দুইটা কারণে এমন হয় -
> ক. পুকুরের পানিতে অক্সিজেনের ঘাটতি
> খ. খাবার খাওয়ার জন্য এমন করে
**ক) প্রথম কারণটার ব্যাখ্যা : **
মাছ পুকুরের পানি থেকে দ্রবীভূত অক্সিজেন গ্রহন করে শ্বাস চালায় । কিন্তু পুকুরের পানিতে কিভাবে অক্সিজেন সহ বিভিন্ন দ্রবীভূত হয় ? বিষয়টি হেনরির নীতি থেকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব ।
সোডার বোতলের ভেতরে উচ্চচাপে তরলের মধ্যে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস দ্রবীভূত করা হয় । সোডার বোতলের ভেতরে বায়ু চাপ বাইরের থেকে বেশি থাকে । তাই যখন সোডার বোতল খোলা হয় তখন বোতলের ভেতর থেকে কার্বনডাইঅক্সাইড বাইরে ফুস করে বের হয়ে যায় । বোতলের ভেতরের কার্বনডাইঅক্সাইড তরল পানীয়র ওপর উচ্চ চাপ প্রয়োগ করে। তাই ঐ পানীয়তে গ্যাস দ্রবীভূত হয় এবং যখন বোতল খোলা হয় তখন পানীয়র ওপর সেই চাপ অপসারিত হয় । এই অবস্থায় পানীয়তে দ্রবীভূত কার্বনডাইঅক্সাইড গ্যাস বুদ বুদ রূপে বের হয় । তাই সোডার বোতল খোলার পরপরই প্রচুর গ্যাস বের হতে থাকে ।
**♦️হেনরীর নীতি **
হেনরীর নীতি অনুসারে গ্যাসকে তরলে দ্রবীভূত করার ক্ষেত্রে ঐ গ্যাস দ্বারা তরলের পৃষ্ঠে চাপ প্রয়োগ করতে হবে । এক্ষেত্রে স্থির তাপমাত্রায় তরলের উপরিভাগে প্রয়োগকৃত গ্যাসের চাপ উক্ত তরলে দ্রবীভূত গ্যাসের ঘনমাত্রার সমানুপাতিক । একাধিক গ্যাসের ক্ষেত্রে আংশিক চাপ এবং মোল ভগ্নাংশ বিবেচনা করতে হবে ।
যদি তরলে দ্রবীভূত গ্যাসের মোল ভগ্নাংশ X , গ্যাসের আংশিক চাপ P হয় তবে , হেনরীর নীতি অনুসারে
X∝P ..................(1)
এই সমীকরণকে অন্যভাবে লেখা যায় ।
P∝X
বা, P= K X ...............(2)
এ ক্ষেত্রে কোন তরলের মধ্যে নির্দিষ্ট কোন গ্যাসের মোল ভগ্নাংশ যত বেশি হয় উক্ত তরলের পৃষ্ঠতলে ঐ গ্যাসের আংশিক চাপ তত বেশি হয় । অর্থাৎ এখানে সমানুপাতিক সম্পর্ক থাকে ।
সমীকরণে K একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক । যা হেনরীর ধ্রুবক । নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বিভিন্ন গ্যাসের জন্য হেনরীর ধ্রুবক বিভিন্ন রকম হয় । যেমন : 298.15 k তাপমাত্রায় পানিতে দ্রবীভূত CO₂ গ্যাসের জন্য হেনরীর ধ্রুবকের মান 3.1x10-² mol/L atm
X এর একক নেই । কারণ মোল ভগ্নাংশ মিশ্রনের নির্দিষ্ট দ্রবের মোল সংখ্যা এবং মোট মোল সংখ্যার অনুপাত । গ্যাস মিশ্রন না হয়ে যদি কেবল একটি গ্যাস হয় তবে এর একক mol/L
P এর একক atm
K এর একক mol/L atm
তাছাড়া চাপের জন্য আরো অনেক একক ব্যবহার করা যায় যেমন : bar , Pascal, mmHg (চাপের জন্য পারদ স্তম্ভের এর উচ্চতা) , atm ইত্যাদি ।
**♦️একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখবেন :** তরলের পৃষ্ঠে যখন গ্যাসের চাপ দেয়া হয় তখন ঐ তরলের মধ্যে গ্যাস দ্রবীভূত হয় । এ অবস্থায় তরলের উপরিভাগে দ্রবীভূত গ্যাসের ঘনত্ব বেশি থাকে এবং অত্যন্ত গভীরে ঘনত্ব খুব কম হয় ।
20°C তাপমাত্রায় বিভিন্ন গ্যাসের জন্য হেনরির ধ্রুবকের বিভিন্ন মান পাওয়া যায় । তেমন He, 140 bar ; H₂ , 75 bar ; O₂ , 35 bar ইত্যাদি । হেনরির সমীকরণ থেকে,
** P/X = K** ...........(3)
সমীকরণ অনুসারে হেনরিরি ধ্রুবক গ্যাসের মোল ভগ্নাংশের ব্যাস্তানুপাতিক । অর্থাৎ যে সকল গ্যাসের ক্ষেত্রে হেনরিরি ধ্রুবকের মান অনেক বেশি থাকে সেগুলো দ্রাব্যতা অত্যন্ত কম হয় । এক্ষেত্রে আমরা দেখছি যে 20°C তাপমাত্রায় অক্সিজেন পানিতে দ্রবীভূত হলেও হিলিয়াম দ্রবীভূত হয় না । সুতরাং যে গ্যাসের হেনরির ধ্রুবকের মান যত ছোট হয় তরলে ঐ গ্যাসের দ্রাব্যতা তত বেশি হয় ।
♦️আবার তাপমাত্রা বাড়ালে হেনরির ধ্রুবকের মান বৃদ্ধি পায় । অর্থাৎ স্থির ঘনমাত্রায় এবং চাপে তাপমাত্রার পরিবর্তন হেনরির ধ্রুবকের সমানুপাতিক । তাই যদি কোন তরলের তাপমাত্রা বাড়ানো হয় তবে ঐ তরলে দ্রবীভূত গ্যাসের পরিমাণ কমে যায় এবং ঐ গ্যাস সরাসরি তরল থেকে বায়ু মাধ্যমে চলে যায় । এই জন্য ছিপি বন্ধরত সোডার বোতল জোরে ঝাঁকি দিলে সেখানে তরলের তাপমাত্রা বাড়ে এবং ঐ তরল থেকে দ্রবীভূত কার্বনডাই অক্সাইড বোতলের বায়বীয় অংশে জমতে থাকে । দ্রুত তাপমাত্রা বাড়ার দরুন দ্রাব্যতা হ্রাস পায় । তাই বেশি বেশি ঝাঁকানোর পর সোডার বোতলের ছিপি খুলে দিলে তার থেকে তীব্র চাপে বেশি কার্বন ডাইঅক্সাইডের বুদ বুদ তৈরি হয় এবং এর সাথে কিছু সোডাও ছিটকে বের হয়ে যায় ।
♦️মাছ পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন থেকে অভিস্রবণের মাধ্যমে ফুলকার সাহায্য অক্সিজেন গ্রহন করে । মাছের রক্তে অক্সিজেনের ঘনত্ব পুকুরের পানির অক্সিজেনের থেকে কম হয় । কাজেই বাইরে অক্সিজেনের অভিস্রবণ চাপ বেশি থাকায় অক্সিজেন মাছের রক্তে দ্রবীভূত হয় । মাছ সব সময় আরাম দায়ক ঠান্ডা পানি পছন্দ করে । বিশেষত 18-26°C তাপমাত্রার পানি মাছ বেশি পছন্দ করে । হেনরির সূত্র অনুযায়ী ঠান্ডা পানিতে হেনরির ধ্রুবকের মান কম থাকে । তাই ঐ পানিতে বেশি অক্সিজন দ্রবীভূত থাকে । কিন্তু গ্রীষ্মের উত্তাপে যখন পানির তাপমাত্রা বেড়ে যায় তখন অক্সিজেনের জন্য হেনরির ধ্রুবকের মান বেশি থাকে এবং পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনর পরিমাণ কমে যায় । যার দরুন পুকুরের তলদেশে সবার আগে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয় । ঐ অবস্থায় বাতাস এবং পানির পৃষ্ঠতলের কাছাকাছি পানিতে অক্সিজেনের ঘনত্ব বেশি থাকে তাই মাছ পানির পৃষ্ঠ তলে অর্থাৎ উপরের দিকে চলে যায় এবং সেখান থেকে পানি শোষন করার চেষ্টা করে ।
তাই মাঝে মাঝে পুকুরের মাছ পুকুরের ওপরের অংশে চলে আসে এবং সেখানে পানি থেকে অক্সিজেন নেবার চেষ্টা করে । যদি কখনো অ্যাকুরিয়ামের পানির পৃষ্ঠদেশে মাছকে বেশিক্ষণ চলাফেরা করতে দেখেন তবে ধরে নিবেন যে পানিতে অক্সিজেন কমে গেছে । এই অবস্থায় পানি পরিবর্তন করা আবশ্যক ।
**খ) দ্বিতীয় কারণটার ব্যাখ্যা : **
তবে এটাও সত্য যে কিছু মাছ পানিতে ভাসমান খাবার খাওয়ার জন্য ওপরে মাঝে মাঝে উঠে আসে । কিন্তু পুকুরে বিভিন্ন ধরনের মাছ থাকে । কিছু মাছ বেনথিক জোন বা পুকুরের তলদেশে থেকে উদ্ভিদ ও ময়লা খায় । কিন্তু যদি পুকুরের সব মাছ পানির ওপরের পৃষ্ঠে চলে আসে তবে ধরে নিবেন যে ঐ পুকুরের পানিতে অক্সিজেন কমে গেছে । **অক্সিজেন কমার আরেকটা কারণ হচ্ছে Eutrophication ।**
Writer: Rifat Hasan
Tags:
জানা-অজানা