সবুজ কাঁচ - মাশুক খান (থ্রিলার গল্প) শেষ পর্ব



(পাঁচ)
রুমটা এক অদ্ভুত আলোতে ছেয়ে রয়েছে। না সবুজ না নীল। মাথাটা ঘুরিয়ে বারবার রুমটা দেখছি। যখন দেখছি তখন মনে হচ্ছে এ রুমটা আমার বহুদিনের চেনা। কিন্তুু সাথে সাথে মনে হয় , না কখনো এ রুমে আমি আসিনি। রুমের দেয়ালগুলোর দিকে তাকালাম। অদ্ভুত এক সবুজ রঙের কাঁচ দিয়ে তৈরী করা হয়েছে সেগুলো। সবুজ কাঁচের সবুজের মাঝে থেকে ঠিক সবুজ না আবার নীল ও না এমন অদ্ভুত এক আলো এসে পরছে বারবার চোখে। বুঝতে পারছি এটা আমার কোন এক স্বপ্ন। আর কেন মনে হচ্ছে এ স্বপ্নটা বহুদিন দেখার জন্য আমি অপেক্ষা করেছি। এই অদ্ভুত আলোটাও যেন আমার খুব চেনা আর খুব প্রিয়। তিথির দেওয়া হালকা ধাক্কায় ঘুম ভেঙে গেল। অদ্ভুত হলেও সত্যি মনে হচ্ছে ওর চোখের মধ্যে দিয়ে স্বপ্নের দেখা সবুজ কাঁচ থেকে বের হওয়া আলোটা দেখতে পাচ্ছি। হাই দিয়ে উঠে বসলাম। অফিসে যেতে হবে।
দিনটা স্বাভাবিকভাবেই চলছে। অফিসে কোন সমস্যা ছাড়াই আজকে দিনটা কাটলো। অন্যদিন দেখা যায় বের হয়ে আসতে যাবো এমন সময় অফিসের কোন একজন আসবে কোন কাজ নিয়ে অথবা গল্প করতে । আজকে সেরকম কিছু হলো না । অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাটছি। চাইলে নিজের গাড়িতে করেই যেতে পারি তবে এ মূহুুর্তে সেটা না করাই ভালো । কারণ আমার লাইনে কোন কাজে, নিজের সাথে সংযুক্ত এমন কিছু ব্যবহার করতে হয় না। মিটিং প্লেস এসে দাড়াতেই চোখে বাধলো একজন বেশ স্বাস্থ্যবান লোক হেটে আসছে । কাছে আসতেই চেহারা পরিষ্কার হয়ে আসলো । জাহাঙ্গীর আসছে। জাহাঙ্গীর আমার ডান হাত বলা যেতে পারে। এই কন্টাক্ট কিলিং এ সবসময় একজন সহযোগী লাগে। যেকোন সময়ে এদের লাগবেই। আর বিশ্বস্ততা সবথেকে বড় ব্যাপার। যদি নিজেদের মাঝে বিশ্বস্ততা না থাকে তাহলে ধরা পরার সম্ভবনা ৭০%। জাহাঙ্গীর হচ্ছে আমার সেরকম একজন লোক।
মাথায় পরে থাকা উলের টুপিটা খুলে মাথা চুলকাতে চুলকাতে এগিয়ে আসছে সে। এ মূহুর্তে সে কি ভাবছে এটা মোটামুটি বুঝতে পারছি। তার বর্তমান টেনশন হচ্ছে চুল নিয়ে। কয়েকমাস ধরে খুব চুল পরছে ওর। কয়েকবার টাক হয়েছে যাতে ভালোভাবে নতুন করে চুল গজায় । একসপ্তাহের মধ্যে সম্ভবত তিনবার টাক হয়েছে। হালকা গজানো চুল হাত দিতে দিতে সামনে এসে সোজা সামনের বাড়িতে ঢুকলো সে । তার একটা ব্যবসার কাজে ফ্লাট কিনে রেখেছে এখানে। যদিও আসলে এটা আমাদের মিটিং প্লেস আর অস্ত্র রাখতে ব্যবহার করা হয় । জাহাঙ্গীরের পিছনে আমিও তার ফ্লাটে প্রবেশ করলাম ।
কিভাবে কি কাজ করতে হবে তা আধাঘন্টা বসে বুঝালাম তাকে। পকেট থেকে হাতে আঁকা ছোট একটা ম্যাপ বের করে জায়গা ঠিকমতো দেখিয়ে দিলাম । জাহাঙ্গীর একমনে সব দেখে কথা বলতে শুরু করলো,
- বস আপনি কি সত্যিই এ কাজ করতে চাচ্ছেন ? কন্ঠে যদিও কোন অনুভূতি প্রকাশ পায়নি তার তবে আমার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না সে অনেক বেশি অবাক হয়েছে। হয়তো এমন কিছু তার পক্ষে বিশ্বাস করা কষ্টের। তবে এই প্রশ্ন করা তার জন্য স্বাভাবিক না। জাহাঙ্গীর কখনো কোন প্রশ্ন করে না। আমি যা বলি বুঝিয়ে বলি একবার। কাজ কম্পলিট করা তার দায়িত্ব। কোন ভুল করলে খেসারত তার দিতে হবে। তবে আমাকে এ প্রশ্ন করা তার জন্য অপরাধের পর্যন্তে। প্রায় চার বছর আমার সাথে কাজ করছে সে। কাজ করার প্রথম নিয়ম হচ্ছে কোন জবাবদিহি করতে আমি বাধ্য নই। আমি যা বলবো তাই তার মেনে নিতে হবে । আজকে প্রশ্ন করছে কালকে জবাবদিহি করার জন্য বলতে সাহস পাবে। না একে বেশিদিন দলে রাখা যাবে না ।
- তুমি তোমার পজিশন ভুলে যাচ্ছো জাহাঙ্গীর। আমি ভালো করেই জানি কি করতে হবে আর কি করতে হবে না। চোখ ছোট করে তার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললাম। জাহাঙ্গীর যেন ভয়ে কিছুটা কুঁকড়ে গেল। এরকম গলায় সহজে কথা বলিনা আমি। প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে আজকের কাজের কথা সম্পর্কে বললাম, কখন বের হবো আজ? গাড়ি কি রেডি আছে? গ্যাস আছে? পরে দেখা যাবে কাজ সেরে আসার সময় গ্যাস গায়েব।
- সব ঠিক আছে বস। আমরা চাইলেই বের হতে পারি।
- হুম। ছোট করে উত্তর দিয়ে বের হয়ে আসলাম ঘর থেকে। জাহাঙ্গীর ড্রাইভিং সিটে উঠে বসলো। গাড়িটা যদিও চোরাই তবে এ মূহুর্তে কেউ সমস্যা করতে পারবে না। প্রয়োজন পরলে গাড়িটা ফেলে রেখে চলে আসবো। আমাদের ট্রেস ও করতে পারবে না পুলিশ। জাহাঙ্গীর রাস্তায় তাকিয়ে রয়েছে। চোখমুখ শক্ত করে বেশ দ্রুত গাড়ি চালিয়ে নিচ্ছে সে। যে গতিতে যাচ্ছি এ রকম চললে আধাঘন্টার মধ্যে পৌছাতে পারবো মনে হচ্ছে। পকেটে হাত দিয়ে সেমি অটোমেটিক SIG P250 - FS স্পর্শ করে নিলাম। ৮.১ ইঞ্চি লম্বা , ১.৩ ইঞ্চি প্রশস্ত , উচ্চতায় সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি কালো রঙের ৮২০ গ্রামের ওজনের একটা অস্ত্র ।
সাধারণত কোন কাজে আমি এ অস্ত্র ব্যবহার করিনা তবে বিপদের কাজে কখন লাগে বলা যায় না। SIG P250 সবথেকে বড় সুবিধা হচ্ছে চার ধরনের সাইজে এটাকে পাওয়া যায়। সেগুলো হচ্ছে Full-size, Carry, Compact, Subcompact। আমার এটা ফুল সাইজ। ওজনে ও সাইজে এটা সবথেকে বড় । কনভার্ট করে ওজন কমানো অথবা বুলেটের ধারন ক্ষমতা পরিবর্তন করার জন্য সেরা একটা অস্ত্র। আর বুলেটের ক্যালিবার ও বেশ কয়েক ধরনের ব্যবহার করা যায়। পাঁচ ধরনের ক্যালিবার ব্যবহার করা যায় এটাতে। 9×19mm Parabellum, .357 SIG, .40 S&W , .45 ACP এবং .380ACP। আর বুলেটের রাউন্ডের সংখ্যা যদিও ক্যালিবারের উপর নির্ভরশীল। 9×19mm ক্যালিবারে 17 রাউন্ড, চৌদ্দ রাউন্ড .357 SIG ও .40 S&W আর দশ রাউন্ড .45 ACP । যদিও .40 S&W চৌদ্দ রাউন্ড তারপরও এ ক্যালিবারটা আমার কাছে সেরা। এত বুলেট ও বাস্তব কখনো প্রয়োজন পরে না।
মাথা ঝিম ঝিম করছে। চোখে হাত দিয়ে একটু ঘুম তাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে নিলাম। কোন কাজ হচ্ছে না এভাবে। ঝিম ঝিম ভাবটা খুব পরিচিত। পুরাতন কিছু স্মৃতি ফিরে আসার সময় হয়েছে হয়তো আবার। গাড়িটা থামতেই নেমে পরলাম। হারুন নামের এক স্থানীয় রাজনীতিবিদ কে মার্ডার করার কাজ পরেছে আজ। দুইদিনের পাওয়া তথ্য অনুসারে আজকে এখানে আসার কথা তার। এ সময়ে এই পথে সে তার ফ্যাক্টরি থেকে বাসায় ফিরে যায়। জাহাঙ্গীর সামনে একটু এগিয়ে গিয়ে ফাঁকা রাস্তায় দাড়িয়ে রয়েছে। প্লান আপাতত হারুন কে থামানো । যখন বাইকে চড়ে এ পথে যাবে তখন তাকে সাহায্যের কথা বলে থামানো । তারপর বাকিটা কিভাবে করবো তখন দেখা যাবে। হাতে সিগারেট নিয়ে দাড়িয়ে রয়েছি। জনমানবহীন এক অঞ্চলে এসেছি যেন। বাতাস যেন আসন্ন বিপদের সংকেত পেয়েছে। এক জায়গায় যেন স্থির হয়ে রয়েছে বাতাস।
গাড়ির শব্দ শুনে একবার ঘুরে তাকালাম। হারুন না এ। মাথাটা ঘুরিয়ে আবার অন্যদিকে নজর দিলাম। হালকা ঠান্ডা বাতাস শুরু হয়েছে এখন। বাতাস উপভোগ করছিলাম এমন সময়ে দ্বিতীয় বারের মত বাইকের আসার শব্দ শুনতে পারলাম। না তাকিয়েও বুঝতে পারছি কে এসেছে এবার। তারপরও মাথাটা ঘুরিয়ে তাকালাম। জাহাঙ্গীর এরমধ্যে হারুন সাহেবের সাথে কথা বলতে শুরু করছে। এগিয়ে যেতে শুরু করলাম তাদের দিকে। কি কি কথা বলছে যদিও অসুবিধা হচ্ছে না বুঝতে । তার বাইকে চড়ে জাহাঙ্গীর সামনের স্টেশনে যাবে আপাতত একথাই হয়তো বলছে জাহাঙ্গীর। কাছে আসতে আসতে জাহাঙ্গীর উঠে বসলো হারুন সাহেবের বাইকের পিছনে। বসার সাথে সাথে জাহাঙ্গীরের হাতে একটা ছুরি চলে এসেছে। বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না কিছুক্ষণের মধ্যে এটা হারুন সাহেবের গলাতে চালনো হবে । আপাতত আমার কাজ হচ্ছে হারুন সাহেবের মনযোগ আমার দিকে ধরে রাখা। যাতে কোনভাবে সে ঠেকাতে না পারে জাহাঙ্গীরের আক্রমণ।
- এই যে ভাই... একটু জোরেশোরে ডাক দিলাম তাকে। হয়তো হারুন সাহেব প্রস্তুত ছিলেন না এ রকম ডাকের জন্য। কিছুটা চমকে উঠলো সে।
- জ্বি.. চমকটা কোন ভাবে সামলিয়ে উত্তর দিলো সে ।
- আপনার নাম কি ?
- হারুন... হারুন ইশতিয়াক । স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দিলেন তিনি । তবে সেটা তার জীবনের শেষ কথা ছিলো। জাহাঙ্গীর আক্রমণ চালিয়ে দিয়েছে এরমধ্যেই। মনযোগ যতটুকু নষ্ট করার দরকার ছিলো তা হয়ে গিয়েছে। গলগল করে রক্ত বেয়ে পরছে হারুন সাহেবের গলা বেয়ে। খচখচ করে আওয়াজ হচ্ছে ,সাথে শ্বাসকষ্টের ঘরঘর শব্দ। লোকটা জীবনে হয়তো এত যন্ত্রণা কখনো ভোগ করেনি। তবে একবারই তো। একটু পর আর কষ্ট থাকবে না। তখন চির শান্তি।
হারুন সাহেবের চোখের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। হেলমেটের মাঝে মাথাটা অসহ্য যন্ত্রণায় কাঁপছে তার । একটা জিনিস শুধু অপূর্ব লাগছে আমার কাছে। সেটা হচ্ছে হারুন সাহেবের চোখের দৃষ্টি। অদ্ভুত এক আলো বের হচ্ছে সেখানে থেকে যেন। স্বপ্নে দেখা সবুজ কাঁচ থেকে অদ্ভুত সবুজ নীল আলোর মত মনে হচ্ছে। সেই আলোতে যেন মিশে রয়েছে ভয়, আতঙ্ক। তবে সবথেকে বেশি যেটা রয়েছে সেটা হচ্ছে হয়তো ভালোবাসা। বেঁচে থাকার প্রতি ভালোবাসা। একমনে তাকিয়ে রয়েছি তার চোখের দিকে। তার বেঁচে থাকার আকুতির দিকে।

(ছয়)
বাস থেকে নেমে প্রথমে রাস্তার অন্যপাশে চলে এসে মার্কেটে ঢুকলাম । লিফটে করে চারতলায় উঠে সিড়ি বেয়ে অন্য পাশে নামলাম। আমার গাড়িটা আপাতত এখানে পার্ক করা রয়েছে। তবে যদি বাস থেকে নেমে সোজা গাড়িতে উঠি তাহলে মানুষের মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। তাই এ পদ্ধতি ব্যবহার করা। গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে একবার তাকিয়ে থমকে দাড়ালাম । ষাট বছরের বেশি বয়সী সাদা পোশাক পরিধান করা একজন লোক বসে রয়েছে সেখানে। চুল দাড়ি দুটোই শুভ্র রঙে। খুব পরিচিত এক মুখ। যদিও অনেকদিন পর দেখছি ।
- কেমন আছিস সিমু ? কথাটা বলে উঠলো সে।
- সিমু বলে তোমাকে না ডাকতে নিষেধ করেছি দাদা ?
- কেন সিমু বললে হয় কি? সিমরান বিশাল বড় নাম। নাম নিতেই তো দুইবার দম নেওয়া লাগে। হাসতে হাসতে বলতে লাগলো আমার দাদা আশিকুজ্জামান । কথা না বাড়িয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পরলাম। মাথায় আবার ঝিম ঝিম শুরু হয়েছে । কথা না বাড়িয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে নিলাম। পাশে দাদার গলা আবার শোনা গেল।
- দিন দিন বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিস তুই। গুরুজনের সামনে সিগারেট টানোস। ভদ্রতা শ্রদ্ধা সব খুইয়ে বসলি নাকি একজন খুনি হওয়ার সাথে সাথে ?
- তুমি জীবিত থাকলে তো শ্রদ্ধা করবো। মৃত মানুষের সামনে সিগারেট টানলে ক্ষতি কি ? আর আমাকে খুনি বলবা না।
- তুই খুনী। তোকে খুনী ছাড়া কি বলবো ? কেন মরে গেলে সমস্যা কি ? আমার কি কোন অস্তিত্ব নেই ? এই যে তোর সাথে গত আট বছর ধরে গল্প করছি সেটা কি বাস্তব না ?
- গত আট বছর ধরে বিশাল যন্ত্রণা দিচ্ছো। এবার থামো। তুমি বেশ ভালোভাবেই জানো এইসব আর ভালোলাগে না আমার। আর কতদিন এভাবে...
কথাটা শেষ করলাম না। দাদা বারো বছর আগে মারা গিয়েছে। আমি আর দাদা যখন ঘুরতে বেরিয়েছিলাম তখন এক ট্রাক এসে দাদাকে ধাক্কা দেয়। সপ্তাহ খানেক হাসপাতালে অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করে মারা যান তিনি। আমার সবথেকে প্রিয় মানুষ ছিলো আমার দাদা। পরিবারের মধ্যে দাদা কে ছাড়া আমি থাকতে পারতাম না তাই তার মৃত্যু মেনে নিতে বেশ কষ্ট হয়েছে। হয়তো সেটাই এই রোগ সিজোফ্রেনিয়ার ট্রিগার করেছে। সে আমার সাথে এসে প্রায় গল্প গুজব করতো। পরিবারের লোক ডক্টর দেখালো তারপর সুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। চার বছর পর আবার শুরু হয়। তবে এবার বুঝতে পারি যে তিনি আমার কল্পনা। সবটাই সিজোফ্রেনিয়া রোগের জন্য হচ্ছে। বিপদে পরলে যখন আমার সাহায্যের প্রয়োজন পরে তখন আমার মস্তিষ্ক তাকে নিয়ে আসে। hallucination ঘটে তখন। তবে তিনি সাধারণত আমি বড় কোন বিপদে না পরলে আসেনি আমার কাছে। বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না আমার অবচেতন মন কোন বিপদ আশা করছে শীঘ্রই। আবার কথা বলতে শুরু করলো দাদা...
- তিথিকে সরিয়ে দিচ্ছিস তাহলে ? মেয়েটা সুন্দরী অনেক রে। এত অল্প বয়সে তাকে খুন করাটা কি ঠিক হবে? অন্য কোনভাবে কি সমস্যা টা সমাধান করতে পারিস না ?
- না সম্ভব না। আজকে তার বাবার কলিগ রহমত সাহেব এসেছিলো। আমি তাকে দেখেই অফিস থেকে বেড়িয়ে পরি। এখন তার সাথে দেখা করা বিপদজনক। তার সাথে দেখা করার আগেই তিথিকে যদি সরিয়ে দেই তাহলে আমার বিপদে পরার সম্ভাবনা কমে আসবে ।
- রহমত সাহেব যদি সন্দেহ করে ?
- করে লাভ কি ? তার কাছে কোন প্রমাণ থাকবে না আমি গিয়েছিলাম সেদিন হাসপাতালে তিথির বাবা আমিনুল রহমান কে দেখতে। যদি অস্বীকার করি তাহলে সে কোনভাবেই আমাকে ফাসাতে পারবে না ।
- খুনটা কি কালকেই করবি ? দাদা কথার পিঠে উত্তর দিয়ে যাচ্ছে।
- উপায় নেই কোন। যত দেরী তত বেশী বিপদজনক হয়ে যাবে। তাছাড়া খুন বলার কোন কারণ দেখছি না এক্সিডেন্টে মারা যাবে তিথি। প্রাইভেট কার এসে ধাক্কা দিবে তিথিকে । স্পট ডেড। গাড়ি থাকবে চোরাই। ফলে গাড়ির লিংক ধরে কোন সমস্যা হচ্ছে না। তাছাড়া এদেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় বহু লোক মারা যায়। এটা খুব বেশী অস্বাভাবিক হওয়ার কারণ দেখছি না। কথাগুলো বলে যাচ্ছি দাদাকে। যদিও বুঝতে পারছি এটা অযথা। যে মানুষটার কোন অস্তিত্ব নেই তাকে একথা বলার কোন মানে হয়না। অর্থহীন কথাবার্তা ।
- বাদ দে না সিমু... এবার তিথিকে ছেড়ে দে । দরকার হলে রহমত সাহেব কে মেরে ফেল। আর তিথিকে নিয়ে সংসার কর। অনেক হয়েছে তো... বুঝলি সিমু... কিরে কথা বলছিস না কেন ? সিমু... ওই সিমু... কথা বল...সিমু....
বারবার ডেকে যাচ্ছে দাদা। কোন উত্তর দিচ্ছি না তার কথার। এখন মাথায় শুধু সিমু সিমু করে করে ডাক দেওয়া শুনতে পাচ্ছি। মাথায় ঝিমঝিম ভাবটা অনেক বেড়ে গিয়েছে। দাদার ডাকের ধরন পরিবর্তন হয়ে আস্তে আস্তে যেন দীর্ঘ হচ্ছে। দীর্ঘ থেকে আরো দীর্ঘ হচ্ছে।

(সাত)
অফিসে বসেই প্রথমে থমকে গেলাম। আমার বসার জায়গায় একজন মানুষ সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় বসে রয়েছে । তবে নগ্নতার থেকে যেটা সবথেকে বেশি ভয়াবহ ব্যাপার সেটা হচ্ছে চেয়ারে বসে থাকা মানুষটি। এক পলক দেখেই চিনতে পেরেছি লোকটি কে তারপরও তাকিয়ে রয়েছি বোঝার জন্য আমি যা দেখছি তা ঠিক কিনা। চেয়ারে বসে থাকা ব্যক্তিটি হচ্ছে তিথির মৃত বাবা অর্থাৎ আমার মৃত শশুর আমিনুল রহমান । লোকটাকে আমি নিজের হাতে কয়েক বছর আগে খুন করেছি। তার এখানে এভাবে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে বসে থাকা কোনভাবেই সম্ভব না। বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছি এটা আমার সিজোফ্রেনিয়া রোগের কারনেই হচ্ছে।
এখন আমি সিজোফ্রেনিয়া প্রথম স্টেজ prodromal ছাড়িয়ে দ্বিতীয় স্টেজ Active বা Acute রয়েছি এটা বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পারছি। এক্টিভ স্টেজে অডিও ও ভিজুয়াল hallucinations দুইটাই ঘটে। আমার হাতে খুন হওয়া মানুষটিকে হয়তো দেখা সেই হিসাবে খুব বেশি অস্বাভাবিক না। নিজের চেয়ারের দিকে না এগিয়ে অন্য একটা চেয়ার টেনে বসে অফিসের পিওন হাফিজ কে ডাকলাম। এক কাপ চা সে টেবিলে রেখে চেয়ার ঝেড়ে দিলো। চেয়ার ঝাড়ার সময়ে আমিনুল রহমান উঠে গিয়েছিলো। চেয়ার পরিষ্কার করার সাথে সাথে তাকে সুযোগ না দিয়ে দ্রুত বসে পরলাম। হয়তো আমিনুল রহমান বুঝতে পেরেছে আমি তাকে আপাতত এখানে বসতে দিচ্ছি না। সে অন্য একটা চেয়ারে বসে পড়লো সেই নগ্ন অবস্থায়।
পিওন হাফিজ চলে যাচ্ছে। তার দিকে একবার তাকিয়ে দেখলাম। আমিনুল রহমানের অস্তিত্ব নিয়ে তার মাঝে কিছু বিরাজ করছে না। অর্থাৎ সে কিছু দেখতে পাচ্ছে না । যা দেখছি শুধু আমি একাই। অর্থাৎ আমার ধারনাই সঠিক। চায়ে এক চুমুক দিকে তাকালাম ভালো করে আমিনুল রহমানের দিকে। সম্পূর্ন নগ্ন অবস্থায় সে চেয়ারে বসে আজকের খবরের কাগজ খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ছে। এ মূহুর্তে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবথেকে কুৎসিত দৃশ্য হচ্ছে নগ্ন মানুষ দেখা । মেজাজ ঠান্ডা করার চেষ্টা করছি। এ মূহুর্তে আমার কি করা উচিত ? প্রশ্ন করা উচিত যে আমিনুল সাহেব কেমন আছেন বলা ? তার কাপড়ের কি ঘটেছে প্রশ্ন করা ? সেটাই হয়তো স্বাভাবিক হবে। তবে একজন মৃত মানুষ যার এই পৃথিবীতে কোন অস্তিত্ব নেই তাকে এ প্রশ্ন করা মানে রোগটাকে প্রশয় দেওয়া। এ মূহুর্তে এ কাজটা আমি করতে পারিনা। কোন ভাবেই আমার মনকে প্রশয় দিতে পারি না তার অস্তিত্ব সম্পর্কে।
- তোমার রুম এত ঠান্ডা কেন সিমরান ? কিছু মনে করো না। আমি তোমাকে আপনি করে বলতে পারবো না। শত হলেও তুমি আমার মেয়ের জামাই। তোমাকে আপনি কিভাবে বলি ! এসির অফ করে দেও। আর এক কাপ খুব গরম ধোঁয়া ওঠা রং চা দিতে বলো। চিনি যেন কম হয়। সবাই আবার চা বানাতে পারে না। বেশি চিনি দিলে তখন মনে হয় সরবত খাচ্ছি। আর কম গরম হলে মনে হয় স্রেফ প্রস্রাব খাচ্ছি... হা হা হা... কথাটা বলে উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো সে। কথা না পিওন হাফিজ কে আবার ডাক দিয়ে আবার চা দিতে বললাম । আপাতত আমিনুল রহমান যা চায় তাই দেওয়াই ভালো। যত সময় যাবে যদিও সমস্যাটা ততটাই বেড়ে যাবে। এক সময় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাবো ।
যদিও কোন মুড ছিলো না আজকে কাজ করার তবুও জোড় করে দুপুর পর্যন্ত কাজ করলাম। কাজের ফাকে কখন যেন আমিনুল রহমান চলে গিয়েছে। তবে তার চলে যাওয়াতে খুশি হওয়ার থেকে চিন্তিত বোধ করছি। বেশ চিন্তিত এমন সময়ে মোবাইল বেজে উঠলো। পকেট থেকে মোবাইলটা বের করতেই দেখলাম বাসায় থেকে কল এসেছে। যদিও বুঝতে পারছি কি হয়েছে। কয়েকবার কল বেজে কেটে গেল। দ্বিতীয়বার কল আসতেই রিসিভ করলাম। ওপাশে ছোট বোন নিপার ভাঙা গলার স্বর শোনা যাচ্ছে ।
- ভাইয়া মনটা শক্ত কর।
- কেন কি হয়েছে?
- তুই তারাতারি রেসিডেন্ট মেডিকেল হসপিটালে চলে আয়। তারাতারি আয়। ভাবী মারা গিয়েছে গাড়িতে এক্সিডেন্ট করে । তারাতারি চলে আয়... এক্ষুনি...
কোন কথা বললাম না। যদিও জানি এখন এ খবরটা আসার কথা। তারপরও কেন যেন হতাশা অনুভব করছি। তাহলে কি আশা করেছিলাম হয়তো এ খবরটা শুনতে হবে না? কিন্তুু আমি নিজেই তো জাহাঙ্গীর কে পাঠিয়েছিলাম একাজ করার জন্য তাহলে কেন এমন অনুভব করছি ?

(আট)
তিথি হাসপাতালের বেডে শুয়ে রয়েছে। শান্ত নিথর ভঙ্গিতে। আমার সম্ভবত কাঁদা উচিত। তবে কেন যেন কান্নার অভিনয় করতে ইচ্ছে করছে না। কেন যেন মনে হচ্ছে তিথি আমার সব মনের কথা বুঝতে পারছে। ও আমাকে দেখছে। ক্লান্ত ভঙ্গিতে এসে কেবিনের বাহিরে এসে বসে পরলাম। রাজ্যের ক্লান্তি যেন শরীরে পেয়ে বসেছে । চুপচাপ কত সময় বসে রয়েছি বলতে পারছি না। এক সময় অনুভব করলাম পাশে কেউ বসে রয়েছে। মাথা ঘুরিয়ে তাকালাম । তিথির বাবার কলিগ ডিটেকটিভ রহমত সাহেব বসে রয়েছেন। আর তার ঠিক পাশে তিথির বাবা আমিনুল রহমান নগ্ন অবস্থায় বসে রয়েছেন। যদিও আমিনুল রহমান কে শুধু আমি একাই দেখতে পাচ্ছি। রহমত সাহেবের চোখ জোড়া ভেজা। চোখ দুটো লাল হয়ে রয়েছে। বোঝা যাচ্ছে সে খুব কান্নাকাটি করেছে তিথির মৃত্যুর জন্য। তিথি মেয়েটা অনেক ভাগ্যবান ছিলো, অনেকের ভালোবাসা পেয়েছে । নিজের অজান্তে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে গেল একটা। নিজের ভিতরে খুব খালি খালি অনুভব করছি। কথা বলতে শুরু করলো রহমত চাচা,
- বাবা সিমরান আমি জানি এ মূহুর্তে তোমাকে এ প্রশ্ন করা ঠিক হবে না। তারপরও করছি। কারণ তোমাকে আমি পাইনি প্রশ্ন টা করার জন্য। তুমি কি তিথির বাবাকে দেখতে দ্বিতীয়বার গিয়েছিলে পরেরদিন ?
- তিথিও আমাকে একথা বলেছিলো। আমার এমন কিছু মনে পরছে না যে তাকে দেখতে গিয়েছিলাম কি না। ওই এলাকায় আমার কিছু বন্ধুবান্ধব রয়েছে। তাদের সাথে আড্ডা দিতে আমি প্রায় যেতাম আগে।বললাম আমি। রহমত সাহেব যেন এটাই আশা করেছিলো আমার কাছে থেকে। আমি ভালোভাবেই জানি রহমত সাহেব খোঁজ নিয়ে দেখেছে এরমধ্যে। সে জেনেছে আমার নিশ্চয়, ওই এলাকায় বন্ধুবান্ধব রয়েছে। অতএব সে সন্তুষ্ট হয়েছে। আর কখনো হয়তোবা আমাকে এ বিষয় নিয়ে বিরক্ত করবে না।
- তিথির বাবাকে খুন করা হয়েছিলো হাসপাতালে। তিনি সুস্থ ছিলেন। তার কোন শত্রু তার এক্সিডেন্টের সুযোগ নিয়ে তার ভেইনে খালি সিরিঞ্জ পাম্প করে দেয়। তার ফলে তিনি মারা যায়। এটা ভিতরের খবর। দুই একজন ছাড়া কেউ কথা জানে না । যাই হোক নিজেকে সামলিয়ে নেও। তিথির ভাগ্য ভালো ছিলো তাই সে তোমার মত একজন স্বামী পেয়েছিলো । যে তাকে এতটা ভালোবাসে যে তার বাবার অভাব ঘুচিয়ে দিয়েছে। ওর বিয়ের পর ওকে আমি অনেকদিন পর এত আনন্দের সাথে দিন পার করতে দেখেছিলাম। চোখের পানি মুছতে মুছতে রহমত সাহেব কথাগুলো বলছে । কোন কথা না বলে উঠে দাড়ালাম। হাসপাতাল থেকে নিচে নেমে গাড়ির কাছে চলে আসলাম। জাহাঙ্গীর দাড়িয়ে রয়েছে গাড়ির ঠিক পাশেই। গাড়ির কাছে আসতেই ও গাড়ির ড্রাইভিং সিটে চড়ে বসলো।
মাথাটা ঘুরিয়ে পিছনের সিটে তাকালাম। দাদা আর তিথির বাবা আমিনুল সাহেব দুইজন পাশাপাশি বসে রয়েছেন। দাদা সাদা রঙের পাঞ্জাবি আর পায়জামা। সাদা বড় দাড়ি আর মাথায় সাদা কাপড়ের টুপি দিয়ে বসে রয়েছেন। আর আমিনুল রহমান আগের মত সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে বসে রয়েছেন। কোন অদ্ভূত কারণ দাদা আজ কোন কথা বলছেন না । একবারও আমাকে সিমু বলে ডাক দেননি। খালি রাস্তা দিয়ে দ্রুত বেগে গাড়ি চালিয়ে নিচ্ছে জাহাঙ্গীর। নতুন কেনা গাড়ি। কয়েকদিন আগে এটা জোগাড় করেছে কোথায় থেকে যেন। গাড়ি থামতেই বুঝতে পারলাম তার বাসায় নিয়ে এসেছে সে। জাহাঙ্গীরের বাসায় খুব অল্প কয়েকবার এসেছে কাজ ছাড়া । গাড়ি থেকে নামতেই অনুভব করলাম হাতে আমার SIG P250 কখন যেন চলে এসেছে। কয়েকবার সাইলেন্সার লাগানোর পর বের হওয়া যে চাপা ধপ ধপ শব্দ হয় ,সেটা শুনে বুঝতে পারলাম জাহাঙ্গীরের বুকে আমি গুলি চালিয়ে দিয়েছি। অবাক চোখে সে তাকিয়ে রয়েছে।তবে এটা নিয়ে কোন আফসোস হচ্ছে না। ও আমার শেষ প্রমাণ ছিলো খুনের। ও যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন আমি নিরাপদ না। গাড়ির ব্যাকসাইডের কোনভাবে জাহাঙ্গীরের লাশটা রেখে লক করে দিলাম।
আগামীকাল জাহাঙ্গীরের লাশের ব্যবস্থা করা যাবে। আপাতত এখানেই থাকুক। জাহাঙ্গীরের লাশ গাড়ির পিছনে রেখেই ড্রাইভ করে চলে আসলাম নিজের বাসায়। কেউ ঘরে নেই। সবাই কোথায় সেটা নিয়ে এ মূহুর্তে ভাবতে ইচ্ছে করছে না। রুমে ঢুকে চারদিকে একবার তাকালাম। কেউ নেই ঘরে। মনে মনে আশা করেছিলাম হয়তোবা দাদা থাকবে ঘরে অথবা আমিনুল রহমান । কেউ নেই, থাকলে হয়তো কিছুক্ষণ গল্প করা যেত। খাটে শুয়ে পরলাম। তিথির মোবাইলটা অবহেলায় পরে রয়েছে। কি মনে করে যেন কাছে টেনে নিলাম।
- যা করছিস তা কি বুঝেশুনে করছিস ? দাদা যেন কখন পাশে এসে বসেছে।
- না বুঝে করার কি আছে? পাল্টা উত্তর দিলাম তাকে।
- আচ্ছা তোর যা ইচ্ছে হয় কর। তোর সাথে হয়তো এটা আমার শেষ কথা।
- আমি জানি দাদু
- ভালো থাকিস সিমু
কেন যেন এ মূহুর্তে মনে চাচ্ছে দাদাকেও বলি আপনিও ভালো থাকবেন। কিন্তুু বলছি না। তার কোন অস্তিত্ব নেই। সম্পূর্ণ আমার মানসিক রোগের ফলাফল তিনি। তাকে এভাবে মূল্য দেওয়া বোকামি। তারপরও ইচ্ছে করছে এই বোকামি করতে। কল রিসিভ করার শব্দের সাথে সাথে একটা কন্ঠের কথা শুনতে পারলাম,
- হ্যালো রহমত সাহেব ? আমি সিমরান বলছিলাম। তিথির স্বামী। আপনি একটু কষ্ট করে আমার বাসায় আসবেন? আমি জাহাঙ্গীর কে খুন করেছি। তার লাশ এই মূহুর্তে তার গাড়ির ব্যাকসাইডের আমাদের বাসায় পার্কিং লটে রয়েছে । তাকে দিয়ে আমিই তিথিকে খুন করিয়েছিলাম। আমিই আমিনুল রহমানের ভেইনে এয়ার পাম্প করেছিলাম। আপনি পুলিশ নিয়ে আমার বাসায় চলে আসুন।কথাগুলো শুনে কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে রহমত সাহেব কথা বললেন,
- আমি আধা ঘন্টার মধ্যে আসছি। উত্তর দিলো সে।
তার কল কেটে দিয়ে রুমের লাইট অফ করে দিয়ে শুয়ে পরলাম। সমস্ত শরীর ক্লান্ত হয়ে ছেড়ে দিয়েছে। চোখটা বন্ধ করার সাথে সাথে একরাশ ঘুম চেপে ধরলো। সাথে সাথে স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। সবুজ কাঁচের দেয়ালের মধ্যে দিয়ে অদ্ভুত সেই সবুজ নীল আলো বের হয়ে আসছে। শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে। পাশে তাকাতেই দেখি তিথি বসে বসে সেই অদ্ভুত আলোটা দেখছে। আজ কেন যেন মনে হচ্ছে যতক্ষন ইচ্ছে হয় আজ এই আলোটা দেখতে পাবো। তবে আজ আর আলো দেখতে ইচ্ছে করছে না। তিথির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে। অদ্ভুত হলেও তার চোখ জোড়া এখন, সবুজ কাঁচ থেকে বের হওয়া আলোর মত আলো দিচ্ছে। তবে হয়তোবা এটা অন্য আলো থেকে বেশি সুন্দর। তিথির এই সবুজ টলমলে কাঁচের মত চোখজোড়ার দিকে তাকিয়ে সমস্ত জীবন ব্যয় করতেও আমি রাজি।
(সমাপ্ত)

মাশুক খান 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম