পৃথিবীর মোট অক্সিজেনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ (28%) উৎপাদনের জন্য রেইনফরেস্ট দায়ী কিন্তু বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন (70%) উত্পাদিত হয় সামুদ্রিক উদ্ভিদ থেকে। বাকি 2% অক্সিজেন আসে অন্যান্য উৎস থেকে। এই উৎপাদনের বেশিরভাগই সামুদ্রিক প্ল্যাঙ্কটন, প্রবাহিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্ভিদ, শৈবাল এবং কিছু ব্যাকটেরিয়া থেকে যা সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে।
সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরের স্তরটি সালোকসংশ্লেষনকারী প্লাঙ্কটনে ভরপুর। সমুদ্রে বসবাসকারী উদ্ভিদ যেমন- ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন, প্রবাহিত উদ্ভিদ, শৈবাল, কেল্প এবং অ্যালগাল প্ল্যাঙ্কটন অক্সিজেন উৎপাদন করে। এই উদ্ভিদগুলো অক্সিজেন উত্পাদন করে সালোকসংশ্লেষণের একটি উপজাত হিসাবে। এক ধরনের ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন, প্রোক্লোরোকোকাস বায়ুমণ্ডলে টনকে-টন পরিমানে অক্সিজেন নির্গত করে। এই উদ্ভিদগুলো এতটাই ছোট যে, এক ফোঁটা জলে লক্ষ লক্ষ এরকম ক্ষুদ্র উদ্ভিদ এঁটে ফেলা যাবে।
প্রোক্লোরোকোকাস (সামুদ্রিক সায়ানোব্যাকটেরিয়া) সম্ভবত আমাদের গ্রহের সেরা সালোকসংশ্লেষকারী জীব হিসেবে বিজয়ীর খেতাবটা পাবে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফির অনুসন্ধানকারী ড. সিলভিয়া এ. আর্লের অনুমান অনুযায়ী; আমাদের প্রতি পাঁচটি প্রশ্বাসের মধ্যে অন্তত একটি প্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে প্রোক্লোরোকোকাস! এ ধরণের ছোট্ট ছোট্ট ব্যাকটেরিয়া বন্ধুরা আমাদের সমগ্র জীবজগতের প্রায় 20% পর্যন্ত অক্সিজেন তৈরি করে যা স্থলভাগের সমস্ত গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্টের তুলনায় অনেক বেশি।
বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, ডায়াটম নামক আণুবীক্ষণিক উদ্ভিদ প্রতি বছর 10 থেকে 20 বিলিয়ন টন কার্বনডাই অক্সাইড শোষণ করে যখন তারা সমুদ্রের পৃষ্ঠে ভেসে বেড়ায়। এটি বিশ্বের সবগুলো রেইনফরেস্ট বছরে যে পরিমাণ কার্বন শোষণ করে তার সমান।
সামুদ্র থেকে ঠিক কী পরিমাণ অক্সিজের উৎপাদন হচ্ছে তার সঠিক হিসাব বের করা অনেক কঠিন। বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইটের চিত্র অনুসরণ করে সালোকসংশ্লেষণকারী প্ল্যাঙ্কটন ট্র্যাক করতে পারেন এবং সাগরে সালোকসংশ্লেষণের পরিমাণ অনুমান করতে পারেন, কিন্তু স্যাটেলাইটের কিছু চিত্র পুরো গল্প তুলে ধরতে পারে না। কেননা, প্ল্যাঙ্কটনের পরিমাণ ঋতু অনুসারে পরিবর্তিত হয় এছাড়া অক্সিজেন উৎপাদনের পরিমাণ পানির গুনাগুণ, স্থান, তাপমাত্রা এবং অন্যান্য নিয়ামকের উপর নির্ভর করে।
এটাও মনে রাখতে হবে, যদিও সমুদ্রিক উৎস থেকে পৃথিবীর প্রায় 50% থেকে 80% এরও বেশি অক্সিজেন উৎপন্ন হয়, কিন্তু মোটামুটি ঐ একই পরিমাণ অক্সিজেন আবার সামুদ্রিক পরিবেশের জন্য খরচ হয়ে যায়। স্থলভাগের প্রাণীদের মতো, সামুদ্রিক প্রাণীদের শ্বাস নিতে এবং উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়ের কোষীয় শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য অক্সিজেন ব্যবহার হয়। তাছাড়া সমুদ্রে মৃত উদ্ভিদ এবং প্রাণীদের বিয়োজিত হতেও অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়!
একজন মানুষ বছরে প্রায় 9.5 টন বাতাস গ্রহণ করে। কিন্তু সেই বাতাসের মোট ভরের প্রায় 23% হলো অক্সিজেন এবং আমরা প্রতিটি নিঃশ্বাস থেকে অক্সিজেনের এক তৃতীয়াংশের কিছু বেশি বের করে দেই। এই হিসেবে আমরা এক বছরে প্রায় 740 কেজি অক্সিজেন নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে ব্যয় করি যা খুব মোটামুটিভাবে সাত বা আটটি গাছের উৎপাদিত অক্সিজেনের সমান।
বলা হয়ে থাকে, একটি বড়সড় উদ্ভিদ একদিনে চারজন মানুষের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। উদ্ভিদগুলো তাদের ফাইবারগুলিতে কার্বনডাই অক্সাইড সঞ্চয় করে যা বাতাস পরিষ্কার রাখতে এবং পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে জীবদের রক্ষা করে।
নোটঃ
১। একটি গাছ কত লিটার অক্সিজেন উৎপন্ন করে তা গাছের প্রজাতি, বয়স এবং কাঠের ঘনত্বের উপর নির্ভর করে। তবে, মাত্র 5 মিটার উচ্চতার একটি মোটামুটি ছোট গাছ বছরে প্রায় 10,000 লিটার অক্সিজেন উত্পাদন করতে পারে।
২। NASA’র স্যাটেলাইটের চিত্র অনুযায়ী, পৃথিবীতে প্রতি একজনের বিপরীতে গাছ রয়েছে প্রায় 61টি। কিন্তু আমরা যে পরিমাণ কার্বনডাই অক্সাইড বাতাসে নির্গত করি এবং আমরা যে পরিমাণ খাবার খাই যে অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির অন্ততপক্ষে 15টি করে গাছ রোপণ করা উচিত।
৩। বাঁশ একটি প্রাকৃতিক বায়ু পরিশোধক হিসাবে কাজ করে। একটি বাঁশ (উদ্ভিদ) বছরে 70 টনেরও বেশি অক্সিজেন উত্পাদন করতে পারে এবং একর প্রতি বছরে 80 টন কার্বনডাই অক্সাইড শোষণ করতে পারে।
৪। একদিনে তুলসী গাছ ২৪ ঘন্টার মধ্যে ২০ ঘন্টাই অক্সিজেন উৎপাদন করে। তুলসী বায়ু থেকে স্টুপিড গ্যাস যেমন- কার্বনডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড এমনকি সালফারডাই অক্সাইড গ্যাসের মতো বিষাক্ত গ্যাস শোষণ করে!
৫। WHO-এর উপাত্ত (2008-2016) অনুযায়ী, ফিনল্যান্ডের বায়ুর গুণগত মান পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় সেরা। ফিনল্যান্ডের বায়ুতে বায়ুবাহিত কণার মাত্রা একেবারে সর্বনিম্ন অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটারে ৬ মাইক্রোগ্রাম। ফিনল্যান্ডে প্রচুর উদ্ভিদ আছে! এ দেশের মোট স্থলভাগের ৭৫% এরও বেশি বনভূমি রয়েছে, রয়েছে ৪০টিরও বেশি বিশাল বিশাল জাতীয় উদ্যান।
save the plankton
more trees more oxygen
তথ্যসূত্র:
https://www.nationalgeographic.org/activity/save-the-plankton-breathe-freely/
https://oceanservice.noaa.gov/facts/ocean-oxygen.html
Writer: Shohanur Rahman Shohan