ডার্ক ইবোলা - (পর্ব ১)


প্রেগনেন্সির ছয় মাস পরেও ইরিনার গর্ভে কোন ভ্রুনের অস্তিত্ব নেই। অথচ প্রেগনেন্সির রেজাল্ট পজেটিভ। সব সিমটম বলে দিচ্ছে ইরিনা প্রেগনেন্ট। এ পর্যন্ত দুইবার চিকাপও করা হয়েছে।কিন্তু রেজাল্ট নেগেটিভ। সেই জন্যই নিউ ইয়র্কের সবচেয়ে বড় গাইনী স্পেশালিস্টের চেম্বারে বসে আছে ইথান।যদি এবার রেজাল্ট পজেটিভ আসে,সেই আশায়।
- মি. ইথান,আমি আমার ডাক্তারি ক্যারিয়ারে এমন হাজার কেস সলভ করেছি। কিন্তু আপনার স্ত্রীর মতো সমস্যা কারো কোনদিন হয় নি। সাধারনত প্রেগনেন্সির রেজাল্ট পজিটিভ হলে আল্টাসনোগ্রাফি বা আল্ট্রা এক্স-রের মাধ্যমে আমরা শিউর হয়ে নিই যে সে কি আসলেই প্রেগনেন্ট? বাট আপনার ওয়াইফের পেটে তো ভ্রুনের কোন অস্তিত্বই নেই।
মিস ম্যারির কথায় ইথান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,' কিন্তু মিস ম্যারি,প্রেগনেন্সি রেজাল্টতো বলছে ইরিনা প্রেগনেন্ট '
- দেখুন,মি. ইথান। ইরিনার মতো কন্ডিশন যদি কোন পেশেন্টের হয় তাহলে আমরা ধরেই নেই সেই পেশেন্টের তলপেটে,হয় টিউমার বা অন্য কোন রোগ হয়েছে। বাট ইউর ওয়াইফ ইজ কমপ্লিটলি ফাইন। শি হ্যাজ নন অফ অফ দোজ। আমি এই তিন দিন ধরে এত ভেবেও আপনার ওয়াইফের এমন হওয়ার কোন মোটিভ খুজে পাই নি।
- হাউ ইট'স পসিবল,মিস ম্যারি? প্রেগনেন্সির সব সিমটমই তো পজেটিভ।ইভেন,সি ইজ কমপ্লিটলি বিহেভ লাইক এ প্রেগনেন্ট উমেন। ওর পেটের আকারও তো চেঞ্জ হতে শুরু করেছে।তাহলে এমনটা হওয়ার কারনটা কি?
একটু থেমে আবার বলল," আচ্ছা আপনাদের রিপোর্টে কোন ভুল নেই তো? "
- মি. ইথান মানুষের ভুল হতে পারে। বাট একটা কম্পিউটার কখনো ভুল করতে পারে না। বিশ্বাস না হলে আপনি নিজেই রির্পোট গুলো আরেক বার দেখতে পারেন। এই নিন।
মিস ম্যারির কাছ থেকে রিপোর্টগুলো নিয়ে ইথান আবার নিখুত ভাবে খুটিয়ে দেখতে লাগল। কিন্তু রেজাল্ট একই। নেগেটিভ। ইরিনা প্রেগনেন্ট নয়। সি ইজ কমপ্লিটলি ওকে। বাট এটা কি করে হতে পারে। এই নিয়ে তিনবার চেকাপ করানো হলো। বাট রেজাল্ট সেম। রিপোর্টটা গুলো দেখা শেষ করে ইথান নিরাশ চোখে ডা. ম্যারির দিকে তাকাতেই ডা. ম্যারি বলল, 'সরি,মি. ইথান। আমি আপনাকে এই বিষয়ে আর কোন সাহায্য করতে পারব না। বিশ্বাস করুন,আমি অনেক চেস্টা করেছি। বাট আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।আসলে ইরিনার হয়েছে টা কি?'
' ইট'স ওকে,মিস. ম্যারি। আপনি যা করেছেন সেটাই অনেক। থ্যাঙ্ক্স।' এই বলেই ইথান রিপোর্টা হাতে নিয়ে বিষাদগ্রস্ত মন নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গাড়িতে বসে রিপোর্টটা পিছনের সিটে ছুড়ে ফেলে দিল।সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রচুর রাগ হচ্ছে ইথানের। নিজেকে কেমন জানি অসহায় মনে হতে থাকল তার। মুহুর্তের জন্য এই পৃথিবীকে প্রচন্ড স্বার্থপর মনে হলো। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। কি বলবে ইরিনাকে? মেয়েটা হয়তো কত আশা নিয়ে বসে আছে! এতে তো ইরিনার কোন দোষ নেই? তাহলে মেয়েটা কেন কষ্ট পাবে।এমনটা তাদের সাথে কেনই বা ঘটল? কোন প্রশ্নেরই উত্তর ইথানের কাছে নেই।
·
গাড়ি থেকে বের হয়ে বাড়ির দরজা খুলতে যাবে এমন সময় ইথানের ফোনটা বেজে উঠল। আননোন নাম্বার।রিসিভ করবে কিনা এসব ভাবতে ভাবতেই ফোনটা কেটে গেল। দ্বিতীয়বার বাজার সাথে সাথে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কেউ চিৎকার করে বলে উঠল, ' হেল্প মি ইথান। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। ইথান প্লিজ হেল্প'
ফোনের ওপাশের কন্ঠটা কার সেটা বুঝতে বাকি রইল না ইথানের।
ইরিনার হঠাৎ এমন কন্ঠ শুনে ইথান অনেকটা চমকে উঠল।তরিঘরি করে বলল," ইরিনা কি হয়েছে? তুমি কাদছো কেন? আর কে মরে ফেলবে? "
ইরিনা প্রচন্ড ভয় পাওয়া কন্ঠে তোতলাতে বলল,'ওরা। ওরা ওরা ইথান'
- কারা ইরিনা?
'ওরা কালো মু..' আর কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে গেলে। ইথান অনেকক্ষন হ্যালো হ্যালো করে যখন বুঝতে পারল ওপাশ থেকে ফোনটা কেটে গেছে ইথান বাড়ির দরজা খুলে ইরিনার ঘরের দিকে দৌড় দিল। দৌড়ে গিয়ে যা দেখল সেটা দেখার জন্য ইথান মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তার মায়ের বিভৎষ্য দেহটা মাটিতে পড়ে আছে।ইথানের শিরার ভেতর দিয়ে যেন হিম শ্রোত বয়ে গএর। দৌড়ে গিয়ে ধপ করে ওর মায়ের দেহটা কোলে তুলে মম মম ধাক্বাতে লাগল। কিন্তু তার অনেক আগেই ইথানের মা যে পরপারে পারি জমিয়েছে,সেটা ইথানের জানা নেই। ইথান এই মহুর্তে কি করবে সেটা সে বুঝতে পারছে না।হঠাৎ ইরিনার কথা মনে হলো। আর তখনই শুনতে পেল গাড়ির শব্দ।করিডোরে আসতেই দেখল করিডোরের কাঁচ ভাঙা।দৌড়ে করিডোরে এসে নিচে তাকাতেই দেখল ইরিনাকে কালো পোশাক পরা কারা যেন জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।ইথান দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে ইরিনার করিডোরের নিচে আসতেই কে যেন মাথার পিছনে স্ব-জোড়ে আঘাত করল। ছিটকে গিয়ে ধাক্কা খেল দেয়ালে।'আআআ' বলে চিৎকার করে দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে ধপ করে মাটিতে শুয়ে পড়ল ইথান।শরীরটা ধীরে ধীরে অসার হয়ে আসতে লাগল।ঝাপসা ঝাপসা চোখে পিছনে তাকাতেই মিনি স্কার্ট আর ল্যাগিংস পড়া আর হাতে হকি স্টিক ধরা হুবহু তার মায়ের মতো একজন মহিলাকে দেখতে পেল।
শহর থেকে বেশ অনেকটা দুরে ইথানদের এই পৈত্রিক বাড়িটার আশেপাশে অন্য কোন বাড়ি নেই বললেই চলে।দোতালা এই বাড়িটিতে শুধু ইথান,ইরিনা আর ইথানের বাবা-মা থাকে।তবে আজ হঠাৎ করেই এমন একটা অকল্পনীয় ঘটনা ঘটে যাবে সেটা ইথান কাস্মিক কালও ভাবতে পারে নিই।
·
দুপরের কড়া রোদ চোখে পড়তেই ধীরে ধীরে চোখ খুলল ইথান। ঝাপসা ঝাপসা চোখে চারিদিকে তাকাল।ধীরে ধীরে কোন রকম শোয়া থেকে উঠে দাড়াল।মাথাটা ভীষন যন্ত্রনা করছে। মাথায় হাত দিতেই আঠাল অর্ধ-তরল কিছু অনুভব করল। ইথানের বুঝতে বাকি রইল না যে এগুলো কি? একটু আগের কথা মনে হতেই ইথান আবার ছুটল ইরিনার ঘরের দিকে। তবে ঘরে যে ইথানের জন্য আরো বড় চমক অপেক্ষা করছে সেটা ইথানের জানা ছিল না। ওর মায়ের লাশটা আর মেঝেতে নেই। মেঝে একদম আগের মতোই আছে।অল্প-কিছুক্ষন আগেও যে করিডোরের কাঁচগুলো ভাঙা ছিল সেটা যেন ভাঙাই হয় নি। সবকিছু ঠিক আগের মতোই আছে।ইথান বেশ অবাক হলো। এসব কি হচ্ছে তার সাথে? এসব কি হ্যালুসুলেশন নাকি সত্যি? মাথাটা কেমন জানি ঘুরছে? শিউর হওয়ার জন্য প্রতিটা ঘড় চেক করতে থাকল। চিৎকার করে ডাকতে লাগল মম,ড্যাড,ইরিনা বলে। কিন্তু কাউকে খুজে পেল না সে।শেষ পর্যন্ত ইথান শিউর হলো যে তার সাথে যা ঘটেছে সব সত্যি। কিন্তু তাহলে তার মায়ের দেহটা কোথায় গেল? আর করিডোরের জানালায় ঠিক হলো কিভাবে? ঘড় ঢোকার সময় তাড়াহুরায় একটা ফুলদানি ভেঙে ফেলেছিল ইথান।সেই ফুলদানিটা পর্যন্ত অক্ষত আছে এবং সেটা নির্দিষ্ট জাগাতেই আছে।ইথান আর ভাবতে পারল না।কি হচ্ছে এসব তার সাথে? সব কিছু কেমন উল্টাপাল্টা লাগছে তার।
·
- তো আপনি বলতে চাচ্ছেন আপনার মায়ের লাশ নিজ থেকেই উধাও হয়ে গেছে? আর আপনার বাবা আর স্ত্রীকে কেউ কিডনাপ করেছে?
- হ্যা,স্যার।
ইথানের কথায় সাব-ইন্সপেক্টর ম্যাক্স কলিং চেয়ার থেকে উঠে প্রচন্ড রেগে চিৎকার করে বলল,'ডু ইউ থিংক আই এম এ ফুল? হোয়াট ডু ইউ থিংক এবাউট মি? নিজেই নিজের পরিবারকে গুম করে থানায় ডাইরি করতে এসেছেন? নিজেকে খুব চালাক মনে করেননাকি, মি. ইথান। কনস্টেবল, অ্যারেস্ট হিম'
সাব-ইন্সপেক্টরের কথা শুনর ইথান অনেক বুঝানোর চেষ্টা করল যে সে খুন করেনি। সে সত্যিই জানে না কারা ওর এমনটা করল।কিন্তু কোন লাভ হলো না।কঠোর আর পাষান হিসেবে আমেরিকান পুলিশের বেশ নাম ডাক আছে।তাই ইনভেস্টিকেশনের আগে ইথানকে ছাড়বে না ওরা। ইথান বড্ড ভুল করে ফেলেছে। পুলিশ হয়তো সম্পূর্নটা জানার আগেই ইরিনা আর ওর বাবার কোন ক্ষতি করে দিবে। আচ্ছা,কে এর পিছনে থাকতে পারে।
'মম? কিন্তু মম তো মারা গেছে। তাহলে ওই মহিলা কে?',নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করল ইথান।
এদিকে দুজন কনস্টেবল ইথানকে এক প্রকার জোড় করে নিয়ে যাচ্ছে জেলে।কি করবে করবে ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত ইথান সিদ্ধান্ত নেই ও পালাবে।এ জন্য অবশ্য বেশি কস্টও করতে হয় না ওকে।ইথানের হাতে কোন হ্যান্ডকাপ না থাকায় ইথান একজন কনস্টেবলের ইলেট্রিক সকারটা নিয়ে অন্য গলায় লাগিয়ে দিতেই ওই কনস্টেবল পড়ে যায়। কিন্তু দ্বিতীয় কনস্টেবলকে ইলেকট্রিক শক দেওয়ার ফলে প্রথম কনস্টবল লাঠি নিয়ে মারতে আসে। উপায়ন্ত না পেয়ে ইথান ওকেও ইলেকট্রিক শক দেয়।সেও পড়ে গিয়ে কাপতে থাকে।ইথান সেখান থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে ঠিকই তবে অটো অ্যালার্ম বাজার সাথে সাথেই সব পুলিশ ইথানের পিছনে ধাওয়া করে।তবে বেশি দুর পালাতে পারে না ইথান।তার আগেই তার ডান কাধে গুলি লাগে।ভাগ্য ভালো একটা কালো গাড়ি এসে ইথানকে সেখান থেকে নিয়ে যায়।এ যাত্রায় বেচে যায় ইথান।তবে গুলির মধ্যে থাকা সেন্সেলেস ভেনোমের কারনে অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে জ্ঞান হারায় সে।
যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখতে পায় একটা আবদ্ধ ঘড়ে আটকা আছে সে।ঘড়ে তেমন কিছু না থাকলেও বেশ পরিপাটি।কিছুক্ষনের মধ্যেই একজন কালো কোর্ট-প্যান্ট পড়া লোক কামড়ায় ঢোকে।তাকে চিনতে ভুল হয় না ইথানের।কাল রাতে কাল গাড়িতে আসার ব্যাপারটা পরিষ্কার হয় ইথানের। সিআইএ'র প্রধান হলেন কর্নেল নিক স্যামুয়েল।তাই হাতে ব্যাথা থাকার পড়েও দুধর্ষ সিআইএ এজেন্ট ইথান হার্ডওয়ার্ড নিক স্যামুয়েলকে দেখে দাড়ানোর চেস্টা করে।তবে ইথানকে উঠতে বারন করে নিক স্যমুয়েল বলেন,
- ইথান,আমি তোমার মনের অবস্থা বুঝতে পারছি।গতকালই তোমার মাকে কেউ মেরে ফেলেছে।তোমার বাবা আর ওয়াইফকেও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।কিন্তু তারপরেও আমার কিছুই করার নেই।এজেন্সির ভুল বললাম পুথিবীর এমন কঠিন দুঃসময়ে তোমাকে আমাদের প্রয়োজন ইথান।
নিক স্যামুয়েলের কথায় ইথান একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে।এরপর একপ্রকার দৃঢ় কন্ঠে বলে, "স্যার,আপনি তো জানেনই,আমি কখনো জব আর ফ্যামিলি একসাথে মিক্স করি না।
আপনি বলুন স্যার। আমি সব সময় মিশনের জন্য রেডি।
- সেটা আমি জানি ইথান।কিন্তু এবারের মিশনটা একটু ভিন্ন টাইপের।কঠিন বলতে পারো। ল্যাবরেটরিতে রেটিকুলাম-৪ গ্যালক্সি থেকে পাওয়া টেরা-হাইব্রিট প্রজাতির যে এলিয়েনটাকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাচিয়ে রাখা হয়েছিল,সেই এলিয়েনটা চুড়ি হয়ে গিয়েছে। সাথে TH-7 ফাইলটিও। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো "ডার্ক ইবোলা ইজ ব্যাক"।

(চলবে...)


লিখেছেনঃ Shohanur Rahman Shohan

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম