শনির বলয় আর কতোদিন থাকবে?


সৌরজগতের এক অন্যতম গ্রহের নাম হলো শনি। এটিকে ঘিরে থাকা একাধিক অসাধারণ বলয় এই গ্রহকে এক অনন্য বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে। তারা আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে বড় এবং উজ্জ্বল বলয়। গ্রহ থেকে 2,80,000 কিলোমিটারের বেশি প্রসারিত এবং পরপর ছয়টি পৃথিবীকে ফিট করার জন্য যথেষ্ট প্রশস্ত। কিন্তু দুঃখের কথা হলো যে শনি গ্রহ আর বেশিদিন এমন দেখাবে না, কারণ এর বলয়গুলি হারিয়ে যাচ্ছে।

ঠিক, শনির বলয় অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে! এবং দ্রুত। বাস্তবে, গবেষকরা যা প্রত্যাশা করেছিলেন তার চেয়ে অনেক দ্রুত। শনি এখন প্রতি সেকেন্ডে 10,000 কেজি ওজনের "বলয় বৃষ্টি" পাচ্ছে। যা একটি অলিম্পিক-আকারের পুল 30 মিনিটের মধ্যে পূরণ করার জন্য যথেষ্ট দ্রুত। এই বৃষ্টি শনির বলয়ের ছিন্নভিন্ন টুকরো দিয়ে গঠিত। 

শনির বলয়গুলি মূলত বরফ এবং পাথরের টুকরো দিয়ে তৈরি। যেগুলো কিছু সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির দ্বারা আবার কিছু ছোট উল্কা দ্বারা প্রতিনিয়ত বোমাবর্ষিত হয়। যখন হিমায়িত (frozen) কণাগুলির মধ্যে সংঘর্ষ হয়, তখন তারা বাষ্পীভূত হয়। এর জন্য চার্জযুক্ত জলের অণু উৎপন্ন হয় যা শনির চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে। শনির চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে বলয়গুলি বরফের কণার ধূলিময় বৃষ্টি হিসাবে মাধ্যাকর্ষণ দ্বারা শনির মধ্যে ক্রমাগত পতিত হচ্ছে। শনির ভিতরের দিকের বলয়গুলি বাইরের দিকের চেয়ে অপেক্ষাকৃত দ্রুত হারে পতিত হয়। পতনের সময়ে শনির বায়ুমণ্ডলে সেই বলয়ের ধ্বংসাবশেষ শেষ পর্যন্ত জ্বলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। 

যখন নাসার ভয়েজার মহাকাশযান 1980 এর দশকে শনির চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে রহস্যময়, কালো অনেকগুলো ব্যান্ড আবিষ্কার করেছিল তখন থেকেই এই বলয় বৃষ্টি বিজ্ঞানীদের কাছে পরিচিত ছিলো। গবেষকরা অনুমান করেছিলেন যে 300 মিলিয়ন বছরে বলয়গুলি সম্পূর্ণরূপে শনির মধ্যে পতিত হবে।

কিন্তু নাসার পরবর্তী ক্যাসিনি মহাকাশ যান বিজ্ঞানীদের কাছে আরও খারাপ সংবাদ বহন করে আনে। ক্যাসিনি 2017 সালের সেপ্টেম্বর মাসে শনি গ্রহের অভ্যন্তরে মৃত্যুর কোলে ডুবে যাওয়ার আগে শনির বিষুব রেখায় বলয়ের ধূলিকণার এই ঝরনার পরিমাণটি পরিষ্কারভাবে দেখতে সক্ষম হয়েছিল। সে দেখেছিলো যে এই পতনের হার প্রত্যাশিত হারের তুলনায় অনেক বেশি। বিজ্ঞানীরা হিসাব করে দেখেছেন যে শনির এই বলয়ের আয়ু আর মাত্র 100 মিলিয়ন বছর!

যদিও শনিগ্রহ তার অস্তিত্বের অধিকাংশ সময় জুড়েই পৃথিবীর মতোই নগ্ন ছিল। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘকাল ধরেই ভাবছেন শনিগ্রহের শুরু থেকেই বলয় রয়েছে নাকি পরবর্তী কোনো এক সময়ে সেগুলো তৈরি হয়েছিল। আধুনিক গবেষণা কিন্তু দ্বিতীয় সম্ভাবনার পক্ষে মত প্রকাশ করে। শনি গ্রহটি প্রায় 4.5 বিলিয়ন বছর আগে তৈরি হয়েছিল, কিন্তু গবেষণা দেখায় যে বলয়গুলির বয়স মাত্র 100 থেকে 200 মিলিয়ন বছর। তার মানে শনির বলয় যখন সৃষ্টি হয়েছিল তখন পৃথিবীতে ডাইনোসররা ঘুরে বেড়াতো।

সুতরাং এটা বলা যায় আমরা কেবল ঘটনাক্রমেই সেই দর্শনীয় বলয়গুলির সাক্ষী হতে পেরেছি। আবার এটাও বলা যেতে পারে যদি বলয়গুলি অস্থায়ী হয় তাহলে আজ আমরা বৃহস্পতি, ইউরেনাস এবং নেপচুনের যে ক্ষীণ ও পাতলা বলয় দেখতে পাই, অতীতে হয়তো কোনো এক সময়ে সেই জায়গায় তাদের বিশালাকার বলয়ের অস্তিত্ব ছিলো।


লিখাঃ সরোজ নাগ 

তথ্যসূত্রঃ Solar System Exploration, NASA.

ছবি নাসার সৌজন্যে প্রাপ্ত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম