খুলে গিয়েছে।লাশ ভাল মতো আইডেন্টিফাই করা যায় নি।ফরেনসিক রিপোর্ট অনুয়ায়ী দুটো লাশ নয়নার শশুর-শাশুরি আর একটা নয়নার স্বামীর।ডা. বিজয়ের মতে লাশকে দাই বা ভারী অস্ত্র দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে।
(চলবে...)
Written By - Sohanur Rahman Sohan
Tags:
Thriller