গত পর্বে আমরা ক্লোরোফিল এবং ফটোসিস্টেম সম্পর্কে জেনেছিলাম। এবং দেখেছিলাম ক্লোরোফিলগুলো কীভাবে ফটোসিস্টেমে সজ্জিত থাকে।অবশ্য আরো বেশ কিছু বিষয় নিয়েই কথা বলেছিলাম কিন্তু আমাদের আজকের পর্বে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে এদুটোই। মূল আলোচনায় আসি,
আমরা মোটামুটি অনেকেই জানি (আবার অনেকেই জনি না) যে ব্ল্যাকম্যান নামের জনৈক ভদ্দরলোক পুরো সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটিকে দুটোভাগে ভাগ করেছেন, আলোক নির্ভর পর্যায় আর আলোক নিরপেক্ষ পর্যায়। অর্থাৎ আমাদের রান্নার একাংশ করতে হবে দিনের আলোয় আর বাকীটুকু নিজের ইচ্ছেমতো দিনে-রাতে কোনো একটা সময় করলেই হবে।
আমরা আজকে আলোক নির্ভর পর্যায় নিয়ে কথা বলবো।
আলোক নির্ভর পর্যায়ের বিক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে সূর্যের আলোক রশ্নিকে রাসায়নিক শক্তি হিসেবে ATP(C10H16N5O13P3) এবং NADPH+H+(C21H29
N7O17P3) এ সঞ্চিত করে রাখা হয়। এই প্রক্রিয়াকে বলে ফটোফসফরাইলেশন। পরে এই শক্তি ব্যবহার করেই পরবর্তী বিক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হয়।
ফটোসিস্টেমগুলো অবস্থান করে থাইলাকয়েড পর্দার উপর। এই ফটোসিস্টেমের উপর আলো পড়লে সেখান থেকে নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষণ করে ক্লোরোফিলগুলো উত্তেজিত হয় ফলে এর বিক্রিয়াস্থল থেকে দুটো ইলেক্ট্রন বের হয়ে ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমে চলে যায়।
ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম(ETS) কী?
সাধারণত দুটো ফটোসিস্টেম(১ ও ২) কতগুলো ইলেকট্রন বাহক দ্বারা তৈরি একটা চেইনের মাধ্যমে যুক্ত থাকে এটাই ETS। এই ETS দিয়ে ইলেক্ট্রন গমন করে। এখন দেখা যাক এই চেইনটাতে বাহক হিসেবে কে কে থাকে,
১.প্লাস্টোকুইনিন(ক্ষুদ্র চলনশীল লিপিড(C, H এবং O দ্বারা গঠিত যৌগ। তবে কার্বহাইড্রেটের মতো অনুপাত ১:২:১ নয়।)
২.ফিয়োফাইটিন(বর্ণহীন ক্লোরোফিল-এ।)
৩.সাইটোক্রোম(রঞ্জক পদার্থ যুক্ত প্রোটিন)
৪.প্লাস্টোসায়ানিন(ক্ষুদ্র চলনশীল প্রোটিন)
৫.ফেরিডক্সিন(আয়রন-সালফার যুক্ত প্রোটিন)
(একটু মনে করিয়ে দিই প্রোটিন কী,
অনেকগুলো এমিনো এসিড পেপটাইড(-CONH) বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে যে শিকল তৈরি করে তাই প্রোটিন।
এমিনো এসিড হচ্ছে এমিন(NH2) এবং কার্বক্সিল(COOH) বিশিষ্ট যৌগ।)
মূল কথায় আসি, (ETS) এ ইলেক্ট্রনের গতিপথের মতিগতির উপর নির্ভর করে দু'প্রকার ফটোফসফরাইলেশন হয়, ১.চক্রীয় ফটোফসফরাইলেশন।
২.অচক্রীয় ফটোফসফরাইলেশন।
চক্রীয় ফটোফসফরাইলেশনে শুধুমাত্র ফটোসিস্টেম-১ কার্যকর থাকে। এর উপর ৬৮০nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো পড়লে ক্লোরোফিলগুলো উত্তেজিত হয় এবং বিক্রিয়াকেন্দ্র থেকে একজোড়া ইলেক্ট্রন বেড়িয়ে পড়ে।
এরপর শুরু হয় এই কাপলের জার্ণি। সে বড়ই রোম্যান্টিক ব্যাপারস্যাপার। চলেন আমরাও পেছন পেছন নজর রাখি, দেখি এরা কোথায় যায়,
ইলেকট্রন জোড়া প্রথমেই গেলো তার এক ফ্রেন্ডের বাসায়। বাসার নাম, "ফেরিডক্সিন-সালফার প্রোটিন"। সেখান থেকে সোজা "সাইটোক্রোম-বি৬" নামের একটা গন্ডগ্রামে গা ঢাকা দিলো। কিন্তু বেশিদিনের জন্যে নয়, চলে যেতে হলো পাশের গ্রাম, "প্লাস্টোকুইনোন" এ। এদিকে ভিলেন মফিজ খবর পেয়ে গেছে এরা প্লাস্টোকুইনোন গ্রামে আছে; এখানে বেশিক্ষণ থাকা নিরাপদ না। সেখান থেকে ওরা রওনা হলো "সাইটোক্রোম-এফ" এর উদ্দেশ্যে। পথে মফিজের চ্যালা ADP আর Pi ইলেক্ট্রন জোড়াকে দেখে চিনে ফেলল। বিপদ এড়াতে তারাতাড়ি দুজনকে নিজেদের টাকাগুলো(শক্তি) দিয়ে ওরা কেটে পড়লো।
এদিকে টাকা শেষ; গ্রামের যে বাড়িতে ওরা উঠেছিলো তারাই বা ফ্রিতে কত রাখবে? শেষ ভরসা হিসেবে গেলো আরেক বন্ধুর বাড়ি। বাড়ির নাম,"প্লাস্টোসা
য়ানিন"। এখানেও বেশিদিন থাকা গেল না। অগত্যা নিজেদের বাড়ি "বিক্রিয়াকেন্দ্
রে" ফিরে আসতে হলো।
এদিকে ADP আর Pi টাকা খেয়ে মফিজের দল থেকে নাম কেটে নিজেরা একসাথে চৌধুরী সাহেব(ATP)হয়ে গেলো। তাদের এখন অনেক "শক্তি"।
আজ এখানেই ইতি টানছি৷ আগামী পর্বে কথা হবে অচক্রীয় ফটোফসফরাইলেশন নিয়ে। বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে, মফিজের চ্যালাপ্যালাদের ম্যানেজ করে ইলেকট্রনরা কী পারবে সবার আড়ালে চলে যেতে? জানতে হলে চোখ রাখুন আগামী পর্বে ।
Writer: Jahidul Islam Riyad
আমরা মোটামুটি অনেকেই জানি (আবার অনেকেই জনি না) যে ব্ল্যাকম্যান নামের জনৈক ভদ্দরলোক পুরো সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াটিকে দুটোভাগে ভাগ করেছেন, আলোক নির্ভর পর্যায় আর আলোক নিরপেক্ষ পর্যায়। অর্থাৎ আমাদের রান্নার একাংশ করতে হবে দিনের আলোয় আর বাকীটুকু নিজের ইচ্ছেমতো দিনে-রাতে কোনো একটা সময় করলেই হবে।
আমরা আজকে আলোক নির্ভর পর্যায় নিয়ে কথা বলবো।
আলোক নির্ভর পর্যায়ের বিক্রিয়াগুলোর মাধ্যমে সূর্যের আলোক রশ্নিকে রাসায়নিক শক্তি হিসেবে ATP(C10H16N5O13P3) এবং NADPH+H+(C21H29
N7O17P3) এ সঞ্চিত করে রাখা হয়। এই প্রক্রিয়াকে বলে ফটোফসফরাইলেশন। পরে এই শক্তি ব্যবহার করেই পরবর্তী বিক্রিয়াগুলো সম্পন্ন হয়।
ফটোসিস্টেমগুলো অবস্থান করে থাইলাকয়েড পর্দার উপর। এই ফটোসিস্টেমের উপর আলো পড়লে সেখান থেকে নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষণ করে ক্লোরোফিলগুলো উত্তেজিত হয় ফলে এর বিক্রিয়াস্থল থেকে দুটো ইলেক্ট্রন বের হয়ে ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমে চলে যায়।
ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম(ETS) কী?
সাধারণত দুটো ফটোসিস্টেম(১ ও ২) কতগুলো ইলেকট্রন বাহক দ্বারা তৈরি একটা চেইনের মাধ্যমে যুক্ত থাকে এটাই ETS। এই ETS দিয়ে ইলেক্ট্রন গমন করে। এখন দেখা যাক এই চেইনটাতে বাহক হিসেবে কে কে থাকে,
১.প্লাস্টোকুইনিন(ক্ষুদ্র চলনশীল লিপিড(C, H এবং O দ্বারা গঠিত যৌগ। তবে কার্বহাইড্রেটের মতো অনুপাত ১:২:১ নয়।)
২.ফিয়োফাইটিন(বর্ণহীন ক্লোরোফিল-এ।)
৩.সাইটোক্রোম(রঞ্জক পদার্থ যুক্ত প্রোটিন)
৪.প্লাস্টোসায়ানিন(ক্ষুদ্র চলনশীল প্রোটিন)
৫.ফেরিডক্সিন(আয়রন-সালফার যুক্ত প্রোটিন)
(একটু মনে করিয়ে দিই প্রোটিন কী,
অনেকগুলো এমিনো এসিড পেপটাইড(-CONH) বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে যে শিকল তৈরি করে তাই প্রোটিন।
এমিনো এসিড হচ্ছে এমিন(NH2) এবং কার্বক্সিল(COOH) বিশিষ্ট যৌগ।)
মূল কথায় আসি, (ETS) এ ইলেক্ট্রনের গতিপথের মতিগতির উপর নির্ভর করে দু'প্রকার ফটোফসফরাইলেশন হয়, ১.চক্রীয় ফটোফসফরাইলেশন।
২.অচক্রীয় ফটোফসফরাইলেশন।
চক্রীয় ফটোফসফরাইলেশনে শুধুমাত্র ফটোসিস্টেম-১ কার্যকর থাকে। এর উপর ৬৮০nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো পড়লে ক্লোরোফিলগুলো উত্তেজিত হয় এবং বিক্রিয়াকেন্দ্র থেকে একজোড়া ইলেক্ট্রন বেড়িয়ে পড়ে।
এরপর শুরু হয় এই কাপলের জার্ণি। সে বড়ই রোম্যান্টিক ব্যাপারস্যাপার। চলেন আমরাও পেছন পেছন নজর রাখি, দেখি এরা কোথায় যায়,
ইলেকট্রন জোড়া প্রথমেই গেলো তার এক ফ্রেন্ডের বাসায়। বাসার নাম, "ফেরিডক্সিন-সালফার প্রোটিন"। সেখান থেকে সোজা "সাইটোক্রোম-বি৬" নামের একটা গন্ডগ্রামে গা ঢাকা দিলো। কিন্তু বেশিদিনের জন্যে নয়, চলে যেতে হলো পাশের গ্রাম, "প্লাস্টোকুইনোন" এ। এদিকে ভিলেন মফিজ খবর পেয়ে গেছে এরা প্লাস্টোকুইনোন গ্রামে আছে; এখানে বেশিক্ষণ থাকা নিরাপদ না। সেখান থেকে ওরা রওনা হলো "সাইটোক্রোম-এফ" এর উদ্দেশ্যে। পথে মফিজের চ্যালা ADP আর Pi ইলেক্ট্রন জোড়াকে দেখে চিনে ফেলল। বিপদ এড়াতে তারাতাড়ি দুজনকে নিজেদের টাকাগুলো(শক্তি) দিয়ে ওরা কেটে পড়লো।
এদিকে টাকা শেষ; গ্রামের যে বাড়িতে ওরা উঠেছিলো তারাই বা ফ্রিতে কত রাখবে? শেষ ভরসা হিসেবে গেলো আরেক বন্ধুর বাড়ি। বাড়ির নাম,"প্লাস্টোসা
য়ানিন"। এখানেও বেশিদিন থাকা গেল না। অগত্যা নিজেদের বাড়ি "বিক্রিয়াকেন্দ্
রে" ফিরে আসতে হলো।
এদিকে ADP আর Pi টাকা খেয়ে মফিজের দল থেকে নাম কেটে নিজেরা একসাথে চৌধুরী সাহেব(ATP)হয়ে গেলো। তাদের এখন অনেক "শক্তি"।
আজ এখানেই ইতি টানছি৷ আগামী পর্বে কথা হবে অচক্রীয় ফটোফসফরাইলেশন নিয়ে। বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে, মফিজের চ্যালাপ্যালাদের ম্যানেজ করে ইলেকট্রনরা কী পারবে সবার আড়ালে চলে যেতে? জানতে হলে চোখ রাখুন আগামী পর্বে ।
Writer: Jahidul Islam Riyad