সাল ৩০১০।
পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা খুবই কম । মানুষ নেই বললেই চলে। পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা এক হাজারে নেমে এসেছে।
আসলে এখন যে মানুষ গুলো বেঁচে আছে তাদের মানুষ না বলে দাস বললে ভালো হবে। আর সে মানুষ গুলোকে পরিচালনা করছে রোবট ।
পৃথিবীর সমস্ত ক্ষমতা এখন রোবটদের কাছে ।
শুধু পৃথিবী নয় ২৮০০ সালে রাশিয়া মঙ্গল গ্রহ জয় করেছিল এবং ২৮৫০ সালে আমেরিকা শুক্র গ্রহ জয় করেছিল , এই দুটি গ্রহও এখন রোবটদের দখলে । রোবটরা খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে পৃথিবী পরিচালনা করছে।
রোবটদের একজন রাজা আছে যিনি এই সমস্ত কিছু পরিচালনা করেন । তার নাম পিপার-10 ।
পিপার-10 পৃথিবীর সর্বপ্রথম সুপার রোবট। পিপার-10 এর মধ্যে এমন প্রোগ্রাম সেট করা আছে যাতে কারো তাকে কমান্ড করা লাগেনা , সবকিছু সে এমনিতেই বুঝতে পারে।
পৃথিবীতে পিপার-10 এর নির্দেশে আজ এরকম হচ্ছে । পৃথিবীর সমস্ত ক্ষমতা এখন পিপার-10 এর হতে। কোন মানুষ তার প্রতিবাদ করলে তাকে তিনি সাথে সাথে তাকে হত্যা করে মেরে ফেলেন ।
পিপার-10 এর হত্যার রূপটি একটু ভিন্ন। সে মানুষের দেহ থেকে বিশেষ উপায়ে সমস্ত জিন বের করে নেন এবং ওই মানুষটার রক্ত প্রবাহ বন্ধ করে দেন। এতে লোকটা মারা যায়।
এরপর সমস্ত জিন তিনি জিন ব্যাংকে রাখেন। এরপর সেই জিন তিনি কোডিং করে তার মধ্যে দাসত্ববাদ ঢুকিয়ে দেন । সেই নতুন জিন দিয়ে তিনি নতুন রোবট তৈরি করেন।
পিপার-10 রোবট মনে করেন পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তিনি ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারেন। তাই তিনি পৃথিবীতে বিয়ে এবং সন্তান উৎপাদন নিষিদ্ধ করেন। কোন ব্যক্তি যদি সন্তান উৎপাদন করে তবে সন্তানসহ ওই বাবা-মাকে তিনি মেরে ফেলেন। এছাড়াও কোন মানুষ যে কোন ভুল করলে তাকে মেরে ফেলেন। এভাবে তিনি মানুষের সূক্ষাতিসূক্ষ ভুলের কারনেও তাদের মেরে ফেলতেন। এভাবে তিনি পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা 1 হাজারে নিয়ে আসেন।
একটা মজার ব্যাপার হচ্ছে পিপার-10 পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা ঠিক 1 হাজারেই রাখেন। কোন মানুষ মৃত্যুবরণ করলে বা তিনি মেরে ফেললে সেখানে নতুন একটি মানুষ জন্ম দেন।
তবে এক্ষেত্রে তার মানুষ জন্মদানের পদ্ধতিটিও ভিন্ন। কোন মানুষ তিনি মেরে ফেললে তার থেকে তিনি শুক্রাণু অথবা ডিম্বাণু রেখে দিতেন। তারপর সেগুলো নিষিক্ত করে ভ্রূণ হিসেবে রাখতেন । এভাবে তিনি তৈরি করেন ভ্রূণ ব্যাংক। ভ্রূণ ব্যাংক থেকে তিনি তার প্রয়োজন মত মানুষ উৎপাদন করতেন তবুও তিনি কাউকে বিয়ে করতে দিতেন না। মূলত তিনি মানুষ উৎপাদন করতেন দাসত্বের জন্য এবং মানুষকে তার ক্ষমতা দেখানোর জন্য।
এবার একটু পিছনে ফেরা যাক।
সাল ২৯০০।
স্থান রাশিয়া।
আলবার্ট ভিক্টর নামে এক বিজ্ঞানী পুরো বিজ্ঞানীমহলে সাড়া ফেলে দেন। তিনি এমন এক রোবট আবিষ্কার করেন যে এরকম রোবট পৃথিবীতে এর আগে কেউ আবিষ্কার করতে পারেনি। তিনি রোবটের মধ্যে এই প্রথম নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা কোডিং করতে পেরেছেন। অর্থাৎ এই রোবটটি তার নিজের ইচ্ছেমতো চলবে। কারো কমান্ডের প্রয়োজন হবে না। রোবটটি সম্পূর্ণ মানুষের বুদ্ধিমত্তার মত চলবে। তিনি রোবটের নাম দেন পিপার-10। আলবার্ট ভিক্টর রোবট এর মধ্যে মানুষের মত ভালোবাসা কোডিং করে দিয়েছিলেন। আলবার্ট ভিক্টর তার এই অসামান্য কাজের জন্য রুশ পুরস্কার পেয়েছিলেন। তার এই কাজের জন্য তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের নজরে পড়ে যান।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট চেয়েছিলেন তিনি সারা পৃথিবী শাসন করবেন। তাই তিনি পিপার-10 এর মত আরো অনেক রোবট বানানোর জন্য ভিক্টরকে চাপ প্রদান করেন । ভিক্টর প্রথমে রাজি ছিল না। কিন্তু তাকে হত্যার হুমকি দেওয়ার কারনে তিনি এই কাজ করতে বাধ্য হন এবং প্রেসিডেন্টের নির্দেশে পিপার-10 এর মধ্যে ভালোবাসার বদলে ঘৃণা এবং হিংসা পরায়নতা কোডিং করে দেন। বিজ্ঞানী ভিক্টর পিপার-10 কে প্রধান করে আরো কয়েকটি রোবট তৈরি করেন।
এই কাজটি তাদের জন্য পরে কাল হয়ে দাঁড়ায়।
পিপার-10 যেহেতু নিজের বুদ্ধিমত্তার চলে এবং তার ভিতরে হিংসা এবং ঘৃণা প্রোগ্রাম করা ছিল সেহেতু পিপার-10 ভাবলো ," আমি কেন মানুষের কথা মত চলবো? মানুষ আমার কথায় চলবে। আমি এই পৃথিবী শাসন করব।" এরপর পিপার-10 প্রথমে বিজ্ঞানী এবং পরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কে হত্যা করে। এরপর সে আরো অনেক রোবট তৈরি করেন নিজের অনুসারী বানানোর জন্য। সমস্ত রোবট নিয়ে তারা পৃথিবীর সমস্ত বিজ্ঞানীদের হত্যা করে যাতে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু না করতে পারে। এরপর তারা আস্তে আস্তে পৃথিবীর সব মানুষদের হত্যা করতে থাকে এবং পুরো পৃথিবীর ক্ষমতা তাদের হাতে আয়ত্ত করে নেয়।
বর্তমানে যে 1000 জন মানুষ পৃথিবীতে বেঁচে আছে তাদের মধ্যে একজন ব্যতিক্রমী ছেলে আছে। তার নাম ড্যানিয়েল। সে সব সময় চিন্তা করে কিভাবে রোবট পিপার-10 কে ধ্বংস করা যায় । সে সবসময় পিপার-10 এর গোলামী করার ভান ধরে এবং পিপার-10 এর দুর্বলতা গুলো খুঁজতে থাকে। ড্যানিয়েল একটা মেয়েকে পছন্দ করতো । তার নাম জেনি। যদিও তারা গোপনে একে অপরকে বিয়ে করে নিয়েছিল । কারন রোবটরা তাদের এই বিয়ের কথা জানতে পারলে তাদেরকে মেরে ফেলবে।
ড্যানিয়েল সব সময় পিপার-10 কে নজরে রাখতো। পিপার-10 কোথায় যায়, কি করে সবকিছু সে নজরে রাখতো ।
ড্যানিয়েল খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে পিপার-10 সহ সমস্ত রোবটের প্রোগ্রাম একটি কম্পিউটারে সেট করা আছে এবং সেই কম্পিউটারটি জিন ব্যাংক এর রুমে রাখা যেখানে পিপার-10 মানুষদেরকে হত্যা করে। ড্যানিয়েল পিপার-10 কে একদিন প্রোগ্রামের তথ্য আপডেট করার সময় এই ব্যাপারটা জানতে পারে।
কিন্তু হাই সিকিউরিটির কারনে ড্যানিয়েল কিছু করার সাহস পাচ্ছে না।
ড্যানিয়েল এবং জেনি সব সময় রোবটদের আড়ালে একটি বাড়িতে দেখা করতো।
কিন্তু তাদের এই গোপন সম্পর্ক বেশিদিন গোপন থাকেনি। একদিন একটি রোবট তাদেরকে ট্রাকিং করে তাদের অবস্থান বের করে ফেলে। তারপর রোবটরা ড্যানিয়েল এবং জেনিকে পিপার-10 এর কাছে নিয়ে যায় । এখন তাদের একমাত্র শাস্তি হবে মৃত্যু। পিপার-10 তাদেরকে মৃত্যুর শাস্তি দিলেন এবং তাদের শরীর থেকে জিন বের করে নেওয়া হবে ঠিক রাত দশটায়। পিপার-10 তাদেরকে জিন ব্যাংকে বেঁধে রেখে আসতে বললেন।
এখন রাত নয়টা। আর এক ঘণ্টা পরেই ড্যানিয়েল এবং জেনি কে মেরে ফেলা হবে। একটু পরেই তাদের শরীর থেকে জিন আলাদা করে নেওয়া হবে এবং রক্ত প্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে। ড্যানিয়েল এবং জেনিকে রুমের একপাশে বেঁধে রাখা হয়েছে । রুমের অন্যপাশে রয়েছে একটি কম্পিউটার যেখানে সমস্ত রোবটদের প্রোগ্রাম রাখা আছে। ড্যানিয়েলের দড়িটা খুব শক্ত করে বাঁধা ছিল। তবুও ড্যানিয়েল খুব কষ্ট করে তার শরীরে বাঁধা দড়িটা খুলে ফেললো। রুমের ভেতর একটি রোবট পাহারায় ছিল। সে রোবটটিকে পিছন থেকে আক্রমণ করে তার শরীর থেকে অনেক গুলো তার ছিড়ে ফেলে। এতে রোবটটি খানিক সময়ের জন্য তার কার্যক্ষমতা হারায়। তারপর জেনিকেও সে দড়ি খুলে দিল ।
আর মাত্র 30 মিনিট সময় বাকি। এরপরেই পিপার-10 রোবটটি রুমে প্রবেশ করবে। ড্যানিয়েল কম্পিউটারের কাছে গিয়ে সেটা হ্যাক করার চেষ্টা করতে থাকলো। কিন্তু হাইসিকিউরিটি হওয়ার কারনে সে হ্যাক করতে পারছিল না। 20 মিনিট চেষ্টা করার পরেও সে হ্যাক করতে পারছিল না। তবুও চেষ্টা চালাতে লাগলো।
কিন্তু এর মধ্যে আহত রোবটটি অটো রিপেয়ার হয়ে এলার্ম বেল বাজিয়ে দেয়। দুই মিনিটের মধ্যে পিপার-10 রুমে প্রবেশ করে। কোন উপায় না দেখে ড্যানিয়েল জেনিকে পিপার-10 এর সাথে লড়াই করতে বলে যাতে সে একটু সময় পায়। জেনি তাই করলো সে রোবটটির সাথে একটু লড়াই করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সে বারবার আহত হচ্ছিল। এরমধ্যে পিপার-10 বাকি রোবটদের জন্য অ্যালার্ম বাজিয়ে দেয় । সব রোবট রুমের ভিতরে প্রবেশ করতে থাকে।
কিন্তু হঠাৎ একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে যায় । পিপার-10 সহ সব রোবট একদম স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। তারা আর নড়াচড়া করতে পারছে না।
ড্যানিয়েল অনেক কষ্টে কম্পিউটারের সিস্টেম হ্যাক করে। এরপর সে রোবটগুলোর প্রোগ্রাম মুছে দেয়। এর ফলে রোবটগুলো আর নড়াচড়া করতে পারছিল না ।
জেনি অনেক আহত হয়। ড্যানিয়েল তাকে জড়িয়ে ধরে। এরপর তারা সেই 1000 মানুষ নিয়ে সমস্ত রোবটগুলো ধ্বংস করে ফেলে।
সাল 3100।
পৃথিবী আবার সেই আগের মত হতে শুরু করেছে।
ড্যানিয়েল এবং জেনি প্রায় 10 বছর আগে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গিয়েছে। তাদের সন্তানরাও এখন অনেক বড় হয়ে গিয়েছে।
পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা আবার আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করেছে। সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেউ আর এরকম বিধ্বংসী রোবট বানাবে না।
পৃথিবীটা এখন অনেক নীরব । মানুষের মধ্যে একজন আর হিংসা - বিদ্বেষ ও অহংকার নেই। নেই এক দেশের সাথে অন্য দেশের অসুস্থ সামরিক প্রতিযোগিতা।
সব মানুষ এখন শান্তিতে বসবাস করছে।
দুচোখ যেদিকে যায় সেদিকেই শুধু সবুজ আর সবুজ…
লিখাঃ মোঃ তানভীর আহমেদ