দ্য মুরস মার্ডারাস

Syeda Arifa Sultana

ষাটের দশকের কথা। যখন ব্রিটেনের প্রজন্মকে মাতিয়ে রেখেছিল "দ্য বিটলস" নামের জনপ্রিয় ব্যান্ড। বিটলসের হাওয়ায় দেখা যেত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বুনো ও উগ্র ফ্যাশন এবং এই ব্যান্ডটির প্রতি দারুন ভক্তি।। সেই সময়টিতেই ঘটে সবচেয়ে ভয়াবহ,নৃশংস,বিবেকবর্জিত খুন ঘটে যা তখনকার সাধারণ মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার তৈরি করে দেয়।

ভংয়কর এই খুনগুলো সংঘটিত হয় মিরা হ্যান্ডলি(Myra Hindley) এবং আইয়্যান ব্র্যাডি ( Iyan Brady) নামক জুটি দ্বারা।
নিষ্ঠুর আর ভয়াবহ এই খুনিদের খুনের শিকার হয়েছিল ছোট ছোট কমলমতি বাচ্চারা। যাদের মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী শিশুটির বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর।।
এর আগে এমন খুনের বর্ণনা কোন জুরির সামনে বর্ণিত হয়নি।ঘটনাগুলো এতটা বিভৎস আর নৃশংস ছিল যে খুনের বর্ননা শুনে জুরিরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। হতবাক হয়ে শুনেছিলেন কিভাবে তারা ছোট শিশুদের প্রলুব্ধ করে অপহরণ করেছিল,নিষ্ঠুরভাবে ধর্ষণ করে এবং তাদের খুন করে বর্জিত পেনাইন জলাভূমিতে
(Penine Moors) এ পুতে রেখছিল।।

১৯৬৫ সালে মিরা ও আইয়্যান গ্রেপ্তার হয়। ডেভিড স্মিথ নামক ব্যক্তি তাদের বিকৃত রুপ প্রথম দেখতে পান। সে দেখতে পায় যে মিরা এবং আইয়্যান তাদের বাড়িতে কোন মানবদেহকে টুকরো করে বাক্সের মধ্যে ভরছে। এই ঘটনা দেখে তিনি কাছের টেলিফোন বুথ থেকে পুলিশকে খবর দেয়।পুলিশ এসে ডেভিড এর মুখ থেকে কাঁপা কাঁপা গলায় সব কিছু শুনেন এবং তাদেরকে খোজার নির্দেশ দেন। শত শত পুলিশ ও গোয়েন্দার প্রচেষ্টায় পরিত্যক্ত ও জলাভূমিতে খোঁজ করার পর ১০ বছর বয়েসী একটি মেয়ে (Lesley Ann Downey) এবং ১২ বছরের একটি ছেলের লাশ (John Kilbride) তারা পায়।


হত্যাকান্ডটির সবচেয়ে বিভৎস ব্যাপার ছিল এই যে, পুলিশ অফিসাররা যখন তাদের বাড়িতে হানা দেয় সেখান থেকে তারা প্রচুর রক্তের বোতল ও এসিডের শিশি পাওয়া যায়। জানা যায় যে, তারা এসিড দিয়ে বাচ্চাদের শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে ফেলতো। তাছাড়াও মিরার ঘরে কিছু ক্যাসেট ও ছবি পাওয়া যায়।তাদের এই ক্যাসেটগুলোতে ছিল শিশুদের জীবনের শেষ মূহুর্তের মরণপণ চিৎকার ও আর্তনাদ। বাচ্চাদের উপর নির্যাতনের ছবি ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থার ছবি তোলে মিরা ও আইয়্যান শখ করে যার মধ্যে একটি ছবি তে দেখা যায় মিরা দুটি কবরের উপর গর্বিত ভাবে পা তেলে দাঁড়িয়ে আছে।
এই ছবি ও ক্যাসেটগুলোই ছিল তাদের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান সাক্ষী। বিচারের রায়ে পুলিশ অফিসাররা জানান তাদের সম্পূর্ণ ক্যাসেট শেষ করতে তাদের সময় লেগেছিল ১৮ দিন। আদালতে শুধুমাত্র Lesley Ann Downey এর রেকর্ড শোনানো হয়। প্রায় দুঘন্টা এই শুনানিকে শতাব্দীর সেরা শুনানিও বলা হয়।
যখন আইয়্যানকে তার বক্তব্য তুলে ধরতে বলা হয় তখন সে খুব স্বাভাবিকভাবে বলেছিল,"আমি লজ্জিত"। মিরার যখন সকল অপরাধ প্রমাণিত এবং সে দোষী সাব্যস্ত হয় তখন সে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে "আমি নিষ্ঠুর ছিলাম।আমি তখন অনেক নিষ্ঠুর হয়ে গিয়েছিলাম।"
নিষ্ঠুর এই অপরাধী যুগলদের সাজা হয় মৃত্যুদন্ড। তবে মিরাকে ১০ বছরের কারাদন্ডের পর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। যদিও লর্ড লংফোর্ড নামক একজন সংস্কার সাধক তাকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনের স্বাদ দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু জনতার প্রতিবাদে ও তার অপরাধের সেই ভয়ংকর সাক্ষ্য প্রমানগুলো আগের শাস্তি বহাল রাখে এবং ফাঁসি দেওয়া হয়।

নিচে মিরা(বামে) ও আইয়্যানের(ডানে) ছবি দেওয়া আছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম