সবুজ কাঁচ - মাশুক খান (থ্রিলার গল্প) পর্ব ২


(চার)
তিথি পাশে বসে রয়েছে। এক সপ্তাহ হয়েছে আমাদের বিয়ে হয়েছে। বলা যায় এখন পর্যন্ত বেশ ভালোভাবেই চলছে দিনকাল। মেয়েটা দেখতে ভালো বললে ভুল হবে, অসাধারণ বলা উচিত। তাছাড়া , মেধাবী এবং যোগ্য স্ত্রী বলা যায় তিথিকে । হিসাব অনুসারে আমি বেশ ভালো একজন জীবন সঙ্গিনী পেয়েছি। তবে তিথিকে বিয়ে করা নিয়ে এখনো সংশয়ে আছি বলা যায়। কোনদিন যদি জেনে যায় আমি ওর বাবাকে খুন করেছি তাহলে ও কি করবে ? চোখ বন্ধ করে সেটা বলে দিতে পারি।
প্রথমে সোজা পুলিশ কে জানাবে। তারপর আমার পরিবার জানবে, ওদের পরিবার জানবে। পুলিশ ধরে নিয়ে রিমান্ডে দিবে আমাকে । আর পুলিশের মাইড় যদি পরে তাহলে আমি নিশ্চিত আমি সব বলতে বাধ্য হবো । একটা লিংক কোনভাবে প্রকাশ হলেই আমি শেষ। আমার এত বছরের ক্যারিয়ার শেষ হবে যাবে এক মূহুর্তে। তবে আপাতত তিথি এরকম কিছু ভাবছে না এটা বলা যায়। শত হলেও আমি তার জীবন সঙ্গি। এছাড়া কোন ধরনের ক্লু ও নেই এরকম কিছু ভাবার। চুপচাপ খাটে শুয়ে তিথিকে প্রশ্ন করলাম, ও আমার মৃত শশুর কে নিয়ে কথা বলছিলো ।
- বাবা কিভাবে মারা গিয়েছে ?
- ডাক্তাররা কিছু বলতে পারেনি। তবে তাদের ধারণা হার্ট এট্যাক হবে। সবকিছু স্বাভাবিক ছিলো। তাই এভাবে তার মৃত্যু ডাক্তাররা মেনে নিতে পারেনি। তারা বলেছিলো আবার পোষ্ট মর্টেম করতে। এটা খুন হতেও পারে একজন অল্প বয়স্ক ডাক্তার বলেছিলো।
- তো আবার করা হয়েছিলো পোষ্ট মর্টেম ? তেমন কোন কৌতুহল প্রকাশ করলাম না কন্ঠে। যদিও ভিতরে ভিতরে উত্তেজিত অনুভব করছি।
- বলতে পারিনা। আব্বুর কলিগরা কি যেন কথা বলেছিলো ঔ অল্প বয়স্ক ডাক্তারের সাথে। তারা কয়েকদিন পর লাশ দিয়ে দিলো।
- আচ্ছা কবে মারা গিয়েছিলেন বাবা ? কথায় পিঠে কথা বললাম তাকে। কিছুটা চিন্তিত বোধ করছি এখন। কয়েকদিন পর যদি লাশ দেয় তাহলে দ্বিতীয়বার আবার পোষ্ট মর্টেম করে দেখা হয়েছে তার লাশ। আর ভালো ভাবে যদি পরীক্ষা করে তাহলে হয়তো ধরা পরেও যেতে পারে খুনের রহস্য। উহু বেশি সাহস দেখানো হয়েছে ওই কেসটাতে। নিজের ফেস টু ফেস হওয়ার কোন দরকার ছিলো না। যদিও আমাকে খুব একটা সন্দেহ করার কোন কারণ নেই। তবে সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না ।
- তুমি যেদিন শেষবার গিয়েছিলে সেদিন ই। হয়তো তুমি চলে যাওয়া কিছুক্ষণ পরেই।
কান সজাগ করে তাকালাম। স্বাভাবিক কথা না এটা। আমাকে সেদিন তিথি দেখেছে তাহলে। উহু এ তো মহা বিপদ । আমি সেদিনের পর আর যাইনি সেখানে। তাহলে আমাকে তো সন্দেহের তালিকায় ফেলে দিয়েছে তারা। আর যদি তাই হয় তাহলে তো সামনে মহা বিপদ আমার। দ্রুত গতিতে মাথার ভিতরে ধরা পরার সম্ভবনা ভেবে দেখছি। তিথি এখনো কথা বলে যাচ্ছে...
- ......তুমি সেদিন শেষবার গিয়েছিলে সেদিন খুব আপসেট ছিলাম বাবার মৃত্যু নিয়ে। হঠাৎ করে এভাবে এমন কিছু হয়ে যাওয়া মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়েছে খুব । আবার যখন কিছুদিন পর আব্বুর কলিগ রহমত চাচা কথা বলতে আসলো পুরো ব্যাপারটা নিয়ে তখন তোমার কথা মনে পরলো। সেদিন তোমাকে শেষবার দেখেছিলাম। তুমি হাসপাতালে এসেছিলে বাবাকে দেখতে । হয়তো তুমি শেষ কথা বলেছিলে তার সাথে । রহমত চাচাকে বলার পর তিনি তোমাকে বেশ খোঁজাখুঁজি করেছিলো । আমাকেও বলেছিলো তোমাকে যদি কখনো দেখি তাহলে তাকে জানাতে।
- তো এখন বলছো তাকে ?
- হু আমাদের বিয়ের দিন বলেছিলাম তাকে। আরে তোমার মনে নেই মাথায় হালকা টাক মাথায়, মাঝ বয়সী একটা লোক খুব করে দোয়া করেছিলো বিয়ের দিন। তিনিই রহমত চাচা। তিনি বলেছিলেন কিছুদিন পর তোমার সাথে কথা বলবে । মাত্র আমাদের বিয়ে হয়েছে। কিছুদিন পরেই হয়তো কথা বলা ভাল হবে। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলছে তিথি। মেয়েটার চোখ জোড়া অপূর্ব সুন্দর মনে মনে স্বীকার করে নিলাম । তবে আমার কোন উপায় নেই। একে সরিয়ে দিতে দুনিয়া থেকে। এই সুন্দর চোখ ই তার জীবনের অভিসাপ হয়ে গিয়েছে।
রহমত সাহেব যদি এসে প্রশ্ন করে আমি কি করেছিলাম সেদিন সেখানে কি উত্তর দিবো তাকে। যদি বলি গিয়েছিলাম তবে তখন আমার শশুর অলরেডি মারা গিয়েছে তাহলে কি রকম হয়? নাহ্ ভুল হবে সেটা। একজন মানুষ মারা গেল আর আমি না জানিয়ে চলে এসেছি এটা স্বাভাবিক না। যদি বলি দেখা করে চলে এসেছি তাহলেও সমস্যা হতে পারে। কারণ পোষ্ট মর্টেমে আজকাল বেশ উন্নতি হয়েছে। আমি যে সময়ের কথা বলবো তখন তিনি মারা গিয়েছে। আমি আসার পরেই সে মারা গিয়েছে এটা যে অস্বাভাবিক এটুকু বুঝতে খুব বেশি বুদ্ধিমান হতে হয় না। সিগারেট ধরিয়ে টান টান হয়ে শুয়ে পরলাম । যা করার তারাতারি করতে হবে। জীবনটা বেশ গুছিয়ে নিয়েছি এতবছরে। এ মূহুর্তে কোন ভুল করা চলবে না ।
(চলবে)

মাশুক খান  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম