১। কখনো আকাশ দেখার সময় লক্ষ্য করেছেন কিছু পোকার মতো বস্তু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছে? তখন তাদের দিকে সরাসরি তাকালে আবার অদৃশ্য হয়ে যায়? নাহ, এরা এলিয়েন না। এদের বলা হয় ফ্লোটার। এদের বৈজ্ঞানিক নাম 'মুস্কায় ভলিটেন্টস'। এটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ 'উড়ন্ত মাছি'। ভনভন করে কান ঝালাপালা না করলেও আকাশ দেখার সময় বেশ প্যারা দেয় এরা। এগুলো আসলে বাহিরের জগতের কোনো কিছু বা পোকামাকড় নয় বরং এরা আমাদের অক্ষিগোলকের মধ্যে থাকে। এগুলি উড়াউড়ি করলেও জীবন্ত নয়। ফ্লোটার হচ্ছে একটা ছোট বস্তু যা আমাদের রেটিনার (আলোক সংবেদী টিস্যু) উপর ছায়া ফেলে। এই ছোট বস্তু যেকোনো কিছু হতে পারে। লোহিত রক্ত কণিকা, টিস্যু টুকরা, প্রোটিনের টুকরা ইত্যাদি যেকোনো কিছু। এরা আমাদের ভিট্রেয়াস হিউমারে অবস্থান করে। ভিট্রেয়াস হিউমার হলো আমাদের চোখের স্বচ্ছ জেলির ন্যায় অংশটি যা আমাদের চোখের ভেতরের অংশ পূরণ করে। ফ্লোটার গুলি আমাদের চোখের সাথে নড়াচড়া করে আর চোখ স্হির থাকাকালে লাফায়। এরা রেটিনার যত কাছে থাকে তত স্পষ্ট ফ্লোটার দেখা যায়। কেননা এরা যত কাছে থাকে রেটিনায় তত ভালো, অন্ধকার ও পরিষ্কার ছায়া পরে। ফলে এরাও স্পষ্টতর হয়। এদের দেখার জন্য উজ্জ্বল এবং পরিষ্কার কোনো কিছুর উপর তাকাতে হয়। যেমন: আকাশ। আলো এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করে। যত বেশি আলো হয় তত বেশি এদের দেখা যায়। কেননা আলো বেশি হলে পিউপিল ছোট হবে। ফলে তুলনামূলকভাবে কম আলো প্রবেশ করবে কিন্তু একটা নির্দিষ্ট ও আগের থেকে ছোট জায়গাতে পূঞ্জিভূত হবে। ফলে ছায়াটাও গাঢ় হবে।
২। অনেকে আবার মাঝে মাঝে আকাশে মাছির মতো উজ্জ্বল অনেক বস্তুকে একসাথে খুবই দ্রুত ঊড়ে একপাশে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখেছেন। অনেকে এসবের পেছনে কালো লেজও দেখে থাকতে পারেন। এটাকে বলা হয় "ব্লু ফিল্ড এন্টপটিক ফেনোমেনন"। এখানে আপনি ছায়া দেখছেন না। দেখছেন চোখের কৈশিক নালিকা দিয়ে চলতে থাকা শ্বেত রক্তকণিকা। শ্বেত রক্তকণিকা আকারে বড় হয়। অনেক সময় কৈশিক নালিকার প্রায় পথ প্রায় পুরোটার সমান হয় ব্যাসার্ধে। তখন এর পেছনে কিছু লোহিত রক্তকণিকা জমা হয়। ফলে নালিকার পেছনে এবং সামনে কিছু ফাঁকা অংশের সৃষ্টি হয়। লোহিত রক্তকণিকা নীল আলো শোষণ করে ফলস্বরূপ আলো রেটিনায় পরে না। কিন্তু শ্বেত রক্তকণিকা শোষণ করেনা। তাই যখন শ্বেত রক্তকণিকা পথে পাহাড় হয়ে দাঁড়ায় তখন আলো রেটিনায় পরে এবং একটা সাদা মাছির মতো অংশ দেখি। আবার শ্বেত রক্তকণিকার পেছনে থাকা লোহিত রক্তকণিকা গুলি আলো শোষণ করে তাই ঐ মাছির পেছনে কালো লেজের সৃষ্টি হয়।
৩। এসব কিছুকে আপনার মস্তিষ্ক ক্রমশ পাত্তা দেয়া ছেড়ে দেয়। তাই অনেকে বড় হলে বা প্রায়ই এদের দেখতে পারেন না।
বেশ মজার জিনিস এই দুটো। অনেকেই হয়তো অনেক কিছু ভেবেছেন এ দু'টো নিয়ে। আমি আগে এগুলোকে লক্ষ্য করে কাল্পনিক গুলি ছুড়তাম ।
Moshiur Rahman Anondo