আপনি আসলেই ছেলে নাকি মেয়ে?


গুয়েভেডোসেস + AIS :
প্রাকৃতিকভাবেই মেয়ে থেকে ছেলে হওয়া-কেমনে সম্ভব?

১।
ভাবেন তো, আপনি ছেলে। নাম ফজল মিয়া। কিন্তু আপনার  সেক্স ক্রোমোজোম পরীক্ষা করার পরে দেখা গেল আপনি জেনেটিক্যালি  মেয়ে, মানে আপনার প্রতিটি দেহকোষে XX সেক্স ক্রোমোজোম দেখাচ্ছে।
(See XX male syndrome)[1]
বা, আপনার গালপেন (ফজিলা খাতুন) XY 
অর্থাৎ, ছেলে!! মানে 46 XY, Female!!
একে সোয়াইয়ার সিনড্রেম( Swyer syndrome) বা এক্সওয়াই গোনাডাল ডিসজেনেসিস
(XY Gonadal Dysgenesis) বলে। [2][3]
প্রতি ৮০হাজার থেকে ১লাখের মাঝে একজন এমন সমস্যায় ভুগেন।
না, এটা কোনো সাইফাই নয়। সত্য জিনিস এবং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে।
আমরা মাঝেমাঝেই শুনে থাকি যে কোনো এলাকার /দেশের কোনো মেয়ে হঠাৎ ছেলেতে পরিণত হয়ে গেছে।
মাদারীপুরের সেরেলা আক্তার হেনার সেলিম রেজা হয়ে যাওয়ার (ছেলে থেকে মেয়ে) ঘটনাটা শুনেননি?[4]
মেয়ে থেকে ছেলেতে রূপান্তর!
এ ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ী জেলা সদরের আলীপুরে।(২০১৪-০১-২০)[5]

অনেকেই বলেন যে, ওনারা ট্রান্সজেন্ডার তাই সিজার করে এমনটা করেছেন। ট্রান্সজেন্ডাররা(রূপান্তরকামীরা)নিজেদের সেক্স পরিচয় পাল্টাতে চান। কিন্তু সব গুয়েভেডোসেসরা এমন নয়। তারা আমাদের মতই।কিছু গুয়েভেডোস অবশ্য ট্রান্সজেন্ডারদের মত নিজেদের লিঙ্গ সেক্স রিএসাইনমেন্ট সার্জারি করে হরমোন থেরাপি বা অন্য কোনো চিকিৎসা নিয়ে পাল্টিয়ে থাকেন।
যাইহোক,
সিজার করা ছাড়া এমন লিঙ্গ পরিবর্তন নাকি বলে সম্ভব নয়।
তবে শুনুন, প্রাকৃতিকভাবেই এমন লিঙ্গ পরিবর্তন সম্ভব।
তারমানে যারা বলতেন সিজার করা ছাড়া লিঙ্গ পরিবর্তন হওয়া অসম্ভব তারা ভুল নয় শুধু মহা ভুলের মাঝে আছেন। আবারো বলছি,
সিজার ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবেই এটা ঘটা সম্ভব।

২।
কীভাবে সম্ভব? তবে শুনুন-
তার আগে একটা প্রশ্ন-
কেউ যে ছেলে বা কেউ যে মেয়ে- এটা আপনি কীভাবে বুঝলেন?
জানি উত্তর দিবেন-
ছোটোোবেলায় তাদের লিঙ্গ পরিচয়ে আর বড় হলে তাদের সেকেন্ডারি সেক্সুয়াল ক্যারেক্টারগুলো(জননাঙ্গ ব্যতিত ছেলে মেয়ের অন্যান্য স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলো যেমন-মাসল,ভয়েস,মানসিকতা,স্তন,দাড়ি-গোফ,আচরণ ইত্যাদি) দেখে বুঝেছেন তাইনা?
তবে শুনুন,
কিছু ক্ষেত্রে সন্তানের লিঙ্গ এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য ছেলেদের মতো হলেও তার জেনেটিক সেক্স হয় ‘XX’ অর্থাৎ, মেয়েদের মতো!যেটা ফজল আলীর মাঝে ঘটেছে। ২০১০ সারা পৃৃথিবীতে এমন ২০০টি কেইস রিপোর্ট হয়েছিল।
মনে করা হয় প্রতি ২০-৩০হাজার পুরুষের ক্রোমোজোম 46XY না হয়ে বরং 46 XX [1]
আবার এমন টাইপ আরেকটি সমস্যার নাম হলো কনজেনিটাল অ্যাড্রেনাল হাইপারপ্লাশিয়া হলে। তবে এর অনেক রকমফের আছে। এসব টপিক  নিয়ে অবশ্য এ পোস্টের আলোচনা নয়।
তারমানে, আপনি যা ভেবেছেন সেটা তো নাও হতে পারে! একসময় জেনেটিক সেক্স পরীক্ষা করার পরে দেখা গেল আপনি মেয়ে, মানে XX আর আপনার গালপেন XY অর্থাৎ, ছেলে!!(শেষে আসছে আলোচনা)
একটি সন্তানের সেক্স ক্রোমোজোম ‘XY’ হবে নাকি ‘XX’ হবে, তা নির্ধারিত হয় নিষেকের সময় । পুরুষের শুক্রাণু ও নারীদের ডিম্বাণু মিলে জাইগোট তৈরি করে। এই জাইগোটে ‘XY’ ক্রোমোজোম থাকলে একটি ভ্রূণ ছেলের মতো করে বৃদ্ধি পায় এবং ‘XX’ থাকলে ভ্রূণ মেয়ের মতো করে বৃদ্ধি পায়।
সাধারণত জন্মের সময় ভ্রুণের একই টিস্যু থেকে পুরুষ এবং স্ত্রী জননাঙ্গের সৃষ্টি হয়। ভ্রূণ বিকাশকালে যদি টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণের মাত্রা অধিক হয়, তাহলে পুং জননাঙ্গ তথা পেনিস, স্ক্রোটাম(অন্ডথ
লি) ও পিনাইল ইউরেথ্রা(মূত্র বহির্গমন নালি)
তৈরি হয় যা পুরুষের পরিচয় বহন করে। আর যদি টেস্টোস্টেরন হরমোন কম নিঃসৃত হয় বা একেবারেই নিঃসৃত না হয়, তাহলে স্ত্রী জননাঙ্গ তথা ক্লিটোরিস(ভগাঙ্কুর), লেবিয়া মেজোরা,লেবিয়া মাইনরা এবং ভ্যাজাইনা(যোনি) তৈরি হয়, যা একজন নারীর পরিচয় বহন করে।
[Sex organ হওয়ায় পোস্টে চিত্র দেওয়া হয়নি। না বুঝতে পারলে গুগল করে নিন।না বুঝতে পারলে পোস্ট বুঝতে পারা একটু কঠিন হবে]

৩।
যখন এসব হরমোন নিঃসরণে ব্যতিক্রম ঘটে তখন-

1) যখন ভ্রুণ ডেভেলপমেন্টের সময় টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ খুব বেশিও হয় না, আবার কমও হয় না, একটি মাঝামাঝি পর্যায়ে থাকে। এর ফলে জিনগতভাবে পুরুষের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত ছোটো পেনিস(পুংজননাঙ্গ) ও টেস্টিস(শুক্রাশয়-অন্ডের ভেতরে প্রাণীদের পুংজননকোষ বা শুক্রাণু ও পুরুষ হরমোন টেস্টোস্টেরন উৎপাদনকারী অঙ্গ)
তৈরি হয় এবং পেনিস ছোটো হওয়ার কারণে তা স্ক্রোটাম(অন্ডথলি)এর সাথে সংলগ্ন না থেকে বেশ খানিকটা উপরে থাকে।
বা,অনেক সময় বাইরে টেস্টিস বা পেনিসের  কোনো উপস্থিতিই দেখা যায় না।
আর জিনগতভাবে যারা নারী (xx ক্রোমোজোম) তাদের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে প্রশস্ত ক্লিটোরিস(ভগাঙ্
কুর) থাকে যা লেবিয়ার সাথে সংযুক্ত অবস্থায় থাকে। আবার কিছু মানুষের অপরিণত পুং এবং স্ত্রী জননাঙ্গ উভয়ই থাকে।

2.
অথবা কারো ভ্রুণে ক্রোমোজোম XY কিন্তু তার যদি ভ্রুণ ডেভেলপমেন্ট পর্যায়ে, লিঙ্গ নির্ধারণ করার ধাপে টেস্টোস্টেরন হরমোন কম উৎপাদিত হয় বা উৎপাদন বিলম্বিত হয় তখন সে বাচ্চাটি স্বাভাবিক পু্রুষ হিসেবে জন্ম নেয়না। স্বাভাবিক পুরুষের পরিচয় তার দেহে বাহ্যিভাবে দৃশ্যমান হয় না। পুরুষসুলভ বৈশিষ্ট্য ও শারীরিক গুণাবলির অভাবে বা পরিপূর্ণতার অভাবে জন্মের পর তাকে নারী বা মেয়ে বলে আমরা মনে করে থাকি(কিন্তু সে জেনেটিক্যালি কিন্তু xy ক্রোমোজোম বিশিষ্ট বা ছেলে)।
কিন্তু আবার একটা নির্দিষ্ট বয়সে পুরুষ হরমোনের সক্রিয়তায় তার শরীরে পুরুষসুলভ বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠে। তখন তাকে আমরা পুরুষ বলে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হই। মানে একসময়ের সবার কাছে মেয়ে হিসেবে পরিচিত কোনো মানুষ হঠাৎ করে ছেলে হিসেবে পরিচিত হতে থাকে যা সবার মাঝে আলোড়ন তৈরি করে।
৪।
হ্যাঁ, এরূপ হওয়া সম্ভব এবং তা প্রাকৃতিকভাবেই সম্ভব। স্বাভাবিকভাবে মেয়ে থেকে ছেলে হয়ে ওঠার এই ঘটনা বা অবস্থা 'গুয়েভেডোসেস'(Guevedoces)  নামে পরিচিত।
(মানে penis at twelve)
আরেক নাম হলো(machihembras) বা first woman than man।
এর আরো নাম আছে 5-alpha reductase deficiency, বা pseudoharmophroditism(সিউডো-হারমোফ্রোডিটিজম)
[6],[7],[8]

তবে  ছেলে থেকে মেয়ে হওয়ার এ
পুরো প্রক্রিয়াটা জানার আগে গর্ভসংক্রান্ত  সাধারণ বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন।
মানুষের প্রজননতন্ত্র মূলত তিনটি জিনিস নিয়ে গঠিত।
প্রথমত- গোনাড যা পরবর্তীতে ছেলেদের ক্ষেত্রে টেস্টিস/টেস্টিকল(এক বচনে) বা শুক্রাশয় এবং অভারিস বা  ডিম্বাশয়ে পরিণত হয়।

দ্বিতীয়ত - জেনিটাল ডাক্ট(জনন নল) যা পরবর্তীতে মেসোনেফ্রিক ও প্যারামেসোনেফ্রিক ডাক্টে রূপান্তরিত হয়।

তৃতীয়ত- জেনিটাল টিউবারকল  যা পরবর্তীতে এক্সটারনাল জেনিটালিয়া বা, বাহ্যিক বিভিন্ন যৌনাঙ্গে(যেমন পেনিস অথবা ক্লিটোরিস) কনভার্ট হয়।
ছেলেদের ক্ষেত্রে বাহ্যিক যৌনাঙ্গ হলো পেনিস,অন্ডথলি আর মেয়েদের ক্ষেত্রে যোনি এবং যোনির আশেপাশের বিভিন্ন অংশ যেমন লেবিয়া মেজোরা,মাইনরা,ক্লিটোরিস ইত্যাদি এসব।
যাইহোক, একদম গোড়ায় চলে যাই চলেন-
স্ত্রী দেহের সেক্স ক্রোমোজোম দু'টি 'X' ক্রোমোজোম অর্থাৎ XX নিয়ে গঠিত, কিন্তু পুরুষ দেহে এরা সাধারণত XY ধরনের হয়।
তারমানে স্বাভাবিক প্রত্যেক পুরুষের একটি X ক্রোমোজোমের সঙ্গে অবশ্যই একটি Y ক্রোমোজোম থাকে । অর্থাৎ পুরুষের দেহে XY ধরনের ক্রোমোজোম থাকে এবং প্রত্যেক স্ত্রী লোকের দেহে সব সময়েই দুটি X ক্রোমোজোম (অর্থাৎ XX ক্রোমোজোম) থাকে।
যৌন জননের সময় যখন কোনও পুরুষের X ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণু স্ত্রীলোকের একটি ডিম্বাণুকে (যা সব সময়েই X ক্রোমোজোম বহন করে ) নিষিক্ত করে, সেক্ষেত্রে নিষেকের ফলে উৎপন্ন ভ্রুণানু [Zygote]-টি [XX] স্ত্রী সন্তানে পরিপূর্ণতা লাভ করবে ( এ কারণে প্রত্যেক স্ত্রীলোকের XX ক্রোমোজোম থাকে)
অপরপক্ষে, যৌন জননের সময় কোনও পুরুষের Y ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণু যখন কোনও স্ত্রীলোকের একটি ডিম্বাণু বা স্ত্রী গ্যামেটকে নিষিক্ত করে, (যা সব সময়েই একটি X ক্রোমোজোম বহন করে) সেক্ষেত্রে উত্পন্ন ভ্রূণাণুটি [XY] পুত্র সন্তানে পরিপূর্ণতা লাভ করবে।
৫।
মানুষের ভ্রূণে ৬-৭সপ্তাহ  পর্যন্ত প্রজননতন্ত্রের এই প্রধান অংশগুলির কোনো অংশ থেকে ছেলে বা মেয়ে ভ্রুণ চেনা বা পার্থক্য করা যায় না। অর্থাৎ, এই অবস্থায় ছেলে বা মেয়ের জননতন্ত্রের অংশগুলো গাঠনিক দিক দিয়ে একইরকম থাকে। এই অবস্থাকে বলে ইন-ডিফ্রেন্ট স্টেজ। অর্থাৎ, এর আগে সাধারণভাবে ভ্রূণটি ছেলে নাকি মেয়ে সেটা আলাদা করা অসম্ভব।
সো,বলা যায়
সাধারণত জন্মের সময় ভ্রুণের একই টিস্যু থেকে পুরুষ এবং স্ত্রী জননাঙ্গের সৃষ্টি হয়।
পুরুষ বা নারীতে রূপান্তর হওয়ার আগে মানে ইনডিফ্রেন্ট স্টেজে অভিন্ন ভ্রুণটিতে গোনাড(শুক্রাশয়/ডিম্বাশয়) থাকে।
এ গোনাড শুক্রাশয় বা ডিম্বাশয় যে কোনোটাতেই রূপান্তরিত হতে পারে (ভ্রুণের জিনের সংকেত অনুযায়ী)
ভ্রুণ গর্ভে থাকাকালীন কিছু মাসের মধ্যেই ইন ডিফ্রেন্ট স্টেজের পর male fetus(পুং ভ্রুণ)-এ গোনাডটি Y ক্রোমোজোমের sry gene থেকে প্রাপ্ত সংকেতের ফলে বাদামের  মত testes(শুক্রাশয়)-এ পরিণত হয়। পুংভ্রুণে
তারপর সেখানে  টেস্টোস্টেরন হরমোন সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে,  female fetus -এ(স্ত্রী ভ্রুণে) Yক্রোমোজোম না থাকায় sry জিনের সংকেত সেখানে উপস্থিত থাকে না এবং টেস্টোস্টেরন হরমোন সৃষ্টি হয়না বা খুব কম মাত্রায় সৃষ্টি হয়। ফলে সে ভ্রুণটি মেয়ে ভ্রুণে ডেভেলপ হতে থাকে।
(টেস্টোস্টেরন হলো মূলত পুরুষ জনন হরমোন। এটি নারীদেহেও খুব অল্প মাত্রায় উপস্থিত থাকে।)
অ্যান্ড্রোজেন(পুরুষ হরমোন) হরমোন পাঁচ প্রকার। তার মাঝে টেস্টোস্টেরন হলো এক প্রকার হরমোন ।
আর অ্যাস্ট্রোজেন হলো স্ত্রী হরমোন। এটারও অনেক প্রকার আছে । সেসব আজকে আলোচনার টপিক না ।
★(তবে, মনে রাখবেন,
শুক্রাশয় হলো  (ইংরেজি একবচনে testicle বা বহুবচনে testis) মেরুদণ্ডী প্রাণীদের পুংজননকোষ বা শুক্রাণু ও পুরুষ হরমোন -টেস্টোস্টেরোন  উৎপাদনকারী অঙ্গ।)
ভ্রূণ বিকাশকালে যদি টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণের মাত্রা অধিক হয়, তাহলে পুং জননাঙ্গ তথা পেনিস(পুংলিঙ্গ), স্ক্রোটাম(অন্ডথলি) ও পিনাইল ইউরেথ্রা (মূত্রদ্বার)তৈরি হয় যা পুরুষের পরিচয় বহন করে।
আর যদি টেস্টোস্টেরন হরমোন কম নিঃসৃত হয় বা একেবারেই নিঃসৃত না হয়, তাহলে স্ত্রী জননাঙ্গ তথা ক্লিটোরিস(ভগাঙ্কুর) , লেবিয়া মেজোরা, মাইনরা এবং ভ্যাজাইনা তৈরি হয়, যা একজন নারীর পরিচয় বহন করে।
যাইহোক,
গর্ভের প্রায় দুইমাস সময় পর X,Y ক্রোমোজোম -ভ্রুণে উৎপন্ন হওয়া সেক্স হরমোনগুলোর উপর নিয়ন্ত্রন ও ক্রিয়া শুরু করে।আর স্ত্রী ভ্রুনে এই টেস্টোস্টেরন খুব খুব কম মাত্রায় থাকায় এবং ফলে ডিহাইড্রো-টেস্টোস্টেরন(সংক্ষেপে DHT) না থাকায়  indifferent stage এ থাকা অভিন্ন জনন টিস্যুটি নারী জননাঙ্গে কনভার্ট হতে শুরু করে। সেসব অনেক জটিল ধাপ। সেসব নিয়ে আজকের আলোচনা নয়।

৬।
যাইহোক,
অপরদিকে পুরুষ ভ্রুণে থাকা  টেস্টোস্টেরন এবং
DHT হরমোনের উপস্থিতি
পুরুষ বহিঃজননাঙ্গগুলো তৈরি করার মূল প্রভাবক।
স্বাভাবিকক্ষেত্রে XY ক্রোমোজোমের(ছেলে) ভ্রুণে থাকা 5-alpha reductase অ্যানজাইমটি আরেক  হরমোন টেস্টোস্টেরন  হরমোনকে ডিহাইড্রো-টেস্টোস্টেরন হরমোনে  কনভার্ট করতে শুরু করে যার ফলে একটি ভ্রুনে পুরুষ জননাঙ্গগুলো উৎপন্ন হয়। নারী ভ্রুণে টেস্টোস্টেরন না থাকায় বা খুব কম মাত্রায় থাকায় ভ্রুণটি নারী হিসেবেই রয়ে যায় । নারী ভ্রুণে টেস্টোস্টেরন হরমোনটি খুব কম থাকায় বা না থাকায় তা থেকে ডিহাইড্রোটেস্টো
স্টেরন  DHT হরমোনটি তৈরি হতেও পারেনা। ফলে  ইন ডিফ্রেন্ট স্টেজে থাকা অভিন্ন ভ্রুণটি পুরুষ ভ্রুণে কনভার্ট হতে পারেনা। আগেই বলেছি,
জন্মের সময় ভ্রুণের একই টিস্যু থেকে পুরুষ এবং স্ত্রী জননাঙ্গের সৃষ্টি হয়। তারমানে একই অভিন্ন ভ্রুণ কিছু হরমোনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির কারণে পুরুষ ও স্ত্রী নামক আলাদা দুইরকম ভ্রুণে পরিণত হয়।
পুরুষ বা নারী ভ্রুনে তারমানে কি দাঁড়াল?

*পুংভ্রুণে 5-Alpha Reductase হরমোন >Testosteroneকে >
Dihydro-testosterone (DHT) হরমোনে কনভার্ট করলো>DHT পুং বহিঃজননাঙ্গ তৈরি করল।

*আর নারী ভ্রুণে টেস্টোস্টেরনও নেই বা খুব কম থাকায় DHT হরমোনও নেই বা অপ্রতুল। ফলে ভ্রুণটি পুরুষে পরিণত হতে পারল না,নারী হিসেবেই রয়ে গেল।

ধরেন -একজন পুরুষ(XY) ভ্রুণে Testosterone ঠিকই আছে কিন্তু 5-alpha reductase হরমোন নেই বা খুব খুব অল্প মাত্রায় আছে।
তাহলে কি ঘটতে পারে বলেন তো?
উত্তর-
ক্রোমোজোমে SRD5A2 জিনে মিউটেশনের কারণে
5-alpha reductase হরমোন উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে  testosterone হরমোন Dihyro-testosterone(DHT) -এ কনভার্ট হবেনা বা খুব কম মাত্রায় কনভার্ট হবে ।
ফলে, টেস্টোস্টেরন থাকলেও তেমন লাভ নেই।
5-alpha reductase হরমোন না থাকায় বা খুব কম থাকায় - ফলশ্রুতিতে
DHT হরমোন  না উৎপন্ন হতে পারায় ভ্রুণটিতে পুং জননাঙ্গগুলো উৎপন্ন হবে না। আর যদি DHT হরমোন খুব কম পরিমানে থাকে তবে পুং জননাঙ্গগুলো অস্পষ্ট থাকবে। ফলে পুংজননাঙ্গগুলো সুস্পষ্ট না হওয়ায় বা অনুপস্থিত থাকায় এবং স্ত্রী জননাঙ্গগুলোর সদৃশ জননাঙ্গ (প্রকৃত স্ত্রী জননাঙ্গ নয়) উৎপন্ন হওয়ায় ভ্রুণটিকে এবং তা থেকে উৎপন্ন হওয়া বাচ্চা, যে কিনা জেনেটিক্যালি পুরুষ(XY),  তাকে পুরুষ মনে না হয়ে স্ত্রী বলে মনে হবে। আমরা বাহ্যিকভাবে তাকে মেয়ে বলেই মনে করব। কিন্তু আদতে সে জেনেটিক্যালি XY বা পুরুষ। মেয়ে চিহ্নিত হয়েই সে আমাদের সামনে বড় হতে থাকবে।

৭।
কিন্তু যখন বয়ঃসন্ধি কাল উপস্থিত হবে তখন তার শরীরে (তলপেটের অভ্যন্তরীণ আনডেভেলপড টেস্টিস বা শুক্রাশয়ে)টেস্টোস্টেরন নতুন করে বেশিমাত্রায় উৎপন্ন হওয়ায় গুয়েভেডোসেসদের পূর্বের নারী দেহের পরিচায়ক ক্লিটোরিস ধীরে ধীরে পেনিসে রূপ নিবে। আসলে সে ক্লিটোরিসটা আনডেভেলপড পেনিস যাকে আমরা নারীদেহের ক্লিটোরিস (ভগাঙ্কুর) মনে করে আসছিলাম।
মানে যারা এমন মেয়ে হয়ে জন্ম নেয় তারা যে একেবারে ছেলেদের জননাঙ্গের কোনোকিছুর উপস্থিতি ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেন এমনটা নয়। এসব গুয়েভেডোস মেয়েদের তলপেটে জরায়ুর দিকে আনডেভেলপড টেস্টিস থাকে এবং ক্ষুদ্র পেনিস থাকে যেটা স্ত্রী যৌনাঙ্গের বাইরে মাঝেমাঝে বেরিয়ে আসে এবং সে ক্ষুদ্র পেনিসকে ঐ নারীর নিজের কাছেই clitoris(ভগাঙ্কুর) বলে ভ্রম হয়। মানে সে আনডেভেলপড ক্ষুদ্র পেনিসকে নারীর ভগাঙ্কুর বলে মনে হয় কিন্তু আসলে সেটা নারীর কোনো যৌন চিহ্ন নয়। ওটাও পেনিস তবে খুব ক্ষুদ্র ও আনডেভেলপড থাকায় তাকে ভগাঙ্কুর বলে মনে হয়।
মানে বয়ঃসন্ধির সময় পূর্বের আনডেভেলপড পেনিস(ক্লিটোরিস)এবং শুক্রাশয় নতুন করে ডেভেলপড হতে শুরু করবে এবং দেহের বাইরে পেনিস ও শুক্রাশয় দৃশ্যমান হতে থাকবে এবং শরীরে পুরুষের মত পেশি হবে,ভয়েস ছেলেদের মত মোটা হবে ইত্যাদি।
তবে, গুয়েভেডোসদের জন্মের পর হরমোনের মাত্রার পরিমাণের ভিন্নতার উপর এদের যৌনাঙ্গ তিন রকমের হতে পারে-
১। তাদের পুরুষদের মত স্বাভাবিক যৌনাঙ্গ থাকতে পারে।
২। তাদের পুরুষ ও স্ত্রীর যৌনাঙ্গের মাঝামাঝি (সংমিশ্রিত) বা অস্পষ্ট যৌনাঙ্গ থাকতে পারে।
৩। তাদের নারীদের মত স্বাভাবিক যৌনাঙ্গ থাকতে পারে।

কিন্তু তাদের যৌনাঙ্গ যেরকমই থাকুক না কেন গুয়েভেডোসদের ক্রোমোজোম সবসময় XY হবে কিন্তু বাহ্যিক প্রকাশে নারী বলেই মনে হবে।
২নং অবস্থাটা সচরাচর বেশি দেখা যায়। মানে অস্পষ্ট জননাঙ্গ থাকে সাধারণত।
সো,বলা যায়

*গুয়েভেডোসদের নারী যৌনাঙ্গরূপী প্রশস্ত ক্লিটোরিস = প্রকৃতপক্ষে পুরুষের আনডেভেলপড পেনিস

*গুয়েভেডোসদের নারী যৌনাঙ্গরূপী যোনিছিদ্রের
দুইপাশের দুটি মাংসল ভাজ (লেবিয়া মেজোরা) এবং দুই দিকে ভাগ হওয়া যোনি ছিদ্রপথ = প্রকৃতপক্ষে পুরুষের দুইভাগে বিদীর্ণ হওয়া অন্ডথলি যাকে bifid scrotum বলে। সাধারণ পুরুষের অন্ডথলি দুইভাগে বিদীর্ণ(bifid) থাকে না।

অন্ডথলি এভাবে দুইভাগে বিদীর্ণ থাকায় সেটাকে নারীর যোনিছিদ্রের দুইপাশের দুটি মাংসল ভাজ(লেবিয়া মেজোরা) বলে ভ্রম হয় ও বিদীর্ন অন্ডথলির মাঝের ছিদ্রপথকে যোনি ছিদ্রপথ বলে ভ্রম হয়। আসলে সেটা তো পুরুষের আনডেভেলপড অন্ডথলি বা শুক্রাশয়।বিদীর্ণ থাকায় তাকে স্ত্রী যৌনাঙ্গের অংশ বলে মনে হয়।
এ যৌন বৈচিত্র্য অবস্থাকে গুয়েভেডোসেস
Güevedoce /Guevedoces
বলে যার আরেক নাম 5 আলফা রিডাকটেস ডেফিসিয়েন্সি। [9]


৮।
আমরা জানি পুরুষের Y ক্রোমোসোম থাকে।
Y chromosome-এ থাকা একটি জিন
৭ সপ্তাহ বা ৪২ দিনের এক ইনডিফ্রেন্ট স্টেজে থাকা ভ্রুণের আনডেভেলপড গোনাডকে শুক্রাশয়ে ধীরে ধীরে রূপান্তর করে। আর সে শুক্রাশয় পুরুষ হরমোনগুলো উৎপাদন শুরু করে। এসব হরমোনদের মধ্যে টেস্টোস্টেরন এবং
Mullerian-inhibiting substance পুরুষের অভ্যন্তরীণ জননতন্ত্রের বিকাশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
টেস্টোস্টেরন পুরুষের অন্ডথলির ভেতরের জনন নল (এপিডাইমিসিস এবং ভাস ডিফারেন্স) তৈরিতে বা বিকাশে ভূমিকা রাখে।
Mullerian-inhibiting substance
পুং ভ্রুণটিতে নারীর জননাঙ্গ যেমন ফেলোপিয়ান টিউব এবং জননাঙ্গের ভেতরের অঙ্গ তৈরিতে বাধা দেয়। ফলে ভ্রুণটি নারীতে রূপান্তরিত হতে পারে না এবং পুরুষে রূপান্তরিত হয়।
টেস্টোস্টেরন পুরুষদের যৌনাঙ্গের ভেতরের অঙ্গগুলো তৈরিতে সরাসরি কাজ করে।
পুরুষের যৌনাঙ্গ বলতে কিন্তু শুধু পেনিস আর অন্ডথলি বুঝায় না। এ দুটো হলো বাহ্যিক পুরুষ যৌনাঙ্গ। এ ছাড়াও দেহের ভেতরে তলপেটের দিকে অভ্যন্তরীণ পুরুষ যৌনাঙ্গের অংশও থাকে
(যেমন প্রস্টেট,সেমিনাল ভ্যাসিকল,মেসোনফ্রিক ডাক্ট,ভাস ডিফারেন্স, এপিডাইমিসিস ইত্যাদি)
যেহেতু গুয়েভেডোস বেবিদের জন্মের আগে ভ্রুণ থাকাবস্থায় শুক্রাশয় থেকে এন্টি মুলারিয়ান হরমোন/Müllerian inhibiting factor উৎপন্ন হয় তাই গুয়েভেডোসদের যাদের নারী বলে মনে করে থাকেন তাদের দেহের তলপেটের ভেতরে সুস্পষ্ট যোনি,জরায়ু এবং ফেলোপিয়ান টিউব থাকে না।
ফলে, এসব বাহ্যিকভাবে দৃশ্যমান নারী গর্ভধারণ করতে পারে না। কারণ গর্ভধারণ করতে যা যা আবশ্যক যেমন -জরায়ু,ফেলোপিয়ান নালী,ডিম্বাশয় এসব থাকে না। বরং এসবের পরিবর্তে দেহের ভেতর (তলপেটে) অভ্যন্তরীণ টেস্টিস এবং The mesonephric duct বা, Wolffian duct থাকে যা পুরুষ জননাঙ্গের অংশ
যা বাইরে থেকে দেখা যায়না বিধায় মেয়ে বলেই মনে হবে ছেলেটিকে।
Guevedoce দের সাধারণত পুরুষদের মতো ক্ষুদ্র প্রোস্টেটও থাকে।
ডোমিনিকান রিপাবলিকে এটা খুব কমন ঘটনা। তাদের দেশে এ কারণে তিনরকম সেক্সুয়াল ক্যাটাগরি আছে:
* পুরুষ,
* মহিলা,
* সিউডো-হারমোফ্রোডাইট বা গুয়েভেডোসেস
আসলে ক্রোমাসোমগত দিক দিয়ে গুয়েভেডোসরা কিন্তু পুরুষ। শুধু কেবল তো 5-alpha reductase অ্যানজাইমটির অকার্যকারিতায় তার দেহে পুরুষ বৈশিষ্ট্যগুলো অনুপস্থিত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে বাহ্যিভাবে দৃশ্যমান মেয়ের(ক্রোমাসোমগত ভাবে ছেলে) জননাঙ্গের ভেতরের দিকে তখনও কিছু পুরুষ জননাঙ্গ তৈরি হয়ে থাকে যা পরবর্তীতে ডেভেলপড হয়ে পুরুষ লিঙ্গ বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলতে পারে বা পূর্ণাঙ্গ পুরুষ হিসেবে কাউকে গড়ে তুলতে পারে।
বয়ঃসন্ধির সময় পুরুষ যৌন হরমোনের কার্যকারিতা বা activeness এর প্রতি দেহ রেসপন্স দেয়। এ হরমোনের কারণে
সেই ক্ষুদ্র আনডেভেলপড পেনিস এবং শুক্রাশয়-ই ডেভেলপড হয়ে ঐ কথিত বাহ্যিকভাবে দৃশ্যমান মেয়ের দেহে পুরুষের যৌনাঙ্গ হাজির করে এবং সে মেয়ের দেহে পুরুষ যৌনাঙ্গের আবির্ভাব ঘটিয়ে সে মেয়েকে পুরুষে পরিণত করে।
যেহেতু গুয়েভেডোসদের দেহে টেস্টোস্টেরন ঠিকই থাকে তাই সে গুয়েভেডোসদের দেহের ভেতরে তলপেটের দিকে অভ্যন্তরীণ পুরুষ যৌনাঙ্গ উপস্থিত থাকে যা পরবর্তীতে বয়ঃসন্ধির সময় বাহ্যিক পুরুষ যৌনাঙ্গে (পেনিস,শুক্রাশয়)রূপান্তরিত হয়।বয়ঃসন্ধির সময় গুয়েভেডোসদের দেহের ভেতরে তলপেটের দিকে থাকা গুপ্ত শুক্রাশয় প্রচুর পরিমাণে টেস্টোস্টেরন উৎপাদন করা শুরু করে যা ঐ গুয়েভেডোসকে পুরুষে রূপান্তরিত করে।

৯।
আর মনে রাখবেন টেস্টোস্টেরন থেকে উৎপন্ন হওয়া ডিহাইড্রো-টেস্টোস্টেরন পুরুষদের দেহের বাইরের জননাঙ্গ যেমন পেনিস,অন্ডথলি এসব তৈরিতে প্রধান ভূমিকা রাখে।
যেহেতু গুয়েভেডোসদের টেস্টোস্টেরন ডিহাইড্রো-টেস্টোস্টেরনে কনভার্ট হয় না ফলে গুয়েভেডোসদের দেহের বাইরে জন্মের পর দৃশ্যমান কোনো বাহ্যিক স্পষ্ট পুরুষ যৌনাঙ্গ দৃশ্যমান হয় না বা দৃশ্যমান হলেও খুব অস্পষ্ট থাকে যার ফলে বাচ্চাটি ছেলে নাকি মেয়ে তা নির্ণয় করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।
কিন্তু যেহেতু বাচ্চাটির দেহে বয়ঃসন্ধির আগে পুরুষের কোনো পরিচয় ফুটে উঠে না বলে সে বাচ্চাটি অস্পষ্ট যৌনাঙ্গ নিয়ে জন্ম নিলেও তাকে আমরা মেয়ে বলেই মেনে নেই। কিন্তু বয়ঃসন্ধিতে এসে সে কথিত মেয়ে বাচ্চাটি ছেলেতে কনভার্ট হতে শুরু করে এবং তার দেহে পূর্বের সেই অস্পষ্ট পুরুষ যৌনাঙ্গ ধীরে ধীরে স্পষ্ট বাহ্যিক পুরুষ যৌনাঙ্গে কনভার্ট হয়ে যায়, দেহে পুরুষ বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠে এবং পুরুষ বলে আমরা তাকে মেনে নিতে বাধ্য হই।
তাছাড়া সে সকল পুরুষ স্পেসিফিক হরমোন ঐ নারীর দেহে ছেলেদের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য যেমন -ভারি কন্ঠ, মুখে দাড়ি,গোফ,মাসল এসবের আবির্ভাব ঘটায় ও আস্তে আস্তে সে নারীকে পূর্ণাঙ্গ পুরুষে পরিণত করতে থাকে এবং আমরা পূর্বের নারীকে পুরুষে পরিণত হতে দেখে অবাক হই, হইচই করি কিংবা অনেক সময় তাকে অভিশাপের ফসল বলে মনে করে করে তার নামে দুর্নাম রটাই যা চরম অমানবিক কাজ।
১৯৭০সালে কর্ণেল ইউনিভার্সিটির রিসার্চারের প্রথম অবজারভেশনে প্রতি ৯০টি শিশুর মাঝে ১টি শিশুর এরকম গুয়েভেডোস হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।[10]

