এইচএসসি রসায়ন প্রস্তুতি-HSC Chemistry Preparation


বিশ্বাস করো বা নাই করো,বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে সহজ হচ্ছে রসায়ন প্রথম পত্র। স্কুলে থাকতে এক স্যারের কাছে শুনেছিলাম রসায়নে নাকি রস পাওয়া যায়,এখন বুঝতে পারছি আসলেই রসায়নে রস আছে।কিন্তু সবাই সে রসটাকে উদঘাটন করতে পারেনা,যারা টেকনিক্যালি পড়তে পারে তারা ৯০+ ও উঠাতে পারে আবার যারা পাড়েনা তারা ফেল ও করে। আমাদের ব্যাচে পরীক্ষা দিয়েছিলাম ২৩৪ জন। মাশাল্লাহ ৮০%ই রসায়নে এ+ পেয়েছিলো,এবং আল্লাহ রহমতে আমার ও দুইটা মিলে ১৮৭ ছিলো,আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে প্রথম পত্র রিটেনে আমার মার্কস ছিলো ৫০ এ ৪৮। একটি 'খ'নং প্রশ্ন পাড়িনি। কথা হলো কিভাবে পেয়েছিলাম? আজ সেটাই শিখিয়ে দেবো,ইনশাল্লাহ এই কয়েকদিন পড়েই তোমরাও ৫০ এ ৪৫+ পাবাই ইনশাল্লাহ, চলো শুরু করা যাক-
রসায়ন প্রথম পত্রে মার্কস তোলা খুবই সহজ,প্রথম পত্রে তোমরা টার্গেট রাখবা ৯০+ রাখার জন্য,যেভাবে যা পড়তে বলবো সেভাবে পড়লে ইনশাল্লাহ ৯০+ উঠানো কোনো ব্যাপার না।

রসায়ন ১ম পত্র প্রস্তুতিঃ

রসায়ন প্রথম পত্রে অধ্যায় আছে ৫ টা,আমরা ধরবো অধ্যায় আছে ৩ টা,কেননা ১ম & ৩য় অধ্যায় হতে প্রশ্ন আসলেও এন্সার করার দরকার নেই,কেননা এগুলো ব্যাখ্যামূলক অধ্যায়,এগুলো হতে উত্তর করলে ভালো মার্কস আশা করা যাবেনা,আর বড় কথা হলো ২য়,৩য়,৪র্থ অধ্যায় ভালো করে পড়লেই তোমরা সহজে ৫ টি সৃজনশীল এবং ১৯-২০ টি MCQ উত্তর করতে পারবা,আর ১ম ও ৫ম অধ্যায় হতে কয়েকটি টপিকস পড়লেই MCQ এর জন্য এনাফ, এছাড়া নিম্নক্ত যেসকল টপিকসের কথা বলবো সেসকল টপিকসের উপর একটি করে সৃজনশীল বানিয়ে দেবো, দেখবে প্রত্যেক অধ্যায় হতে ৫-৬ টি সৃজনশীল সমাধান করলেই যেভাবে প্রশ্ন আসুক তোমরা সমাধান করতে পারবা।
রিটেনের জন্য-

২য় অধ্যায়- এটা রসায়ন ১ম পত্রের সব থেকে মজার অধ্যায়। এই অধ্যায়ের মূলত তিনটা টপিকসই সব থেকে ইম্পরট্যান্ট। আর প্রশ্ন করলে এই তিনটা টপিকস থেকেই আসবে। সেগুলা হচ্ছে পরমানু মডেল, কোয়ান্টাম সংখ্যা আর দ্রাব্যতা। পরমাণু মডেলের জন্য জাস্ট রাদারফোর্ড আর বোর পরমানু মডেলের কনসেপ্ট ক্লিয়ার থাকলেই হবে। এখান থেকে বর্ণালি সম্পর্কিত ম্যাথ আসবে। যেমন: নিম্ন থেকে উচু শক্তিস্তরে যেতে কতটুকু শোষন/বিকিরন এই টাইপ ম্যাথ। দ্রাব্যতা থেকে মূলত দ্রাবতার গুনফল বের করার নিয়ম, দ্রাবতা থেকে দ্রাব্যতার গুনফল নির্নয়। লবনের অধঃক্ষেপ পড়বে কি পড়বে না এই টাইপের ম্যাথগুলাই আসবে। কোয়ান্টাম সংখ্যা থেকে মূলত চারটা কোয়ান্টার সংখার মান,ইলেকট্রন সংখ্যার মান, আউফবাউ নীতি আর হুন্ডের নীতি এবং আয়ন শনাক্তকরণ। জাস্ট এগুলাই। যেহেতু এই অধ্যায় থেকে দুইটা সিকিও মিনিমাম আসবে সুতরাং এই টপিকসগুলা আর এই রিলেটেড ম্যাথগুলা করলেই এখানের ২০ মার্কস খুব সহজে পাওয়া যাবে।

