আমার পথ-কাজী নজরুল ইসলাম



🔴লেখক পরিচিতিঃ

নাম- কাজী নজরুল ইসলাম
উপাধি- বিদ্রোহী কবি, দুখু মিয়া।
জীবনকাল- (১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬- ১২ই ভাদ্র ১৩৮৩)
জন্মস্থান- পশ্চিমবিঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রাম।
মৃত্যুস্থান- ঢাকা।
পিতা- কাজী ফকির আহমেদ।
মাতা- জাহেদা খাতুন।
★সাহিত্যজীবনঃ
উপন্যাস- বাঁধনহারা, মৃত্যু- ক্ষুধা, কুহেলিকা।
গল্পগ্রন্থ- ব্যথান দান, রিক্তের বেদন, শিউলিমালা।
প্রবন্ধগ্রন্থ- যুগ- বাণী, দুর্দিনের যাত্রী, রুদ্র- মঙ্গল, রাজবন্দীর জবানবন্দী।
★মাত্র ৪৩ বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে কবি আজীবন নির্বাক হয়ে যান।

🔴গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ

🔸কবি নিজেকে নিজের কর্ণধার মনে করেন।
🔸কবিকে পথ দেখাবে কবির সত্য
🔸কবি নিজের সত্যকে নমস্কার জানিয়েছেন।
🔸কে বাইরে ভয় পায়?– যার ভিতরে ভয়।
🔸কে মিথ্যাকে ভয় করে না?– যে মিথ্যাকে চেনে।
🔸কবির গুরু কে?– সত্য।
🔸কিভাবে নিজের সত্যের উপর অটুট বিশ্বাস আসে?– নিজেকে চিনলে, নিজের সত্যকে নিজের কর্ণধার মনে জানলে।
🔸নিজের সত্যকে অস্বীকার করা হয়– অতি বিনয় প্রকাশে।
🔸কবি নিজেকে আখ্যায়িত করেছেন– অভিশাপ রথের সারথি হিসেবে।
🔸কোনটি আত্মকে চেনার সহজ স্বীকারোক্তি?– নিজেকে চেনা, আপনার সত্যকে আপনার গুরু, পথপ্রদর্শক কাণ্ডারি বলে জানা।
🔸কোনটি মানুষকে ক্রমেই ছোট করে আনে?– খুব বেশি বিনয় দেখাতে গিয়ে নিজের সত্যকে অস্বীকার করে ফেললে।
🔸কোথায় একটা অবিনয় নিশ্চয়ই থাকে?– স্পষ্ট কথা বলায়/ স্পষ্টবাদিতায়।
🔸গান্ধিজী আমাদের কী শেখাচ্ছিলেন?– স্বাবলম্বন ও নিজের উপর অটুট বিশ্বাস করতে।
🔸কোনটি আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলল?– পরাবলম্বন।
🔸সবচেয়ে বড় দাসত্ব– পরাবলম্বন।
🔸কাকে চিনলে আত্মনির্ভরতা আসে?– আত্নাকে।
🔸আমরা কোন দিন স্বাধীন হবো?– যেদিন আমাদের আত্মনির্ভরতা আসবে।
🔸ভুলের মধ্য দিয়ে গিয়ে কি পাওয়া যায়?– সত্য।
🔸সবচেয়ে বড় ধর্ম- মানুষ ধর্ম।
🔸আত্মপরিচয়ের শিখা নিভে যায়– মিথ্যায়।
🔸কেন কবি আগুনের ঝান্ডা দুলিয়ে বের হলেন?– দেশের মঙ্গলার্থে।
🔸কবি সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে অভিশাপ হয়ে আবির্ভুত হয়েছেন।
🔸ঐক্যের মূল শক্তি কি?– সম্প্রীতি।
🔸ভুলের মধ্য দিয়ে কিভাবে সত্যকে পাওয়া যায়?– ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে।
🔸দেশের যারা শত্রু, দেশের যা- কিছু মিথ্যা, ভন্ডামি, মেকি তা সব দূর করতে প্রয়োজন – আগুনের সম্মার্জনা।

