সিএ কি...?
সিএ ডিগ্রির প্রকৃতি কেমন? কত বছর লাগে? কত টাকা লাগে? কোথায় পড়া যায়? সিএমএ'র সাথে এর তফাৎ কি?
জব মার্কেটের বাস্তবতায় সিএঃ
জবমার্কেটে ফাইনানস ও একাউন্টিং সেক্টরে চাকরিতে সিএ সবচেয়ে বেশি ডিমান্ড পাচ্ছে। আইবিএ'র এমবিএ, পিডিজিএইচআরএম, সিএমএ, এমবিএ, এসবেরও যথার্থ ডিমান্ড রয়েছে রিলেভান্ট সেক্টরগুলোতে। তবে সিএফও ম্যাগাজিনের তথ্য মতে, ফাইনেনস ও একাউন্টিং সেক্টরে নিয়োগদাতা কোম্পানিদের মধ্যে ৩৮% নিয়োগদাতা পছন্দ করছেন সিএ ডিগ্রিকে, ২৭% পছন্দ করছেন সিএমএকে, ১৩% পছন্দ করছেন এমবিএকে, ৯% পছন্দ করছেন এসিসিএকে, ৫% পছন্দ করছেন সিআইএমএকে, ৪% পছন্দ করছেন সিএফএকে এবং ৫% পছন্দ করছেন অন্যান্য ডিগ্রিকে, যেমন সিএস, সিপিএ। তাই, সিএধারীদের কখনোই বেকার দেখা যায় না। এছাড়াও, দেশে সিএ পাস শেষে যেকোনো দেশের টেক্স ও ল এর সাবজেক্ট পাস করার মাধ্যমে সে দেশীয় সিএ সার্টিফিকেট লাভ করা যায়। ফলে চাইলে যে কোনো দেশে একাউন্টেন্সি প্রফেশনে যুক্ত হওয়া যায়।
কিন্তু সিএ'র এই কমপিটিটিভ এডভেন্টেজের কারন কি? এর উত্তর হল, সিএ পড়াশোনা প্রচলিত শিক্ষার মত কেবল বইবদ্ধ জ্ঞানে সীমাবদ্ধ নয়। সিএ ডিগ্রির রয়েছে দুটি দিক: (১) বাস্তবিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা এবং (২) উচ্চতর একাডেমিক শিক্ষা (এবং এই দুটির জন্যে প্রদান করা হয় আলাদা দুটি সাটিফিকাট):
১) CA CC (Course Complete), এবং
২) CA (উচ্চতর একাডেমিক পড়াশোনা)।
একজন সিএ ছাত্র সাড়ে তিন/চার বছরের CA CC সময় অতিক্রম এবং সাথে আংশিক একাডেমিক পাস রেকর্ড দিয়ে একটি উপযুক্ত/ প্রত্যাশিত চাকরির মাধ্যমে চাকরি জীবন শুরু করতে পারেন, এবং পাশাপাশি চালিয়ে যেতে পারেন অবশিষ্ট CA একাডেমিক পড়াশোনা।
.....
সিএ প্রফেশনে কিভাবে যুক্ত হবেন?