৩য় অধ্যায়: এখানের সব থেকে ইম্পরট্যান্ট হচ্ছে সংকরন। সব থেকে ইম্পরট্যান্ট হচ্ছে Sp3 সংকরন। Sp2,Sp এগুলাও দেখে নিও। মিথেন,অ্যালুমিনিয়াম, পানি এই তিনটা নিয়েই মূলত আসার সম্বাবনা রয়েছে। তারপর হচ্ছে ফাজানের নীতি। ফাজানের নীতি থেকে মূলত আয়নিক থেকে সমযোজী যৌগ,গলনাংক, স্ফুটনাংক, তাপীয় বিক্রিয়া এগুলাই। ডি ব্লক ধাতু পড়তে হবে যেমন :জটিল যৌগ, তারপর কেনো/কীভাবে রঙিন যৌগ গঠন করে এগুলাই। গ্রুপ ও পর্যায় ভিত্তিক ধর্ম। মূলত ২য় ও ৩য় এবং ৪র্থ পর্যায় এবং ১৫,১৬ গ্রুপটাই বেশি ইম্পরট্যান্ট। এখান থেকে মূলত ইলেকট্রন আসক্তি কম বেশি, কোনটা অম্লধর্মী, কোনটা ক্ষারধর্মী এই রিলেটেড প্রশ্নই হবে এবং পোলারায়ন ও হাইড্রোজেন বন্ধন। এগুলাই এনাফ!এসকল টপিকসের উপর ভিত্তি করে সৃজনশীল বানিয়ে দেবো।

৪র্থ অধ্যায়: এই অধ্যায়টা ১ম পত্রের সব থেকে বড় অধ্যায়।
এখান থেকে মূলত বাফার দ্রবনের ক্রিয়াকৌশল,অম্লীয় ও ক্ষারীয়, pH নির্নয়,দুর্বল এসিডের সাথে তীব্র এসিড মিশিয়ে pH,এসিডের সাথে লবনের, দুর্বল এসিডের সাথে দুর্বল ক্ষারের pH মূলত এই টাইপেরই ম্যাথই। সাম্যবস্থা থেকে মূলত Kp, Kc এর ম্যাথগুলা। খুব কঠিনগুলা করার দরকার নেই। ছোট ছোট সহজ ম্যাথই আসবে। NH3,Pcl5,HI ইত্যাদির কৌশল ও এইটাইপ ম্যাথ! লা শাতেলীয় নীতি, সক্রিয় শক্তির সাথে বিক্রিয়ার হারের কি সম্পর্ক,কিংবা প্রভাবকের কি সম্পর্ক।
হেলসের সূত্রটা ইম্পরট্যান্ট! হেলসের সূত্রের প্রয়োগ,ব্যাখা, এখান থেকে প্রশ্ন আসলে মূলত উপরে বিক্রিয়া দেওয়া থাকবে সেটা হেলসের সূত্র মেনে চলে কিনা কিংবা হেলসের সূত্র শক্তির নিতত্য সূত্র মেনে চলে কিনা এগুলাই আসবে।
প্রশমন বিক্রিয়া আর এনথালপি রিলেটেড ম্যাথ এগুলাই এনাফ।
এখান থেকে মূলত ২-৩ টা সিকিও হবে। সুতরাং এই টপিকসগুলা পড়তে হবে।
খুব বেশি পড়া না! আমি তোমাদের ভেংগে ভেংগে কি টাইপ ম্যাথ আসবে,কি কি আসবে এগুলা বলে দেওয়াতে খুব বেশি মনে হতে পারে। কিন্তু টপিকস খুব বেশি না। এই তিনিটা অধ্যায় ভালোভাবে পড়ো।
এমনভাবে পড়বা যেনো সৃজনশীল এবং MCQ ২ টার প্রিপারেশন একসাথে হয়ে যায়। আর রসায়ন প্রথম পত্রের জন্য ৪ দিন সময় খুব বেশি,দৈনিক একটা করে অধ্যায় পড়লেও সুন্দর করে রিভিশন দিতে পারবা।
সবার জন্য শুভ কামনা রইলো,


রসায়ন ২য় পত্র প্রস্তুতিঃ

রসায়ন ২য় পত্র আসলেই সবার আগে মাথায় চলে আসে জৈব যৌগ।যেটাকে আমরা ম্যাক্সিমাম স্টুডেন্টই ভয় পেয়ে থাকি। ভয় পাবার কিছু কারনও আছে। যাইহোক,যেহেতু এখনো অনেক সময়
তাই এখনও সব কিছু পড়ার যথেস্ট সময় আছে। তাই একটু ভেবে চিন্তে পড়তে হবে।
জৈব যৌগ সব থেকে ইম্পরট্যান্ট অধ্যায়। সবার আগে মাত্র ৩ টি অধ্যায় সিলেক্ট করতে হবে। অধ্যায়গুলা হচ্ছে -১,২,৪..
৫ম অধ্যায় থেকেও ১ টা আসবে। যেহেতু এটাই সব থেকে সহজ অধ্যায় তাই এই অধ্যায়টা খুব ভালো করে পড়তে হবে।
তবে ১ম,২য়,৪র্থ অধ্যায় পড়লেই আশা করা যায় রিটেনের জন্য এনাফ! রিস্ক এড়ানোর জন্য ৫ম অধ্যায়টা দেখে নিও। তবে ওই তিনটা ভালোভাবে পড়লেই ইনশাআল্লাহ রিটেনে ফুল এন্সার করা যাবে। এই অধ্যায়গুলার ইম্পরট্যান্ট টপিকসগুলা আর ম্যাথগুলা সলভ করে নিবা।

১ম অধ্যায়: এই অধ্যায় থেকে দুইটা প্রশ্ন আসার সম্ভাবনাই বেশি।এটা তুলনামূলক সহজ। তাই এটা ভালোভাবে শেষ করার ট্রাই করবা। এটা থেকে মূলত বয়েল,চার্লস,ডাল্টনের আংশিক চাপ সূত্র,গ্রাহামের ব্যাপন সূত্র,আদর্শ তাপমাত্রার সূত্রগুলা আর এই রিলেটেড ম্যাথগুলা করে নিবে। বাস্তব গ্যাসের আদর্শ আচরনের শর্ত,BOD COD নির্নয়, CFC,লুইস মতবাদ,লেড,ক্রোমিয়াম দূষনের প্রভাব। এগুলা পড়লে আশা করা যায় দুইটা প্রশ্নভাবে লিখে দিয়ে আসতে পারবে।

২য় অধ্যায়: এটা থেকে মিনিমাম দুইটা প্রশ্ন আসবেই। তিনটাও আসতে পারে।তাই এটা থেকে একটু বেশি পড়তে হবে।এটা থেকে মূলত..
জৈব ও অজৈব যৌগের পার্থক্য, শ্রেনী বিভাগ,সিগমা ও পাই বন্ধন,সমানুতা ও প্রকারভেদ, ফ্রেডিল ক্রাফট অ্যাককাইলেশন,অ্যাসাইলেশন,Sn1,S
n2,অ্যালকেন প্রস্তুতি শনাক্তকরণ, কিটোন প্রস্তুতি,টিএনটি,ডেটোল,পলিমারের ব্যাবহার, আর নামকরন সহজগুলা দেখে নিবে। ইম্পরট্যান্ট বিক্রয়া(প্যারাসিট্যামল,অ্যাসপিরিন তৈরী,কোব,কাপলিং,ব্যাকেলাইট এগুলাই..

৪র্থ অধ্যায়: পরিবাহীর প্রকারভেদ ও পার্থক্য, ফ্যারাডের সূত্র,সকল তড়িৎ বিশ্লেষণের উদাহরণ, কোন দ্রবন কোন পাত্র রাখা যাবে।(EMP)
ব্যাটারির সুবিধা,অসুবিধা।

৫ম অধ্যায়: কয়লার মান ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাবহার,ইউরিয়া সার তৈরী,কাচের উৎপাদন ও প্রকারভেদ, ন্যানো পার্টিকেল,পাল্প উৎপাদন ও কাগজ উৎপাদন এগুলা পড়লেই হবে।
রসায়ন ২য় পত্র অনেক পড়া। তাই সময়টাকে ভালোভাবে কাজে লাগাও।

জৈব যৌগ পড়তে একটু কষ্ট হবে। কিন্তু জৈব যৌগের জন্য গত বছর বোর্ড প্রশ্নগুলা আর টপ দুই-তিনটা কলেজের প্রশ্ন সলভ করলেই ভালো আইডিয়া পাবা। তবে ১ম অধ্যায়টা আগে ভালোভাবে শেষ করো। সহজ আর ম্যাথগুলাও কিছুটা ইজি। পড়ার পর সময় পেলে টেস্ট পেপার থেকে বোর্ডগুলা একটু সলভ করে নিও।
সর্বোপরি, রসায়ন ২য় পত্র একটু বেশি পড়তে হবে। একটু কঠিনও।।
ইনশাআল্লাহ ভালো কিছুই হবে।


লেখাঃ
এইচ এম মহসিন
Md Shamim Ahmed

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম