এদিকে সম্পূর্ন অপরিচিত একজন মহিলা ইরিনাকে নিজের মেয়ে বলে দাবি করছে।ইরিনা এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।সে এতদিন থেকে জেনে এসেছে তার বাবা-মা উভই রোড এক্সডিন্টে মারা গেছে।কিন্তু এখন হুট করে অ্যানাকে কিছুতেই নিজের মা বলে মেনে নিতে পারছে না ইরিনা।"যে কেউ বললেই হলো নাকি? ইনি আমার মা।এটা কিছুতেই হতে পারে না" নিজেই নিজেকে বলছে ইরিনা।
- আমি মারা যাই নি,ইরিনা। হ্যা,আমাদের এক্সিডেন্ড হয়েছিল।তবে আমার ঈশ্বর মারলিনের আশির্বাদে আমি বেচে গেছি।
অ্যানার কথায় ইরিনার ঘোর যেন কাটছেই না।সে কিছু বলার আগেই এই মহিলাটা সব কিছু জেনে যাচ্ছে।আর সবচেয়ে বড় কথা ইনি যদি সত্যিই আমার মা হতো তাহলে এতদিন কোথায় ছিল? আজকে হুট করে এসে বলছে উনি আমার মা!
- আসলে ইরিনা,আমি কোন জীবন্ত মানুষ নই। আমি একজন অর্ধমৃত ভ্যাম্পায়ার অ্যানা। আর কোন মানুষের সংস্পর্শে এলে আমার মানুষের রক্তের গন্ধে নিজেকে আটকাতে পারি না।
অ্যানার কথায় ইরিনার প্রচন্ড অবাক হয়ে বলল, "হোয়াট? তাহলে এখন আমার কাছে আছেন কিভাবে?"
ইরিনার কথায় অ্যানা পৈশাচিক হাসি দিয়ে হা করতেই ধীরে ধীরে কেনিন দাঁত দুটো বড় হতে থাকল। চেহারার রঙ পরিবর্তন হতে শুরু করল।গায়ের চামরা ছিড়ে ছিড়ে পড়তে শুরু করল।প্রচন্ড চিৎকার করে হাসতে হাসতে এগিয়ে আসতে লাগল ইরিনার দিকে।ইরিনা চিৎকার করে দৌড় দিতে যাবে তার আগেই অ্যানা ইরিনাকে পিছন থেকে ঝাপটে ধরে ডান ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দেয়।এক অদ্ভুত শিহরন আর যন্ত্রনায় ককিয়ে ওঠে ইরিনা।তবে বেশিক্ষন সহ্য করতে হয় না এমন যন্ত্রনা। তার আগেই ডার্ক ইবোলা পিছন থেকে অ্যানাকে ঝটিকিয়ে সরিয়ে ফেলে বলতে থাকে "কাম ডাউন অ্যানা। কামন ডাউন।কন্ট্রোল ইউয়সেলফ।" সাথে সাথে দুরে ছিটকে পড়ে অ্যানা।আর ইরিনা.!
ধপ করে ফ্রোরে পরার আগেই তাকে ধরে নেয় ডার্ক ইবোলা।আস্তে আস্তে বিছানায় শুইয়ে দেয় তাকে।এদিকে অ্যানা রক্তের নেশায় কেমন যেন পাগল হয়ে যায়!হিতাহিত জ্ঞান ভুলে যায়।পাগলের মতো ডার্ক ইবোলাকেও আক্রমন করতে এগিয়ে আসে।ঘাড়ের মধ্যে কামড় দিতে যায়।নিজেকে রক্ষা করার জন্য ডার্ক ইবোলা অ্যানাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। আর তাতেই ঘটে বিপত্তি।টাল সামলাতে না পড়ে যায় অ্যানা।টেবিলের মধ্যে সাজানো কাটা চামচের উপর পড়ে গিয়ে বুক ফুরে বেরিয়ে আসে সামনে চামচগুলো।যন্ত্রনায় চিৎকার করতে করতে কাতরাতে থাকে অ্যানা। ডার্ক ইবোলা অনেকটা থ হয়ে দাড়িযে থাকে কিছুক্ষন।তারপর হুট করে চেচাতে থাকে - " হ্যাল্প,হ্যাল্প।কল এ্যা ডক্টর নাউ।" ওদিকে ততক্ষনে অ্যানার আত্মা পরপারে পারি জমিয়েছে।
·
এয়ারপোর্টে নেমেই আফাফ আর ইথানের চোখ কপালে।তাদের সিকিউরিটির জন্য যে এতজন এজেন্ট থাকবে,সেটা তাদের ভাবনারও অতীত।এয়ারপোর্টে নামতেই একজন মধ্যবয়সী তরুনী এসে হাত এগিয়ে দিয়ে বলল,- "হাই,আমি নাতাশা মার্টিন।"
নাতাশার কথায় আফাফ এগিয়ে এসে কিছু বলার আগেই নাতাশা বলল- "আপনি আফাফ।ইন্টারপোল হেড।আর ইনি ইথান।সিআইএ এজেন্ট।অ্যাম আই রাইট?"
