2003 সালের 21শে ডিসেম্বর নাসা তার Galileo মহাকাশ যানকে বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যে বিসর্জন করেছিলো। আবার 2017 সালের 15 ই সেপ্টেম্বর Cassini মহাকাশযানকে ডুবিয়ে দিয়েছিলো শনি গ্রহের গ্যাসীয় দেহের মধ্যে। সেই যানগুলো গ্যাসীয় দানবদের বায়ুমন্ডলের গভীরে তাদের মিশন শেষ করেছিলো। বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলে প্রায় 150 কিলোমিটার পৌঁছে যাওয়ার প্রায় এক ঘন্টা পরে নাসা গ্যালিলিওর সাথে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। বৃহস্পতির উচ্চ চাপ এবং তাপমাত্রার দ্বারা এটি ধ্বংস হওয়ার আগে যানটি কতটা গভীরে পৌঁছেছিল তা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে পারেননি। কিন্তু আমরা কি ভবিষ্যতে কোনো একদিন বৃহস্পতি বা শনির মতো গ্যাসীয় গ্রহদের গভীরে একটি মহাকাশযান পাঠাতে পারি? এই বিশাল গ্রহগুলির একটি কঠিন পৃষ্ঠদেশ নাও থাকতে পারে। তবে কি একটি মহাকাশযান কি একটি গ্যাস দৈত্যের মধ্য দিয়ে উড়তে পারে?
বিজ্ঞানীদের মতে এর উত্তর হলো, না। একটি মহাকাশযান বিশাল গ্যাসীয় গ্রহদের মধ্যে যাত্রা করতে গেলে সে অক্ষত থাকবে না। গ্যাস জায়ান্টের মধ্য দিয়ে উড়ে যাওয়ার চেষ্টা করার ক্ষেত্রে সমস্যা হল আপনি এর যত অভ্যন্তরে প্রবেশ করবেন পরিবেশের ঘনত্ব, চাপ এবং তাপমাত্রা সবই বিশাল মাত্রায় বৃদ্ধি পাবে। বৃহস্পতির কেন্দ্রের কাছে, সাধারণত বায়বীয় হাইড্রোজেন একটি তরল ধাতুর মতো অবস্থায় পরিণত হয়।
বৃহস্পতির কেন্দ্রের কাছাকাছি চাপের ধারণা করার জন্য আপনি পৃথিবীর মারিয়ানা ট্রেঞ্চকে বিবেচনা করতে পারেন। প্রায় 11000 মিটার গভীরতা সম্পন্ন এই স্থানটি পৃথিবীর মহাসাগরের অভ্যন্তরে সবচেয়ে গভীর অঞ্চল। এখানে চাপের পরিমাণ 1,000 বার (100,000 কিলোপাস্কাল) পর্যন্ত পৌঁছায়, যা প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে 8 টন চাপের (123,500 কিলোপাস্কাল) মতো অনুভূত হয়। এখন বিজ্ঞানীদের মতে বৃহস্পতির কেন্দ্রের কাছে, চাপ মেগাবার বা এক মিলিয়ন বার পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এই বিশাল চাপের সঙ্গে তাপমাত্রাও বেড়ে গিয়ে প্রায় দশ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসের সমান হয়ে ওঠে। সেই মুহুর্তে, কোনও মহাকাশযান কেবল গলে যাবে না - এটি সম্পূর্ণরূপে তার উপাদান পরমাণুতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
বৃহস্পতির মতো গ্যাসীয় গ্রহের মধ্যে যাত্রা করার জন্য যানটিকে একটি বুলেটের মতো আকৃতি দিতে হবে, যাতে এরোডাইনামিকস উন্নত করা যায় এবং এটি যতটা সম্ভব নিচে নেমে যেতে পারে। মহাকাশযানটি তার অবতরণ শুরু করার সাথে সাথে এটি বিস্ময়কর অ্যামোনিয়া মেঘের মুখোমুখি হবে এবং খুব সম্ভব নীল আকাশের মধ্য দিয়ে যাবে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আলো বিচ্ছুরণের মতো একই ঘটনার কারণে এখানে আকাশ নীল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অ্যামোনিয়াম হাইড্রোসালফাইডের আঠালো বাদামী মেঘের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর, মহাকাশযানটি প্রায় 80 কিমি গভীরে পৌঁছে যাবে। সেখানে রয়েছে বিরাট উঁচু উঁচু কিউমুলোনিম্বাস মেঘের একটি এলাকা। পুরো মেঘের স্তম্ভগুলি বিশাল বৈদ্যুতিক ঝলক সমন্বিত ঝড়ের কারণে আলোকিত হয়ে থাকে।
তার চেয়ে অনেক গভীরে প্রায় 7,000 থেকে 14,000 কিলোমিটার গভীরতায় মহাকাশযানটি এমন একটি বায়ুমণ্ডলের মুখোমুখি হবে যে বায়ুমণ্ডলটি নিজেই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। এখানেই তাপমাত্রা কয়েক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসে বেড়ে যায় এবং চাপ পৌঁছে যায় মেগাবার স্কেলে। মহাকাশযানটি এই অঞ্চলেই বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করবে।
বৃহস্পতির অভ্যন্তরের এই রহস্যময় অঞ্চলে, হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম একটি তরল পদার্থের রূপ নিতে শুরু করবে। 2011 সালে চালু হওয়া জুনো মিশন থেকে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে বৃহস্পতির একটি কঠিন কোর নেই। এর কেন্দ্রে সম্ভবত নাইট্রোজেন, কার্বন এবং এমনকি লোহা সহ পদার্থের একটি মিশ্রিত কোর রয়েছে। যখন মহাকাশ যানটি এই জায়গায় এসে পৌঁছবে তখন তার আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। তার পরমাণুগুলো সেই গ্যাসীয় গ্রহের অংশ হয়ে থেকে যাবে।
লিখাঃ সরোজ নাগ।
তথ্য ও চিত্র ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।