🔴গুরুত্বপূর্ণ অনুধাবনমূক লাইনঃ

📖"যেপথ আমার সত্যের বিরোধী, সে পথ আর কোন পথই আমার বিপথ নয়।"– লেখক সকল অন্যায় দূর করতে যে পথে নেমেছেন সেটির একমাত্র বাধা যে লেখকের সত্যের বিরোধী পথ সেটি বুঝিয়েছেন।
📖" যার ভিতরে ভয়, সেই বাইরে ভয় পায়।"– যে বাইরের সত্যকে গ্রহণ করতে ভয় পায় সে প্রকৃত অর্থে ভিতর থেকে ভীতু। প্রকৃত সত্যকে মেনে নেয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।
📖"তবু এটা মন্দের ভাল"– স্পষ্টবাদিতায় একটা দম্ভ বা অবিনয় থাকে। সকলের কাছে সেটি গ্রহণযোগ্যতা পায় না অথবা অনেকেই সেটিকে বেয়াদবী ভাবে। কিন্তু লেখকের নিকট মিছামিছি অতি ভক্তি প্রকাশের তুলনায় স্পষ্টবাদিতা বেশি গ্রহণযোগ্য।
📖" এই পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেললে"– প্রকৃত স্বাধীনতা আসে নিজের উপর অটুট বিশ্বাসে। নিজে নিষ্ক্রিয় থেকে অপরের উপর নির্ভর করে থাকলে ক্রমে তা আরো বড় দাসত্বে রূপ নেয়।
📖"মানুষ- ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম"– ধর্মের ভেদাভেদ মানুষকে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন ও দ্বান্দ্বিক করে তোলে। তাই লেখক সকল ধর্মের মুলমন্ত্র মানব ধর্মের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
📖" দেশের পক্ষে যা মঙ্গলকর বা সত্য, শুধু তাই লক্ষ্য করে এই আগুনের ঝান্ডা দুলিয়ে পথে বাহির হলাম।"– সকল অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে আগুনের পতাকাসরূপ লেখক প্রকট হয়েছেন বলে জাহির করেন।

🔴শব্দার্থঃ

কর্ণধার- নেতৃত্ব প্রদানে সামর্থ্য আছে এমন ব্যক্তি।
কুর্নিশ-অভিবাদন। সম্মান প্রদর্শন।
মেকি- মিথ্যা। কপট।
সম্মার্জনা- ঘষে- মেজে পরিষ্কার করা।
আগুনের ঝান্ডা- অগ্নিপতাকা।

🔴সংকলনঃ

'আমার পথ' প্রবন্ধটি কাজী নজরুল ইসলামের 'রুদ্র- মঙ্গল' প্রবন্ধগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।

🔴মুলভাবঃ

প্রবন্ধে লেখন এমন এক 'আমি' র আবাহন প্রত্যাশা করেছেন যার একমাত্র পথ হবে সত্য। সত্য প্রকাশে তার মাঝে থাকবে না কোন ভয় বা কপটতা। নিজ সত্য দ্বারা সমাজের সকল অন্যায় অবিচার দূর করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা থাকবে নজরুলের সেই 'আমি' সত্তার। কারো ভয়ে বা অতি বিনয়ে সেই 'আমি' সত্তা নিজ সত্যকে অস্বীকার করবে না। সকল অন্যায়- অবিচার এর বিরুদ্ধে অভিশাপসরূপ প্রকট হবে। ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি, হিংসা, বিদ্বেষ দূর করে একটি সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলা, লেখকের সেই 'আমি' সত্তার মূল অন্বিষ্ট।
 সবার জন্য শুভকামনা।


মোহাম্মদ আতিকুর রহমান

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম