শৌচাগারবৃত্তান্ত (পর্ব ১)


১।
লেখাটা শুরু করার আগে দু'টো ব্যাপার বলে রাখি। এক- এই লেখাটা খাওয়ার সময় না পড়াই ভাল।
দুই- বিষয়বস্তুর স্বার্থে এখানে কিছু অমার্জিত ভাষার ব্যবহার আছে। এই ব্যাপারে আপনার সংবেদনশীলতা থাকলে অনুরোধ করব লেখাটা না পড়তে। তবে এসব শব্দ প্রাসঙ্গিকভাবে যথাপ্রেক্ষিতেই এসেছে। অদরকারে এ লেখায় বা আমার অন্য কোন লেখাতেই অমার্জিত শব্দের ব্যবহার থাকবে না- এই ব্যাপারে আমি সবাইকে আশ্বস্ত করতে পারি।
আগামী মিনিট পনেরোর মধ্যে আমার কাজ হবে আপনার-আমার মধ্যে একটা বিষয়ে ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা করা। সেটা হল- মলত্যাগ এবং পয়ঃনিষ্কাশনের মত মজার (বাংলায় বলতে গেলে "ইন্টারেস্টিং") জিনিস কম আছে।
এ ব্যাপারে আমার যুক্তিটা এমন কিছু কঠিন না। আমরা শহরের লোক মাঝেমধ্যে ভুলে যাই পয়ঃনিষ্কাশন বা স্যানিটেশান ব্যাপারটা কত আশ্চর্য। দিনে কয়েকবার আমাদের দেহ থেকে অসম্ভব নোংরা কিছু পদার্থ বের হয়। মানুষ হিসেবে আমাদের চিরন্তন একটা জেহাদ হচ্ছে এই পদার্থ আর আমাদের মধ্যে যতদূর সম্ভব দূরত্ব সৃষ্টি করা। এই জেহাদটাকেই আমরা পয়ঃনিষ্কাশন নাম দিয়েছি।
আমি-আপনি উপরতলার ভদ্দরলোক, আমরা নাহয় জেহাদে জিতেছি- বাথরুম করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বর্জ্য আমাদের চোখের আড়াল হয়ে যায়। কিন্তু পৃথিবীর অনেক জায়গায় সংগ্রাম এখনো চলছে। এই সংগ্রামের পথ ক্ষেত্রবিশেষে সর্পিল এবং কণ্টকাকীর্ণ। কখনও আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এই সংগ্রামে যেতে, কখনও হোঁচট খায়।
এই উত্থান পতনের গল্পগুলোই মজার।
চলুন শুরু করি।

২।
বাথরুম করার সবচেয়ে সহজ- এবং অনেকে বলবেন আরামদায়ক- উপায় হচ্ছে খোলা জায়গায় কাজ সারা। সভ্য সমাজে থাকতে গেলে অবশ্য এধরণের স্বাধীনতায় একটু ছাড় দিতে হয়। ঝোপঝাড় কিংবা খেতের আইলে মানুষের মলমূত্র পড়ে থাকার নান্দনিক দিকটা বাদই দিলাম- পানিবাহিত রোগের মহামারী বাঁধাবার জন্য খোলা জায়গায় মলত্যাগের কোন তুলনা নেই। তার কারণ মল মানেই রোগজীবাণুর মহোৎসব। সবাই যদি যেখানে সেখানে মলত্যাগ শুরু করে, প্রকৃতিতে রোগজীবাণুর ছড়িয়ে যেতে খুব সুবিধে হয়। এজন্যই পয়ঃনিষ্কাশনের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে বর্জ্যটাকে ছড়িয়ে যেতে না দিয়ে নিরাপদ একজায়গায় জমা করা।
বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সাধারণত এই সমস্যাটা বেশি থাকে। এই শতকের শুরুতে বাংলাদেশের শতকরা বেয়াল্লিশ ভাগ মানুষ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করতেন। এখন সংখ্যাটা কত আঁচ করতে পারবেন? প্রেক্ষিতের জন্য বলছি- সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী পাশের দেশ ভারতের প্রায় অর্ধেক মানুষই এই দোষে দুষ্ট। নেপালেও একই অবস্থা। পাকিস্তানে তাও অবস্থা খানিকটা ভাল- একুশ শতাংশ মানুষ এখনও খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগ করে। এবার বাস্তববুদ্ধি ব্যবহার করে বলুন বাংলাদেশে সংখ্যাটা কীরকম হতে পারে। কাছাকাছি হলেও হবে।
বাংলাদেশে এখন খোলা জায়গায় মলত্যাগ করার হার মোটামুটি শূন্য। পেরেছেন ধরতে?
অনেক সময় সরকারদলীয় লোক যখন বলেন- দেশের অমুক তমুক সেক্টরের খুব ভাল অবস্থা, বাংলাদেশ পৃথিবীর জন্য 'রোল মডেল'- সাধারণত এ ধরণের মন্তব্য জনগণের পক্ষ থেকে খানিকটা হাস্যরসের অবতারণা করে। পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যাপারে কেউ এই মন্তব্য করলে হাসার জো নেই। বাংলাদেশের উন্নতি আসলেই অভাবনীয়, এবং এ ব্যাপারে আমরা আসলেই পৃথিবীর জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি। মানতে কষ্ট হলে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর অবস্থা দেখুন।
আমাদের প্রথম গল্পের পটভূমি হল এই অস্বাভাবিক উন্নতির পেছনের রহস্য।
সাধারণত জনস্বাস্থ্য সার্থকতার পেছনে তিনটা উপাদান থাকে- পয়সাকড়ি, সামাজিক সচেতনতা, আর প্রযুক্তি। আমাদের দেশে এই তিনটি ব্যাপারই ছিল।
পয়সাকড়ি বলতে এই ক্ষেত্রে বোঝায় সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর বিনিয়োগ। এটা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এটাই সব নয়। ভারতের এখনকার সরকার তাদের 'স্বচ্ছ ভারত' অভিযানের অংশ হিসেবে দেশময় বাথরুম প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছে। ঝোপঝাড়গামী অনেক মানুষের এতে এমন কোন বিকার নেই- লাখ লাখ বাথরুম অব্যবহৃত পড়ে থেকে স্রেফ নষ্ট হচ্ছে। একে তো ভারতের মত অগ্রসরমান একটা দেশে খোলা জায়গায় মলত্যাগের মত একটা সমস্যা থাকাই একটা বিশ্রী কলঙ্ক। সেই কলঙ্কের ওপরে আরেক স্ক্যান্ডাল হল দেশের মানুষকে বাথরুম দিলেও তাদের ঘাড়ত্যাড়ামি কমে না।
কাজেই টাকা দিয়ে সব কিছু কেনা যায় না চৌধুরী সাহেব। মানুষ অভ্যাসের দাস। পরিবর্তনটা আসতে হয় দেশের সংস্কৃতিতে, মানুষের মনমানসিকতায়।
এই ব্যাপারটাই বুঝতে পেরেছিলেন উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ কমল কর।
৩।
ডক্টর কমল কর খোলা জায়গায় মলত্যাগ নিরসনে পৃথিবীর সবচেয়ে সফল আন্দোলনের প্রবক্তা। একটা পয়সা অর্থ বিনিয়োগ না করেও গ্রামকে গ্রাম মানুষের অভ্যাস উনি পরিবর্তন করেছেন। তার কাজের প্রক্রিয়া এতই চমৎকার এবং ব্যতিক্রমধর্মী যে এটা উল্লেখ না করা একজন বিজ্ঞান লেখকের পক্ষে বড় ধরণের অপরাধ।
ডক্টর কর এবং তার দলবলের চিন্তাটা ছিল খানিকটা এরকম। মানুষ মাত্রের মধ্যেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার একটা সহজাত প্রবৃত্তি আছে। মলমূত্র জিনিসটার উপস্থিতি আমরা প্রকৃতিগতভাবেই সহ্য করতে পারি না। কাজেই যত্রতত্র মলত্যাগের বিরুদ্ধেও প্রতিটি মানুষের মধ্যে একটা তীব্র ঘেন্না কাজ করার কথা। মানুষের সংস্কৃতি যদি পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে তাদের ভেতরকার এই ঘেন্নাটাকে কাজে লাগাতে হবে।
এই চিন্তাটা পুঁজি করেই তারা মাঠে নামলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল গ্রামে গ্রামে প্রচারণা চালিয়ে খোলা জায়গায় মলত্যাগের প্রতি মানুষের যে তীব্র বিতৃষ্ণা, সেটার আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া। মানুষের মনের মধ্যে সেরকমভাবে একটা নাড়া পড়লে বাকি পথ তারা নিজেরাই খুঁজে নেবে। কিন্তু সেই প্রচারণার সাথে আমরা সচরাচর যেসব মীনা কার্টুন মার্কা কথাবার্তা শুনি- স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা বানানো ইত্যাদি- তার কোন মিল নেই। ডক্টর করের দলবল কখনোই গ্রামে গিয়ে খোলা জায়গায় মলত্যাগের অপকারিতা সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করেন না।
তারা যেটা করেন, লিটারেচারে তার নাম হল 'ট্রিগারিং'। এর তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় না গিয়ে আমি সরাসরি আপনাদেরকে মাঠে নিয়ে যাই।
প্রথমে তারা হয়ত গ্রামের লোকজনকে প্রশ্ন করেন- আপনারা কয়জন ঝোপের মধ্যে হাগেন?
এই ভাষাতেই।
মলমূত্র, এমনকি পায়খানাও সভ্য জগতের ভাষা। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যাপারটার প্রতি তীব্র ঘেন্না জাগিয়ে তোলা। রাখঢাক দেওয়া ভাষায় এসব সম্ভব নয়। তাদের এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে যেসব গবেষণাপত্র ইত্যাদি আছে, সেখানেও মলের ইংরেজি প্রতিশব্দ হিসেবে shit কথাটা ব্যবহৃত হয়েছে। পশ্চিমা সংস্কৃতির সাথে খানিক জানাশোনা থাকলে নিশ্চয়ই বুঝবেন এটা আদৌ কোন শোভন শব্দ নয়।
কেউ স্বীকার করলে তারা বলেন- চলেন তো দেখি আপনারা কোথায় হাগেন। জায়গাটা একটু দেখা দরকার। গ্রামবাসী তাদের জায়গামত নিয়ে গেলে তারা তাদেরকে আরো অপ্রস্তুত করা শুরু করেন। এই জায়গায় তাহলে আপনারা হাগেন, না? মহিলারাও কি এখানেই হাগেন? বাচ্চারা?
এই যে এখানে একতাল হাগা দেখা যাচ্ছে- এটা কার? আপনার? কখন করেছেন এই কাজ?
আপনি না বললেন সকালে এখানে হেগেছেন- কই সেটা? কুত্তা খেয়ে নিয়েছে? সেই কুত্তা কি আপনার বাসার কাছাকাছি থাকে? আঙিনায় ঘোরে? পানিতে মুখ দেয়?
একদম যে জায়গাটাতে সবচেয়ে বেশি মলমূত্র, সেখানে দাঁড়িয়ে থেকেই কর্মীরা এ ধরণের আলোচনা চালাতে থাকেন। আসলে গ্রামের মানুষ এমনিতে হয়ত খোলা জায়গায় মলমূত্র দেখে অভ্যস্ত। কিন্তু যেখানে গাদা গাদা মল পড়ে রয়েছে- সেই জায়গায় তীব্র গন্ধের মধ্যে লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থাকা, মলমূত্র নিয়ে খুঁটিনাটি আলোচনা করা, তাও আবার শহর থেকে আসা বড়বাবুদের সামনে- এসব করতে করতে গ্রামবাসীর মধ্যে একটা ভীষণ লজ্জা অস্বস্তি আর ঘেন্না দানা বেঁধে উঠতে থাকে।
কর্মীরা এতটুকু ছাড় দেন না। এই নিয়ে আলোচনা চালাতেই থাকেন।
এহ হে, এই হাগার মধ্যে তো দেখা যাচ্ছে মাছি বসছে। বেশি চিন্তার আশা করি কিছু নেই- আপনার ভাতের মধ্যে যে মাছি বসে সে হয়ত আলাদা। কি বলেন?
আচ্ছা মাছি কি শুকনো হাগাতে বেশি বসে, নাকি ভেজা হাগাতে? কোন হাগা তাড়াতাড়ি শুকোয়?
এই শুনতে শুনতে যদি উপস্থিত কেউ বমি করে দেয়- তাহলে আরো ভাল। বিশেষ করে গ্রামের নতুন বউ জাতীয় মানুষ এ ধরণের কাণ্ড ঘটান। তারা এই প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এরপর কর্মীরা ব্যাপারটাকে একটা অন্যরকম বীভৎস পর্যায়ে নিয়ে যান।
এই যে দেখেন এক গ্লাস পানি নিলাম, দেখলেন তো? সরাসরি বোতল থেকে ঢেলেছি। একদম পরিষ্কার। কারো খেতে আপত্তি নেই তো না?
একজন গ্রামবাসী স্বেচ্ছাসেবক হয়ত এই পর্যায়ে পানিটা খেয়ে নেন।
কর্মী তারপর তার মাথা থেকে একটা চুল ছেঁড়েন। ছিঁড়ে সেটা মাটিতে পড়ে থাকা মলের সাথে স্পর্শ করেন, করে পানির মধ্যে ফেলে দেন।
এই পানিটাও একদম পরিষ্কার, বুঝলেন। কিছুই দেখা যায় না। খেয়ে দেখবেন নাকি মন্তু সাহেব?
খাবেন না? কেন? দেখতে তো বেশ পরিষ্কার টলটলে। এখানে চুল পরিমাণ হাগা আছে বলে এত আপত্তি?
কেউ কি জানেন মাছির ঠ্যাং কয়টা? এই যে আম্বিয়া ঠিক বলেছে- মাছির ঠ্যাং ছয়টা। প্রত্যেকটা ঠ্যাং খাঁজকাটা, অনেকটা কুমিরের লেজের মত। আপনারা তো দেখলেনই একটু আগে হাগার মধ্যে কতখানি মাছি বসে। প্রত্যেকটা মাছি তাদের খাঁজকাটা ঠ্যাং ভর্তি করে হাগা নিয়ে আসে। তারপর তারা আপনাদের ভাতে বসে, পানিতে বসে।
তার মানে কি বুঝলেন তো? বলেন তো আপনারা খাবারের সাথে কি খাচ্ছেন?
কি বলছেন না কেন?
এই যে আবুল সাহেব ঠিক ধরতে পেরেছেন। কিন্তু ওরকম মিনমিন করে বললে হবে না। আসুন সামনে আসুন। সামনে এসে জোর গলায় বলুন খাবারের সাথে কি খাচ্ছেন।
বুঝলেন তো আপনারা- আপনারা একজন আরেকজনের হাগা খাচ্ছেন। প্রতিদিনই খাচ্ছেন। বেশ ভাল পরিমাণেই খাচ্ছেন।
মকবুল সাহেব, আপনি যতই নিজের বাড়িতে বাথরুম লাগান না কেন, যতদিন পর্যন্ত গনু মোল্লা ঝোপেঝাড়ে হেগে যাচ্ছে- আপনাকে তার হাগা খেতে হচ্ছে। জ্বি টুনি আপা, আপনিও খাচ্ছেন। মকবুল সাহেব তো ভেবে রেখেছেন আম্বিয়াকে বিয়ে করবেন- আম্বিয়া আপা কিন্তু এতদিন ধরে সমানে গনু মোল্লার হাগা খেয়ে চলেছেন। বিয়ে করবেন এখন এই হাগাখোরকে?
আলোচনার এই জায়গাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যখন গ্রামের মানুষ বুঝতে পারে খোলা জায়গায় মলত্যাগের মানে আসলে একে অপরের মল খাওয়া, তখন তাদের ভেতরের লজ্জা আর ঘেন্নাটা দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। সাধারণত ভিড়ের মধ্যে একটা হট্টগোল ঝগড়া লেগে যায়, একজন আরেকজনকে দোষারোপ করতে থাকে। মোড়ল জাতীয় কেউ থাকলে সে দাপিয়ে উঠে বলে- আজ থেকে এই গ্রামে খোলা জায়গায় পায়খানা বন্ধ। আমার কথাই শেষ কথা।
গ্রামবাসীর এই একসাথে জ্বলে ওঠার ব্যাপারটাকে কমল কর বলেন ইগনিশন মোমেন্ট। মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন করা এমন কিছু কঠিন না- শুধু তাদেরকে তাদের কর্মকাণ্ডের ফলাফল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হয়। ডক্টর কর তার প্রক্রিয়াটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন- The basic assumption is that no human being can stay unmoved once they have learnt that they are ingesting other people’s shit.
পুরো প্রক্রিয়ার কোথাও কর্মীরা মানুষকে একটুও জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করেন না। একবারও বলেন না- খোলা জায়গায় মলত্যাগের জন্য এই সেই রোগ ছড়ায়। তারা চান মানুষের ভেতর থেকে যাতে স্বাভাবিকভাবে বোধটা আসে। সেই বোধটা যখন ফুটে উঠতে দেখা যায় তখন তারা বাথরুম বানানো বা রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে গ্রামের লোকজনের কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বিদায় নেন।
আপনারা তো পুরো ব্যাপারটা জানলেন, এবার সিদ্ধান্ত আপনাদের। আমরা তাহলে আসি। পাশের গ্রাম থেকে গন্ধ বেরোচ্ছে- ওখানে একটু ঢুঁ মারি।
ডক্টর কর তার এই আন্দোলন বাংলাদেশের কয়েকটা গ্রাম থেকেই শুরু করেছিলেন। আজ তার ফর্মুলা পৃথিবীর অর্ধশতাধিক দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে।
(চলবে)
-----------------------------------------
প্রথম পর্বের পরিশিষ্ট ও তথ্যসূত্র
দেশের সাফল্যে আমাদের খুশি হওয়া উচিত, কিন্তু একই সাথে সাফল্যের চারদিকের প্রশ্নবোধক চিহ্নগুলো দেখাও দরকার। বাংলাদেশের শূন্য শতাংশ খোলা জায়গায় মলত্যাগ (অর্থাৎ শতভাগ পয়ঃনিষ্কাশন কাভারেজ) নিঃসন্দেহে অভাবনীয় সাফল্যের বিষয়। কিন্তু এখনো দেশের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় বিকট কিছু কিন্তু রয়ে গেছে। যেমন ঢাকা শহরের কথাই ধরুন। আমরা এখানে সবাই মোটামুটি বাথরুম ব্যবহার করি। কিন্তু বাথরুম ব্যবহার করা মানেই নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন নয়- সেই বর্জ্য পরিবেশে প্রবেশের আগে ঠিকমত পরিশোধিত হওয়াও জরুরি। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশান প্রোগ্রাম দু'হাজার চৌদ্দতে একটা রিপোর্ট বের করেছিল, যার উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর বারোটি শহরে মলমূত্র পরিশোধনের হালচাল বোঝা। ঢাকা নিয়ে তাদের রিপোর্টের বক্তব্য- এই শহরে উৎপাদিত মানুষের মলমূত্রের মাত্র দুই শতাংশ ঠিকমত পরিশোধিত হয়। বাকি আটানব্বই শতাংশ অর্ধপরিশোধিত বা সম্পূর্ণ অপরিশোধিত অবস্থায় সরাসরি নদীর মধ্যে বা পরিবেশে পড়ে। তার মানে আমরা আটানব্বই ভাগ মানুষ ঘুরেফিরে সেই খোলা জায়গায় মলত্যাগই করছি, শুধু ঝোপেঝাড়ে বা নদীতে ফেলার আগে বর্জ্যটাকে কিছু পাইপের মধ্যে দিয়ে মাইলখানেক ভ্রমণ করিয়ে নিচ্ছি। নদীর ধারে বসে ঝুলন্ত ল্যাট্রিনের ফাঁক দিয়ে পানির মধ্যে মলত্যাগ আর ফাইভ স্টার হোটেলের কমোডে বসে মলত্যাগের কার্যত কোন পার্থক্য নেই। এজন্যই রিপোর্টঅলারা ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে বলেছেন Institutionalized open defecation- অর্থাৎ এটা খোলা জায়গায় মলত্যাগই, কিন্তু একটা সিস্টেম্যাটিক উপায়ে। এই ব্যাপারে আমাদের আরবান প্ল্যানার আর সিভিল এঞ্জিনিয়ারদের কাজ করার জায়গা অনেক। রিপোর্টটার লিঙ্ক কমেন্টে।
কমল করের কার্যক্রমের পোশাকি নাম হল Community-Led Total Sanitation, সংক্ষেপে CLTS। তাদের কাজের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরো জানতে Plan UK থেকে প্রকাশিত Handbook on Community-Led Total Sanitation বইটা দেখতে পারেন।

Writer: Hassan uz Zaman Shamol    

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম