সেরা দশটি এস্ট্রোনমিকাল ইভেন্ট যা দেখার জন্য হলেও বেঁচে থাকা চাই‍।

এস্ট্রোনমি


১) হ্যালির ধূমকেতু: 

এডমন্ড হ্যালির নামে এই বিখ্যাত ধূমকেতুর কথা কারো অজানা নয়। মানুষের জানা একমাত্র ধূমকেতু যেটা সবচেয়ে কম সময় পরপর আসে। প্রায় প্রতি ৭৫-৭৬ বছর পরপর এর দেখা মেলে! মজার ব্যাপার হলো এটা আপনি খালি চোখেই রাতের আকাশে দেখতে পারবেন। সর্বশেষ একে দেখা গিয়েছিল ১৯৮৬ সালে এবং এরপর আবার ২০৬১ সালে দেখা যাবে। দেখুন কেউ সেই দূর্লভ ভাগ্যবানদের তালিকায় নাম লেখাতে পারেন কিনা যারা এক জীবনে হ্যালির ধূমকেতু দুইবার দেখেছেন


২) Near earth astroid flyby:


আগামী ২০২৯ সালে ১৩ই এপ্রিল "99942 Apophis" নামের একটি এস্ট্রয়েড পৃথীবি ও চাঁদের মাঝ দিয়ে যাবে। বলতে গেলে মাত্র 31,300 কিমি এর জন্য পৃথীবিকে মিস করে যাবে। এবং এটা হবে মানবজাতির ইতিহাসে পৃথীবির সবচেয়ে নিকট দিয়ে যাওয়া এস্ট্রয়েড। এর সাইজ একটা গোটা ফুটবল মাঠের সাড়ে তিন ভাগের সমান
লে ডাইনোসর-"যাহ্ শালা যাত্রা বেঁচে গেলি তোরা"


৩) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সময়ব্যাপী সূর্যগ্রহন: 

সূর্যগ্রহন প্রতিবছরই পৃথীবির কোথাও না কোথাও হয়। কিন্ত সেটা কতোক্ষণ স্থায়ী হয় সে বিবেচনা করলে আগামী ২০২৭ সালে ২ আগষ্ট যে পূর্ণসূর্যগ্রহন দেখা যাবে সেটা হবে প্রায় ৬ মিনিট ২৩ সেকেন্ড ব্যাপী! ইতিহাসে সর্বোচ্চ সময়ব্যাপী যে সূর্যগ্রহনটির কথা বলা আছে সেটি ছিল প্রায় ৭ মিনিট ২৮ সেকেন্ডব্যাপী। এবং এটা সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল সেই ৭৪৩ খ্রীষ্টপূর্বে। পুনরায় একে দেখা যাবে ২১৮৬ সালে। ততোদিন আমরা কেউ বেঁচে থাকবো বলে মনে হয় না। তাই সকলে আসন্ন ২০২৭ সালে লোটাকম্বল নিয়ে প্রস্তুত থাকুন


৪) সুপারনোভাঃ 

সুপারনোভা হলো মূলত সূর্যের চেয়ে বেশি ভরের কোনো তারার মৃত্যুকালীন বিষ্ফোরণ। তারাটি যখন তার সব হাইড্রোজেন ফুয়েল জ্বালিয়ে শেষ করে ফেলে এবং সেই সাথে ঠিক বিষ্ফোরণের আগে এর core collapse করে; ফলে তারাটি বিস্ফোরিত হয়ে তার সকল ভর শক্তি আকারে মহাকাশে ছড়িয়ে দেয়। এবং সে সময় এর উজ্জলতা পুরো একটা গ্যাল্যাক্সির সমান বা তার থেকে বেশি হয়ে থাকে। এ যে কতোটা সুন্দর দৃশ্য কেবল কোনো কবির পক্ষেই হয়তো তার বর্ননা সম্ভব। সুপারনোভার কিছু ছবি যারা দেখছেন তারা বুঝবেন এর মেহনীয়তা। বাকিরা সার্চ দিয়ে এখনি দেখে নিন। প্রতি শতাব্দীতে গড়ে দুটোর বেশি সুপারনোভা বিষ্ফোরণ দেখা যায় না। সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৮৭ সালে যা ছিল ১০০ মিলিয়ন সূর্যের ক্ষমতা সম্পন্ন। গত ২০১৩ সালে ohio state untiversity র গবেষকরা জানান যে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে আমাদের মিল্কিওয়েতেই সুপারনোভা বিষ্ফোরণ হতে যাচ্ছে। এবং ২০% সম্ভাবনা রয়েছে খালি চোখে দেখতে পাবার। এই দৃশ্য মিস করলে চোখ জনম বৃথা যাবে


৫) Venus accults jupitet: 

২০৬৫ সালের নভেম্বরে বুধ আর বৃহস্পতি গ্রহ এমন অবস্থানে চলে আসবে যে ভোরের আকাশে পৃথীবি থেকে দেখলে মনে হবে দুটো গ্রহ একেবারে পাশাপাশি অবস্থান করে একটি অধিক উজ্জ্বল তারার রূপ ধারন করেছে। এটি সর্বশেষ ১৮১৮ সালে দেখা যায়। সে সময় ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী koregaon যুদ্ধে ব্যাপক মত্ত ছিল তাই কারো আকাশের দিকে তাকানোর মতো সময় হয় নাই। আপনারা কেউ মিস করবেন না যেন!


৬) Leonid meteor shower: 

পৃথীবি যখন "Temple tuttel" ধূমকেতুর কক্ষপথ দিয়ে গমন করে তখন অসংখ্য ক্ষুদ্র meteor বায়ুমন্ডলে পুড়ে গিয়ে আলোকছটা রূপে ভূপৃষ্টে পতিত হয় বা তার আগেই নিঃশেষ হয়ে যায়। অসম্ভব সুন্দর এই দৃশ্য রাতের আকাশে দেখলে মনে হবে অসংখ্য shooting star এদিক সেদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। এ যেন তারার বৃষ্টি!


৭) Planetary alignment: 

সৌরজগতের সবগুলো গ্রহ এক লাইনে চলে আসে এমন ঘটনা খুবই রেয়ার। এমন আটটি গ্রহ লাইনে আসবে ২৪৯২ সালে; ততোদিন মানবজাতি থাকবে কিনা সন্দেহ! তবে আগামী ২০৪০ এর সেপ্টেম্বরে কেবল mars, mercury, venus, jupiter আর saturn এই কয়টি গ্রহ একলাইনে চলে আসবে। এধরনের এলাইনমেন্ট ভয়েজারের মতো oneway স্পেস ট্রাভেলিং এর জন্য খুবই উপযোগী। নিশ্চই বিজ্ঞানীরা এমন সুযোগ ছাড়বে না


৮) Supermoon: 

গত ২০১৬ এর নভেম্বরে আমাদের সকলের স্বাভাবিকের চেয়ে ১৪% বড় এই রেয়ার সুপারমুন দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। তবে যারা মিস করেছেন তারা মোটেও কষ্ট পাবেন না। আগামী ৬ ডিসেম্বর ২০৫২ আরো একটি সুপার মুন পর্যবেক্ষণ করতে যাচ্ছে পৃথীবি। যা একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে নিকটবর্তী সুপারমুন


৯) Birth of a star: 

উত্তর আকাশে cygnus constellation এ যে কয়টি উজ্জল তারা দেখা যায় তাদের পরিবারে নতুন সদস্য আসতে চলেছে শীঘ্রই। ১৮০০ আলোকবর্ষ দূরে দীর্ঘকাল বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণে থাকা "KIC 9832227" star system এ বিদ্যমান দুটো glittery specks একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘুরতে ঘুরতে অচিরেই কেন্দ্রে একত্রে মিলিত হবে এবং তখন এক ভয়ংকর সুন্দর বিষ্ফোরণ হবে যা কিনা নোভা বিষ্ফোরণ নামে বেশি পরিচিত। এটা once in a lifetime ইভেন্ট। শুধু তাই নয় এমন অকল্পনীয় সুন্দর দৃশ্য রাতের আকাশে খালি চোখেই দেখতে পারবেন


১০) Transit of Earth from Mars:

এটা বলতে মূলত যেটা বোঝায় তা হলো আমাদের প‌ৃথীবি, সূর্য ও মঙ্গল গ্রহের মাঝ থেকে গমন করবে। তখন যদি মঙ্গলের পর্যবেক্ষকের কাছে পৃথীবিকে, হলুদ সূর্যের সামনে একটা কালো বিন্দু বলে মনে হব। এই ট্রানজিট এর কোনো রেকর্ড মানব ইতিহাসে এখন পর্যন্ত নেই। আগামী নভেম্বর ২০৮৪ প্রথমবারের মতো এই ট্রানজিট হতে যাচ্ছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট কারন নাসা ২০৩০ এ যে মঙ্গলে মানুষ অবতরনের যে প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে তা যদি ঠিকঠাক এগিয়ে চলে তবে ২০৮৪ তে নিশ্চই মঙ্গলের মাটিতে দাড়িয়ে কোনো মানুষ সেই দৃশ্য দেখবে। আর পরবর্তী ট্রানজিট ২৩৯৪ সালে, তখন আমরা মানবজাতি হয় মরে যাবে নয়তো কলোনাইজড মঙ্গলে আমাদের কোটি কোটি ভবিষ্যত প্রজন্ম টেলিস্কোপে চোখ রেখে একবার পৃথীবির সকল স্মৃতিকে মনে করে একটা লম্বা স্যালুট ঠুকবে আর বলবে "Thanks for everything"।


Writer: Suvodip Adhikari

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম