পুদিনা পাতার ঔষধি গুন



পরিচিতি:   পুদিনা পাতা প্রাচীনকাল থেকেই বেশ জনপ্রিয় ঔষধ হিসেবে পরিচিত। বহু রোগ আরোগ্যে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। পুদিনা জীবাণুনাশক হিসাবে কাজ করে। পুদিনা এক প্রকারের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। বিশ্বের অনেক দেশেই পুদিনার গাছ জন্মে। অন্যান্য স্থানীয় নামঃ Mint, nana। এর বৈজ্ঞানিক নামঃ Mentha spicata । এটি Lamiaceae পরিবারের অন্তর্গত। ঔষধিগুণাগুণ সম্পন্ন হওয়ার কারণে এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্যাপক। এছাড়া রূপচর্চার উপাদান হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে পুতিনা পাতা। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে পুদিনা পাতা পেটের সমস্যার পাশাপাশি ওজন কমাতে, মানসিক অবসাদকে নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং নানাবিধ ত্বকের রোগের চিকিৎসাতে ও বমন নিবারক, অরুচি, হিক্কা, জ্বর ও জরান্তিক দুর্বলতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিয়মিত পুদিনা পাতা খাওয়া শুরু করলে আরও অনেক উপকার মিলতে শুরু করে। পুদিনা পাতা এক ধরনের সুগন্ধি গাছ। এই গাছের পাতা তরি-তরকারির সঙ্গে সুগন্ধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 


 পুদিনার ঔষধি গুণাবলিঃ

 ➢ পেটের পীড়ায় : পেটের পীড়ায় পুদিনা পাতা দারুনভাবে কাজ করে

 ➢ এটি ইরেটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম [ আইবিএস ] এবং দীর্ঘস্থায়ী বদহজমের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকর। এছাড়াও পুদিনা কোলনের পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রন করে। 

 ➢ অ্যাজমা : পুদিনা পাতা অ্যাজমা নিরাময়ে সহায়তা করে

 ➢ পুদিনায় রোজমেরিক এসিড নামের এক ধরনের উপাদান থাকে। এটি প্রাকপ্রদাহী পদার্থ তৈরীতে বাধা দেয়। ফলে অ্যাজমা হয় না। এছাড়াও এ ঔষধি প্রোস্টসাইক্লিন তৈরীতে বাধা দেয়। তাতে শাসনালী পরিষ্কার থাকে।

 ➢ এন্টিক্যান্সার : পুদিনা পাতায় উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি এনজাইম শরীরে প্রবেশ করার পর এমন খেলা দেখায় যে দেহের ভিতরে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার কোনও সুযোগই পায় না। 

 ➢ পুদিনায় রয়েছে মনোটারপিন নামক উপাদান। এটি স্তন, লিভার এবং প্যানক্রিয়াসে ক্যান্সার হওয়া প্রতিরোধ করে। নিয়মিত পুদিনা পাতা খেলে ফুসফুস, কোলন এবং ত্বকের ক্যান্সার থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

 ➢ ওজন কমায়: পুদিনা পাতা খাওয়া শুরু করলে হজমে সহায়ক পাচক রসের ক্ষরণ বাড়তে শুরু করে। ফলে হজম ক্ষমতা এতটা বেড়ে যায় যে ওজন বৃদ্ধির আশঙ্কা কমতে শুরু করে। তাই যারা নতুন বছরে ওজন কমানোর প্ল্যান করছেন, তারা রোজের ডায়েটে পুদিনা পাতাকে অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না। 

 ➢ পুদিনা খুবই উপকারী একটি উদ্ভিদ। আমাদের শরীরের নানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। মুখের স্বাদ বাড়াতেও এটি খুব কার্যকর। এছাড়াও আরও যেসব ক্ষেত্রে পুদিনার পাতা ব্যবহার করা যায়, তা হলো: 

 ➢ ১. পুদিনার তাজা পাতা পিষে মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর যদি তা ধুয়ে ফেলা যায়, তাহলে মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর হয়ে যায়। ব্রণ ওঠাও বন্ধ হয়। 

 ➢ ২. পুদিনার পাতা পিষে রস করে তার ভেতর দু’তিন ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে তা পান করলে ক্লান্তিভাবও দূর হয়। 

 ➢ ৩. কোনো কারণে কোনো ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার নাকের কাছে কিছু তাজা পুদিনা পাতা ধরুন। দেখবেন, জ্ঞান ফিরে পেয়েছে লোকটি। 

 ➢ ৪. পুদিনার পাতা ভালো করে পিষে তার রস ভালো করে মাথায় ব্যবহার করলে যাদের চুলে উকুন আছে, তারা খুব উপকার পাবেন। 

 ➢ ৫. ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ায়: পুদিনা পাতার অ্যারোমা এতটাই কড়া হয় যে তা ইনহেল করলে বুকে জমে থাকা কফ কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ফুসফুসের ক্ষমতা এতটা বেড়ে যায় যে নানাবিধ রেসপিরেটারি প্রবলমেও ধীরে ধীরে কমে যায়। প্রসঙ্গত, অ্যাস্থেমা, জ্বর এবং সর্দি-কাশির প্রকোপ কমাতেও এই প্রকৃতিক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

 ➢ ৫. শরীরের ব্যথা দূর করতে পুদিনা পাতার চা খুব কাজে দেয়। 

 ➢ ৬. মাথা ও পেট ব্যথা নিরাময়েও পুদিনার পাতা খুব উপকারী। - 

 এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো পুদিনা পাতা নিয়ে তার গন্ধ শুকলেই দারুন আরাম পাওয়া যায়। আর যদি এমনটা করতে মন না চায়, তাহলে পুদিনা পাতার তেল অল্প করে মাথায় লাগালেও সমান উপকার মেলে। আসলে এই প্রকৃতিক উপাদানটির অন্দরে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি উপাদান, প্রদাহ কমিয়ে মাথা যন্ত্রণার মতো সমস্যা কমাতে দারুনভাবে সাহায্য করে থাকে।

 ➢ ৭. যাদের মাঝে মধ্যে হেঁচকি ওঠে, তারা পুদিনা পাতার সঙ্গে গোল মরিচ পিষে তা ছেঁকে নিয়ে রসটুকু পান করুন। দেখবেন হেঁচকি বন্ধ হয়ে গেছে।

 ➢ ৮. কফ-কাশিতে আমরা সাধারণত এক্সপেক্টোরেন্ট জাতীয় ওষুধ খেয়ে থাকি। এক্সপেক্টোরেন্টের কাজ হলো গলা থেকে কফ বের করে দেওয়া। কিন্তু এর একটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে এসব ওষুধ খেলে ঘুম ঘুম ভাব হয়। তাই এর বিকল্প হিসেবে আপনি পুদিনা পাতার সাহায্য নিতে পারেন। গরম পানিতে সামান্য পরিমাণ পুদিনা পাতা সেদ্ধ করে পান করুন। পুদিনা পাতা এক্সপেক্টোরেন্টের কাজ করবে।

 ➢ দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়: পুদিনা পাতার অন্দরে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ মুখ গহ্বরে বাসা বেঁধে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মেরে তো ফেলেই। সেই সঙ্গে মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। তাই তো দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে নিয়মিত পুদিনা পাতা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম