১.
আমাদের চোখে ও কানে ফিল্টার লাগানো আছে। আমরা কানে 20 হার্জ থেকে 20 হাজার হার্জ পর্যন্ত শুনতে পারি। বাচ্চাদের শব্দ শোনার পরিসর আরো বড় হয়। আপনার পোষা কুকুর প্রায় 45 হাজার হার্জ ও পোষা বিড়াল প্রায় 78 হাজার হার্জ পর্যন্ত শুনতে পারে।
আমাদের চোখেও কিন্তু ফিল্টার লাগানো। আমরা 380nm থেকে 740nm পর্যন্ত তরঙ্গদৈর্ঘ্য এর আলো দেখতে পারি। একেক আলো একেক রঙের অনুভূতি তৈরি করে। Mantis Shrimp নামের একটা পোকা যে range এ দেখতে পারে তা এতই বেশি যে আমরা সেসকল রঙ কল্পনাও করতে পারবো না। নাইট ভিশন ক্যামেরা IR বা UV রশ্মির মাধ্যমে রাতের বেলায় পর্যন্ত ছবি তুলতে পারে।
আচ্ছা এমন কেউ যদি থাকে যার শরীর দৃশ্যমান আলোর জন্য স্বচ্ছ, কিন্তু অন্য কোন আলোর জন্য প্রতিফলন ঘটায়? কিংবা তারা এমন ফ্রিকোয়েন্সিতে কথা বলে যে আমরা তা শুনতেই পাই না। কী হবে তখন?
আপনার পাশে বসা বিড়াল বা কুকুরটি হঠাৎ ভয় পেয়ে উঠলো। আপনি কিছুই শুনলেন না। তবে কি এমন কিছু তারা শুনেছে যে আপনি তা শুনেন নি? ভয় পাবার কিছু নেই। বিড়াল বা কুকুরের শ্রাব্যসীমা অনেক বড় হলেও তাদের চোখ খুব বেশি রঙ দেখতে পারে না। সর্বোচ্চ আপনার মতোই। তাই আপনি যা দেখেন নি, তা আপনার কুকুর পর্যন্ত দেখবে না।
তবে হ্যাঁ, আপনার ক্যামেরা হয়তো ঠিকই এমন কাউকে ধরে ফেলবে।
২.
আমরা ত্রিমাত্রিক। মাত্রা কী জিনিস? একটা সরলরেখা একমাত্রিক। একটা একমাত্রিক প্রাণী যদি x অক্ষের ওপর থাকে, সে বুঝতেই পারবে না y অক্ষ কী জিনিস।
আবার একটা দ্বিমাত্রিক প্রাণী xy তলে আছে। আপনি ঐ তলের ওপর দাঁড়ানো। দ্বিমাত্রিক প্রাণী আপনার উচ্চতা বুঝতেই পারবেনা। তবে সে আপনার xy তলের ওপর ছায়া ঠিকই দেখতে পারবে। সম্পূর্ণ আপনাকে দেখা তার জন্য সম্ভব না।
এখন দ্বিমাত্রিক প্রাণীটি x অক্ষে মুলবিন্দু থেকে (1,1) বিন্দুতে যাচ্ছে। আপনি করলেন কি, কাগজটা ভাঁজ করে (1,1) বিন্দুকে মুলবিন্দু এর কাছে এনে ফেললেন। দ্বিমাত্রিক প্রাণীটি বেশ ভয় পেয়ে গেল। তার কাছে এই ঘটনার ব্যাখ্যা নেই, কারণ তার পক্ষে z অক্ষ অনুভব করা বা কল্পনা করা সম্ভব নয়।
আচ্ছা কোন চতুর্মাত্রিক বা আরো উচ্চতর মাত্রার প্রাণী থাকলে কী হবে? ধরুন আপনি একটা বাক্সে কিছু একটা বদ্ধ করে রেখেছেন। অন্য কেউ তা দেখছে না। একটা চতুর্মাত্রিক প্রাণী হুট করে তা নিয়ে গেলো। আপনি বাক্স খুলে দেখলেন সেটা উধাও। আপনি কোন ব্যাখ্যাই খুঁজে পেলেন না।
আচ্ছা সেক্ষেত্রে কিন্তু আপনি সেই চতুর্মাত্রিক প্রাণীটিকে কখনোই দেখতে পারবেন না। তার ত্রিমাত্রিক অভিক্ষেপ দেখবেন শুধু। একটা কিউবের যেমন ছয়টা দ্বিমাত্রিক ফেস থাকে, একটা টেসারেক্ট (চতুর্মাত্রিক ঘনক) এ এরকম আটটা সেল থাকে। কাজেই সেক্ষেত্রে কিন্তু আপনি একটা চতুর্মাত্রিক প্রাণীর একাধিক থ্রিডি প্রজেকশন দেখবেন। মানে একটা প্রাণীই একাধিক ফর্মে চলে আসবে।
কিন্তু হ্যাঁ, এইক্ষেত্রে আপনি সেই চতুর্মাত্রিক প্রাণীর কাছে কিন্তু অসহায়। আপনি যত যাই করুন, তার হাত থেকে বাঁচতে পারবেন না।
৩.
পৃথিবীর সব পার্টিকেলকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। এদের যথাক্রমে ফার্মিয়ন আর বোসন বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ইলেক্ট্রন ফার্মিয়ন, ফোটন বোসন। ফার্মিয়ন দিয়ে মূলত সকল পদার্থ তৈরি। এদের স্পিন ½ এর বিজোড় গুনিতক। এরা পাওলির বর্জন নীতি মানে, অর্থাৎ দুটো ফার্মিয়নের কোয়ান্টাম স্টেট কখনো এক হবে না। অন্যদিকে বোসন মূলত বলবাহী কণা (বোসন এর নাম আমাদের সত্যেন বোস স্যারের নামে। বোসনের স্ট্যাটিস্টিক্স এর একজন আবিস্কারক তিনি। উনার প্রতি অজস্র সম্মান) ½ এর জোড় গুণিতক। এরা পাওলির বর্জন নীতি মানে না।
আচ্ছা, কোন পদার্থ কি বোসনের তৈরি হতে পারে? বা ফোটনের তৈরি কোন প্রাণী কি থাকতে পারে?
উত্তর হলো: না। কেননা প্রতিটি পার্টিকেল এর স্ট্যাটিস্টিক্স আমাদের জানা। পরম শূন্য তাপমাত্রায় বোসন কণার গ্যাস কন্ডেনসেট হয়, সাধারণ তাপমাত্রায় তা হবে তো নাই, আর কোন প্রাণী তৈরি তো অন্য কথা। এমনকি যদি থাকেও, তবে এরা আপনার শরীর পেনিট্রেট করে চলে যাবে কিংবা আপনাকে হয়তো রেডিয়েশন এ ভোগাবে। আপনার শরীর ভারী মনে হওয়া বা উদ্ভট আচরণ করাতে পারবে না। আপনি কি জানেন, এই মুহূর্তে কতগুলো নিউট্রিনো আপনার শরীর ভেদ করে চলে যাচ্ছে অথচ আপনি টেরই পাচ্ছেন না?
৪.
ভূত-প্রেত-অশরীরী মোটামুটি সব সংস্কৃতিতে আছে, একেক নামে, একেকরকম ব্যাখ্যায়। তাদের নিয়ে প্রচলিত কল্পকাহিনীগুলোকে একত্র করলে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়। যেমন,
তারা নাকি উড়তে পারে। আচ্ছা সেক্ষেত্রে কিন্তু বাতাস না থাকলে উড়তে পারবে না। কারণ বাতাস না থাকলে যতই ডানা থাকুক, কোন প্রতিক্রিয়া থাকবে না। কাজেই উড়তেও পারবে না। যদি চতুর্মাত্রিক হয় তবে সেটা উড়ে বলে মনে হতে পারে অবশ্য।
অনেকে নাকি ভূত পেত্নী বিয়ে করে। কিন্তু ত্রিমাত্রিক প্রাণীর সাথে চতুর্মাত্রিক প্রাণীর বিয়ে, যৌনসম্পর্ক কি আদৌ সম্ভব? একটা কাগজের ওপর ছবি এঁকে ভেবে দেখতে পারেন
আর হ্যাঁ, এক্ষেত্রে কেউ ভূত পালে বললে সেটাও সম্ভব নয়। কেননা চতুর্মাত্রিক প্রাণী আপনার চেয়ে ক্ষমতায় সুপিরিয়র। কাজেই যত বড় ওঝা হোন না কেন, চতুর্মাত্রিক ভূত তাড়ানো সম্ভব নয়।
আর যেই ভূতই হোক না কেন, তাদের চোখে না দেখলেও ক্যামেরা ঠিকই দেখবে। রিমোট কন্ট্রোলের লাইট কিন্তু খালি চোখে দেখবেন না, তবে ফোনের ক্যামেরায় সেন্সর থাকলেই দেখবেন। আবার আল্ট্রাসনিক সাউন্ড টেস্টিং মেশিনে কথা ঠিকই ধরা পড়বে। দুটোই একসাথে লাগবে। যদি ক্যামেরায় এমন কাউকে দেখেন যা খালি চোখে নেই আর ঐ সোর্স থেকে শব্দ পান তবে ঠিকই সেখানে কেউ আছেন।
এখানেও একটা কিন্তু চলে আসে, এমন কেউ ধরা পড়লে কি সে একটা মানুষের সাথে যৌনসম্পর্ক করতে পারে (যেমন, পরী)? বা একটা মানুষের গলা টিপে ধরতে পারে? যদি পারে তবে সে কি কিন্তু অন্য যেকোন পদার্থের মত তারও জায়গা দখল করার কথা ও মানুষের পক্ষে তাকে ভেদ করে যাওয়া সম্ভব নয়।
আচ্ছা, ভূত নাকি গোবর ও হাড় খায়। সেক্ষেত্রে তারা একটা আস্ত জিনিস হজম করে যেখানে শক্তি বলতে তেমন কিছু নেই, যদি নিউক্লিয়ার শক্তি হজম না করে থাকে।
৫.
আচ্ছা আমরা সবাই যদি সিম্যুলেটেড হই, তবে ভূত কি ব্যাখ্যা করা যায়?
৬.
কেউ কি নিজে ভূত দেখেছে ও ছুঁয়েছে? নাকি সব শোনা? আচ্ছা, কাউকে ছোটবেলায় ভূতের ভয় না দেখিয়ে ভাত খাওয়ালে বা ঘুম পাড়িয়ে দিলে সে কি পরে ভূতে ভয় পায়?
৭.
এই লেখা পড়ার পর আপনার কি মনে হচ্ছে যে ভূত যদি থেকে থাকে তবে আমরা যাদের ভূত ভেবে ভয় পাই তারাই আসল ভূত?
Writer: Syed Emad Uddin Shubha