এই পরীক্ষাটি নিয়ে পৃথিবী জুড়ে এতো মাতামাতি।তবে মজার বিষয় হলো,,আসলে বাস্তবে শ্রোডিঙ্গার সাহেব তো এই পরিক্ষা করেনই নাই এবং হয়তো পৃথিবীতে কেউই করেননি।পুরো পরিক্ষাটিই ছিল শ্রোডিঙ্গার সাহেবের চিন্তার মধ্যে।এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে নিচের আর্টিকেলটি পড়ুন-
মনে করুন ১ ঘন্টার জন্য একটি বাক্সের মধ্যে আপনি-
১.একটি বিড়াল।
২.একটি বিষাক্ত ফ্লাক্স।
৩.রেডিও এক্টিভ বাক্স।
৪.গাইগার কাউন্টার বা রেডিয়েশন ডিটেক্টর নিয়েছেন।
উক্ত সকল উপকরণ নিলেন।এবং এই ক্ষত্রে আপনি যেই রেডিও এক্টিভ বাক্স নিয়েছেন,সেইটি বাক্সের মধ্যে রেডিয়েশন ছড়ানো এবং না ছড়ানোর সম্ভাবণা (৫০-৫০)%।
এবং আপনি যে রেডিয়েশন ডিটেক্টর নিয়েছেন তার সাথে একটি হাতুড়ি এমন ভাবে সেট করা আছে,,যার ফলে যদি "রেডিয়েশন ডিটেক্টর" রেডিও এক্টিভ বাক্সের থেকে ছড়িয়ে পড়া রেডিয়েশন কে ডিটেক্ট করতে পারে তাহলে হাতুড়িটি ফ্লাক্সের উপর পড়ে ফ্লাক্সে ভেঙে ফেলবে।এবং বাক্সটি পরিবেশের আহিত কোয়ান্টাম ডিকোহেরেন্স প্রতিরোধী।
তাহলে এখন সকল সেটআপ শেষ হওয়ার পরে আপনার কাছে প্রশ্ন হলো-
বিড়ালটি কি বেঁচে আছে,নাকি মারা গেছে!!
এই ক্ষত্রে আপনি বলবেন যে,যেহেতু রেডিয়েশন ছড়ানো এবং না ছড়ানোর সম্ভবণা ৫০-৫০ সেহেতু যদি রেডিয়েশন ছড়ায় তাহলে বিড়ালটির মৃত্যু হয়েছে এবং যদি না ছড়ায় তাহলে বিড়ালটি বেঁচে আছে।তার মানে হয় বিড়ালটি জীবিত অথবা মৃত।এটাই সকল স্বাভাবিক মানুষ ও ক্লাসিকাল ফিজিক্স ও মডার্ন ফিজিক্স বলে।
কিন্তু এটা কি সম্ভব যে বিড়ালটি একই সাথে জীবিত এবং মৃত।এটা আসলে বাস্তব জীবনে সম্ভব না হলেও কোয়ান্টাম ফিজিক্সে সম্ভব বলে ধারণা করেন একদল বিজ্ঞানী।
তারা আবার যেমন তেমন বিজ্ঞানী নয়।এই তালিকায় রয়েছে-
১.আইন্সটাইন
২.ম্যাক্স প্লাঙ্ক
৩.হাইজেনবার্গ
৪.নিলস বোর
এবং উনাদের মধ্যে আইনস্টাইন বাদে বাঁকি বিজ্ঞানীরা আমাদের সকলের পরিচিত নিউটনের বলবিদ্যার বলবিদ্যাকে অস্বীকার করে গড়ে তুললেন নতুন এক বলবিদ্যা যাকে এখন আমরা বলি কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বা কোয়ান্টাম মেকানিক্স।
এখন তাহলে বলি এই কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় আসলে বলে কি-
আমাদের পরিচিত জগতের বাইরেও রয়েছে অসীম সংখ্যক সম্ভবণার জগৎ।যেখানে বস্তুর গতি জানা থাকলেও অবস্থান অনিশ্চিত (যেখানে সাধারণ নিউটনের বলবিদ্যায় বলে বস্তুর গতি জানা থাকলে তার অবস্থানও নিশ্চিত করা যাবে)।এবং এই থিয়োরিতে বস্তু তরঙ্গে রুপান্তরিত হতে পারে।এবং তরঙ্গেও বস্তুতে রুপান্তরিত হতে পারে।
প্রায় সবই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তাই নাহ।প্রথম বার এই জন্যে তবে বিষয়গুলো খুবই ইন্টারেসটিং।।আচ
শ্রোডিঙ্গার সাহেবই আসলে কোয়ান্টাম মেকানিক্স বিস্তারে সবচেয়ে বড় ভুমিকা গুলোর মধ্যে অনেক কিছু করেছে।কিন্তু তিনি তার জীবনের এক পার্যায়ে গিয়ে এই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের গভীরে গবেষণা করতে করতে বিরক্ত বা আগ্রহ হারিয়ে উনি শেষমেশ বায়োলজি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিল।আরেকটি কথা আপনি যদি কোন কোয়ান্টাম মেকানিক্স এক্সপার্টের সাথে কথা বলেন আর একজন পাগলের সাথে কথা বলেন প্রায় কিছুটা একই অনুভূতি অর্জন করবেন।
আচ্ছা তাহলে আবার "শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল" পরিক্ষাতে আসার আগে আরেকটি বিষয় জানানো দরকার।সেটা হলো-
কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রেটেনশন
এই থিয়োরিটি আসলে আণবিক পার্যায়ের বস্তুর আচরণের উপর।মানে যে সকল জিনিস আমরা খালি চোখে দেখতে পারি নাহ সেই সমস্ত বিষয়ের উপর।যেমন- ইলেক্ট্রন,প্রোটন,নিউটন সহ সকল ক্ষদ্র জিনিস নিয়ে।
তাহলে এখন জেনে নিই কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রেটেনশন
একটি কোয়ান্টাম কোণা বা একটি পারমাণবিক মত্রার কণা তার সব রকম সম্ভাবণার অবস্থানে থাকতে পারে।আর এই সকল অবস্থাকে বলা হয় কোয়ান্টাম সুপারপজিশন অবস্থা।
আচ্ছা তাহলে বিড়ালটির ঘটনায় ফিরে আসি।আমারা কি সঠিক বলতে পারবো আসলে বিড়ালটির সাথে কি হয়েছে।হয়তো বলবো জীবিত অথবা মৃত।কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা আসলে বাক্সটি খুলে দেখছি ততক্ষণে আমরা সঠিক উত্তর দিতে পারছি নাহ।তাহলে এই ক্ষেত্রে যদি বিড়ালটির ঘটনা মাইক্রোস্কোপিক হতো তাহলে এটার উত্তর আসতো বিড়ালটি একই সাথে জীবিত এবং মৃত অর্থাৎ সুপারপজিশন অবস্থায় আছে।এবং এটি কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রেটেনশন
১৯৩৫ সালে শ্রোডিঙ্গার সাহেব কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রেটেনশন
আলবার্ট আইনস্টাইন তার থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি প্রমাণ করার জন্য বেশ কয়েকবার থট এক্সপেরিমেন্ট বা চিন্তন পরিক্ষার সাহায্য নিয়েছেন।
কিন্তু "শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল" পরিক্ষার মাধ্যমে শ্রোডিঙ্গার সাহেব মূলত এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে-
কোয়ান্টাম মেকানিক্সে যে কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রেটেনশন
তবে মজার বিষয় হলো-আসলেই আজ পর্যন্ত কোয়ান্টাম মেকানিক্সের থিয়োরি তৈরি হয়েছে তার বেশিরভাগই বাস্তবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।কিন্তু আবার এই কোয়ান্টাম মেকানিক্স দিয়েই বর্তমানে বিজ্ঞানের সকল বড় বড় থিয়োরি আবিষ্কার হচ্ছে।এবং আজকের যে ইন্টারনেট হয়তো এটাও হতো না যদি না কোয়ান্টাম মেকানিক্স থাকতো।এবং আরেকটি মজার বিষয় শ্রোডিঙ্গার সাহেব যে,কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর ভুল ধরার জন্য এত বিখ্যাত।সেই কোয়ান্টাম মেকানিক্সেরই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ থিয়োরি "শ্রোডিঙ্গারের সমীকরণ" এর জন্য ১৯৩৩ সালে নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।
এখন কিছু কথা বলি কোয়ান্টাম সুপারপজিশন অবস্থা নিয়ে।যেটা শুনলে হয়তো আপনি বলবেন পাগল ছাগলের কথা-
সাধারণ কিছু এক্স-আম-পল এর মাধ্যমে বুঝায়।সুপারপজিশ
১.আমাদের সকলের বাসাতেই নিশ্চিত ইলেকট্রনিক ফ্যান আছে।এবং যদি এটি জোরে ঘুরতে থাকে তাহলে কি আপনি বলতে পারবেন ফ্যানের কোন পাখা কোন অবস্থানে আছে।নিশ্চয় নাহ।তখন সাধারণ ভাবে বলবেন বা দেখবেন যে, পাখাগুলো সকল অবস্থানেই বিদ্যমান।আর এই সকল সম্ভবনার অবস্থানই হলো সুপারপজিশন অবস্থা।কিন্তু বস্তুর কোন স্লো মোশন ভিডিওতে দেখলে আমরা অনায়াসেই বলে দিতে পারবো আসলে পাখাগুলো কোনটি কোথায় আছে।
২.মনে করুন আপনার এক বন্ধু একটি ১০০ কামরার হোটেলে উঠেছে এবং সে যদি আপনাকে না বলে যে,আপনার বন্ধু কোন ঘরে আছে তাহলে আপনি নিশ্চিত মনে করবেন ১০০ কামরার কোন না কোন রুমে আছে।অর্থাৎ আপনার বন্ধুর প্রতিটি ঘরে থাকারই সম্ভাবণা কিছু % হলেও আছে।আর একেই বলে সুপারপজিশন অবস্থা।
এককথায় কোয়ান্টাম সুপারপজিশন অবস্থা হলো সেই অবস্থা যেখানে একটি বস্তুর একই সময়ে বিভিন্ন জায়গায় থাকতে পারে।
কিন্তু বাস্তব জীবনে কখনোই আপনি বা কোন বস্তুই একই সময়ে দুইটা অবস্থানে থাকতে পারে নাহ।
কিন্তু আবার কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রেটেনশন
এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্স প্যারালাল ইউনিভার্সের মতে আপনি যদি বিড়ালটির সঠিক অবস্থা জানতে গিয়ে বাক্সটি খুলেন,এবং দেখন যে,বিড়ালটি মৃত।তাহলে এই বিড়ালটির মৃত্যুর দায় কিন্তু আপনাকে নিতে হবে।কারণ কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রেটেনশন
একদমই হাস্যকর নাহ।।আরও হাস্যকর জিনিস কোয়ান্টাম মেকানিক্স প্যারালাল ইউনিভার্সে বলে।
অল্প কথায় বলি।যেমন-
একটি ঘটনা যতভাবে ঘটা সম্ভব বা একটি ঘটনার যতগুলো সম্ভবণা রয়েছে তার প্রত্যেকি ঘটনাই কোন না কোন ইউনিভার্সে ঘটছে।একে বলে "মেনি ওয়ার্ল্ড থিয়োরি"।
১.এই সূত্র অনুযায়ী বাক্স খোলার সাথে সাথে দুইটি প্যারালাল ইউনিভার্সের সৃষ্টি হবে।যার একটিতে বিড়াল জীবিত।অন্যটিতে মৃত।
২.এবং এই সূত্র অনুযায়ী,হিটলার এই ইউনিভার্সে হেরে গেলেও অন্য ইউনিভার্সে জিতে গেছে।
এখন সর্বশেষ কথাটি বলি,এতক্ষণ যে "শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল" পরিক্ষাটির নিয়ে এত কথা বলছি।আসলে শ্রোডিঙ্গার সাহেব কখনোই এই এক্সপেরিমেন্টটি
"শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল" নিয়ে বিস্তারিত আরও জানতে চাইলে "আবদুল গাফফার রনি" স্যারের বইটি পড়তে পারেন।
"শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল" এর সাথে এই সময়ে আরেকটি বিষয় বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।আর সেটি হলো "শ্রোডিঙ্গার স্মাইলি"
শ্রোডিঙ্গার স্মাইলিঃশ্রোডিঙারের স্মাইলি আসলে সেই অবস্থা,যেখানে কোন বস্তু বা ব্যাক্তিকে উপর থেকে দেখলে মনে হয় সেই ব্যাক্তি বা বস্তু আসলে খুবই খুশি কিন্তু হয়তো ভেতরে ভেতরে কষ্টে আছে।এবং হয়তো আসল বিষয়টি উদ্ঘাটন করতে গিয়ে শ্রোডিঙ্গারের বিড়াল এর মত সেই ব্যাক্তি বা বস্তুর দুঃখের কারণ হবে।
আর এই "শ্রোডিঙ্গারের স্মাইলি" আরও বেশি জনপ্রিয় বা লোকসমাজে এসেছে "সুশান্ত সিং রাজপুত্র" এর আত্মহত্যার পরে।কারণ সুশান্ত সিং রাজপুত্র অনেক জায়গায় এবং অনেক টকশোতে একটি টি-শার্ট পরে গিয়েছিল।আর যেখানে লেখা ছিল-
Schrödinger's smiley :):
লিখা ও ছবিঃ মো. নিলয় হোসেন
Tags:
পদার্থবিজ্ঞান