১০।
AIS:
(Androgen Insensitivity Syndrome)
আরেকটা এরকম সেক্স ডিজঅর্ডার আছে যাকে বলে Androgen Insensitivity Syndrome.
কিছু সময় সন্তানের লিঙ্গ এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য মেয়েদের মতো হলেও তার জেনেটিক সেক্স হয় ‘XY’ অর্থাৎ, ছেলেদের মতো! এই সমস্যা হয় টেস্টিকুলার ফেমিনাইজেশান হলে বা,Androgen insensitivity syndrome (AIS)।
[11]
এদের সেক্স ক্রোমোজম XY কিন্তু বহিঃজননাঙ্গ পুরোপুরি মেয়েদের মত অথবা অস্পষ্ট থাকে। জড়ায়ু কখনো থাকে বা নাও থাকতে পারে কিন্তু অভ্যন্তরীণ শুক্রাশয় তলপেটের মধ্যে তৈরি হয়। চিকিৎসাশাস্ত্রে একে 46 XY DSD বলা হয় (Male pseudoharmaphrodite)।
এর অনেকগুলো কারণ আছে, তন্মধ্যে ছেলে হরমোনের(টেস্টোস্টেরন) প্রতি শরীরের/ জননাঙ্গের কম আসক্তি বা সাড়া প্রদান (Androgen insensitivity syndrome – AIS) অন্যতম।
জানা আছে কি ১৯৮৮ অলিম্পিকের সে ঘটনা?
মারিয়া প্যাতিনো( María José Martínez-Patiño)
নামক স্পেনিশ অলিম্পিয়ান
বাহ্যিভাবে দেখতে যে কিনা পূর্নাঙ্গ মেয়ে সে অলিম্পিক প্রতিযোগীর সেক্স ক্রোমোজোমে পুরুষের xy ক্রোমোজোম থাকায় সে খেলা থেকে বাতিল হয়ে যান। এছাড়া ২০০৬ সালে কাতারের এশিয়া গেইমসের ভারতের সাথীর ঘটনা।
এইরকম ঘটনা আরো আছে।[12]
এতে কোনো দেহে পুরুষ ক্রোমোজোম( XY) ও পুরুষের হরমোন (টেস্টোস্টেরন) থাকলেও সে মানুষটি নারী হিসেবেই নারীর দেহ নিয়ে বড় হয় এবং আজীবন বাহ্যিকভাবে নারী পরিচয়েই বড় হন ।
আমরা জানি কোনো ভ্রুণকে পুরুষে পরিণত করতে টেস্টোস্টেরনের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
পুরুষের সেক্স বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটিয়ে তুলতে টেস্টোস্টেরনকে প্রধান দায়ী হরমোন হিসেবে বলা হয়। এ হরমোনের অভাবে বা খুব কম পরিমাণে থাকায় কোনো ভ্রুণ পুরুষ ভ্রুণে পরিণত হতে পারে না এবং এ হরমোনের অভাবে কোনো ভ্রুণ নারী ভ্রুণে পরিণত হয়।
ধরেন,কোনো একটি ভ্রুন জেনেটিক্যালি পুরুষ। মানে তার প্রতি কোষে XY ক্রোমোজোম উপস্থিত। এখন সে ভ্রুণকে বাহ্যিকভাবে পুরুষের পরিচয়ে ফুটিয়ে তুলতে টেস্টোস্টেরন হরমোন প্রয়োজন। কিন্তু অনেক সময় সে পুরুষ দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদন হলেও সে হরমোনের প্রতি অনেক সময় x ক্রোমোজোমে জিনগত ত্রুটির কারণে ঐ দেহটা সাড়া দেয় না। মানে এন্ড্রোজেন রিসেপ্টর নিষ্ক্রিয় থাকে।টেস্টোস্টেরন এক প্রকার এন্ড্রোজেন হরমোন।
তখন সে দেহটা জেনেটিক্যালি পুরুষ হলেও নারী হিসেবে জন্ম নেয়। কারণ টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রতি সে পুরুষের দেহ সংবেদনহীন।
সে পৃৃথিবীতে নারী পরিচয় ও নারীর যৌনাঙ্গ নিয়েই বেড়ে উঠতে থাকে কিন্তু তার দেহের প্রতিটা কোষ পুরুষের XY ক্রোমোজোম বহন করে। ফলে সে নারী যদি কোথাও ক্রোমোজোম টেস্ট দেয় তবে জালিয়াত বলে প্রমাণিত হবে যেমনটা হয়েছিল ১৯৮৮সালের সিউল অলিম্পিকে।
কিন্তু সে মানুষটির কিন্তু কিছুই করার থাকে না।
সে নিজেই নিজের প্রতি বিস্মিত থাকে, পরিচয়হীনতায় ভুগে।
কারণ প্রথমত বাহ্যিক দেহ ও পরে ক্রোমোজোম দ্বারাই আমরা নারী পুরুষ পরিচয় নিয়ে অভ্যস্ত।
কিন্তু সে জেনেটিক্যালি পুরুষ হলেও সে কিন্তু বাইরে থেকে দেখতে নারী। নারীর দেহের সকল অঙ্গই তার মাঝে দৃশ্যমান। তাহলে কেমনে কী!!

১১।
বুঝলেন তো, কাউকে নারী ও পুরুষ হিসেবে পরিচিত করাটার মানদন্ড বা একক কতটা বিতর্কিত?
তবে এরা গুয়েভেডোসেসদের মত পুরুষ যৌনাঙ্গ লাভ করে না। কারণ টেস্টোস্টেরনের প্রতি এদের দেহ সংবেদনহীন। তবে এসব কথিত নারী দেহের যৌনাঙ্গের ভেতরে গুয়েভেডোসদের মত অভ্যন্তরীণ আনডেভেলপড শুক্রাশয় থাকতে পারে। কিন্তু সে শুক্রাশয় টেস্টোস্টেরনের প্রতি ঐ দেহের সংবেদনহীনতার কারণে ডেভেলপড হয়না এবং বয়ঃসন্ধির সময় আবির্ভূত হয় না।
তবে কোনো কৃত্রিম উপায়(যেমন হরমোন থেরাপি) এর মাধ্যমে যদি এদের দেহকে টেস্টোস্টেরনের প্রতি সংবেদনহীনতা থেকে সংবেদনশীলতায় কনভার্ট করা যায় তবে এরাও গুয়েভেডোসদের মত নারী থেকে পুরুষে কনভার্ট হয়ে যাবে।
এদের প্রকৃত পরিচয় যদি কখনো প্রকাশিত হয় তবে আমাদের কাছে সংবাদটা এভাবে ভাইরাল হয় যে- "মেয়ে থেকে ছেলে হয়ে গেল অমুক,তমুক"
গুয়েভেডোসদের টেস্টিসে যথেষ্ট পরিমাণ বীর্য উৎপাদন হতে পারে এবং তা দিয়ে সন্তান উৎপাদন করা যেতে পারে। তবে সে বীর্য দিয়ে পুরুষে রূপান্তরিত গুয়েভেডোসরা ইন্টারকোর্সের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানে জটিলতাতেও পড়তে পারেন। কারণ বীর্য বের হয় মূত্রনালী দ্বারা। আর মূত্রনালী থাকে পুরুষের শিশ্নের ভেতরে। কিন্তু সে মূত্রনালী গুয়েভেডোসদের শিশ্নের ভেতরে না থাকতেও পারে। বরং সে মূত্রনালী পায়ুনালীর উপরে থাকতে পারে
মানে শিশ্নের ভেতরে মূত্রনালী না থাকতেও পারে। [13]
হাইপোথিসিস আছে যে, বয়ঃসন্ধির সময় এডাল্ট গুয়েভেডোসদের লিভার, নন জেনিটাল স্কিস এবং ব্রেইনের কিছু অংশে থাকা 5α-reductase type I অ্যানজাইম অথবা টেস্টিসে থাকা খুব স্বল্প মাত্রার 5α-reductase type II অ্যানজাইমকে বয়ঃসন্ধিতে বর্ধীয়মান টেস্টোস্টেরন হরমোন DHT হরমোনে কনভার্ট করে দেয় ফলে বয়:সন্ধির সময় গুয়েভেডোসদের যৌনাঙ্গ পুরুষ যৌনাঙ্গে কনভার্ট হয়।[9]
অনেকেই নতুন করে শুক্রাশয় ও পেনিস আবির্ভূত হওয়ার পর সেটা মেনে নেন না এবং পূর্বের নারীর রূপেই থাকতে চান(যদিও জেনেটিক্যালি ছেলে ওনি)।
ফলে মেয়ে হয়ে থাকার কামনায় নতুন করে উদ্ভূত শুক্রাশয় ও পেনিসকে সেক্স রিএসাইনমেন্ট সার্জারি করে সরিয়ে ফেলেন। আবার অনেকেই সেটা স্বাচ্ছন্দ্যে মেনে নেন এবং পূর্বের মেয়ে জেন্ডার বাদ দিয়ে ছেলের জেন্ডার পরিচয়ে নিজেকে সমাজে গড়ে তুলেন এবং বাকিটা জীবন সেভাবেই কাটিয়ে দেন।

১৩।
**প্রাণীজগতে লিঙ্গ পরিবর্তন**
বিজ্ঞানীরা প্রাণিজগতেও এমন লিঙ্গ পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন।
উত্তর আমেরিকার সমুদ্রোপুকূলে আটলাণ্টিক স্লিপার শেল (Atlantic Slipper Shell) নামে পরিচিত ক্রিপিডুলা ফরমিক্যাটা (Crepidula Fornicata) এবং ল্যাবারিডেস ডিমিডিয়াটাস (Laborides dimidiatus), ইউরোপিয়ান ফ্লে অয়েস্টার (European Flay Oyster) ও অস্ট্রা এডুলিস (Ostrea edulis) প্রজাতির ঝিনুকের মধ্যে লিঙ্গপরিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া গেছে ।
তাছাড়া Clownfish,wrasses,moray eels,gobies ইত্যাদি মাছ ও প্রাণীদের মাঝে এটা কমন ঘটনা।মুরগির মাঝেও এমনটা আছে।
যৌনতার পরিবর্তন ঘটে মাছি, কেঁচো, মাকড়শা এবং জলজ ফ্লি ডাফনিয়াদের বিভিন্ন প্রজাতিরে মধ্যেও । লিঙ্গ পরিবর্তনকারী মাছের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কোরাল রিফে (প্রবালের খাঁজ) বসবাসকারী গ্রুপার মাছ। এ গ্রুপার মাছ প্রথমে স্ত্রী হিসেবে জন্মগ্রহণ করে ও পরিপক্কতা লাভ করে এবং এক বা একাধিকবার প্রজননে অংশ নেয়। এসব স্ত্রী মাছ পরে লিঙ্গ পরিবর্তন করে পুরুষ মাছে রূপান্তরিত হয় এবং সক্রিয় পুরুষ মাছ হিসেবে প্রজননে অংশগ্রহণ করে।
জন্মগতভাবে সকল ক্লাউনফিশ পুরুষ, কিন্তু দলের সবচেয়ে বড় আকারের মাছটি নারী মাছে রূপান্তরিত হয়। ভেটকি বা কোরাল মাছও লিঙ্গ পরিবর্তন করে।[14]

তথ্যসূত্র:
1.[ https://en.wikipedia.org/wiki/
XX_male_syndrome ]( https://en.wikipedia.org/wiki/XX_male_syndrome )
2.[ https://en.wikipedia.org/wiki/
XY_gonadal_dysgenesis ]( https://en.wikipedia.org
/wiki/XY_gonadal_dysgenesis )
3.[ https://ghr.nlm.nih.gov/condition/swyer-syndrome#sourcesforpage ]( https://
ghr.nlm.nih.gov/condition/swyer-syndrome#s
ourcesforpage )
4.সেলিমের ঘটনা-
[ https://www.bangla.24livenewspaper.com/
exception/58467-hena-being-boy-from-girl ]( https://www.bangla.24livenewspaper.com/
exception/58467-hena-being-boy-from-girl )
5.[ https://www.banglanews24.com/national/
news/bd/258215.details ]( https://
www.banglanews24.com/national/news/bd/
258215.details )
6.[ https://en.m.wikipedia.org/wiki/Güevedoce ]( https://en.m.wikipedia.org/wiki/Güevedoce )
7.[ https://www.bbc.com/news/
magazine-34290981 ]( https://www.bbc.com/
news/magazine-34290981 )
8.[ https://www.google.com/amp/s/
www.independent.co.uk/life-style/health-and-families/health-news/guevedoces-the-girls-who-grow-penises-at-the-age-of-12-10510919.html%3famp ]( https://www.google.com/amp/s/
www.independent.co.uk/life-style/health-and-families/health-news/guevedoces-the-girls-who-grow-penises-at-the-age-of-12-10510919.html%3famp )
9.[ https://en.wikipedia.org/wiki/5α-Reductase_deficiency ]( https://en.wikipedia.org/wiki/5α-Reductase_deficiency )
10.[ https://www.washingtonpost.com/news/
morning-mix/wp/2015/09/22/the-mysterious-v
illage-where-girls-turn-into-boys/ ]( https://
www.washingtonpost.com/news/morning-mix/wp/2015/09/22/the-mysterious-village-where-gi
rls-turn-into-boys/ )
11.[ https://en.wikipedia.org/wiki/
Androgen_insensitivity_syndrome ]( https://
en.wikipedia.org/wiki/Androgen_insensi
tivity_syndrome )
12.[ https://www.buzzfeednews.com/article/
azeenghorayshi/sex-testing-olympians ]( https://
www.buzzfeednews.com/article/azeenghorayshi/
sex-testing-olympians )
13.[ https://www.sciencedirect.com/topics/
medicine-and-dentistry/pseudohermaphroditism ]( https://www.sciencedirect.com/topics/
medicine-and-dentistry/pseudohermaphroditism )
14.[ https://en.wikipedia.org/wiki/Sex_change ]( https://en.wikipedia.org/wiki/Sex_change )

Writer: Abu Rayhan

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম