মুভি: হীরক রাজার দেশে।
পরিচালক: সত্যজিৎ রায়।
কাস্ট: উৎপল দত্ত, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রবী ঘোষ প্রমুখ।
পারসোনাল রেটিং: ১০/১০।
আইএমডিবি রেটিং না হয় থাক।
স্পয়লার এড়ানো সম্ভব না। মুভি না দেখে থাকলে নিজ দায়িত্বে পড়বেন বলে দিলুম বাপু।
প্রথমেই একটু কেমন হয়ে গেলো না? রেটিং দশে দশ দিলুম কেনো? বেশি হয়ে গেলো নাতো? আচ্ছা পরে হবে সেকথা।
প্রথমে আসি সত্যজিৎ রায় প্রসঙ্গে। আশির দশক থেকে সর্বশেষ শুন্য দশক মানে আমার জেনারেশান আর্কি। খুব কম বাঙালিই আছেন যারা 'হীরক রাজার দেশে', 'সোনার কেল্লা' বা গুপীগাইন বাঘাবাইন' না দেখে বড় হয়েছেন। এদের মধ্যে সেরাটা বেছে নেয়াটা মুশকিলই বটে। শুধু মুশকিল না। মহামুশকিল। তবুও রিভিউ লেখার জন্যে হীরক রাজাকে বেছে নিলুম। কেনো? আচ্ছা। এবার যাওয়া যাক সেই আলাপে।
হীরক রাজার দেশে। সত্যজিত রায়ের ফিল্ম। সত্যজিত রায়ের আর দশটা ছবির মতোই। অসাধারন অভিনয়, অসাধারন ডিরেকশান।তখনকার বক্স অফিসে সুপারডুপার হিটতো বটেই। দেশের চেয়ে বিদেশী এওয়ার্ড জেতার সংখ্যাই বেশি। তারপরেও হীরক রাজার দেশে আমার কাছে শুধু একটা মুভিনা, আরো বেশিকিছু। কেনো? আচ্ছা মুভির ক্যারেক্টারগুলোতে একটু ঢোকা যাক আগে।
তার আগে আগে বলুন উদয়ন পন্ডিতের কথা মনে আছেতো?
'দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান'।
'যদি যায় যাক প্রান'
'হীরকের রাজা ভগবান'।
আহা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কি সাবলীল অভিনয়!বাঙলা ইন্ডাস্ট্রি না। পুরো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সর্বকালের সেরাদের একজন সৌমিত্রবাবু সেটাতে খুব লোকই দ্বিমত পোষন করবেন আমার সাথে।
হীরক রাজার অত্যাচার, যন্তরমন্তর ঘরে মগজধোলাই। অত্যাচারী রাজার অত্যাচার সবশেষে রাজার করুন আবার হাস্যরসাত্নক পরিনতী। সত্যজিত রায় আজ থেকে ৫০ বছর আগে এইটা বানিয়েছেন। আগেই দেখে থাকলে এককথা। দুহাজার একুশে এসে দেখলে সম্ভবত মনে হবেনা অতো আগের। এইতো সেদিনেরই মুভি। ছোটবেলার কথা বাদ দিলাম। আমার এখনো বিশ্বাস হয়না। এইটা কি বানাইসে। যতবার দেখি, মুগ্ধ হই ততবার। হারিয়ে যাই৷ আসলেই সত্যজিত রায় মগজটা বেশ ভালোভাবেই ধোলাই করতে পারেন। ওহো। পারতেন একচুয়ালি।
রবি ঘোষ, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় বা আমাদের গুপী, বাঘার কথা না হয় আজ থাক। লেখা বেশ বড় হয়ে যাচ্ছে। আপনাদেরতো আবার বড় লেখা দেখলেই পিলে চমকে ওঠে। পড়াতো দূর।
হীরক রাজার দেশে হীরক রাজার মুভি। আমাদের উৎপল দত্তের মুভি। উৎপল দত্ত। এইলোকটা আসলেই কি মানুষ? জয় বাবা ফেলুনাথের অসাধারণ ভিলেইন আবার পথ ও প্রাসাদে কি জাদরেল দাদু। আবার প্রসেঞ্জিতের সাথে কোনো এক মুভিতে সরল মাস্টারমশায়ের রোল। কোন রোলে অভিনয় করেনাই এইলোকটা৷ তারচেয়ে বড়কথা সবরোলেই একেবারে খাপে খাপ। স্যুট, বুট থেকে টাই উৎপলদার চেয়ে বড় অভিনেতা আর নাই। এভারগ্রীন সেই বিজিএম,বাঘার ভূতের রাজার বর, মানিকদার ডিরেকশন।
'কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়' 'আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে', 'মহারাজা তোমারে সেলাম' গানের কথা ভোলা দায়। হীরক রাজার প্রাণইতো এগানগুলা ভাই।
ইশ! যদি আমিও গোপী, বাঘার মতো ভূতের রাজার বর পেতুম, যন্ত্রর মন্তর ঘর দেখার শখতো সেই ছোটবেলা থেকেই।
কখনো কখনো মুভি খালি মুভিই থাকেনা ছাপায় টাপায় মুভির চেয়েও বড়কিছু হইয়া ওঠে। এই মুভিটা অন্তত সেরকমই কিছু। আমার আবেগ। আমাদের আবেগ। বাঙালির আবেগ।
মজার ব্যাপার কি জানেন? হীরক রাজার দেশে কিন্তু ছোটদের মুভি। মুভির ভেতরকার গৃঢ়ার্থ অবশ্য বড়দের চোখে এড়াবেনা। একইসাথে ছোটদের আনন্দ, বড়দের শিক্ষা। এরকম মুভি আর একটা দেখান দেখি ভায়া। এখনো চোখে পড়লেই যেখানেই থাক পুরোটা শেষ করেই উঠি। আচ্ছা ছোটবেলার মুভি বড়বেলায় এসেও এতোবার দেখে বোরিং ফিল আসেনা ক্যান? বলতে পারেন। প্লিজ বলুন না।
মানিকদা একবার বলেছিলেন উৎপল দত্ত ভদ্রলোক আম্রিকায় জন্মালে নিশ্চিত অস্কার পেতেন। মানিকদা না বললেও আমি বিশ্বাস করতুম বাপু। অস্কারের কথা বাদ দিলাম, হয়তো ভারতে আবার ফিল্মে অস্কার আসবে। দশ বছর বা পঞ্চাশ বছরে কিন্তু একটা সত্যজিত রয়, 'মানিকদা' আর একটাও আসবেননা, একটা হীরক রাজার দেশে আসবেনা।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, হীরক রাজার দেশের সাথে থাকুন।
Writer: Asif Upol