পরিচিতি: পেঁয়াজ বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ এবং রোগ প্রতিরোধে কাজ করে থাকে। শরীরে বিভিন্ন ধরনের বাত এবং বাতজনিত রোগ থেকে মুক্তি দেয়। আয়ুর্বেদিক গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, বাত ছাড়াও হাড় এবং শরীরের সংযোগ স্থলগুলোতে প্রদাহ থাকলে তা প্রতিহত করে পেঁয়াজ।
পেঁয়াজের বিভিন্ন উপকারিতা গুলি হলোঃ
➢ পেঁয়াজের সঙ্গে অন্যান্য ভেষজ পাতার প্রলেপ ব্যবহার করলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুলে ওঠা এবং জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
➢ মুখের কালো দাগ দূর করতে এর রস ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
➢ কান ব্যথা এবং চোখে ঝাপসা দেখা থেকে রক্ষা করে পেঁয়াজের রস।
➢ যকৃত পুনর্গঠনে সাহায্য করে। এছাড়া হজম ক্ষমতা স্বাভাবিক রাখে, ক্ষুধা বৃদ্ধি করে, কোষ্ঠকাঠিন্য (অর্শরোগ) এবং জন্ডিসের চিকিৎসায় পেঁয়াজ উপকারী।
➢ কাশি কমানোর জন্য বাড়িতে পেঁয়াজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
➢ এর বীজ ব্যবহার পুরুষের অকাল বন্ধ্যাত্ব থেকে রক্ষা করে।
➢ রক্তপাত বন্ধে সাহায্য করে। বিশেষ করে অশ্বরোগ এবং নাকে দিয়ে রক্ত পড়া বন্ধে সাহায্য করে।
➢ বিভিন্ন ধরনের খোঁস-পাঁচড়া থেকে দেহকে রক্ষা করে পেঁয়াজ।
➢ এটি ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখে।পোকামাকড়ের কামড় হোক, বা রোদে পোড়া ট্যান, কিংবা ব্রণ-ফুস্কুরি, এ সবের সমস্যা থাকলে একটু পেঁয়াজের রস লাগান। একটু কুটকুট করতে পারে, তবে দ্রুত কাজ করবে।
➢ এছাড়া পেঁয়াজ আমাদের বিশ্লেষণ ক্ষমতা, বুদ্ধিমত্তা এবং দেহকে সুদৃঢ় করে। তাই সকলের উচিত প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় পেঁয়াজের ব্যবহার নিশ্চিত করা।
➢ সংক্রমণ সারায়: এর মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল, অ্যান্টিসেপ্টিক, কার্মিনেটিভ এবং অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় পদার্থ মজুত রয়েছে। তাই শরীরে কোথাও সংক্রমণ ঘটে থাকলে কাঁচা পেঁয়াজ একটু বেশি খান, চটজলদি উপকার পাবেন।
➢ নাক থেকে রক্ত পড়া বন্ধ: গ্রীষ্মে বা শীতে অনেকের নাক থেকে রক্তপাত হয়। যদি এ সময়ে কাছাকাছি পেঁয়াজ থাকে তাড়াতাড়ি কেটে তার ঘ্রাণ নিতে থাকুন। রক্তপাত কমে যাবে বা একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।
➢ কোলন ক্যান্সারের মতো রোগের প্রাতিরোধে সাহায্য করে।
➢ হজমশক্তি বাড়ায়: যাদের হজমে সমস্যা রয়েছে তাঁরা রোজ একটু কাঁচা পেঁয়াজ খান। পেঁয়াজ খাবার হজমের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন এনজাইম বাড়াতে সাহায্য করে। যার ফলে দ্রুত খাবার হজম হয়।
➢ জ্বর-সর্দিতে: ঠান্ডা লাগার ফলে গলা ব্যথা, সর্দি-কাশি, জ্বর, অ্যালার্জি বা সামান্য গা ব্যথায় দারুণ কাজ করে। সামান্য পেঁয়াজের রসের সঙ্গে একটু মধু মিশিয়ে খান। তাড়াতাড়ি সেরে উঠবেন। একটা পেঁয়াজকে কেটে নিয়ে তার রস সংগ্রহ করে নিন। তারপর তাতে কয়েক ড্রপ মধু মিশিয়ে এই মিশ্রন দিনে কম করে দুবার পান করলেই কাশি কমে যেতে শুরু করবে।
➢ ডায়াবেটিসের মতো রোগকে দূরে রাখে: ২১ শতকের সব থেকে ভয়ঙ্কর এই রোগকে দাবিয়ে রাখতে পেঁয়াজের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে এই সবজিটিতে উপস্থিত বেশ কিছু উপদান রক্তে শর্করার মাত্রাকে বাড়তে দেয় না। সেই সঙ্গে ইনসুলিনের ঘাটতি যাতে দেখা না দেয়, ফলে ডায়াবেটিসের প্রকোপ বৃদ্ধির সুযোগই থাকে না।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দেহে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়াতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে পেঁয়াজ অত্যন্ত ভালো। যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজ পেঁয়াজ খেতে পারেন।
➢ পুড়ে গেলে কাজে আসে: রান্না করতে গিয়ে হাত পুড়ে যাওয়ার ঘটনা গৃহিণীদের সঙ্গে সবসময় হতে থাকে। এক্ষেত্রেও পিঁয়াজ দারুন উপকারে লাগে। এবার থেকে পুড়ে গেলে, ক্ষতস্থানে এক টুকরো পিঁয়াজ কিছু সময়ের জন্য রেখে দিন। অল্প সময়েই দেখবেন জ্বালা ভাব কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতও সেরে গেছে।
➢ দেহের তাপমাত্রা কমাতে এখানেও পেঁয়াজ তার কারিশমা দেখায়। জ্বরে দেহের তাপমাত্রা বেশি থাকলে পাতলা করে কাটা পেঁয়াজ কপালে রাখলে কিছুক্ষণের মধ্যে তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়।
➢ হার্ট সুস্থ রাখতে পেঁয়াজ রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয় না এবং রক্তের কোলেস্টেরল কমায়। তাই পেঁয়াজ হৃৎপিণ্ডের জন্য অত্যন্ত উপকারী। অনেক কার্ডিওলোজিস্টই নিয়মিত পেঁয়াজ খেতে বলে দেন রোগীদেরকে। বিশেষ করে হার্ভাডের ডাক্তার ভিক্টর গুড়েউইচ তার রোগীদেরকে প্রতিদিন অন্তত একটি করে পেঁয়াজ খাওয়ার উপদেশ দেন।
➢ যৌন ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। প্রতিদিন অন্তত এক গ্লাস করে পেঁয়াজের রস খেলে যৌন ক্ষমতা বাড়ে।
➢ হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে: পেঁয়াজ পাতায় উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে থাকে যা হাড়ের স্বাভাবিক কার্যাবলীর জন্য প্রয়োজনীয়। ভিটামিন সি কোলাজেনের সমন্বয় সাধনে কাজ করে যা হাড়কে শক্তিশালী করে। অন্যদিকে ভিটামিন কে হাড়ের ঘনত্ব রক্ষায় প্রধান ভূমিকা পালন করে।
➢ পেয়াজের রস চুলে দিলে তা উকুন নাশক হিসেবে কাজ করবে পাশাপাশি চুল পড়া কমাতেও সাহায্য করবে।
➢ স্বাভাবিক দৃষ্টির রক্ষণাবেক্ষণ করে: লুটেইন ও জেনান্থিন নামক ক্যারোটিনয়েড এর উপস্থিতির জন্য পেঁয়াজ পাতা চোখের প্রতিরক্ষায় প্রভাব বিস্তার করে। চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং স্বাভাবিক দৃষ্টির রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ভিটামিন এ যা স্প্রিং অনিওন এর সবুজ অংশে থাকে।