একজন আগ্রহী ছাত্রকে নিন্মোক্ত ধাপগুলোর মধ্যদিয়ে যেতে হবেঃ
(ক) একজন ছাত্রকে সিএ ভর্তীর জন্যে তার পছন্দমত সিএ/অডিট ফার্মগুলোতে বায়োডাটা বা সিভি (প্লাস অল সাটিফিকাট ফটোকপি, কাভার লেটারের সাথে এনক্লোজড) জমা দিতে হবে। বছরের যে কোনো সময় জমা দেয়া যায় এবং সিএ ফার্মগুলো নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী ভর্তী পরীক্ষার আয়োজন করে থাকে। সিএ ফার্ম কি? সিএ ফার্ম হল মূলত অডিটর প্রতিষ্ঠান। এরা আইসিএবি (দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের) অধীন সদস্য সংগঠন। আর, আইসিএবি হল পুরো সিএ প্রফেশনের জন্যে সরকারি আইন দ্বারা গঠিত, বাণিজ্য মণত্রণালয়ের অধীন একমাত্র রেগিউলেটরি ক্ষমতাপ্রাপ্ত অথরিটি। আইসিএবি তার মেম্বারদের পেশাদারীত্ব অডিটিং স্টান্ডার্ড (বিএসএ) ও অন্যান্য প্রাসংগিক আইন অনুযায়ী হচ্ছে কিনা তা তদারক এবং সেসবের লংঘনের বিরুদ্ধে পেনাল্টি প্রদান করে থাকে। আইসিএবি সিএ পড়াশোনার কারিকালাম, বই প্রনয়ন, ক্লাস, পরীক্ষা, রেজাল্ট সহ যাবতীয় বিষয়ে একটি শিক্ষাবোর্ডের ভূমিকা রাখে।
ভর্তীচ্ছুক ছাত্রের জন্য ফার্ম চয়েসের ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হবে, এ অথবা বি ক্যাটাগরির এবং ভালো ফ্যাসিলিটির ফার্মে ভর্তির চেষ্টা করবেন। কারণ কোনো কোনো ফার্মে প্রবেশনারী পিয়রিয়ড থাকে খুব দীর্ঘ, কোনো কোনো ফার্মে সকাল ন'টা থেকে রাতের বারোটা পর্যন্ত চলে অফিস, আর কিছু কিছু ফার্মে কাজ শিখার মত ক্লায়েন্ট থাকে কম, আবার কিছু কিছু ফার্মে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বজাত নিপীড়নমূলক কড়া 'রুল' দেখা যায়। তাই, একটি ফার্মে ভর্তীর পূর্বে ফার্মটির সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিবেন। ফার্ম টারগেট করার পর একাধীকবার সিভি ড্রপ করে যাবেন।
(খ) বায়োডাটাগুলো থেকে নিন্মোক্ত তিনটি টেস্টের মাধ্যমে সিএ ফার্মগুলো ছাত্র ভর্তী নেয়।
প্রথমতঃ ভর্তীচ্ছুক ছাত্রের হয় এসএসসি ও এইচএসসির উভয়টিতে এ প্লাস থাকতে হবে, আর না হয় কোনো পরীক্ষায় থার্ড ডিভিশন ছাড়াই গ্রাজুয়েশন, পোস্টগ্রাজুয়েশন ও এসএসসি -এইচএসসি মিলিয়ে সর্বমোট মিনিমাম জিপিএ ৭ থাকতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ একটি লিখিত পরীক্ষা, একটি কম্পিউটার টেস্ট এবং একটি ইন্টার্ভিউয়ের মধ্যদিয়ে যেতে হবে। লিখিত পরীক্ষায় যেসব বিষয়ের প্রশ্নের প্রাধান্য থাকে সেসব হল, ব্যাসিক একাউন্টিং, ইংলিশ, ট্যাক্স, অডিট, এবং আগ্রহ বোঝার জন্য কিছু ব্যক্তিগত প্রশ্ন যেমন 'কেন সি এ পড়ার ইচ্ছে?' ইত্যাদি। একাউন্টিংয়ে জার্নাল থেকে শুরু করে ফাইনাল স্টেইটমেন্টস তৈরি, ব্যাংক রিকনসিলিয়েইশন, ইত্যাদির ওপর প্রশ্ন থাকে।
তৃতীয়তঃ যদি একাধীক ছাত্র যোগ্যতার পরিচয় দেয় তাহলে তাদের মধ্য থেকে যারা পড়াশোনার মাঝপথে ড্রপ দিয়ে চলে যাবেনা বলে মনে হবে অর্থাৎ যাদের মনোবল দৃঢ় তাদেরকেই ফার্ম ভর্তী নেয়। এই প্রেক্ষাপটেই ফার্মগুলো রেফারেন্সের উপর নির্ভর করে। তবে রেফারেন্স ছাড়াও শুধু যোগ্যতা ও দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির ভিত্তিতে অনেকে ভর্তী হতে সক্ষম হচ্ছে।
(গ) ভর্তীর পর বেশ ক' মাস বা কোনো কোনো ফার্মে পুরো এক বৎসর (!) ধরে চলে শিক্ষানবিস সময়কাল বা প্রবেশনারি পিয়রিয়ড। এই প্রবেশনারি পিয়রিয়ড শেষে আইসিএবির অধীনে নির্দিষ্ট কিছু ধারা বা আর্টিকলসের সাথে সহমত হওয়ার ভিত্তিতে আর্টিকলড স্টুডেন্ট হিসেবে সিএ রেজিস্ট্রেশন প্রদান করা হয়। রেজিস্ট্রেশনে খরচ পড়ে তিরিশ হাজার (৩০,০০০) টাকা। সিএতে এটাই একমাত্র বড় অংকের খরচ, এরপর আর কোনো বড় অংকের খরচ নেই। এর বাইরে, সাবজেক্ট ইনরোলমেন্টের সময় হাজার খানেক করে পার সাবজেক্ট একটা পরীক্ষার ফি দিতে হয়। অপরদিকে, ছাত্ররা রেজিস্ট্রেশনের পর আর্টিকলড স্টুডেন্ট হিসেবে স্ব স্ব অডিট ফার্ম থেকে পায় একটা মাসিক এলাওয়েনস টাকা - আইসিএবির নিয়ম অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশনের ১ম বছরে তিন হাজার, ২য় বছর সাড়ে তিন হাজার এবং ত্রিতীয় বছর চার হাজার করে পার মানথ।
(ঘ) সিএ রেজিস্ট্রেশনের দিন থেকে শুরু করে পূর্ণ তিন বৎসর ধরে চলতে থাকে একজন সিএ ছাত্রের অডিটর্স প্রতিনিধি জীবন, যে শর্তে ছাত্র তার প্রিনসিপালের সাথে আর্টিকলড বা চুক্তিবদ্ধ হয়। অর্থাৎ, সিএ সিসিতে সময় লাগে ৩ বৎসর এবং প্রোবেশনারি পিয়রিয়ডের সময়টি। এই তিন বৎসর ধরে অডিট এবং অন্যান্য সার্ভিসে প্রিনসিপালের সাথে কাজ করার স্বীকৃতি হিসেবে একজন সিএ ছাত্র তার ফার্ম থেকে পায় সিএ সিসি বা কোর্স কামপ্লিট (সময়কাল কামপ্লিট) এর একটি সাটিফিকাট। সিএ সিসি সাটিফিকাটটি কিন্তু কোনো একাডেমিক পড়াশোনা বা সাবজেক্ট পাসের ভিত্তিতে দেয়া হয় না। কোনো ছাত্র পাস করুক বা না করুক তাকে তার তিন বৎসরের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সিসি সার্টিফিকাট দিয়ে দেয়া হয়। একজন ছাত্র প্রতিদিন সকাল ন'টা থেকে সন্ধ্যা পাঁচটা অবধি ফার্মের অফিসে অথবা অডিটাধীন কোম্পানিতে অডিট প্রতিনিধি হিসেবে একজন চাকরিজীবীর মত কাজ করে যান এই তিনটি বছর। সিএ সিসি হল এর প্রত্যয়ন সার্টিফিকেট। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, অনেকে না জেনে এই সিসি সাটিফিকাটকেই সিএ পাস সাটিফিকাট বলে প্রচার করে, যা সঠিক নয়। তবে সিএ সিসি সার্টিফিকাটের মূল্যও নগন্য নয়। সিএ সিসি শেষে একাউন্টসে একটি প্রত্যাশিত মানের জব পাওয়া নির্ভর করে কয়টি সাবজেক্টে পাস করা হয়েছে তার ওপর। তবে, শুধু সিসি দিয়েও ন্যূনতম একটি জব পাওয়া যেতে পারে। এবার আসুন সিএএর একাডেমিক পড়াশোনার দিকটিতে আলোকপাত করি।
(ঙ) সিএ পড়াশোনার কারিকালাম বর্ণনার পূর্বে অন্যান্য প্রাতিষ্টানিক ডিগ্রির সাথে সিএয়ের অনন্য একটি তফাৎ জানা জরুরী। তা হচ্ছে পাঠ্য বিষয়ের বিষয়বস্তুতে পেশাদারী প্রজ্ঞা ও দূর্দর্শীতাকে ফোকাস করায় সিএতে যে কোনো বিষয় যথেষ্ট যত্নসহকারে গভেষনার মাধ্যমে আত্তীকরণ করতে হয় এবং পরীক্ষার প্রশ্নগুলোও হয় পেশাদারী মানের। পরীক্ষায় ফেইলের প্রবণতা বেশি হওয়ার পেছনে এটি একটি উলল্যেখযোগ্য কারন। তাছাড়া সময়ের অপ্রতুলতাকেও অনেকে কারন হিসেবে দেখাচ্ছে। তবে ইংলিশ ভাষায় নির্ভুলতা ও দক্ষতা না থাকলেও পাস করা কষ্টসাধ্য বলে অভিমত আসে অনেকের কাছ থেকে।
সিএ পাঠ্যসূচি তিন লেভেল বা ক্লাসে বিভক্ত:
১) সার্টিফিকেট লেভেল,
২) প্রফেশনাল লেভেল এবং
৩) এডভানসড লেভেল।
সার্টিফিকেট লেভেলে সাবজেক্ট সাতটি, যথা, (১) এশুয়ারেনস, (২) একাউন্টিং, (৩) বিজনিস এন্ড ফাইনেনস, (৪) ম্যানিজমেন্ট ইনফমেশন, (৫) প্রিন্সিপল অব টেক্সেশন ১, (৬) বিজনিস ল, এবং (৭) ইনফর্মেশন টেকনোলজি।
প্রফেশনাল লেভেলের সাবজেক্ট সাতটি, যথা, (১) অডিট এন্ড এশুয়ারেনস, (২) ফাইনেনশল একাউন্টিং এন্ড রিপোর্টিং, (৩) বিজনিস স্ট্রাটেজি, (৪) ফাইনেনশল ম্যানিজমেন্ট, (৫) টেক্স প্লেনিং এন্ড কমপ্লাইয়েন্স ২, (৬) কপোরাট ল'স এন্ড প্রাকটিসেস, এবং (৭) আইটি গভার্নেন্স।
এডভানসড লেভেলে সাবজেক্ট তিনটি যথা, (১) কপোরাট রিপোটিং, (২) স্ট্রাটেজিক বিজনিস মেনিজমেন্ট এবং (৩) কেইস স্টাডি।
উল্লেখ্য, একটি লেভেল কামপ্লিট করার পূর্বে উপরের লেভেলের সাবজেক্ট ইনরোল করা যায়না। তবে একটি লেভেলে যেকোনো সংখ্যক সাবজেক্ট এনরোল করা যায়।
পরীক্ষার পূর্বে তিন/চার মাস ধরে (সন্ধ্যার পর) বিভিন্ন সাবজেক্টের ক্লাস আইসিএবি অফিসে নেয়া হয়। একটি সাবজেক্টের ক্লাসে মিনিমাম ৭০% এটেন্ডেনস না থাকলে পরীক্ষার অযোগ্য ধরা হয়। তবে একটি সাবজেক্টের জন্যে শুধু একবারের সেশনে ক্লাস করে নিলে আর করা লাগেনা।
সিএ পরীক্ষা বৎসরে দুইবার নেয়া হয়- সাধারনত জুন এবং ডিসেম্বারে। সিএ রেজিস্ট্রেশনের পর সাবজেক্ট এনরোলমেন্ট এবং নির্দিষ্ট সংখ্যক পার্সেন্ট ক্লাস এটেন্ডেনস নিশ্চিত করার পর একজন ছাত্র জুন বা ডিসেম্বার - যেকোনো সেশনের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। সিএ সিসি শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও সিএ পরীক্ষায় পাস না করা পর্যন্ত আজীবন দেয়া যায়। পাস মার্ক ৫০ (বি গ্রেইড), তবে প্রশ্নের মান অনুযায়ী এর ব্যত্যয়ও হয়। পরীক্ষায় কোনো অপশনাল প্রশ্ন থাকেনা।
সবশেষে, সব লেভেল পাশের পর একজন সিএ ছাত্র আইসিএবির এসোসিয়াট মেম্বার 'এসিএ' (এসোসিয়াট অব চার্টার্ড একাউন্টেন্টস) হয়ে যান। এরও পর, পাঁচ বৎসর মেম্বারশিপ অতিবাহিত হলে তিনি হন ফেলো মেম্বার বা 'এফসিএ' (ফেলো অব চার্টার্ড একাউন্টেন্টস), যা এই প্রফেশনে সর্বোচ্চ স্তর।
সিএ পড়াশোনার বাস্তব প্রায়োগিক দিকটি কেমন?
একজন সিএ ছাত্রের গেটআপ দেখেই লোকে অনেকটা কানফিউজড হয়ে জিজ্ঞেস করে, 'ভাই কী জব করো?' কারন, একজন সিএ ছাত্রকে অফিশিয়াল ফমাল পোশাকে, শাট ইন করা, শু পরা অবস্থায় বিভিন্ন কোম্পানির অফিসে ছুটোছুটি করতে দেখা যায়। লোকে ভাবে, সিএ ছাত্ররা যদি কোনো কোম্পানির জবহোল্ডারই না হবে তাহলে তারা সেখানে কী কাজে যায়? এবং কেনো অডিটরত সিএ ছাত্রের যেকোনো প্রশ্ন, সন্দেহ বা জেরার জবাব দিতে ম্যানিজমেন্টের কর্মকর্তারা দায়ীত্বগতভাবে বাধ্য থাকেন?
সিএ ছাত্ররা নীচে উল্লেখিত যেকোনো একটি দায়ীত্ব কাঁধে নিয়ে একটি কোম্পানির অডিট রেপ্রিজেন্টেটিভ হিসেবে কাজ করে থাকেঃ
(১) ফাইনেনশল স্টেইটমেন্টস অডিট (কম্পেনির যাবতীয়, সম্পদ, দায়, মালিকানাস্বত্ব, আয়ব্যরের খাতসমূহ, সম্ভাব্য দায় ও সম্পদ সহ আনুষঙ্গিক যাবতীয় বিষয়ে তদন্ত বা নীরিক্ষনের কাজ, ডকিউমেন্টেশন এবং প্রতিবেদন প্রস্তুত করে মালিকপক্ষ বা শেয়ারহোল্ডার পক্ষ বরাবর দাখিল করা),
(২) ইনটার্নাল অডিট (ইনটার্নাল অডিটে ফাইনেনশল স্টেইটমেন্টস অডিটের কাজগুলি ছাড়াও অডিট ইংগেজমেন্টে পূর্বনির্ধারিত স্কোপ অনুযায়ী আরো বিভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে কাজ করা হয়, তথা, টেস্ট অব কানট্রোলস, রিস্ক ম্যানিজমেন্ট, লিগাল কমপ্লাইয়েনস ইত্যাদি),
(৩) ইনভেনট্রি এবং অন্যান্য এসেট ভাল্যুয়েশন সার্ভিস (বিএএস ও বিএফআরএসের নীতিমালা অনুযায়ী ইনভেনট্রির ফেয়ার ভাল্যু নিরুপন ও কাউন্টিং, এবং ইগজিস্টেনস, কামপ্লিটনেস, ক্লাসিফিকেইশন, রাইটস এন্ড অব্লিগেইশন, ভেল্যুয়েশন ও কাট-অফে ম্যানিজমেন্ট এসার্শনের দৃষ্টিকোণ থেকে এসেটের অডিট হয়ে থাকে),
(৪) কনসাল্টেনসি (ক্রমবর্ধনশীল নাসেন্ট কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় মেনিজমেন্ট কনসাল্টেনসি প্রদানের সার্ভিস),
(৫) একাউন্টিং সিসটেম সার্ভিস (নতুন কোম্পানিদের জন্যে পুরো একটি একাউন্টিং সিস্টেম দাঁড় করিয়ে দেয়া),
(৬) টেক্স কনসাল্টেনসি (টেক্স মিনিমাইযেশনের জন্যে কনসাল্ট করা ও টেক্স রিটার্ন প্রসেসিং),
(৭) প্রজেক্ট ফিজিবিলিটি সার্টিফিকেশন,
(৮) কেশ ইনসেনটিভ অডিট,
(৯) আইপিও, রাইট ফান্ড ইউটিলাইজেশন অডিট,
(১০) অন্যান্য একাউন্টিং সার্ভিস।
এসব কাজ করতে গেলে ম্যানিজমেন্ট থেকে সব রকমের তথ্য আহরন করতে হয়, এবং সে জন্যেই ম্যানিজমেন্ট অডিটরের নিকট জবাবদিহি করতে রীতিসিদ্ধভাবে বাদ্ধ থাকেন।
সিএ ফার্মগুলো অংশীদারী বা পার্টনারশিপ কাঠামোয় গঠিত এফসিএদের মেন্টরশিপে পরিচালিত আইসিএবির (দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশের) অধীনে সিএ ফার্ম হিসেবে স্বীকৃত কতগুলো পেশাজীবী সার্ভিস প্রতিষ্টান। সিএ ফার্মের সার্ভিস গ্রহনকারী কোম্পানি ক্লায়েন্টগুলো ছাত্রদের দৃষ্টিকোণ থেকে যেখানে বাস্তব দুনিয়ায় বিজনিস নলিজের প্রয়োগ কীভাবে এবং কতটা মাত্রায় হচ্ছে তা পর্যবেক্ষন ও গভেষণা ও কেইস স্টাডির মাধ্যমে শেখার স্থান, সেখানে সিএ ফার্মের প্রফেশনাল অডিটরের জন্যে সেগুলো হল আইন, বেস্ট প্রাক্টিস কিংবা বিভিন্ন স্পেইশাল কনভেনশন যথাযথভাবে প্রয়োগ ও প্রযুজ্য হচ্ছে কিনা তা নির্ণয়ে প্রফেশনাল কম্পিটেনস, ডিউ ডিলিজেনস, প্রুডেনস, ইন্টিগ্রিটি, আবজেক্টিভিটি, কানফাইডাবিলিটির পরিচয় দেয়ার স্থান। আর, সিএ ফার্মগুলো কোম্পানিদের দৃষ্টিকোণ থেকে হল কোম্পানির মালিকপক্ষ কর্তৃক নিয়োজিত কতকগুলো নিরপেক্ষ ও স্বাধীন বিচারিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত তৃতীয় পক্ষ যারা মালিকপক্ষকে ম্যেনিজমেন্টের দায়ীত্বের আমানতদারীতা বা স্টিউয়ার্ডশিপ, সার্বিক আর্থিক হালচাল, আইনী কমপ্লাইয়েনসগত অবস্থা এবং অন্যান্য স্বার্থ সম্পর্কে পুর্নাঙ্গ প্রতিবেদন প্রদান করেন। এই চতুর্পাক্ষিক দৃশ্যপটে সিএ ছাত্রদের অবস্থান হল এক ঝাক ফ্রেশ গ্রাজুয়েট যারা বিনা বেতনে কর্মরত বাস্তব ও প্রায়োগীক জ্ঞানে প্রশিক্ষনাধীন। এখানেই এসে তাই বলা চলে, সিএ ছাত্ররা না পুরোপুরি ছাত্র, না আপাদমস্তক চাকুরেজীবী - তাদের প্রকৃত অবস্থান এই দুইয়ের মাঝামাঝি একটি ঝুলন্ত ব্রিজের ওপর।