এডমিশন পরিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিক হলো এই অংশীদারি ব্যবসায়। প্রতিবছর এখান থেকে প্রশ্ন না হলেও কয়েকটি বছর ছাড়া সব বছরেই প্রশ্ন হয়েছে। গত (০৫-০৬) সেশনে এই টপিক থেকে ৫ টি প্রশ্ন আসে। এখন যেহেতু মোট ১২ টি প্রশ্ন আসবে তাই ২/১ টা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। চলো শুরু করি,
🔲ধারণাঃ
দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মুনাফা অর্জন এবং নিজেদের মাঝে বন্টণের উদ্দেশে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ১৯৩২ সালের ভারতীয় আইন অনুসারে যে ব্যবসায় গঠন করে তাই অংশীদারি ব্যবসায়। আইন অনুযায়ী অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়। চুক্তি অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি। লিখিত চুক্তিকে চুক্তিপত্র বলে।চুক্তিপত্র ছাড়া অংশীদারি ব্যবসায় গঠন করা যায় কিন্তু চুক্তি ছাড়া অংশীদারি ব্যবসায় গঠিত হতে পারে না। এ ব্যবসায়ের সুবিধা হলোঃ একাধিক ব্যক্তির দক্ষতা ও সম্পত্তির মিশ্রণ, সহজ গঠন, সরকারী নিয়ন্ত্রণ মুক্ত ও সহজ সিদ্ধান্ত গ্রহন। আর অসুবিধা গুলো হলোঃ পারস্পরিক প্রতিনিধিত্ব, সীমিত আয়, অসীম দায় ইত্যাদি।
🔲অংশীদারি ব্যবসায়ের আর্থিক বিবরণীসমূহঃ
আমেরিকান হিসাববিজ্ঞান অনুসারে অংশীদারি ব্যবসায়ের ৪টি আর্থিক বিবরণী হলো,
১. আয় বিবরণী
২. অংশীদারদের মূলধন বিবরণী
৩. আর্থিক অবস্থার বিবরণী
৪. নগদ প্রবাহ বিবরনী
🔲 অংশীদারি ব্যবসায়ের লাভ-ক্ষতি বন্টন হিসাবঃ
ব্রিটিশ হিসাববিজ্ঞানে অংশীদারি ব্যবসায়ের আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের সময় ক্রয়-বিক্রয় ও লাভ-ক্ষতি হিসাবের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট হিসাবকালের আর্থিক ফলাফল বা লাভ-ক্ষতি নির্ণয় করার পর তা অংশীদারদের মাঝে বন্টন করার জন্য যে বিবরণী প্রস্তুত করা হয় তাই লাভ-ক্ষতি আবন্টন হিসাব।
এটি স্বতন্ত্র কোন বিবরণী নয়,এটা ক্রয়-বিক্রয় ও লাভ-ক্ষতি হিসাবের বর্ধিত অংশ।
🔲অংশীদারদের মূলধন হিসাবঃ
অংশীদার কতৃক মোট বিনিয়োগকৃত মূলধন ও অন্যান্য কারণে সৃষ্ট অংশীদারদের দাবি সংক্রান্ত হিসাবকে অংশীদারদের মূলধন হিসাব বলে। অংশীদারদের মোট মূলধন হিসাবের পাশাপাশি প্রত্যেক অংশীদারদের পৃথক পৃথক মূলধন হিসাব সংরক্ষণ করতে হয়।অংশীদারদের মূলধন হিসাব সংরক্ষণ করার পদ্ধতি ২ টি,
◾১. পরিবর্তনশীল মূলধন পদ্ধতিঃ
এই পদ্ধতিতে অংশীদারদের বিনিয়োগকৃত মূলধনের পাশাপাশি তাদের প্রাপ্য মুনাফার অংশও লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এই মুনাফা সংক্রান্ত বিষয়সমূহ লিপিবদ্ধ করা হয় বলে অংশীদারদের মূলধন হিসাবের জের প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়।এই পদ্ধতি অংশীদারদের উত্তোলন হিসাব আলাদাভাবে সংরক্ষণ করা হয়। হিসাবকাল শেষে সমাপনী দাখিলার মাধ্যমে অংশীদারদের উত্তোলন হিসাব বন্ধ করে অংশীদারদের মূলধন হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।
◾২. স্থির মূলধন পদ্ধতিঃ
এই পদ্ধতিতে অংশীদারদের মূলধন হিসাবে শুধু সরবরাহকৃত মূলধন লিপিবদ্ধ হয়। মুনাফা সংক্রান্ত হিসাব ও উত্তোলন হিসাবের জন্য "অংশীদারদের চলতি হিসাব" খোলা হয়। এই পদ্ধতিতে অংশীদারদের কতৃক বিনিয়োগ ছাড়া অংশীদারদের মূলধন হিসাবের পরিবর্তন হয় না।
🔲অংশীদারদের চলতি হিসাবঃ
স্থির পদ্ধতিতে মূলধন হিসাব সংরক্ষণ করলে এই হিসাব খোলা হয়। এখানে শুধু মুনাফা সংক্রান্ত ও উত্তোলন হিসাব লিপিবদ্ধ করা হয়। এই হিসাবের জের ডেবিট কিংবা ক্রেডিট উভয়ই হতে পারে।
🔲অংশীদারদের মূলধনের সুদঃ
চুক্তিতে উল্লেখিত হারে অংশীদারদের মূলধনের উপর সুদ ধার্য করা হয়। অংশীদারদের মুনাফা বন্টনের পূর্বে মূলধন হিসাব থেকে সুদ বাদ দিয়ে নিতে হয়। এই সুদকে ব্যয়/খরচ হিসেবে গন্য করা হয়। অংশীদারদের মূলধনের সুদ হলো তাদের মুনাফার অংশ।
🔲অংশীদারদের বেতনঃ
চুক্তিতে উল্লেখিত হারে অংশীদারদের বেতন ধার্য করা হয়। অংশীদারদের মুনাফা বন্টনের পূর্বে তা থেকে বেতন বাদ দিয়ে দেখাতে হয়। অংশীদারদের বেতনকে ব্যয় হিসাবে গন্য করা হয় না বরং এটি তাদের জন্য আয়। অংশীদারদের বেতন হলো তাদের মুনাফার অংশ।
🔲অন্যান্যঃ
🔹অংশীদারি ব্যবসায়ে চুক্তিতে না থাকলেও ঋণের উপর ৬% সুদ ধার্য করতে হয়।
🔹সাধারণ অংশীদারি ব্যবসায়ের সর্বোচ্চ সদস্য সংখ্যা ২০ জন এবং ব্যাংকিং অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ১০ জন।
🔹অংশীদারি চুক্তি মৌখিক, লিখিত ও নিবন্ধিত হতে পারে।
🔹অংশীদারি ব্যবসায়ের পৃথক আইনগত সত্তা নেই।
🔹সীমিত অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক।
🔹 অংশীদারি ব্যবসায়ে মুনাফা বন্টন করা হয় চুক্তিতে উল্লেখিত হারে। আর চুক্তিতে না থাকলে সমহারে।
🔹অংশীদারি ব্যবসায় অবসায়নের প্রথম ধাপ হলো অনগদ সম্পত্তি বিক্রয় ও নগদকরণ জনিত মুনাফা বা ক্ষতি স্বীকার।
🔲গানিতিক সমস্যাঃ
এই অধ্যায় থেকে দুটি সমস্যা MCQ তে আসার সম্ভাবনা বেশি। উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি,
◾সমস্যা –১ঃ ক ও খ দুইজন অংশীদারদের মুনাফা বন্টন অনুপাত ৩ঃ২। গ-কে ১/৪ অংশ মুনাফা প্রদানের চুক্তিতে তারা ব্যবসায়ে নতুন অংশীদার হিসেবে গ্রহন করলো। গ মূলধন বাবদ ২,০০,০০০ টাকা এবং সুনাম বাবদ ১,০০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করলে মুনাফা বন্টনের নতুন অনুপাত কত?
◾সমাধানঃ
গ কে ১/৪ অংশ প্রদান করলে বাকী থাকে
(১–১/৪) = ৪–১/৪ = ৩/৪ অংশ।
এই ৩/৪ অংশ ক ও খ এর মাঝে তাদের পুরাতন (৩ঃ২ বা ৩/৫ ও ২/৫) অনুপাতে বন্টিত হবে।
সুতরাং, ক পাবে
(৩/৪ এর× ৩/৫)= ৯/২০ অংশ
খ পাবে
(৩/৪ এর× ২/৫) = ৬/২০ অংশ
এখন ক,খ ও গ এর নতুন অনুপাত ৯/২০ঃ৬/২০ঃ১/৪
তিন জনের অনুপাতের হরকে সমান করতে হলে হর ও লবকে ৫ দিয়ে গুন করতে হবে।
সুতরাং নতুন অনুপাত ৯/২০ঃ৬/২০ঃ৫/২০=
৯ঃ৬ঃ৫ (উত্তর)
◾সমস্যা–২ঃ
ক ও খ দুইজন অংশীদার। তাদের লাভক্ষতি বন্টনের অনুপাত ৫ঃ৪। গ কে নতুন অংশীদার হিসেবে গ্রহন করায় তাদের নতুন অনুপাত দাড়ায় ৩ঃ২ঃ২। ক ও খ এর ত্যাগ অনুপাত কত?
◾সমাধানঃ
ত্যাগ=পুরাতন অনুপাত – ত্যাগ অনুপাত
ক ও খ এর পুরাতন অনুপাত = ৫/৯ঃ৪/৯
ক,খ ও গ এর নতুন অনুপাত= ৩/৭ঃ২/৭ঃ২/৭
সুতরাং, ক এর ত্যাগ অনুপাত =৫/৯–৩/৭
=৩৫–২৭/৬৩
=৮/৬৩
খ এর ত্যাগ অনুপাত
=৪/৯–২/৭
=২৮–১৮/৬৩
=১০/৬৩
সুতরাং ক ও খ এর ত্যাগ অনুপাত=৮ঃ১০=৪ঃ৫(উত্তর)
➡বিঃদ্রঃ ম্যাথগুলোর সমাধান না বুঝলে তোমার বই থেকে দেখে নিও। এভাবে যতটুকু সম্ভব বুঝানোর চেষ্টা করেছি😊
💠তোমাদের জন্যঃ
🔸সমস্যা-১ঃ
ক ও খ দুইজন অংশীদারের মুনাফা বন্টন অনুপাত ৪ঃ১।
গ কে ১/৩ অংশ মুনাফা প্রদানের চুক্তিতে তারা ব্যবসায়ে নতুন অংশীদার হিসেবে গ্রহন করল। তাদের নতুন অনুপাত কত?
🔸সমস্যা-২ঃ
ক ও খ দুইজন অংশীদার তাদের লাভক্ষতি বন্টনের অনুপাত ৭ঃ৫। গ কে নতুন অংশীদার হিসেবে গ্রহন করলে নতুন অনুপাত হয় ২ঃ১ঃ১। ক ও খ এর ত্যাগ অনুপাত কত?
✅নিজেরা করার চেষ্টা করবে। করা হলে উত্তর কমেন্ট করে জানিয়ে দিও।
এই ছিল অংশীদারি ব্যবসায় নিয়ে বিস্তারিত। পড়ে নিলে তোমার এডমিশন+ এইচএসসি দুইটাই হয়ে যাচ্ছে। নোট করে নিতে পারো।
সবাই ভালো থেকো সুস্থ থেকো।
"দেখা হবে ক্যাম্পাসে❤"
লিখাঃ মারুফ হোসেন মুন্না
মার্কেটিং বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়