লিখাঃ রাজীব চৌধুরী
মানুষ সব সময় অতিপ্রাকৃত-অভিশপ্ত ও অতিলৌককতার পেছনে ছুটেছে। কেউ কেউ এটাকেই জীবনের ধ্যান জ্ঞান চিন্তা করে এর পেছনেই ব্যয় করেছে পুরো জীবন। লিখেছে বই। সেই বইগুলো আবার খারাপ বই হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। কোন কোনটা বিখ্যাত হয়ে গেছে। কোনটা লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে ফেলা হয়েছে। এমনই কিছু বই নিয়ে লেখাটি তৈরি করা।
বুক অফ সয়গাঃ
এটি ষোলশো শতকে লেখা একটি যাদুবিদ্যার বই। ধারণা করা হয় এটি লিখেছিলেন এলিজাবেথিয়ান স্কলার "জন ডি"। জন ডি একজন পলিম্যাথ ছিলেন। একইসাত্থে তিনি একজন দার্শনিক, জ্যোতির্বিদ, রাণী এলিজাবেথের (১ম) এর পরামর্শক এবং গণিতবিদ। রেনেসাঁর সময়কালে যখন সব যাদুবিদ্যাচর্চা
কারীকে হত্যা করা হচ্ছিল তখনই এই বই এর পান্ডুলিপি লেখা হয়। এই বইতে কী নেই? যাদুবিদ্যা-অপদেবতাবিদ্যা-বিভিন্ন অপদেবতাদের নামের তালিকা ও নানান জ্যোতির্বিদ্যার বিষয় এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কাব্বালা ধর্মের সাথে যাদুবিদ্যার নানান বিষয় মিশ্রিত করে এই বই লেখা হয়েছিল। এর লেখার ভাষা ছিল প্রাচীন হিব্রু। কিন্তু এটাকে উলটো অক্ষরমালায় লেখা হয়েছিল। যাতে এর লেখা সহজে কেউ পড়তে না পারে।ধারণা করা হয় এই বইতে প্রেতাত্মা বশে আনার প্রায় সব কৌশলই বর্ণনা করা আছে।কিন্তু এই ভাষা আটশোকোটি মানুষের কেউই পড়তে পারেনা। এটাই প্রেতাত্মা বশে আনতে না পারার মূল কারণ হয়তো ।
ভয়নিখের পান্ডুলিপিঃ
নিউইয়র্কের এক পুরোনো বই ব্যবসায়ী ভয়নিখ একদিন পুরোনো অনেকগুলো বই এর সাথে একটি পান্ডুলিপিও কিনে ফেলেন যা তিনি পড়তে পারেন নি কখনো। তিনি এটা অন্যবইগুলোর মতো বিক্রি করে দিলেন। কিন্তু বিক্রির পরেই বুঝতে পারলেন এটা অমূল্য একটা পান্ডুলিপি যা তাঁকে অমর করে রাখবে পৃথিবীতে। এই পান্ডুলিপির পাঠ এখনো কেউ উদ্ধার করতে পারেন নি। এতে নানান রকম উদ্ভট সব চিত্র আঁকা আছে। এসব চিত্র বিচিত্র এতই যে এগুলোর পাঠোদ্ধার করার সাধ্য মানুষের নেই। কেউ কেউ ধারণা করেন এককালে মানুষের মাংস কেটে স্বর্ণ তৈরির বিভিন্ন উপায় এই বই এ লেখা আছে। কিন্তু এগুলো পড়তে না পারার দরুন সোনা তৈরি সম্ভব হচ্ছেনা। অজানা এক বর্ণমালায় পুরো বইটি লেখা হয়েছে। আমেরিকার মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের বিভিন্ন অফিসার এঁকে ডিকোড করার নানা চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এর প্রথম অংশে নানান গাছগাছালির ছবি দেয়া আছে। সমস্যা হল এইসব গাছের অস্তিত্বই পৃথিবীতে নেই। এমন গাছ কেউ কখনোই দেখেনি তেমন সব গাছ আঁকা আছে এতে। এর দ্বিতীয় অংশে নানান ডায়াগ্রাম আছে। যা অনেকটা জোডিয়াক টেক্সট এর মতো। কিন্তু এগুলো ও পাঠযোগ্য নয়। শেষ অংশে নানান ভঙ্গিতে উলঙ্গ নরনারীর চিত্র আঁকা। এগুলো একবারে বাকোয়াজ হিসেবেও ফেলে দেয়া যাচ্ছেনা কারণ কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়ার কথা এখানে চিত্রিত আছে যেগুলো অনেক প্রাচীন আমলে ব্যবহার করা হত। মহাকাশবিদ্যার গোপন রহস্য ও এতে লিপিবদ্ধ আছে বলে অনেকে মনে করেন। অনেক গবেষনার পর গবেষকরা ধারণা করলেন এটা রজার বেকন নামের মধ্যযুগীয় ইংরেজ মনীষীর। বেকন গবেষণা করেন নি এমন বিষয় অনেকেই খুঁজে পাননা। তিনি এক রহস্যময় ব্যক্তি ছিলেন। তিনি “মিরাগ্যলিস” নামের বই এ লিখে রেখেছেন এমন সব আবিষ্কার ও ভবিষ্যত বাণী যা বর্তমান সময়ে এসে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু ভয়নিখের পান্ডুলিপির পাঠোদ্ধার তাতেও সম্ভব হয়নি। একদিন হয়তো হবে। সে দিন দেখে যাওয়ার ইচ্ছে- আসলেই এই পান্ডুলিপিতে ঠিক কী লেখা আছে!
লী ড্রাগন রোউগঃ
লী ড্রাগন হল ব্ল্যাক ম্যাজিকের টেক্সট বুক। এটিতে বেশ প্রসিদ্ধ কিছু তথ্য দেয়া আছে যা কোন এক রাজা লিখে গেছেন বলে ধারণা করেন অনেকে। এতে শয়তানকে বশে আনার বিভিন্ন উপায় বর্ণিত আছে। অনেকেই ধারণা করেন এই বই শয়তান নিজেই সেই রাজাকে দিয়ে লিখিয়েছেন। কিন্তু এই বই এখন আর পাঠ করার উপায় নেই। ধারণা করা হয় অনেকেই এই বই পড়ে বিভিন্ন বিপদ ডেকে এনেছেন। এরপর এঁকে ভ্যাটিকান সিটির গোপন আর্কাইভে হস্তান্তর করা হয়। জনসাধারনের পাঠ তো দূরে- এঁকে ছোঁয়ার অধিকার ও এখন কারো নেই।
দ্যা গ্রেট ওমার বুকঃ
এই বইটি পৃথিবীর সবচে অভিশপ্ত বই বলেই ধারণা করা হয়। এতে নানা সাংকেতিক ভাষায় বিভিন্ন বিষয় চিত্রায়িত করা যার ভেতর যাদুবিদ্যা ও জ্যোতির্বিদ্যা অন্যতম। ১৯০১ সালে ফ্রান্সিস সার্গোস্কি এই বই এর একটি পান্ডুলিপি তৈরি করেন এবং একজন আমেরিকানের কাছে এটি বিক্রি করেন। কিন্তু এই বই দ্রুতই আটলান্টিকে ডূবে যায়। কারণ এই বইটি ছিল বিশ্ববিখ্যাত জাহাজ “টাইটানিক” এ! সার্গোস্কি অরিজিনার ড্রইং সম্বলিত নতুন একটি কপি বের করেন। এটি ইংল্যান্ডে বিক্রি করা হয়। এরপর পরই শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। জার্মানির ইংল্যান্ডে ছোড়া প্রথম গোলাটি সেখানেই আঘাত করে যেখানে এই বইটি রক্ষিত ছিল!
এরপর অনেক দিন – কেউ এই বই আবার তৈরি করার সাহস পায়নি। কিন্তু ১৯৮৫ সালে এই বই এর ভূত আবারো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে স্টেনলে ব্রে নামের এক শিল্পীর । বই এর তিন নম্বর কপি তৈরি হয়। এবং এর দিন তিনেকের মাথায় ব্রে সাহেব মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। ব্রের সাথেই বইটি ছিল। বইটির সাথে জড়িত আরেকজন মানুষ মৃত্যুর পর ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত করা আছে। কিন্তু এটা কেউ ছুঁতে পারেনা। বলা তো যায়না-আবার কেউ যদি মরে যায় বিচ্ছিরি কোন দূর্ঘটনায়!
Tags:
জানা-অজানা