"অ্যাবসুলেটলি রাইট,মিস নাতাশা",ইথান এগিয়ে এসে বলল।
"ওকে।নাউ কাম উইথ মি"
এই বলেই নাতাশা সামনে ঘুরে হাটতে শুরু করল।ইথান আর আফাফ কিছুক্ষন কিছুটা অবাক চোখে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকল। এরপর বাধ্য হয়ে নাতাশাকে অনুসরন করতে থাকে ইথান আর আফাফ।মাটির নিচে আন্ডারগ্রাউন্ড মিলিটারি ক্যাম্প।পা রাখতেই স্বয়ংক্রিয় ডিএনে টেস্ট সেন্সরের ম্যধ্যমে দরজা খুলে গেল।ধীরে ধীরে সিড়ি থেকে নামতে লাগল সবাই। কিছুদুর যেতেই আফাফ হুট করে দারিয়ে গেল।
"রক্ত"
আফাফের কথায় ইথানও দাড়িয়ে গেল।অবাক হয়ে বলল- " কোথায় রক্ত?"
"এই যে এখানে" বলেই আফাফ দরজার পাশে বসে পড়ল।গ্লাফস পড়ে রক্তগুলো নাকের কাছে নিয়ে বলল,"টাটকা রক্ত।বেশিক্ষন হয় নি বেড়োনোর" আফাফের কথায় ইথান অবাক হয়ে চিৎকার করে "হোয়াট?" বলে এগিয়ে আসতেই নাতাশা ইথানে মাথায় পাশে থাকা হ্যান্ড গানের পিছন দিয়ে স্ব-জোড়ে আঘাত করল। সাথে সাথে নিচে পড়ে গেল ইথান।"ইথান" বলে চিৎকার করে আফাফ এগিয়ে আসতেই সামনে পিছনে থাকা সব এজেন্ট হাতে রাখা লেজার গান দিয়ে তাক করল আফাফের দিকে।সাথে সাথে আফাফ থেমে গেল। ওদিকে ইথান আঘাতের যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকল।আফাফ সাহস নিয়ে একটু এগোনোর চেস্টা করতেই নাতাশা বলল- "মি. আফাফ।হ্যান্ডস আপ। ভুলেও আগানোর চেস্টা করবেন। আপনি ব্যাপারটা বুজতে অনেক দেরি করে ফেলছেন।" নাতাশার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই মাথার উপর দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল।আফাফ চিৎকার করে বলল- "ওহ নো"। নাতাশা হো হো করে পৈশাচিক হাসি দিয়ে বলল, " আপনারা আমার জালে ফেসে গেছেন মি. আফাফ এন্ড ইথান।"
·
একটা গোলাকার ঘড়ে শুয়ে আছে ইরিনা। ওর মাথার উপর একটা ছোট ফ্যানের মতো যন্ত্র আছে। যার মাথায় মধ্যে রয়েছে ছোট্ট গোলাকার হীরার মতো চকচকে একটা পাথর। সেটা প্রচন্ড জোরে ঘুরতেছে। আর অদ্ভুত ক্যাচ ক্যাচ শব্দ করছে। শব্দের চোটে ইরিনা কান চেপে ধরে চিৎকার করে ঘর থেকে বেরুনোর চেস্টা করল।কিন্তু পায়ের মধ্যে শিকল বাধা থাকায় সে নিরুপায়ের মতো শুধু চিৎকার করতে থাকল। এদিকে পেটটাও প্রচুর ব্যাথা করছে তার। প্রচুর যন্ত্রনা করছে। প্রচুর বমিও আসছে। সব মিলিয়ে এক অন্নধরনের অবস্থা ইরিনার।
তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেল যখন ইরিনা ওর পাশে তাকল। তাকাতেই ভয়ে চিৎকার করে উঠল। প্রথমে চিনতে না পারলেও ধীরে ধীরে বুঝতে পারল যে তার পাশে পড়ে আছে অ্যানার মৃত পচতে থাকা দেহটা।দেহে এতটাই পচন ধরেছে যে মৃতদেহ পাচন রস আর পোকার দখলে চলে গেছে। আরেকটু ভাল ভাবে দেখতেই ইরিনার গায়ের লোম শিউরে উঠল। শিরদারা দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। অ্যানার পাশেই রয়েছে একটা অদ্ভুত জীব। উচ্চতা প্রায় তিনফুট মতো। শরীরে কোনধরনের লোম নেই বড় বড় চোখ এবং কৃষ্ণকার শরীর। আর দেহ ছেদ করে হৃৎপিন্ডের বদলে দেখা যাচ্ছে একটি বিশালাকৃতির পতঙ্গ।
(চলবে...)
Written by:- Sohanur Rahman Sohan