ভুতুড়ে


[১]
ঘটনা ১ঃ
অফিসে বসে আছেন আপনি। মাথায় চিন্তাভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছে। দুনিয়ার নানান রকমের চিন্তা। ঘরে ঘরঘর কিংবা ভুনভুন (যেটাই হোক) শব্দে ফ্যান ঘুরছে, ফ্যান বেশি জোরে ঘুরছে না, আস্তেও ঘুরছে না। রাত হয়ে গিয়েছে, হঠাৎ কোনো অজানা কারণে আপনার শরীরটা শিউরে উঠলো, গতকাল রাতেই Bhoot FM শুনেছেন। একজনের গল্প হঠাৎ মনে পড়ে গিয়ে এক অজানা ভয় আপনাকে জেঁকে বসলো। মনে হলো, সেই গল্পের ভূতটা যদি এখন আপনার সামনে এসে হাজির হয়? তাহলে কেমন হবে?
যখন আপনি এ সমস্ত চিন্তা ভাবনা করছেন, তখন হঠাৎ চোখ চলে গেলো ঘরের এক কোণে, আর আপনি ফ্রিজ হয়ে গেলেন। আপনি আবিষ্কার করলেন কালকের Bhoot FM এর সেই ভুত আপনাকে সত্যি সত্যি দেখা দিয়েছে। দেখতে পেলেন একটা ছায়ামূর্তি, বোধহয় আপনার দিকেই তাকিয়ে আছে।
দাঁড়ান দাঁড়ান, অজ্ঞান হবেন না, অজ্ঞান হওয়ার আগে আরেকটা ঘটনা শুনে যান।

ঘটনা ২ঃ
আন্ডারগ্রাউন্ড রাস্তাটি একটি বড় রাস্তার নিচ দিয়ে তার এ পাড় থেকে ও পাড়ে চলে গিয়েছে। অতিশয় ভদ্র পথচারীদের যেন রাস্তা পারাপারের সময় কোনো গাড়ি ডিস্টার্ব না করতে পারে তারই একটা ব্যবস্থা এই আন্ডারগ্রাউন্ড। আপনার খুব কাছের এবং প্রাণের দোস্ত মিস্টার বল্টু, রাস্তা পার হচ্ছেন এই আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে। আর মনে মনে যত দোয়া দরূদ পারেন আওড়াচ্ছেন, কেননা ভুতুড়ে আন্ডারগ্রাউন্ড হিসেবে পরিচিত এই রাস্তাটি।
কিন্তু দোয়া দরূদে তেমন কাজ হলো না। তিনি দেখতে পেলেন তার সামনে একটা ছায়ামূর্তি। যেহেতু আপনার প্রানের দোস্ত আপনার মত অসীম সাহসী লোক নন, সেহেতু তিনি সেখানেই মূর্ছা গেলেন। ফলে ছিনতাইকারীরা খুব আরামের সাথে তাদের সুযোগের সদ্ব্যবহার করলেন।

ঘটনা ৩ঃ
১৯৮০ সাল। গবেষক ভিক ট্যান্ডি (Vic Tandy) এক রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে কাজ করছিলেন। হঠাৎ তার মনে হলো, তিনি সেই রুমে একা নন। কেউ বা কিছু একটা তার সাথে রয়েছে। হঠাৎ তিনি চোখ তুলে দেখতে পেলেন, টেবিলের পাশে একটা অশরীরী ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। যেহেতু তিনিও আপনার মত অসীম সাহসের অধিকারী নন, তাই তিনি এক লাফে ল্যাবরেটরি পেরিয়ে তার বাড়িতে চলে গেলেন। তার মাথায় চলছে হাজারো চিন্তা। কেনো তিনজন লোক, মানে আপনি, আপনার দোস্ত বল্টু, আর তিনি নিজে একই ছায়ামূর্তি বারবার দেখছেন? উত্তর টা ভেবেই তিনি শিউরে উঠলেন, ভূতটা কি তাহলে আপনাদের ঘাড় মটকানোর জন্য আপনাদের পিছনে লেগেছে?
পরদিন, তিনি ল্যাবরেটরিতে গেলেন। ল্যাবরেটরিতে তার ফেন্সিং (Fencing) খেলার তলোয়ারটা পরিষ্কার করতে গিয়ে হঠাৎ দেখলেন, তলোয়ারটা আপনা আপনিই কাঁপছে। তিনি হঠাৎ বুঝতে পারলেন, এই ঘরে এমন কোনো শব্দ সৃষ্টি হচ্ছে, যা তিনি শুনতে পাচ্ছেন না কিন্তু এই তলোয়ারটিকে কাঁপাচ্ছে। তখন তিনি খোঁজ নিয়ে দেখলেন, এই শব্দটা আসছে একটা ফ্যান থেকে, তিনি পরীক্ষা করে দেখলেন, সেই শব্দের ফ্রিকুয়েন্সি 19Hz। অর্থাৎ এটা একটা ইনফ্রাসাউন্ড (Infrasound)। মানুষের শ্রব্যতার সীমা 20 Hz থেকে 20,000 Hz পর্যন্ত, কিন্তু ফ্যান থেকে আসা সাউন্ডটা 19 Hz এর, তাই তিনি এ শব্দ শুনতে পারেন না ঠিকই, দেখতে ঠিকই পারেন- ভুতুড়ে সব ছায়ামূর্তি।
এ ধরণের ইনফ্রাসাউন্ড মানুষের মনের ওপর অনেকটাই প্রভাব বিস্তার করতে পারে, এর কারণে মানুষ বিষন্নতায় ভুগতে পারে, খুব খুশির চোটে হঠাৎ লাফিয়ে ড্যান্স করা শুরু করে দিতে পারে, আবার Bhoot FM এর গল্পের ভান্ডার বড় করার জন্য অশরীরিও দেখে ফেলতে পারে।

এখন কথা হচ্ছে, এ ধরণের ইনফ্রাসাউন্ড উৎপন্ন হয় কোথা থেকে?
ইনফ্রাসাউন্ডের কম্পাঙ্ক যেহেতু কম তাই এই রকমের সাউন্ড বিভিন্ন জিনিষ থেকেই আসতে পারে, যেমন ঝড়ো হাওয়ার কারণে উৎপন্ন হতে পারে (ভুত দেখার পারফেক্ট সময়), আন্ডারগ্রাউন্ডের ভেতর ওপরের গাড়ি চলাচলের কারণে ইনফ্রাসাউন্ড সৃষ্টি হতে পারে (ভুত দেখার পারফেক্ট জায়গা ও ছিনতাইকারীদের স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী সাউন্ড), ফ্যানের ঘূর্ণন, এমনকি আসবাবপত্র থেকেও আসতে পারে এ ধরণের সাউন্ড।
কিন্তু কথা তো আরো আছে, কেনো আপনারা মানুষের মতো দেখতেই ছায়ামূর্তি দেখতে পেলেন? চেয়ার, টেবিল, ফ্যান, এগুলো কেনো নয়? উত্তর হচ্ছে, আপনি Bhoot FM শুনে শুনে জেনে গিয়েছেন, যে ভুতগুলো মানুষকে দেখা দেয়, তারা আসলে মানুষেরই অতৃপ্ত আত্মা, কাজেই তারা মানুষের রূপ ধরেই আসবে। আবার ছোটবেলা থেকে দাদা দাদির দৌলতে কত রকমের ডাইনি, পিশাচ, শাকচুন্নি আরো কত পদের ভুতের কথা জেনেছেন, খেয়াল করে দেখুন, তাদের মোটামুটি সবার আকৃতিই মানুষের মতো। কাজেই এতদিন ধরে এসব শুনতে শুনতে আপনার ধারণা হয়ে গেছে যে যদি কিছু দেখা দেয়ও, তারা মানুষের অবয়বেই আসবে। তাই মস্তিস্ক যখন মনের ভেতর এসব তৈরি করে, তখন মানুষের অবয়বেই তৈরি করে।

[২]
আপনি ঘুমিয়ে আছেন। বেশ আরামের ঘুম দিয়েছেন। স্বপ্নে গার্লফ্রেন্ড/
বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিচ্ছেন। হঠাৎ আপনার ঘুম ভেঙে গেলো। আর তখন যা দেখতে পেলেন, তা দেখার জন্য আপনি প্রস্তুত ছিলেন না (কেউই প্রস্তুত থাকে না রে Bhoot FM এর ব্রাদার্স রা, এবার একটু অন্য ডায়ালগ ছাড়েন)।
আপনি দেখতে পেলেন, কোনো এক অশরীরি, কিংবা শরীরি, সে যাই হোক, আপনার ওপর বসে আপনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার চোখ লাল, চোখ দিয়ে রক্ত পড়ছে, ভয়ংকর চেহারা, ব্লা ব্লা আরো অনেক কিছু। ভয়ে আপনি শ্যাষ। আপনার প্রাণপনে দৌড় লাগাতে ইচ্ছা হলো, কিন্তু হায়, আপনি হাত নাড়াতে পারছেন না, পা নাড়াতে পারছেন না, আপনার পুরো শরীর অবশ হয়ে গিয়েছে। আপনি ভয়ে ঘেমে একাকার। অশরীরিটি যাচ্ছে না। এক সময় অশরীরিটি মিলিয়ে যেতে শুরু করলো। আস্তে আস্তে আপনি শরীরে বল ফিরে পেলেন। প্রচন্ড ভয়ে তারপরেও আপনি নড়াচড়া করতে পারছেন না।
ঘটেছে কি এমন কখনো আপনার সাথে? যদি ঘটে থাকে, তাহলে "আমার সাথেই কেন এমন হয়" বলে চিল্লাফাল্লা করবেন না। আপনিই একা নন যার সাথে এমনটি হয়। এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যারা ঘুমের মধ্যে হঠাৎ জেগে উঠেছেন এবং তার পাশে দুই-চারজন জ্বীন পরী বসে থাকতে দেখেছেন।
এবার আসি আসল কথায়। এই বিষয়টাকে বলা হয় স্লিপ প্যারালাইসিস (Sleep Paralysis)। এটি মূলত ঘটে যখন, আপনি গভীর ঘুমে রয়েছেন, কোনো কারণে যদি আপনার শরীর জেগে ওঠার আগেই আপনার মস্তিস্ক পুরোপুরি জেগে ওঠে, তখন। আপনার মস্তিস্ক যখন বুঝতে পারে যে আপনার শরীর এখনো জেগে ওঠেনি, তখনই শুরু হয় হ্যালুসিনেশন। তখন আপনার মস্তিস্ক আপনার মনের ভেতর একে একে জ্বিন, পরী শয়তান, অশরীরি সব আনতে থাকে।
আর শরীর অবশ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা? আসলে সত্যি কথা বলতে ঘুমের সময় আপনি কখনোই ইচ্ছে করে শরীর নাড়াতে পারবেন না (বিশ্বাস না হলে চেষ্টা করে দেখতে পারেন )। মস্তিস্ক তার শরীরকে নিরাপত্তার খাতিরেই ঘুমের সময় অবশ করে রাখে, যাতে আপনি ও আপনার পাশে যিনি শুয়ে আছেন, দুইজনই নিরাপদ থাকেন। কাজেই খুব স্বাভাবিক কারণেই আপনি শয়তান দেখার মুহূর্তে শরীর নাড়াতে পারেন না। কেননা শরীর যে তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।

একটি সত্যি ভুতের গল্প

এই ঘটনাটি যিনি প্রকাশ করেন, তিনি তার সময়ের একজন অন্যতম শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি ছিলেন। ডাঃ উইলিয়াম উইলমার (Dr. William Wilmer), যিনি সে সময়ের সেরা উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদেরও চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ফ্র‍্যাঙ্কলিন রুজভেল্ট-ও। এই অত্যন্ত উচ্চ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ডাক্তার যখন আমেরিকান জার্নালে এক ভুতের গল্প প্রকাশ করলেন তখন সকলেই রীতিমতো অবাক হয়ে গিয়েছিলো।
ঘটনাটি তার এক পেশেন্টের, নাম প্রকাশ না করার অনুরোধের জন্য ডাঃ উইলমার তার পেশেন্টের সত্যিকার নাম না লিখে "মিসেস এইচ (Mrs. H)" নাম লিখেছিলেন।
১৯১২ সালে, এইচ পরিবার, একটি পুরোনো বাড়িতে ওঠেন। ১৮৭০ সালের দিকে তৈরি করা বিরাট একটি বাড়ি। বাড়িটি ছিলো পরিত্যক্ত, বহুদিন সেটায় কোনো মানুষজন নেই, তাই বাড়িটি মেরামতও করা হয়নি বহুদিন।
নির্জন স্থানে না থাকলেও বাইরের কোনো শব্দ বাড়িটির ভেতরে যেত না বাড়ির ডিজাইনের কারণে এবং সর্বত্র কার্পেট থাকার কারণে। তাই ভেতর থেকে বেশ ভুতুড়ে বলেই মনে হতো। রাতের বেলা তারা গ্যাসের বাতি, এবং বেসমেন্টে থাকা এক চুল্লির দ্বারা আলো ও তাপ পেতো।
সে বাড়িতে ওঠার কিছুদিনের ভেতরেই তারা (মিস্টার ও মিসেস এইচ) বিষন্নতায় ভুগতে থাকেন।
একদিন সকালে হঠাৎ মিসেস এইচ তার ওপরের তলার ঘরে কারোর হাঁটার শব্দ শুনলেন। সাথে সাথে দৌড়ে তিনি ওপরে উঠলেন, যে ঘরে শব্দ শুনেছিলেন, অবাক হয়ে দেখলেন সে ঘরে কেউ নেই। তিনি তার আশেপাশের সমস্ত ঘর এমনকি তার ওপরের তলার সমস্ত ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজলেন। সেখানে কেউ ছিলো না।
খুব তাড়াতাড়ি তারা আরো বাজেভাবে বিষন্নতায় ভুগতে থাকেন, তাদের বাচ্চাকাচ্চাদের স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে, মাথাব্যথায় ভুগতে থাকেন, এমনকি খাবারও খেতে পারতেন না। তাদের বাচ্চারা খেলাধুলায় অনাগ্রহী হয়ে পড়ে।
এরপর একদিনের ঘটনা। মিসেস এইচ তার বাচ্চাদের নিয়ে শহরের বাইরে কোথাও গিয়েছিলেন। মিস্টার এইচ বাড়িতে একা। রাতের বেলা বেলের শব্দে বারে বারে তার ঘুম ভেঙে যেতে থাকে। যতবারই বেলের শব্দে ঘুম ভাঙে, ততবারই দরজা খুলে দেখেন কেউই নেই। মিসেস এইচ যখন তার বাচ্চাদের নিয়ে ফিরে এলেন, তার বাচ্চাদের মুখের রং ফ্যাকাশে হয়ে যেতে শুরু করলো এবং খারাপভাবে অসুস্থ হতে শুরু করলো।
মিসেস এইচ প্রায়ই অনুভব করতেন যে তার বাম হাতে কোনো এক দড়ি বা সুতো শক্তভাবে বাধা রয়েছে, কিন্তু সত্যিকার অর্থে তার হাতে কোনো দড়ি বাঁধা ছিল না।
এরপর কোনো এক রাতে মিসেস এইচ ঘুম ভেঙে শুনলেন পেছনের দেয়ালের ওপাশের সিঁড়ি দিয়ে কেউ ওপরে উঠছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো ওদিকে কোনো সিঁড়িই ছিল না।
এভাবে ঘটনা ঘটতেই লাগলো, ভালো হতো যদি বিষয়টা এইসব ঘটনাতেই সীমাবদ্ধ থাকতো, কিন্তু তা হলো না। বিষয়টা আরো ভয়ংকর রূপ ধারণ করলো, যখন মিসেস এইচ তার ড্রয়িং রুমের এক কোণে কোনো এক কালো চুল ও কালো পোশাক পড়া মেয়েকে দেখলেন। মেয়েটি তার দিকে এগিয়ে আসছিলো। মিসেস এইচ ও সাহস করে মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেলেন, কিন্তু কাছাকাছি যেতেই মেয়েটি স্রেফ হওয়ায় মিলিয়ে গেল। বিষয়টা এখানেই শেষ হয়ে গেলো না, তিনি এরকম কিছু জিনিস দেখলেন আরো তিনবার। একবার ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখলেন একজন বৃদ্ধ পুরুষ আরেকজন অল্পবয়স্ক মেয়ে তার বিছানায় বসে বসে তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
একসময় পরিবারটি তাদের বিষন্নতা কাটানোর জন্য অপেরা দেখতে যান। সেই রাত্রেই মিসেস এইচ ঘুমন্ত অবস্থায় দুঃস্বপ্ন দেখেন এবং তার স্বামী ঘুমের মধ্যে বুঝতে পারেন কেউ একজন তার গলা টিপে ধরেছে। জেগে উঠে তিনি দেখেন মিসেস এইচ গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন এবং সে ঘরে কেউ নেই। এমনকি তাদের এক বাচ্চাও স্পষ্ট অনুভব করে যে তার কোলে কেউ বসে আছে কিন্তু সত্যিকার অর্থে তার কোলে কেউ ছিলোনা।
এরপর মিস্টার এইচ তার ভাইয়ের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেন। তার ভাই বলেন, তারা খুব সম্ভবত কোনো বিষাক্ত গ্যাসের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। তিনি উপদেশ দেন, তারা যেন খুব তাড়াতাড়ি কারো সাহায্যে বিষয়টি খতিয়ে দেখেন।
এরপর তারা কোনো এক বিশেষজ্ঞকে ডেকে আনেন, তার নাম বলা হয় মিস্টার এস (Mr. S)। মিস্টার এবং মিসেস এইচ পুরো ঘটনা তাকে খুলে বলেন, বাচ্চাদের দুরবস্থা দেখান। তিনি সবকিছু ভালোমতো শোনেন। এরপর মিস্টার এস পুরো বাড়ি খুব ভালোভাবে খোঁজাখুঁজি আরম্ভ করেন।
শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, তাদের ঘরের সেই চিমনিটি খুবই খারাপ অবস্থায় আছে। চিমনি দিয়ে যে ধোঁয়াগুলোর বাইরে বের হয়ে যাওয়ার কথা ছিল, সেগুলো বাইরে না গিয়ে ঘরের ভেতর ছড়িয়ে পড়তো। ফলে সারা বাড়িটি কার্বন মনো অক্সাইড (CO) নামক এক বিষাক্ত গ্যাস দিয়ে সবসময় ভরে থাকতো। ফলে তারা যতক্ষন বাড়িতে থাকতো তারা নিঃস্বাসের সাথে বিষাক্ত গ্যাস কার্বন মনো অক্সাইড শরীরে নিয়ে নিজেদেরও বিষাক্ত করে ফেলতো। মিস্টার এস তাদের বলেন, বাচ্চাদের আর একটি রাতও যেন এখানে থাকতে না দেয়া হয়, না হলে হয়তো পরবর্তী দিন তাদের ঘুম আর নাও ভাঙতে পারে।
অবশেষে তারা একজন প্রফেশনালের শরণাপন্ন হলেন এবং পরীক্ষা করার পর দেখা গেল তাদের বিষন্নতা, মাথাব্যথা এসব কার্বন মনো অক্সাইডের কারণেই হয়েছে এবং তাদের সাথে ঘটা ভুতুড়ে কান্ডগুলোর কারণও আসলে কার্বন মনো অক্সাইডের বিষক্রিয়ার কারণে হওয়া হ্যালুসিনেশন। এরপর তারা তাদের চিমনি ঠিক করেন, তারপর থেকে তারা পুরোপুরি ঠিকঠাক ভাবেই সেই ভুতুড়ে বাড়িতে কোনো সমস্যা ছাড়াই বসবাস করতে পেরেছিলেন।

[মোরাল অফ দা স্টোরিঃ বাড়িতে ভুতের আছর পড়লে ওঝা নয়, কোনো একজন প্রফেশনালকে ডাকুন যে বিষাক্ত কোনো গ্যাস আছে কিনা খুঁজতে পারবে]
[[কার্বন মনো অক্সাইড এক প্রকার বিষাক্ত গ্যাস, আমাদের রক্ত অক্সিজেনের মতোই সহজেই কার্বন মনো অক্সাইডকেও গ্রহণ করতে পারে। ফলে বমি বমি ভাব, মাথা ব্যথা, দুশ্চিন্তা, অবসাদগ্রস্ততা, শারীরিক দুর্বলতার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। শরীরে বেশি মাত্রায় প্রবেশ করলে মানুষ মারাও যেতে পারে। সেই সাথে হ্যালুসিনেশনের মাত্রাও বেড়ে যায়। এই বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন হয় কম অক্সিজেনের উপস্থিতিতে কাঠ কয়লা পোড়ালে, সিগারেটের ধোঁয়ায়, গাড়ির কালো ধোঁয়ায় ইত্যাদি জিনিষ হতে]]

আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, রাতের বেলা অশরীরি কিংবা শরীরি (যেটাই হোক) কিছুর অস্তিত্ব টের পেলে সিগারেট ধরাবেন না (কেননা Bhoot FM শুনে আপনি জেনে গিয়েছেন যে আগুন দেখলে ভুত ধারেকাছে আসে না )। উল্টো সিগারেটের ধোঁয়ার কারণে যে অশরীরি আপনাকে দেখা দেয় নি, সেটাও দেখা দিয়ে দিতে পারে । কাজেই এখন থেকে "সিগারেট মৃত্যুর কারণ" স্লোগানের সাথে আরো একটা স্লোগান যুক্ত করুন, "সিগারেট ভুত দেখার কারণ"

মাইকেল ফ্যারাডে (Michael Faraday এর নাম শুনেছেন? হ্যাঁ সেই বিখ্যাত বিজ্ঞানীর কথাই বলছি। সারা বিশ্ব আজ যার কাছে কৃতজ্ঞ। মহান বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড তার বিষয়ে বলেন,"তার আবিষ্কারগুলোর মাত্রা আর ব্যাপকতা, বিজ্ঞান আর শিল্পকারখানার জগতে সেগুলোর গুরুত্ব বিবেচনা করলেই বোঝা যায় - এই লোকটাকে যত বড় সম্মানই দেয়া হোক না কেন, সেটা যথেষ্ট নয়।"
[মাইকেল ফ্যারাডে এর জীবনী ও আবিষ্কার নিয়ে খুব সুন্দর ও ছোট একটি লেখা পড়তে চাইলে ক্লিক করুন https://
bigganjatra.org/michael_faraday/ ]

কিন্তু এই মাইকেল ফ্যারাডে সাহেব যে ভুতের ওঝা-ও (!) ছিলেন তা কি জানেন? কি অবাক হলেন?
সে যাই হোক, বিজ্ঞানী হিসেবে তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার কোনো ভাষা নেই, তাই করবোও না, কিন্তু একটা কথা বলাই যায়- তিনি না থাকলে আজকের এই ভুতুড়ে পোস্ট লেখা হতো না, তাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি তার কাছে।
[অনেক বড় ভূমিকা লিখে ফেলেছি তাই ভূমিকাটি আর আগাবো না, মূল লেখায় চলে যাই ]
মানুষের কৌতূহলের কোনো সীমা নেই। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের এক আজব কৌতূহল ছিল মৃত মানুষের আত্মার সাথে যোগাযোগ করার। নানান জায়গায় নানান রকম ভাবেই এর চেষ্টা করা হলেও সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি উপায় হলো ওইজা বোর্ড (Ouija Board [প্রথম ছবি]) এর মাধ্যমে আত্মা ডাকাডাকি, আরেকটি হলো Table Tilting, বা বাংলায় বললে টেবিল ঝাঁকুনি পদ্ধতি। এক কথায় এগুলোকে প্ল্যানচেট হিসেবেই সবাই চেনে।
এগুলো অনেক প্রাচীন পদ্ধতি হলেও, মানুষের মাঝে পরিচিতি পেতে শুরু করে ১৮৪০ কিংবা ১৮৫০ সালের দিকে।

ওইজা বোর্ডঃ বোর্ডটি তৈরি হয় কাঠ কিংবা তামা দিয়ে। বোর্ডের ওপর বড়ো বড়ো অক্ষরে A থেকে Z পর্যন্ত সবগুলো অক্ষর লেখা থাকে, আর তার নিচে 0 থেকে 9 পর্যন্ত। আরো লেখা থাকে "হ্যাঁ-না" জাতীয় উত্তর করার জন্য Yes এবং No।
হার্ট আকৃতির ( ) একটি কাঠের টুকরা, যেটাকে আসলে বলা হয় প্ল্যানচেট, সেটা বোর্ডের ওপর রেখে দেয়া হয়। আত্মা ডাকার সময় সবাই এই টুকরার ওপর হাত রাখে। আর আত্মা ডাকার পর সেই আত্মাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করলে সেই প্ল্যানচেটটিকে বিভিন্ন অক্ষরে অক্ষরে ঘুরিয়ে বানান করে করে প্রশ্নের উত্তর দেয় আত্মা। যেমন প্রশ্নের উত্তর যদি হয় "হ্যাঁ" তাহলে প্ল্যানচেটটি Yes লেখার ওপর চলে যায়, "না" হলের No লেখায় চলে যায় ইত্যাদি।

টেবিল ঝাঁকুনি পদ্ধতিঃ এই পদ্ধতিটা বেশ মজার। কয়েকজন মানুষ একটা টেবিলের চারপাশে বসে পড়েন। তাদের সবার হাত টেবিলের ওপর রাখেন। নিয়ম হলো, সবার হাতই তার পাশের দুইজনের হাতকে ছুঁয়ে থাকতে হবে। এরপর তারা সবাই মিলে ধ্যান করতে থাকেন, মনে মনে কোনো মৃত ব্যক্তিকে আসার আমন্ত্রণ জানান।
মৃত ব্যক্তির আত্মা আসা মাত্র টেবিল আপনা আপনিই ঝাঁকি দিতে আরম্ভ করে। কখনো কখনো এক পায়ের উপর দাঁড়িয়ে বাকি তিন পা শূন্যে তুলে রাখে। অবস্থা বেগতিক হলে লাফিয়ে লাফিয়ে নাচতে নাচতে সারা ঘর ছুটে বেড়ানোর দাবিও করা হয়েছে।
যাই হোক, কোনো সন্দেহ নেই এসব যারা করে তারা বেশিরভাগই ধোঁকাবাজ প্রতারক। কিন্তু প্রত্যেকেই কি প্রতারক?
এর উত্তর পাওয়ার জন্য আসুন আমরা স্বরণ করি মাইকেল ফ্যারাডে সাহেবকে। চমকাবেন না, আমি ফ্যারাডে সাহেবের আত্মাকে ডাকার কথা বলছি না, ভুতে আছর করা পোস্ট কেউ পছন্দ করে না (যদিও এটা ভুতুড়ে পোস্ট )। আমি ফ্যারাডে সাহেবের করা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার কথা বলছি, যা তিনি জীবিত থাকতে কোনো একসময় করেছিলেন।
তিনি তার পরীক্ষার মাধ্যমে দেখান যে, টেবিলের ঝাঁকি কিংবা প্ল্যানচেটের কারসাজি, সব কিছুই নিঃসন্দেহে যারা এই প্ল্যানচেট করেন তাদের নিজেদের মাধ্যমেই হয়। মস্তিষ্কের ইডিওমোটর ইফেক্ট (Idiomotor Effect)-এর কারণে এসব ঘটে থাকে। ইডিওমোটর ইফেক্ট হচ্ছে সেই ঘটনা, যেখানে কেউ তার অবচেতন মনে কিছু নির্দেশ গ্রহণ করে, এবং সেই অনুযায়ী তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে নাড়াচাড়া করতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু সে নিজেই যে এই নাড়াচাড়া করেছেন তা তিনি নিজেই বুঝতে পারেন না কেননা এইসব ঘটে তার অবচেতন মনের নির্দেশে।
মানুষ যখন প্ল্যানচেট করতে বসে, তখন তারা ধরেই নেয় যে টেবিল নড়ে উঠবে, তাই মনের অজান্তেই তাদের অবচেতন মন এই নড়াচড়ার নির্দেশ গ্রহণ করে ফেলে, ফলে প্ল্যানচেট করার সময় তারা তাদের অবচেতন মনের নির্দেশে নিজেরাই টেবিলটি নাড়াতে থাকে, কিন্তু অবচেতন মনের নির্দেশে নাড়ানোর ফলে তারা বুঝতেই পারেন না যে তারা নিজেরাই টেবিল নাড়াচ্ছেন।
একই কথা উইজা বোর্ডের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যিনি আত্মাকে প্রশ্ন করেন, তিনি আশা করেন যেন তার মনের মতো কোনো উত্তর দেয় আত্মা। ফলে তার অবচেতন মন তার প্রশ্নের আশা করা উত্তর অনুযায়ী তার হাতকে নাড়াতে থাকে, আর প্ল্যানচেটটি সেই কারণে বিভিন্ন অক্ষরের দিকে যেতে থাকে। কিন্তু তিনিই যে প্ল্যানচেটটিকে নাড়াচ্ছেন, তা তিনি বুঝতে পারেন না কেননা এসব হচ্ছে তার অবচেতন মনের নির্দেশে।


[১]
আপনি গ্রামে গিয়েছেন। খুব উত্তেজিত। গ্রামে রাতের বেলা ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। ঘুরতে ঘুরতে কোনো এক ডোবার ধারে চলে এলেন। হঠাৎ চোখ গেল ডোবার ধারের ছোট এক জঙ্গলের মতো জায়গায়। আর সাথে সাথেই স্থির হয়ে গেলেন।
একটি সুন্দর কিংবা ভয়ংকর (সুন্দর নাকি ভয়ংকর তা নির্ভর করে যে দেখছে তার ওপর) আলো বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। সেটা এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখান থেকে ভাসতে ভাসতে ঐখানে চলে গেলো। কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর খেয়াল করলেন, সেই আলোর চারপাশে অদ্ভুত ভুতুড়ে ধোঁয়াও আছে।
নিশ্চই শয়তানের আলো, কিংবা ভুতের আলো, কিংবা পরীর আলো (কিসের আলো, এটাও নির্ভর করছে যে দেখছে তার ওপর), তা ছাড়া আর কি হবে? আগুন জ্বলার জন্য তো কোনো জ্বালানি দরকার হয়, এটা তো বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। নেভার নামেও কোনো খবর নেই। হঠাৎ আপনার মাঝে একটু বিজ্ঞানমনস্কতা উঁকি দিতে শুরু করলো, চিন্তা করলেন,ভুত বলতে তো কিছু নেই, একটু এগিয়ে দেখেই আসি জিনিসটা কি। কিন্তু যেই ওটার কাছাকাছি গেলেন, স্রেফ হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
জিনিসটার একটা সুন্দর নাম আছে, আলেয়া। আর ইংরেজিতে বলে "Will-o'-the-wisp"। বিভিন্ন ঢঙের মানুষের দৌলতে এর বিভিন্ন ঢঙের কেরামতির বিবরণ পাওয়া যায়। অনেকে বলে, আলেয়া দেখে হাঁটতে শুরু করলে সেটাও সরতে থাকে, যতই আলেয়ার কাছে যেতে চেষ্টা করুক না কেন, আলেয়াকে সেই একই দূরত্বে দেখা যায়, অনেক সময় ধরে হাঁটার পরও সেটার কাছে যাওয়া যায় না। ভুত মানুষকে এই আলেয়া দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে তার কোনো ক্ষতি করার চেষ্টা করে ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক কিছু। বিভিন্ন সাহিত্য সংস্কৃতিতে এর বিভিন্ন চটকদার অলৌকিক বিবরণ আছে - কিন্তু আলেজান্দ্রো ভোল্টা (Alessandro Volta)-এর মত এক রসকষহীন বিজ্ঞানী এসে এসব কিছু পায়ের তলায় ফেলে পিষে ফেললেন।
ভোল্টা সাহেব প্রথম মিথেন গ্যাস আবিষ্কার করেন, তার সন্দেহ ছিল এই আলেয়ার রহস্যের পিছনে নিশ্চই মিথেন গ্যাসের কোনো হাত (গ্যাসেরও আবার হাত থাকে? ) রয়েছে।
মিথেন এক প্রকার জৈব যৌগ। গাছপালা, মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ যখন অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে পচতে থাকে, তখন বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে উৎপন্ন হয় মিথেন, ফসফিন, কার্বন ডাইঅক্সাইড ইত্যাদি।
জীবের দেহাবশেষ যখন পুকুর বা ডোবার পানির নিচে পচতে থাকে, তখন মিথেন, ফসফিন উৎপন্ন হয়। এই মিথেন আর ফসফিন যখন বুদবুদ আকারে ওপরে উঠে আসে, তখন অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে একা একাই জ্বলে ওঠে। আবার ফসফিন যখন জ্বলে, তখন তা থেকে ধোঁয়া সৃষ্টি হয়, ফলে সেই আলোর চারিদিকে ধোঁয়াও দেখা যায়।
আর যখন কেউ অতিশয় সাহসী হয়ে এই আলেয়ার কাছে যায়, তখন এই গ্যাস চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে, আর আলেয়াও বাতাসে মিলিয়ে যায়।

[২]
সুইজারল্যান্ডের কিছু বিজ্ঞানী একবার এক এপিলেপ্সিতে আক্রান্ত রোগীর মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক স্টিমুলেশন দেয়ার সময় তার কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে তার কিরকম লাগছে। তিনি যা উত্তর দিলেন তা মোটামুটি ভয়াবহ।
তিনি বললেন, তিনি তার সামনে একটা ছায়ামূর্তি দেখতে পাচ্ছেন। সেই ছায়ামূর্তি তার প্রতিটা নড়াচড়া, অঙ্গভঙ্গির নকল করছে। তিনি যদি উঠে বসেন, ছায়ামূর্তিও উঠে বসে, হাত নাড়ালে ছায়ামূর্তিও হাত নাড়ায়। বিজ্ঞানীরা যখন তাকে একটি কার্ড দিলেন কার্ডটি পড়ার জন্য, সেই ছায়ামূর্তিটিও সেই কার্ডটি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো!
সত্যিকার অর্থে যেটা ঘটেছিল, তা হলো, বিজ্ঞানীরা ওই রোগীর মস্তিষ্কের বাম টেম্পোরোপ্যারিয়েটাল জাংশনে (Left Temporoparietal Junction)-এ স্টিমুলেশন দিচ্ছিলেন। মস্তিষ্কের এই অংশের কাজ হলো, শরীরের অবস্থান কোথায় তা জানান দেয়া, শরীরের অবস্থা জানান দেয়া ইত্যাদি। আরো সহজ করে বলতে গেলে, এই অংশের কাজ হলো নিজের অস্তিত্ব এবং অন্য কারো অস্তিত্ব বুঝতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা যখন মস্তিষ্কের এই অংশে স্টিমুলেশন দিচ্ছিলেন, তখন মস্তিষ্কের ওই অংশের কাজে ব্যাঘাত ঘটছিলো, তাই এক সময় রোগী তার অবস্থান বুঝতে অসমর্থ হলেন এবং ফলে তিনি তার সামনে এক ছায়ামূর্তি দেখতে পেলেন যেটা তাকে পুরোপুরি অনুকরণ করে যাচ্ছিলো।

[৩]
২০১৩ সালে গাজীপুরের কোনো এক ফ্যাক্টরির প্রায় ৩০০০ কর্মচারী রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করে। তাদের আন্দোলনের বিষয়বস্তু বেতন কম দেয়া কিংবা এরকম কিছু না। তাদের আন্দোলনের কারণ ছিল, তাদের ফ্যাক্টরির মহিলা টয়লেটে এক ভুতের উপদ্রপ শুরু হয়েছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ এই ইভ টিজার ভুতের ব্যাপারে কোনরুপ পদক্ষেপ নেয়নি।
এক ভয়ংকর রাগী ভুত নাকি সেখানকার মহিলা টয়লেটে ঢুকে মহিলাদের উত্যক্ত করছিলো। নারী নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করা তো দূরের কথা, ওঝা ডেকে ঝাড়ফুঁকও করেনি। ফলশ্রুতিতে কর্মীরা এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামে।
আসলে যা ঘটেছিলো, তা হলো সবাই গণহিস্টেরিয়ার শিকার হয়েছিলো। এ ধরণের ঘটনা ঘটে তখন, যখন কেউ প্রচন্ড মানসিক চাপে থাকে। ফ্যাক্টরিতে ১২-১৪ ঘন্টা শিফটিং ডিউটির কারণে প্রত্যেকেই মানসিক চাপের মধ্যে ছিল। ফলে উপসর্গ হিসেবে দেখা দিলো মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি। আর এর সাথে সামাজিক, ধর্মীয় বিশ্বাস তো রয়েছেই।
তদন্ত করে দেখা গিয়েছিলো, ওই দুষ্টু ভুত দেখেছিল মাত্র কয়েকজন। এমনকি যে মহিলা প্রথম এই ভুত দেখে সবার মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে সবাইকে রাস্তায় নামিয়েছিলো সেও স্বীকার করেছিলো যে সে আসলে নিজের চোখে ভুত দেখেনি, বাথরুমে কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলো, আর মনে করেছিলো এটা ভুত ছাড়া আর কার কারসাজি হবে? তাই সে সবাইকে বলে বেরিয়েছিল যে এটা দুষ্টু জ্বিন ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। আর এর পরে যখন আরো দুই একজন মাথা ঘুরে পড়ে গেল, তখন সন্দেহ বিশ্বাসে পরিণত হলো। আর শুরু হলো এক ভয়ংকর ইভ টিজার ভুতের গল্প।
[সমাপ্তি]

লিখাঃ সোহানূর রহমান সৌমিক 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম