সঙ্গীত (পর্ব ২)


Absolute Pitch (AP)

মনে করুন,বাইরে কোথাও ক্যাম্পে গিয়েছেন অনেকে মিলে । ঘুমাতে হবে সবার একসাথে, এদিকে আপনার আবার ভোঁসভোঁস করে নাক ডাকার অভ্যাস। আপনি রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নাসিকাগর্জন করছেন, মানে সোজা বাংলায় নাক ডাকছেন। কেউ এসে যদি তখন বিরক্ত হয়ে নাকটা চেপে ধরে বলে, " এই যে বাছাধন, তুমি যে ২৩৭ হার্জ কম্পাংকে নাক ডাকছ, আমাদের যে ঘুম নষ্ট হচ্ছে,সে খেয়াল আছে?"

আপনি হয়ত লজ্জা পাবেন, আমি সেখানে থাকলে আমার মাথায় যে কথাটা আসত, সেটা হল,আরেব্বাস! ইনি কী সত্যিই Pitch Perfect? শব্দ শুনে এর পরম তীক্ষ্ণতা বুঝে ফেলতে পারেন?

পিচ বা তীক্ষ্ণতা সুরের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্য থেকেই আমরা বুঝি কোন একটা সুর চড়া নাকি নিচুর দিকে। বিষয়টা শব্দের কম্পাঙ্কের সাথে সম্পৃক্ত হলেও কম্পাঙ্ক বা ফ্রিকোয়েন্সির সাথে এর মৌলিক পার্থক্য আছে। সাধারণভাবে, কম্পাংক বেশি হলে আমরা বুঝি সুর উচুর দিকে, কম কম্পাংকের হলে আমরা বুঝি সুর নিচুর দিকে। কিন্তু কম্পাংক যেখানে পরিমাপযোগ্য একটি ভৌত রাশি, সেখানে পিচ বা তীক্ষ্ণতা বিষয়টা সম্পূর্ণ আমাদের অনুভূতি বা Perception -এর সাথে সম্পৃক্ত।

সঙ্গীতে সুরেলা শব্দের কম্পাঙ্কের (সঠিক করে বললে,পিচের) পার্থক্যভেদে বিভিন্ন পিচের শব্দের আলাদা নাম দেওয়া আছে। যেমন: A, A#,B,C,C# ইত্যাদি।

আমি আমার সারাজীবনে যতগুলো গুণ অর্জন করতে চেয়েছি,তাদের একটি হচ্ছে এই Absolute Pitch। আমার সবসময়ের একটি বিস্ময় হচ্ছে, কীভাবে কেউ কোন পৃথক স্বর শুনেই তার তীক্ষ্ণতার নাম মানে Notes বলে দিতে পারে?

হ্যা,Absolute Pitch বিষয়টা ঠিক এমনই। যেকোন আপাতঃ Consistent কম্পাঙ্কের শব্দ শুনেই অন্য কোন প্রসঙ্গ (Reference) স্বরের সাহায্য ছাড়াই সেই শব্দের নোটেশন বলে দেওয়ার গুণটাই Absolute Pitch বা Perfect Pitch নামে পরিচিত। এই জিনিস অত্যন্ত দুর্লভ, অনেক বাঘা বাঘা মিউজিশিয়ানরাও দিনের পর দিন অনুশীলন করেও এটি অর্জন করতে পারেন না। প্রতি দশ হাজার মানুষের মধ্যে মাত্র একজনেরও কম মানুষ হয় Pitch Perfect!

Absolute Pitch বিষয়টা কিন্তু ভাল মিউজিশিয়ান হওয়ার জন্য কোন অপরিহার্য বিষয় না। না হলেও চলে,কিন্তু যাদের আছে,তাদের কাছে এটা একটা অপরিহার্য জিনিস,আমাদের কাছে দেখতে,শুনতে পাওয়াটা যেমন অপরিহার্য!

অবশ্য কোন একটা স্বরকে প্রসঙ্গ (Reference) ধরে অন্য স্বরের অবস্থান বুঝতে পারার ক্ষমতাটা ততটা দুর্লভ না। এই জিনিসটাকে বলে Relative Pitch এবং ভালমতো অনুশীলন করেই এটি অর্জন করা সম্ভব।

পুরো বিষয়টাকে একটা Analogy দিয়ে বোঝালে সহজ হবে মনে হয়। স্বরগুলোকে একেকটা রঙ যদি বিবেচনা করি, তাহলে নোটেশনগুলোকে ধরা চলে রঙের নাম হিসেবে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, Absolute Pitch বিষয়টা হল এমন যে, কেউ লাল রঙ দেখে বলে দিচ্ছে এটা লাল রঙ, নীল দেখে বলছে এটা নীল।

অন্যদিকে Relative Pitch বিষয়টা এমন, কেউ একটা রংকে আগে লাল বলে স্থির করে নিচ্ছে, সেটার সাপেক্ষে আরেকটা রংকে নীল বলছে। প্রথমে স্থির করা রংটা হলুদ বলে স্থির করলে দ্বিতীয় রংটা হয়ত নীল না মনে হয়ে সবুজ মনে হত। কিন্তু তাকে যখন শুধু লাল রঙের একটা কিছু দেখানো হল,সে আর রঙের নামটা বলতে পারল না!

[এই অ্যানালজিতে স্বরকে রঙের সাথে তুলনা করার বিষয়টা যে শুধু তুলনা দিতেই ব্যবহৃত হয়েছে,তা কিন্তু নয়। নিউটন রঙধনুর সাত রঙের সাথে সঙ্গীতের সাত শুদ্ধস্বরের তুলনা দিতেন। এমনকি গবেষণা এটাও দেখাচ্ছে, Absolute Pitch -ওয়ালা মানুষরা সুরকে রঙের মত করেই অনুভব করতে পারেন। এটা এক রকমের Synesthesia(*১)। ]

সুরের সাথে রঙের এই তুলনা থেকে এটা কী মনে হচ্ছে না, যে Absolute Pitch হওয়াটাই তো বেশি স্বাভাবিক লাগে? আমরা তো আমাদের পতাকার লাল সবুজ রংকে দেখেই বলে দিই যে এটা আমাদের গর্বের লাল সবুজ, হিমুর পাঞ্জাবির হলুদকেও হলুদ বলে ফেলব নিমিষেই,যদি আমরা রঙের নামগুলো জানি ঠিকঠাক, অন্য কোন রঙের সাথে তুলনা করে রঙ চেনার ধারণাটাই বরং অদ্ভুত ঠেকে। তাহলে সুরের নোটেশন জানলেও কেন প্রতিটি আলাদা শব্দের নোটেশন বলে দিতে পারা এতটা কঠিন? বেসিক নোট কিন্তু মাত্র ১২ টা!

গবেষকরাও এটাই ভাবেন আসলে। Absolute Pitch আশ্চর্যজনক নয়,বরং আশ্চর্যজনক হচ্ছে এর দুর্লভ হওয়াটাই। তবে এর কারণ হিসেবে কিছু ব্যাখ্যা এসেছে। [সেগুলো বেশি মিউজিক্যাল ব্যাখ্যা বলে এখানে দিচ্ছি না, কারণ সঙ্গীতের পরিভাষা দিয়ে বর্ণনা দিলে সবার বুঝতে অসুবিধা হতে পারে]

খুবই স্বাভাবিক, সঙ্গীতজ্ঞদের মধ্যেই এই গুণ বেশি পাওয়া যায়,সাধারণ মানুষের চেয়ে। সঙ্গীতজ্ঞদের মধ্যেও যারা খুব ছোটবেলা থেকেই গান শিখে আসছে,তাদের মধ্যে আবার এর হার বেশি। কিন্তু তারপরেও, বহু সঙ্গীতজ্ঞ,যাদের অনেক কম বয়সেই গানের সংস্পর্শে থাকা হয়েছে, তারা Pitch perfect হতে পারেন না।
কম বয়সে অন্ধত্বপ্রাপ্তির সাথে Absolute Pitch -এর আশ্চর্যজনক সম্পর্ক আছে। কিছু গবেষণা দেখাচ্ছে জন্মান্ধ অথবা কম বয়সে অন্ধ হয়ে যাওয়াদের মধ্যে ৫০% -এরই Absolute Pitch আছে।

Absolute Pitch গবেষকদের কাছেও খুব আকর্ষণীয় একটা বিষয়বস্তু। এটা কি জেনেটিক, নাকি পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল, এ নিয়েও বহুত গবেষণা হয়েছে। যেসব পরিবারে সঙ্গীতের ব্যাকগ্রাউন্ড আছে, সেসব পরিবারে Absolute Pitch দেখা যায় বেশি। এই ঘটনার কিন্তু জেনেটিক এবং পরিবেশগত,দুই রকমের ব্যাখ্যাই দেওয়া সম্ভব!

আরেকটা বিষয় হল, পূর্ব এশিয়ার মানুষজন, মানে চীন, ভিয়েতনাম,এসব দেশের অধিবাসীদের মধ্যে এর হার অত্যন্ত বেশি।তাহলে কি বিষয়টা পুরো জেনেটিকই?

কিন্তু মজার বিষয়টা হল, যেসকল চীনা বংশোদ্ভূত কম বয়সেই আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছে এবং চাইনিজ ভাষা না শিখে ইংরেজি শিখেছে,তাদের মধ্যে কিন্তু আবার সেই Absolute Pitch দুর্লভই !

পরে এই AP- এর সাথে ভাষার চমৎকার সম্পর্ক পাওয়া গেছে। আসলে, চীনা (মান্দারিন), ভিয়েতনামিজ ভাষাগুলো হচ্ছে সুরেলা ভাষা (Tonal Language), একই শব্দ ভিন্ন ভিন্ন সুরে উচ্চারণ করলে অর্থ হয় ভিন্ন। চীনাভাষায় তো এক "Ma" ধ্বনিটিই পাঁচটা সুরে উচ্চারণ করলে অর্থ হবে পাঁচ রকমের!

এসব সুরেলা ভাষাভাষী মানুষদের এমনিতেই ভাষাজ্ঞান অর্জন করতে মস্তিষ্কে pitch সম্পর্কে ভাল বোধ থাকতে হয়। যেহেতু শব্দের তীক্ষ্ণতা তাদের ভাষার কাঠামোই বলা চলে, পরে মিউজিক্যাল নোটেশন দিয়ে সেসব ভিন্ন তীক্ষ্ণতার শব্দকে আলাদা করাটা তাদের কাছে "দ্বিতীয় ভাষা" শেখার মতই একটা প্রক্রিয়া হয়ে যায়।

আমি শুরুতে যেই নাক ডাকার উদাহরণ টানলাম, Absolute Pitch হতে হলে এভাবে কম্পাঙ্ক বলে দেওয়াটা অপরিহার্য নয়,বরং একটা নির্দিষ্ট রেঞ্জের কম্পাঙ্কের শব্দের মিউজিক্যাল নোটেশন বলে দিতে পারাটা এর প্রধান ক্রাইটেরিয়া। রঙের অ্যানালজি যদি আবার আনি, তাহলেও, রঙ চেনা প্রমাণের জন্য আপনাকে আলোর কম্পাংক বলতে হয় না,বরং একটা নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জের আলোর সাধারণ নাম বলতে পারলেই যথেষ্ট।

কিন্তু এভাবে মোটামুটি ঠিকঠাক কম্পাংক বলে দিতে পারাটাও কেউ কেউ আয়ত্ত করে ফেলতে পারেন। ফিনিশ পতঙ্গবিদ ওলাভি সোটাভাল্টা ( Olavi Sotavalta) এই ধরণের AP -এর অধিকারী ছিলেন। এই গুণটি তার উড়ন্ত পোকামাকড়ের শব্দ নিয়ে গবেষণায় দারুণভাবে সাহায্য করেছিল। পোকামাকড় ওড়ার সময় ডানা ঝাপটানোর জন্য যে শব্দ সৃষ্টি হয়, শুধু শুনেই তিনি সেই শব্দের কম্পাংক বলতে পারতেন প্রায় নির্ভুলভাবে! দারুণ না?
Pitch, নোটেশন,এগুলো ভালমত বোঝার জন্য একটা App সাজেস্ট করছি, Phyphox App। অ্যাপ থেকে Audio Correction অপশনে গেলে যেকোন শব্দের Pitch, কম্পাংক জেনে নিতে পারবেন। Perfect Pitch মানুষেরা ঠিক এই অ্যাপের মত করেই নোটেশন বলতে পারেন যেকোন শব্দের।

পাদটীকা :
*১. Synesthesia (যুগ্মবেদন): ইন্দ্রিয়লব্ধ এমন একপ্রকার অনুভূতি,যেখানে দেহের একটি অনুভূতিকে উদ্দীপ্ত করলে অন্য অনুভূতিরও সৃষ্টি হয়। যেমন : সংখ্যা বা বর্ণ দেখলে রঙ অনুভব করা, কোন শব্দ শুনলে বিশেষ স্বাদ অনুভব করা,ইত্যাদি।

আপনার শিশুকে গান শোনান

১৯৯৮ সাল,জানুয়ারির ১৩ তারিখ। আমেরিকার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর জেল মিলার ঘোষণা দিলেন তার অঙ্গরাজ্যের প্রতিটি নবজাতকের কাছে পৌছে দেওয়া হবে একটি করে ক্ল্যাসিক্যাল গানের সিডি। আর এর জন্য তিনি বাজেটে প্রতিবছর ১,০০,৫০০ মার্কিন ডলার বরাদ্দ করে দিলেন! ভাবা যায়?

ভাবছেন, এ কেমন খেয়াল? শুধু কী তাই? গভর্নর মিলার সাহেব অন্য আইনপ্রণেতাদের বিথোভেন (*১) শোনাতেন আর জিজ্ঞেস করতেন,"Now, don't you feel smarter already?"

আসলে, এই বাজেট পাসের পেছনে ছিল "মোজার্ট এফেক্ট (Mozart Effect)" নামে এক জনপ্রিয় সাইকোলজিক্যাল মিথ। এই মিথের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, কাউকে যদি বেশি করে ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক শোনানো হয় (বিশেষ করে মোজার্ট(*২)), তাহলে নাকি তার আইকিউ বেড়ে যায়! শিশুদেরকেও নাকি গান শোনালে তাদের বুদ্ধিমত্তা বেড়ে যায়। যদিও মনস্তত্ত্ববিদরা এই ধারণাটিকে শুধুই একটি মিথ বলে থাকেন।

১৯৯৩ সালে নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটা গবেষণাপত্রে দেখানো হয়েছিল মোজার্টের সঙ্গীত সাময়িকভাবে স্থান-সংক্রান্ত বিচারের (Spatial Reasoning) ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে,যেটি IQ মাপার একটা অনুষঙ্গ। যদিও Rauscher ও তার সহযোগীদের করা এই গবেষণায় দেখানো হয়েছিল এই প্রভাব ১৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় না। এই সমীক্ষা সাধারণ IQ এর ওপর সঙ্গীতের প্রভাব নিয়ে কোন কথাই বলেনি।

সর্বকালে ,সবখানেই মানুষ তিলকে তাল করে এসেছে,এখানেও সেটাই হয়েছে। পত্রিকাগুলো এই গবেষণার বরাত দিয়ে আর্টিকেল লিখতে শুরু করল, "গান শুনুন, IQ বাড়ান", অথবা "মোজার্ট আপনাকে করে তুলবে Smarter" টাইপের শিরোনামে। আগুনে ঘি ঢাললেন ডন ক্যাম্পবেল সাহেব, এ নিয়ে তিনি দুইখানা বইও লিখে ফেলেন! ব্যাস, জনপ্রিয় একটা মিথ তৈরি হয়ে গেল!

মোজার্ট এফেক্ট নিয়ে পরে অনেক গবেষণা হয়েছে, যেগুলো দেখিয়েছে, পুরো বিষয়টা আসলে মানসিক আনন্দের সাথে সম্পর্কিত। বিশেষ কোন সুর না বাজিয়ে একটা সুন্দর গল্প শোনালেও একই রকম ফলাফল পাওয়া যায়। এবং প্রকৃতপক্ষে এর সাথে বুদ্ধিমত্তার কোন সম্পর্ক নেই।

তবে গান শোনার অনেক প্রমাণিত স্বাস্থ্যগত উপকারিতা আছে। অনেক রোগের চিকিৎসা/উপশম হিসেবে মিউজিক থেরাপির ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে,যেমন আলঝেইমার্স (Alzheimer's Disease)। বিভিন্ন গবেষণা দেখাচ্ছে, হতাশা ,আতঙ্ক, সিজোফ্রেনিয়ার মত সমস্যাতেও মিউজিক থেরাপি ভাল কাজ করে। এমনকি প্রিম্যাচিউর্ড শিশুদের ক্ষেত্রে শ্বাস নেওয়া ও চুষে খাওয়ার মধ্যে সমন্বয়হীনতা জনিত সমস্যায়ও মিউজিক থেরাপি ব্যবহৃত হয়।

গান শোনার সাথে বুদ্ধিমত্তার সম্পর্ক না থাকলেও গান শেখার সাথে কিন্তু আছে। গান শেখাকে আমি বলি "ব্রেইনের বডিবিল্ডিং এক্সারসাইজ ", কারণ গান শেখা সত্যিসত্যিই ব্রেইনের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি বিকাশে সহায়ক,যেটা আগের পর্বেই দেখিয়েছিলাম।

গান শেখা চার বছরের শিশুর মধ্যে উন্নততর বাম সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ারগত সমন্বয় দেখতে পাওয়া যায়। তাকাকো ফুজিওকা ও তার সহযোগীরা মাত্র এক বছর ভায়োলিন শেখা শিশুর বাম হেমিস্ফিয়ারে ভায়োলিন না শেখা শিশুর চেয়ে অনেক বেশি উন্নতি খুঁজে পেয়েছিলেন।

হার্ভার্ডের Alvaro Pascual-Leone দেখিয়েছিলেন সঙ্গীত প্রশিক্ষণ কত দ্রুত মস্তিষ্কের ওপর প্রভাব ফেলে। পাঁচ আঙুল ব্যবহার করে পিয়ানো প্রশিক্ষণকে পরীক্ষণের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে তিনি দেখিয়েছিলেন, কয়েক মিনিট চর্চায়ই
মোটর কর্টেক্সে পরিবর্তন আসতে থাকে। মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে রক্ত চলাচল হার বৃদ্ধি পায়,বিশেষত ব্যাসাল গ্যাংগলিয়া, সেরিবেলাম ও সেরিব্রাল কর্টেক্সের বিভিন্ন অংশে।

সঙ্গীত শিক্ষা পঠন দক্ষতা, শব্দ মনে রাখার ক্ষমতা, ভোকাবুলারি, ভাষাগত দক্ষতা, এমনকি IQ বাড়াতেও সহায়ক। University of Wisconsin -এর গবেষণা দেখাচ্ছে, মস্তিষ্কের Spatial-Temporal lobe- এর কার্যক্ষমতা পরিমাপক পরীক্ষাতে পিয়ানো অথবা কীবোর্ড প্রশিক্ষিত শিক্ষার্থীরা ৩৪% বেশি ভাল করে থাকে, যেই অংশটা বিজ্ঞান,গণিত আর প্রকৌশলবিদ্যার সাথে জড়িত।

কাজেই, আজকের আর্টিকেলের শিরোনামটা একটা অর্থহীন বার্তা দিচ্ছিল । এটা হওয়া উচিত, " আপনার শিশুকে গান শেখান"। যাহোক,তাও তো "আপনার শিশুকে গাছ লাগান" শ্লোগানের চেয়ে ভাল!

তবে "আপনার গরুকে গান শোনান" বললেও ভুল হত না। গান শুনলে গরুর দুধ উৎপাদন হারও বেড়ে যায় প্রায় তিন শতাংশ! এক্ষেত্রে গরুর প্রথম পছন্দ কিন্তু শান্তশিষ্ট ধীরলয়ের গান। তাকে কিন্তু "I am a disco dancer" শোনালে চলবে না !

গবেষণার সময় গরুগুলোকে নাকি "The Wonder Stuff" ব্যান্ডের " The size of a Cow" গানটা শোনানো হয়েছিল,যেটা একটু "ঝাকানাকা" টাইপের গানই ছিল। এখন গরু তো আর ইংরেজি বোঝে না,যে বুঝবে গানে তার কথা বলা হয়েছে! তবে গরু বাংলা বলতে পারলে হয়তো বলে উঠত, " আরে ভাই, স্লো-গান দিয়েন "

পাদটীকা :
*১. বিথোভেন (Ludwig van Beethoven, ১৭ ডিসেম্বর,১৭৭০ - ২৬ মার্চ,১৮২৭ ): বিখ্যাত জার্মান সুরকার ও পিয়ানোবাদক। তাকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতস্রষ্টাদের অন্যতম ধরা হয়।
*২. মোজার্ট ( Wolfgang Amadeus Mozart, জানুয়ারি ২৭, ১৭৫৬ – ডিসেম্বর ৫, ১৭৯১): অস্ট্রীয় সুরকার। তিনি ধ্রুপদী পাশ্চাত্য সঙ্গীত যুগের একজন বিখ্যাত ও প্রভাবশালী সুরকার ছিলেন। বিথোভেনের মত আরও অনেক সুরস্রষ্টাকে প্রভাবিত করেছেন তিনি। সর্বকালের সেরা সঙ্গীতস্রষ্টাদের মধ্যে তাকে প্রথমের দিকেই রাখা হয়।

পুরো আর্টিকেলের তথ্যসূত্র :
১. Musicophilia -Olivers Sacks
২. Psychomusicolgy: Music, Mind and Brain (Peer-reviewed journal)
৩. উইকিপিডিয়া
৪. আর্টিকেলে উল্লেখ করা বিভিন্ন গবেষণাপত্র।


লিখাঃ সৌরভ সাহা 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম