গেমিং টার্ম টার সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। ব্যাক্তিগত লাইফে আমারা বিনোদনের জন্য অনেকই অনেক রকম গেম খেলে থাকি, তো এই প্রশ্নগুলো মাথায় আসা স্বাভাবিক যে গেম কিভাবে তৈরি হয়, কিসের উপর ভিত্তি করে গেম টি রান করছে বা গেম এর এই অংশ টুকু এরকম হল কেন, কেন ওরকম হল না বা আমি হলে গেমটিকে আরও সুন্দর করতে পারতাম, আমি যদি নিজে একা একটি গেম বানাই তাহলে কিসের কিসের সম্মুখিন হতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। তো এগুলা নিয়েই গেম ডেভেলপমেন্ট এর উপর আজকের এই লেখা।
গেম ডেভেলপমেন্ট এর জন্য প্রথম যেই জিনিসটা সবচেয়ে প্রয়োজন তা হল একটা গেম ডেভেলপমেন্ট টিম গঠন করা যেখানে ডিজাইনার এবং প্রোগ্রামার অবশ্যই থাকবে,তাছাড়া সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার,আর্টিস্ট, এবং সর্বশেষে গেম টেস্টোর, এরা মুলত আংশিক ভাবে গেমিং ডেভেলপমেন্ট এ ভুমিকা রাখে। উন্নত বড় বড় গামিং ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে একটা নির্দিষ্ট গেম এর জন্য এই টিম এর সদস্য ১০০-২০০০ পর্যন্ত হতে পারে। তো এই টিম এর সদস্যরা আসলে কি নিয়ে ডিল করে তা একটু বিস্তারিত বলা যাক –
ডিজাইনারঃ ডিজাইনার রা মুলত কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, একটা গেম কিরকম হবে এটা মুলত একজন ডিজাইনার ঠিক করে থাকেন। গেইম এর কমব্যাট স্টাইল, ফিজিক্স, গেইমপ্লে, এনিমি মুভমেন্ট, গেম স্টোরি, এসব এর স্ক্রিপ্ট তৈরি করা একজন গেম ডিজাইনার এর দায়িত্ব।
প্রোগ্রামারঃ এদের কাজ হবে এমন একটা সফটওয়্যার(গেম ইঞ্জিন) বানানো যা ডিজাইনার এর স্ক্রিপ্টগুলোকে ভিসুয়াল্লি রিপ্রেসেন্ট করতে পারবে। এই গেম ইঞ্জিন কে গেম এর ভিত্তি/মূল অবকাঠামো বলা হয়ে থাকে, অর্থাৎ এর উপর বেস করে একটা গেম রান করবে। একটা পরিপূর্ণ গেম ইঞ্জিন বানাতে হলে বিভিন্ন রকম প্রোগ্রামিং করতে হয়, সাধারনত প্রোগ্রামার রা এক একটা সেকশন এ ভাগ হয়ে কাজগুলো সম্পন্ন করে-
ফিজিক্স এন্ড গ্রাফিক্সঃ যদি ও ২ টি আলাদা জিনিস কিন্তু এটা একটা আরেকটার সাথে সম্পর্কিত। অর্থাৎ প্রোগ্রামার দের একটা ভাগ কাজ করবে গ্রাফিক্স রিলেটেড বিভিন্ন 3D/2D মডেল নিয়ে এবং এদের ট্যাক্সচার কেমন হবে এসব সংক্রান্ত আর আরেক ভাগ কাজ করবে এসব 3D মডেল ফিজিক্যালি কিরকম আচরণ করবে তা নিয়ে।
সাউন্ডঃ এদের কাজ হবে গেম ইঞ্জিন এ কোন এক্সটারনাল সোর্স থেকে প্রাপ্ত মিউজিক গেম এর নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে রান করার সিস্টেম তৈরি করা।
গেমপ্লেঃ এরা গেম ইঞ্জিন এর এমন একটি সিস্টেম তৈরি করবে যা দ্বারা গেম এর রুল,স্টোরি,গেমপ্লে,ফিচার মেইনটেইন করে যায়।
UI and HUDs: গেম অন করলে আমরা অনেক অপশন দেখতে পাই, যেমন নিউ গেম, লোড গেম, কণ্টিনিউ বা এমন কিছু দিকনির্দেশনা যা দ্বারা আমরা গেম কে নির্দিষ্ট রুল এর আন্ডার এ কন্ট্রোল করে থাকি, এ সেকশন এর প্রোগ্রামার রা সাধারনত এসব জিনিস নিয়ে ডিল করে।
ইনপুট প্রসেসিংঃ কোন কি ওয়ার্ড ইউস করলে কোন অবজেক্ট কিভাবে প্রতিক্রিয়া করবে তা সাধারনত এ অংশের প্রোগ্রামার রা প্রোগ্রামিং করে থাকে।
নেটওয়ার্ক কমুনিকেশনঃ উদাহরণ সরূপ বলা যেতে পারে জনপ্রিয় গেম পাব্জি, এখানে আপনি আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীর ডাটা কিভাবে গ্রহণ করছেন এবং সে আপনার ডাটা কিভাবে গ্রহণ করছে এবং আলটিমেটলি ফলাফল কি হচ্ছে এসব এর কাজ এই সেকশন এর প্রোগ্রামার রা করবে।
গেম টুলসঃ উপরে এ পর্যন্ত যেসব বিসয় নিয়ে বলা হয়েছে এই সবগুলাকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে এমন একটি সিস্টেম যা ইউস করে কোন কোডিং করা ছাড়াই উপরের সব প্রোগ্রাম গুলোকেই পুনরায় ইউস করা যায়।
আর্টিস্টঃ গেম এর গ্রাফিক্স, ভূখণ্ড বা কোন অবজেক্ট কেমন হবে তা প্রোগ্রামার দের ভিসুয়ালাইজ করানোর জন্য সাধারনত বড় বর গেমিং ইন্ডাস্ট্রি আর্টিস্ট রেখে থাকেন।
গেমিং সাউন্ড প্রোফেসনালিস্টঃ এরা সাধারনত গেমের জন্য সাউন্ড তৈরি করে। এরা গেমিং ইন্ডাস্ট্রির স্থায়ি ইমপ্লয়ি না ।
গেম টেস্টারঃ অর্থাৎ একটা গেম পরিপূর্ণ ভাবে তৈরি হয়ে গেলে এদের কাজ হবে গেম এর খুত ধরা। বাগ ফিক্সিং, গেমপ্লে ইম্প্রুভমেন্ট এই ধাপ এ সম্পন্ন হয়।
তো এত কিছু বলার পর একটা কথা থেকে যায়, আমি কি গেম বানাতে পারব ? প্রথমত আপনাকে অবশ্যই একজন ভাল দক্ষ প্রোগ্রামার হতে হবে, এর বিকল্প নেই। তার পর হল ডিজাইনিং, আপনার গেম কতটুকু মানসম্মত হবে এটা নির্ভর করবে আপনার ডিজাইনিং দক্ষতার উপর, আপনার কনটেন্ট যদি ইউনিক আর মজার হয়ে থাকে তাহলে আপনি অবশ্যই সাফল্য পাবেন, এ বেপারে যদি উদাহরণ দেই তাহলে প্রথমেই চলে আসবে মাইনক্রাফট, ইনসাইড(২০১৬), Ori and the Blind Forest (২০১৫)
বর্তমান আপনি কোডিং না জানলে ও 3D থেকে 2D গেম তৈরি করতে পারবেন, এক্ষেত্রে আপনি চাইলে Unity(game engine) ব্যাবহার করতে পারেন যা এখন ফ্রি, তাছাড়া ও কিছু পেইড ইঞ্জিন আছে। যাই অন্য কোন গেম ইঞ্জিন ইউস করলে অনেকটা সীমাবদ্ধেই থেকে যাবেন অনেকটা পাখি হয়ে খাচায় উরার মতন।
Writer: Shafi Al Mahadi