সেই অস্ত্র-আহসান হাবীব



🔴কবি পরিচিতিঃ

নাম- আহসান হাবীব
জীবনকাল- ২রা জানুয়ারি, ১৯১৭- ১০জুলাই, ১৯৮৫
জন্মস্থান- বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের পিরোজপুর জেলার শঙ্করপাশা গ্রাম।
পিতা- হামিজুদ্দিন হাওলাদার
মাতা- জমিলা খাতুন
সাহিত্যজীবনঃ-
কাব্যগ্রন্থ- 'রাত্রিশেষ', 'ছায়াহরিণ', 'সারা দুপুর', 'মেঘ বলে চৈত্রে যাবো', 'দু' হাতে দুই আদিম পাথর', বিদীর্ণ দর্পণে মুখ'
★১৯৬৪ সালে কবি 'দৈনিক বাংলা' (তৎকালীন 'দৈনিক পাকিস্তান') পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন এবং আমৃত্যু এই পত্রিকার সাথে যুক্ত থাকেন।

🔴গুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রশ্নঃ

🔹'সভ্যতার সেই পতিশ্রুতি' বলতে কবি বুঝিয়েছেন– ভালবাসা।
🔹কবির বহুল আকাঙ্ক্ষিত অস্ত্র হলো– ভালবাসা।
🔹কবির আকাঙ্ক্ষিত অস্ত্র উত্তোলিত হলে– পৃথিবীর যাবীতয় অস্ত্র হবে আনত, অরন্য আরো সবুজ, নদী আরো কল্লোলিত।
🔹পাখিরা কোথায় ঘুমাবে?– নীড়ে।
🔹ভালবাসা নামক অস্ত্র উত্তোলিত হলে কোথায় আগুন জ্বলবে না?– ফসলের মাঠে।
🔹কি খাঁ খাঁ করবে না?– গৃহস্থালি।
🔹'খাঁ খাঁ করবেনা গৃহস্থালি' বলতে কি বোঝানো হয়েছে?– দুর্ভিক্ষ দূর হবে।
🔹'নক্ষত্রখচিত আকাশ থেকে আগুন ঝরবে না' বলতে কবি কি বুঝিয়েছেন?– যুদ্ধে ব্যবহৃত ছোট বড় ক্ষেপণাস্ত্র।
🔹'সেই অস্ত্র' কবিতায় কোন নগরীর কথা উল্লেখ আছে?– ট্রয়।
🔹কবির প্রত্যাশিত অস্ত্র কেমন?– অবিনাশী।
🔹সেই অস্ত্র কাকে বার বার পরাজিত করে?– ঘৃণা, বিদ্বেষ, অহংকার, জাত্যভিমান।
🔹সেই অস্ত্র কীসের লোভকে নিশ্চিহ্ন করে?– আধিপত্য।
🔹সেই অমোঘ অস্ত্র কোনটি?– ভালবাসা।

🔴গুরুত্বপূর্ণ অনুধাবনমূলক লাইনঃ

📖"সভ্যতার সেই পরিশ্রুতি"– সভ্যতার সূচনালগ্নে মানুষ এই পৃথিবীকে একটি সুন্দর ও বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করে। আর এই প্রতিশ্রুতি পালনের একমাত্র উপায় হলো ভালবাসা। তাই ভালবাসাকে সভ্যতার সেই প্রতিশ্রুতি হিসেবে বোঝানো হয়েছে।
📖" অরণ্য হবে আরও সবুজ
নদী আরও কল্লোলিত
পাখিরা নীড়ে ঘুমোবে।"– ভালবাসা নামক অস্ত্র সমস্ত পৃথিবীজুড়ে বিরাজ করলে সুখ, শান্তি, উন্নয়ন বৃদ্ধি হওয়ার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।
📖"নক্ষত্রখচিত আকাশ থেকে আগুন ঝরবে না"– কবি এখানে যুদ্ধে ব্যবহৃত ছোট- বড় ক্ষেপনাস্ত্রের কথা বুঝিয়েছেন। কবি চান, মানুষ যেন যুদ্ধের ভয়াবহতায় জড়িয়ে না পড়ে, বিশ্বে যেন শান্তি নিশ্চিত হয়।
📖" মানব বসতির বুকে
মুহূর্তের অগ্ন্যুৎপাত
লক্ষ লক্ষ মানুষকে করবে না পঙ্গু- বিকৃত"– যুদ্ধের ভয়াবহতা উল্লেখ করে তার থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় যে 'ভালবাসা' তা বোঝানো হয়েছে।
📖"যে অস্ত্র মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে না
করে সমাবিষ্ট"– ভালবাসা নামক অস্ত্র সকল মানবকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে একই স্থানে আবদ্ধ করে।

🔴শব্দার্থঃ

অমোঘ- অব্যর্থ, সার্থক, অবশ্যম্ভাবী।
ট্রয়নগরী- প্রাচীন গ্রিসের স্থাপত্যকলায় নন্দিত এক শহর। যুদ্ধের নির্মমতার এক চিরায়ত দৃষ্টান্ত এই ট্রয়।
জাত্যভিমান- কোন যুক্তি ছাড়াই নিজ জাতিকে সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান করার অহংকারী মনোভাব।
সমাবিষ্ট- সমভাবে আবিষ্ট।

🔴ছন্দ ও সংকলনঃ

'সেই অস্ত্র' কবিতাটি অন্ত্যমিলহীন অক্ষরবৃত্তে ছন্দে রচিত। এর পর্বগুলোর বিন্যাসও অসম। কবিতাটি আহসান হাবীবের 'বিদীর্ণ দর্পণে মুখ" কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত।

🔴মুলভাবঃ

সারা পৃথিবী বর্তমানে হিংসা, বিদ্বেষ ও পারস্পরিক দ্বন্দ্বের বিষবাষ্পে জর্জরিত। এই বিষবাষ্প থেকে মুক্ত হওয়ার একমাত্র উপায় 'ভালবাসা'। পারস্পরিক ভালবাসাই পারে সমাজ থেকে সকল ধরনের হিংসা, বিদ্বেষ, লড়াই দূর করতে। ভালবাসাই পারে পৃথিবীকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে। তাই কবি পৃথিবীতে ভালবাসা নামক অস্ত্রের ব্যাপ্তি কামনা করেন। কবিতাটির গঠনগত বিশেষত্ব হলো, এর অনাড়ম্বর সহজ গতিময়তা।ভেই কবিতাটি শান্তিপ্রিয় পৃথিবীবাসীর জন্য এক চিরায়ত প্রার্থনাসংগীত।
সবার জন্য শুভকামনা।


মোহাম্মদ আতিকুর রহমান

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম