বিজ্ঞানের শাখা নিউরোসাইন্সের ভাষায় এটাকে OBE বা Out of body Experience বলে।
এক্ষেত্রে ব্যক্তি দেখতে পায় সে শুন্যে ভাসছে, নয়তো উড়ছে, নয়তো উপর থেকে পড়ছে। সে এটাকে ধরে নেয় তার আত্মা। মানে তার আত্মা তার শরীর থেকে বের হয়ে গেছে।
এখন কেন এটা দৈবিক কিছু না? তার কিছু কারণ দেখি।
সাইকিয়াট্রি ও নিউরোসাইন্স
দীর্ঘ দিন ধরে কনশাসনেস, ব্রেইন কিভাবে কাজ করছে, এসব নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে।
এখন তাদের রিসার্চের ভিত্তিতে
★ যেসব ব্যক্তি তাদের বাস্তব জীবনে খুব অনিশ্চয়তা, ডিপ্রেশন, ট্রমা, হ্যালুসিনেশন, এংজাইটির মধ্যে দিয়ে যায় তাদের মধ্যে Out of body experience এর প্রবণতা বেশি।
★ যাদের মৃগী রোগ, মাইগ্রেন, কার্ডিয়াক এরেস্ট, ব্রেইন ইনজুরি, স্লিপ প্যারালাইসিস বা বোবায় ধরার মত স্নায়ুরোগ আছে তারা out of body experience এর স্বীকার হতে পারে, ন্যাচরালি। মেডিটেশনের দরকার নেই।
★ শক্তিশালী Gravitational force ( মহাকর্ষ) এর উপস্থিতিতেও নভোচারীদের(astronauts) ব্রেইনে ব্লাড সারকুলেশনের তারতম্যের কারনে তারা কখনো কখনো out of body experience করে। ন্যাচরালি। মেডিটেশনের দরকার নেই।
(আরো বিভিন্ন কেইস আছে)
এটা কোন চিরন্তন স্টেইট না।
সাইন্স বলে, একটা সময় পর এই ঘোর কেটে যায়। এবং ব্যক্তি আবার বাস্তব জগতে ফিরে আসে।
তো এই প্রতিটি স্টেইটে দেখা যাচ্ছে, so called Astral travel এর জন্য কোন মেডিটেশনের দরকার পরছেনা, এটাও ভাবতে হচ্ছে না যে ঐ স্টেইটে পৌঁছালেই আপনি চিরন্তন সত্য পেয়ে যাবেন। ওটা চিরন্তন সত্য বা মৃত্যুর পর আপনি কনটিনিউয়াসলি ঐ জগতে থাকতে পারবেন, এটার বেসিসে কোন প্রমাণ নেই।
ফিলোসোফি, সাইন্স, সাইকোলজি কোন দিক থেকেই নেই। এগুলো যাস্ট মানুষের মনগড়া কথা। কেউ বলে নিজেদের বিজনেস টিকিয়ে রাখার জন্য আর কেউ বলে অস্তিত্বের সংকট থেকে পালিয়ে চিরন্তন সুখের অনুভূতি নেওয়ার জন্য।
যাইহোক, কেন এটা দৈবিক বা চিরন্তন না, এটার আরো স্ট্রং প্রমাণ দি।
নিউরো ল্যাবে ঢুকিয়ে বিভিন্ন কৃত্রিম মেথডে যেমন electrical stimulation, LSD drug, hypnosis সহ বিভিন্ন ভাবে আপনার ব্রেইনকে নেড়ে চেড়ে আপনাকে এমন ভ্রমের একটা পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব যেখানে আপনি দেখবেন আপনার আত্মা আপনার দেহ থেকে বের হয়ে গেছে। ঘুরছে, উড়ছে, ভাসছে। আবার বলছি, সম্পুর্ন কৃত্রিম ভাবে।
even আপনার ব্রেইনকে এমনভাবে হ্যালুসিনেট করা সম্ভব যেখানে আপনি দেখবেন আপনার মৃত বন্ধু, স্পিরিচুয়াল গুরু, ঈশ্বর সহ অনেক কিছুর দেখা পেয়েছেন, কথা বলছেন যাদের প্রতি আপনার ইমোশন স্ট্রংলি কাজ করে। যদি আপনি মানসিকভাবে দুর্বল থাকেন তাহলে এই সব কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় আপনাকে ম্যানুপুলেট করা আরো বেশি সহজ। এভাবে যে করা যায় এগুলো সব scientifically প্রমাণিত। তাহলে এখানে দৈবিক কি হলো?
যাই হোক, এটায় বুঝাতে চাইলাম Astral travel এর এই বিষয়টা একটা নিউরোসাইন্সের বিষয়। এবং ব্রেইনের তৈরি একধরনের হ্যালুসিনেশন।
কিন্তু এই হ্যালুসিনেশনকেই যদি ধরে নেয় যে এটার জীবনের সর্বশেষ সত্য। বা কেউ প্রচার করে যে এটায় চিরন্তন, তাহলে এটা জীবন-জগত ও ঈশ্বরকে জানার একটা ভুয়া দৃষ্টিকোণ না?? আর যারা যথেষ্ট গবেষণা না করে এইসব অগভীর কনসেপ্টকে বিশ্বাস করে নেই, তাদের বোধশক্তিকে আরো বাড়াতে হবে। তাদের নিজের ব্রেইনকে বিজ্ঞানভিত্তিক ভাবে আরো গভীর থেকে জানা দরকার।। ঈশ্বরকে, জগতকে বা নিজের অস্তিত্বকে জানতে হলে বিজ্ঞানকে ইগনোর করে জানতে হবে এটা ভুয়া কথা। বরং বিজ্ঞানের সাহায্যে সঠিক চিন্তাটা দিয়ে চিরন্তন সত্য কি হতে পারে ওটা খুঁজতে থাকুন। কারণ বিজ্ঞানও সেইম কাজটায় করছে। সৃষ্টি আর স্রষ্টাকে বুঝতে চাইছে।
যাই হোক, Astral travel করতে আমি মানুষকে নিরুৎসাহিত করবো না। এটা যদি আপনাকে ক্ষণিকের জন্য আপনার অস্তিত্ব সংকট থেকে মুক্তি দিয়ে শান্তি অনুভব করায়, তাহলে করতেই পারেন।
তবে সমস্যা হলো- সে যে দুঃখ, দুর্দশা, ক্লান্তি, অনিশ্চয়তা, ঘৃণা, আকাঙ্খা এসবের বাইরে গিয়ে একটা শান্তিময় অস্তিত্বের দেখা পেয়েছে এটা তাকে বার বার টানে। এটা ড্রাগের মত মারাত্মক একটা অনুভূতি। বার বার পেতে মন চায়। এবং ঐ অনুভূতি পেতে মানুষ, বিশেষ করে দুর্বল মনের মানুষ সু*ইসাইডের মত বিষয়ের দিকে ঝুঁকে পরে। কারণ তার এই ধারণা মৃত্যুর পর সে সেই অনুভূতিকে চিরন্তন হিসেবে পেয়ে যাবে। এখানে নিশ্চয়তা পাচ্ছে, শান্তি পাচ্ছে, মহাজগতের সাথে এক হতে পারার মত অদ্ভুত সুন্দর একটা মিনিং পাচ্ছে । এত সুন্দর একটা অনুভূতি নিয়ে চরম অস্তিত্ব সংকট থেকে পেতেই সিয়ামের সু*ইসাইড এটেম্পট বলে আমার ধারণা। সুতরাং ব্যালেন্স করে Artral travel করুন।
যা লিখলাম তার রেফারেন্স কমেন্টে দিলাম। চেক করে নিয়েন।
লেখায়ঃ Arpita Arpi Das