ইরেকটাইল ডিসফাংশন যখন মৃত্যুর পূর্বাভাস

ইরেকটাইল ডিসফাংশন


গবেষণার মূল বিষয় ছিলো ইরেকটাইল ডিসফাংশন এবং মর্টালিটি। গবেষণাটা ১৫ বছর ব্যাপী সময় নিয়ে করা হয় এবং ফলাফল যা অনুমান করা হয়েছিল ঠিক তাই এসেছে। যাদের ইরেকটাইল ডিসফাংশন আছে তাদের মধ্যে— যেকোনো রকমের ফিজিওলজিকাল কারণে— মৃত্যুহার বেশি। 

গবেষণাটা আরেকটু খুঁটিয়ে দেখা যাক। ১৭০৯ জন পুরুষকে— যাদের বয়স ৪০-৭০ — নির্বাচনের করা হয় ১৫ বছর মেয়াদি এই গবেষণার জন্য। এবং গবেষণা শেষে, মানে ৩১ ডিসেম্বর, ২০০৪ সালের শেষ পর্যন্ত, বেঁচে ছিল ১৩০৬ জন পুরুষ। ১৫ বছরের মধ্যে মৃত্যুর শিকার হয়েছে ৪০৩ জন। তবে শেষ পর্যন্ত এই গবেষণায় ফলাফল পাওয়া যায় জীবিত ১২৮৪ জনের এবং মৃতদের মধ্যে ৩৭১ জনের জন্য, কারণ তাদের পূর্ণাঙ্গ ডাটাই আমরা শেষ পর্যন্ত হাতে পাই। মানে মোট ১৬৫৫ জন পুরুষের সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানা যায়। 

গবেষকরা আগের অনেক তথ্য থেকে ইরেকটাইল ডিসফাংশনের সাথে কার্ডিওভাসকুলার রোগের সম্পর্ক অনুমান করতে পেরেছিলেন। এর কারণ এই যে, কার্ডিওভাসকুলারজনিত নানান ধরনের রোগ হওয়ার কারণের / সহায়কের সাথে ইরেকটাইল ডিসফাংশনের কারণের মিল আছে এবং আগের ছোট ছোট গবেষণাও এই ইঙ্গিত দিয়েছে যে, ইরেকটাইল ডিসফাংশন থাকলেই অকালে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি। সেই হাইপোথিসিসকে ভিত্তি দেয়ার জন্যই এই গবেষণা করা হয়।

" The prevailing notion supported by relatively scant data is that ED may serve as a sentinel marker for CVD. This is based largely on shared pathophysiological mechanisms (e.g., endothelial dysfunction, arterial occlusion, systemic inflammation) and risk factors, the high co-prevalence of both conditions, and the reasonable premise that progressive occlusive disease should manifest earlier in the microvasculature than in larger vessels." 

এই গবেষণায় শেষে যে ফলাফল পাওয়া যায় তা বেশ সন্তোষজনক। সন্তোষজনক হওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে, বিশেষজ্ঞরা পরিসংখ্যান ও প্রচুর স্যামপেল গবেষণা করে এই মতামত পোষণ করেন যে, ইরেকটাইল ডিসফাংস থাকা মানেই মৃত্যু ঝুঁকি বেশি থাকা এবং এটা কার্ডিওভাসকুলার রোগের পূর্বাভাস দেয়। এখানে বিষয়টা একটু সুস্পষ্ট করতে চাই। যারা এই গবেষণার শেষ পর্যন্ত মারা গিয়েছে, তাদের মধ্যে ১৪০ জন মারা যান কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে, ১২৪ জন ক্যান্সারে এবং ১০৭ জন অন্যান্য কারণে ( নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া গেছে ৩৭১ জনের মধ্যে)। 

যারা ক্যান্সারে মারা গিয়েছে তাদের মধ্যে ইরেকটাইল ডিসফাংশন থাকা বা না থাকার কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। মানে ক্যান্সারের কারণে মৃত্যু হলে তার ইরেকটাইল ডিসফাংসন থাকলেও যা না থাকলেও তা। তবে পরিসংখ্যানে আমাদের এটা বলে কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজে যারা মারা গিয়েছে, তাদের মধ্যে, বেশিরভাগই ইরেকটাইল ডিসফাংশন এর শিকার। সুস্থ পুরুষের তুলনায় যেসকল পুরুষের ইরেকটাইল ডিসফাংশন আছে, তাদের মৃত্যু সম্ভাবনা ৪৬% বেশি। আরো মজার বিষয় অন্যান্য রোগ ও বিবিধ সমস্যার সাথেও এর সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। সামগ্রিক ঝুঁকি\ মরণশীলতা ২৬% বেশি! 

" In models adjusted for several strong confounding influences, men with ED have a 26% higher risk of all-cause mortality and a 43% higher risk of death due to CVD, compared to men without ED. In this study ED is as strongly associated with CVD mortality as some prominent risk factors for CVD. This is consistent with other studies that have examined ED as a predictor of incident CVD." 

এখন একটা প্রশ্ন আসতে পারে যে, ইরেকটাইল ডিসফাংশন তো বয়স্ক পুরুষদের বেশি। সেক্ষেত্রে তো মৃত্যুহার তাদেরই বেশি হবে! কথা ঠিক, কিন্তু ইরেকটাইল ডিসফাংশন ২০ এর পরেও দেখা দিতে পারে। আমাদের গবেষণার বিষয় কিন্তু এটা ছিলো না যে, বুড়ো মানুষ বেশি মারা যায় নাকি। বরং আমাদের বিষয় ছিলো মৃতদের মধ্যে যারা ইরেকটাইল ডিসফাংশন আছে— বয়স নির্বিশেষে — তাদের মধ্যে মৃত্যুহার বেশি নাকি। এবং এই গবেষণা থেকে আমরা তার প্রমাণ পেয়েছি। আপনার বয়স ৪০ বছর হলেও, আপনার যদি ইরেকটাইল ডিসফাংশন থাকে তবে আপনি মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছেন। 

https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3524836/#!po=54.4444 

এরকম আরো অনেক গবেষণা হয়েছে এবং বিষ্ময়কর হলেও তাদের ফলাফল একই। আমি তার মধ্যে বিস্তৃত ও ভালো মানের দুটোর লিংক দিচ্ছি, আপনারা পড়ে নিতে পারেন। 

https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/16414947/ 

https://www.sciencedaily.com/releases/2010/03/100315161911.htm 

এখন জল ঘোলাটে না করে বরং তাকে রোমাঞ্চকর করার জন্য এর সাথে বিবর্তনের যোগসূত্র করে দিলে কেমন হয়? বিবর্তন তত্ত্ব যতগুলো প্রেডিকশন করেছিল তার সবগুলোই সত্য প্রমাণিত হয়েছে বা এখনো ভুল প্রমাণিত হয়নি। 

তার মধ্যে একটা প্রেডিকশন হচ্ছে, " Males will die younger as a result of physiological malfunction than females (Williams 1957; Hamilton 1966)। পুরুষের মৃত্যুহার আসলেই বেশি। পুরুষরাই বেশি রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশি মৃত্যুর। ইরেকটাইল ডিসফাংশনের সাথে কার্ডিওভাসকুলারডিজিজের সম্পর্ক আমাদের এই প্রেডিকশনকে আরো দৃঢ় করে। 

" In fact, men are 50% more likely than women to die of heart disease. The fact that men have lower estrogen levels than women may be part of the reason. But medical risks, such as poorly treated high blood pressure or unfavorable cholesterol levels, may contribute as well. " 

https://www.health.harvard.edu/blog/why-men-often-die-earlier-than-women-201602199137 

এরকম আরেকটা প্রেডিকশন ছিলো যে, More males than females will be conceived and born (Alexander et al, 1979). এটাও এখন প্রমাণিত। সবার একটা ধারণা থাকতে পারে যে, পুরুষ ও নারীর জন্মহার হয়তো সমান। তবে আসল বিষয়টা হচ্ছে, পুরুষ ও নারীর জন্মহারের অনুপাত ১০৫ঃ১০০। মান প্রতি ১০০ জন নারীর বিপরীতে ১০৫ জন পুরুষ জন্মায়। এই পেছনে গূঢ় কারণ এখনো স্পষ্ট না তবে বিবর্তন তত্ত্ব— আর যাইহোক— ভুল প্রেডিকশন করে নি! 

https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC3222499/ 

নারীদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা এমনি বেশি এবং তার সাথে তারা ভায়োলেন্স থেকে দূরে থাকে। শিশুমৃত্যুর হার হিসেব করলেও দেখা যায়, শিশু অবস্থায় বেশি ছেলে শিশু মারা যায়। নারীরা বিশ্বব্যাপী পুরুষের চেয়ে সাত বছর বেশি বাঁচে। আপনার ইরেকটাইল ডিসকাশন থাকলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। তবে মনে রাখবেন যে, শুধু যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ সাথেই দেখা না করে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের সাথেও দেখা করা একান্ত প্রয়োজন। 

ইরেকটাইল ডিসফাংশন কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের পূর্বাভাস। যদিও পুরুষকে নারী সমান আয়ু দেয়ার জন্য তেমন কোনো পন্থা নেই তবে আধুনিক মেডিকেল সাইন্সের যুগে আমরা অহেতুক খাম-খেয়ালির জন্য মৃত্যু এড়াতে পারি। তাই সংকোচ না করে দ্রুত ডাক্তার দেখান। সবাই দীর্ঘজীবী হোক!

Writer: Md Ariful Islam

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম