নিয়তি (সাইন্স ফিকশন)


(এক)
-লুই, লুই
ঘুম থেকে হঠাৎ আঁতকে উঠলো সেরেসা।
-সেরেসা, কি হয়েছে?
সেরেসা অনেক ভয় পেয়েছে। সহজাত নারী প্রবৃত্তি- ভয় পেয়ে স্বামীর বুকে মাথা গুঁজে দিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
-কাঁদছো কেনো? তুমি আবার সেই দুঃস্বপ্ন দেখেছো?
-এটা কোনো ভ্রম বা দুঃস্বপ্ন নয় লুই। তুমি জানো আমি ভবিষ্যতের আভাস পাই । আমি স্বপ্নে যা দেখেছি সব সত্যি হয়েছে। কিন্তু....
-জানি, তুমি শান্ত হও। তোমার সব স্বপ্নই বাস্তব হয়। তুমি স্বপ্নে দেখেছিলে তোমার মায়ের এক্সিডেন্ট হবে, আমি প্রোমোশন পাবো- এছাড়া আরো হাজারো স্বপ্ন বাস্তব হয়েছে। তোমার ব্রেন, তোমার কর্টেক্স সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা। তুমি যা-ই স্বপ্নে দেখো তা একসময় সত্যি হয়। কিন্তু তুমি চারবছর ধরে একই স্বপ্ন দেখছো তাও অপূর্ণ। কেউ তোমাকে হত্যা করছে। কিন্তু এটাকি সত্যি হয়েছে বলো? আর তোমার স্বপ্নটাও ঝাপসা। তুমি জানোই না কে তোমাকে হত্যা করবে বা কোথায় করবে।
-তুমি জানো লুই, আমি যখনই কোনো ভবিষ্যৎ আমার স্বপ্নে দেখি সেটা কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ঘটে। হয়তো আমার মৃত্যুর কয়েকঘন্টা আগে আমি আমার স্বপ্নে সবকিছু স্পষ্ট দেখবো।
-উফফ, চিন্তা করো না তো। আমার বিশ্বাস সব ঠিক হয়ে যাবে।

(দুই)
২০৭০ সাল। পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে একটি উল্কা। এই উল্কা পৃথিবীতে আঘাত হানলে পুরো পৃথিবীর প্রাণ নিমেষে ধুলোয় মিশে যাবে। ঠিক কয়েক কোটি বছর আগে এভাবেই সমাপ্ত হয়েছিলো ডাইনোসর যুগ।
কিন্তু এই উল্কার আঘাতের কথা মানুষ জেনে গিয়েছে আরো ১৫ বছর আগেই। "জেভিয়ার্স সুপার কম্পিউটার" ১৫ বছর আগেই ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলো এই ঘটনার। তখন কেউ বিশ্বাস করে নি। যখন ১.৫ বছর আগে প্রথম উল্কাটি দেখা গিয়েছিলো তখনও এর গতিপথ ছিলো ভিন্ন, সৌরজগতের অনেক দূর দিয়ে অতিক্রম করার কথা।
কিন্তু বিধির বাম। অন্য একটি উল্কার সাথে সংঘর্ষ করে এটি সেই উল্কাকে তো ধ্বংস করেছে, সাথে সাথেই নিজের গতিপথ বাঁকিয়ে পৃথিবীকে লক্ষ্য বানিয়ে ফেলেছে।
১৫ বছর আগেই এই ভবিষ্যৎ বাণী শুনে পৃথিবীকে এমন বিপদ থেকে বাঁচানোর জন্য একটি প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে প্রযুক্তিবিদ ম্যাক এবং লিসা। তারা ন্যানো টেক ব্যবহার করে এমন একটি সুরক্ষা কবজ বানানোর চেষ্টায় আছে যেন এটি পৃথিবীকে ঢেকে দেয় শক্তিশালী এক ধাতব আবরণে। এবং বাইরের কোনো শক্তি এই আবরণ ভেদ করতে পারবে না।
তাদের হাতে সময় খুব কম। আর একঘন্টার মধ্যে এই প্রজেক্ট শেষ না হলে পৃথিবী থেকে প্রাণের নিশান মুছে যাবে।

(তিন)
বসন্তের সন্ধ্যা। সেরেসা এক গ্লাস ফ্রুট জুস নিয়ে বসে আছে ডাইনিং এ। লুই আজ প্রজেক্টের কাজে বাইরে রাত কাটাবে। ফিরবে সকালে। সে জানেনা রাতটা কিভাবে কাটবে তার! এখন থেকেই কেমন ভয় হচ্ছে তার।
রাতের খাওয়া শেষে রোজকার দিনের মতো চেক করে নিলো সব ঠিক ঠাক আছে কিনা; জানালা-দরজা বন্ধ কি-না।
এরপর ঘুমাতে গেলো সে।
নরম গদিতে শুয়ে এটা ওটা ভাবতে ভাবতে ঘুমে তলিয়ে গেল সেরেসা।

(চার)
-ম্যাক, প্রজেক্ট শেষ। এখন পুরো সিস্টেম রান করার জন্য একটা সুপার কম্পিউটার দরকার যেটা জেভিয়ার্স কম্পিউটারের মতো শক্তিশালী। নয়তো পুরো সিস্টেম রান হতে সময় লাগবে।
-কিন্তু লিসা, তুমি জানোই ওই কম্পিউটার আমরা ব্যবহার করতে পারব না। ওই কম্পিউটারের এক বিশাল ডিসপ্লে-ই শুধু আমরা দেখতে পাই। ওই কম্পিউটারের Core ১০০ একরের একটা রুমের মধ্যে যেটা মাটির নিচে এবং সেখানে যাওয়ার পাসওয়ার্ড জেভিয়ার সাহেব নিজে।
- আমি বুঝলাম না ম্যাক, কি দিয়ে তৈরী এই কম্পিউটার যে এটা এত শক্তিশালী আর ভবিষ্যৎ নিঁখুতভাবে বলে দেয়। আগে অনেক ভবিষ্যৎ বাণী সত্য হলেও এইবারের ঘটনার পর আসলেই কোনো সন্দেহ থাকেনা এর কাজ নিয়ে।
- হুম। এজন্যই বোধ হয় জেভিয়ার সাহেব কিছু অজানা কোড পাস হিসেবে দিয়েছেন ওই রুমে পৌছানোর দরজায়। তারপর সুইসাইড করে নিজেকে শেষ করে দিয়ে রহস্য কে রহস্যই রেখে গেছেন।
-আচ্ছা যাই, লিউকা কম্পিউটারের সাহায্যে প্রোগ্রাম রান করাই। এটাই শেষ উপায়। আর মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে কাজ শেষ না হলে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।

(পাঁচ)
ঘুম থেকে উঠে বসলো সেরেসা। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। সে আজ আবার সেই স্বপ্ন দেখেছে। তবে আজ একটু ভিন্ন। সে স্পষ্ট দেখেছে আজ- তার খুনি কে! খুনি তাকে খুন করার পর তার মাথা শরীর থেকে আলাদা করে ফেলেছে। খুনির কাছে তার ব্রেন অনেক দামী।
সে তড়িঘড়ি করে আলমারি খুলে রিভলবারটা বের করল। গুলি নেই তাতে।
সে আরও বেশি ঘামতে শুরু করল।
হঠাৎ খুট করে একটা আওয়াজ হলো পিছনে। সে ভয়ে ভয়ে ঘুরে দাঁড়ালো।
-কি সেরেসা? আমি মাস্ক পড়ে আসলেও আমি জানি তুমি আমার চেহারা দেখে ফেলেছো তোমার স্বপ্নে। তারপর বলো, মৃত্যুর অনুভূতি কেমন?
-কেন করছো এসব? কি চাও তুমি?
মাস্ক পড়া ব্যাক্তি আর কোনো কথা না বলে তার হাতের ছুরিটা সেরেসার গলায় বসিয়ে দিল।

(ছয়)
পৃথিবী বেঁচে গিয়েছে। বেঁচে গিয়েছে সভ্যতা আর মানবপ্রাণ। উল্কা আঘাত হানার কয়েক মুহুর্ত আগেই পৃথিবীকে শক্ত আবরণে ঢেকে দিতে সক্ষম হয়েছিলো তারা। লিসা, ম্যাক আর তার সহকর্মীরা খুবই খুশি আজ। যখন পৃথিবী ধাতব আবরণে আবৃত ছিলো তখন পৃথিবীতে অন্ধকার ছেয়ে গেছিলো। অন্ধকার কেটে গিয়েছে- সাথে সব বিপদও। আর এই কৃতিত্বের প্রধান দাবীদার "জেভিয়ার্স কম্পিউটার"।

(সাত)
লুই জেভিয়ার। ৫০ বছর আগে তার স্ত্রী সেরেসা খুন হন। কে খুনি কেউ জানেনা। পুলিশ কোনো কুল কিনারা করতে পারে নি। খুনি সেরেসার মাথা কেটে নিয়ে গিয়েছে। এত নৃশংস হত্যা!
ঠিক এই হত্যার পরেই বদলে যায় লুই জেভিয়ারের জীবন। দীর্ঘ পরিশ্রমের পর সে আবিষ্কার করেছে এক কম্পিউটার যেটা ভবিষ্যৎ বলতে পারে- ঠিক তার স্ত্রী এর মতো। পৃথিবীর মানুষ লুই জেভিয়ারকে সন্মানের উচ্চ পদে আসীন করে রেখেছে।

...............সমাপ্ত...............
(প্রশ্নঃ কে এবং কেনো হত্যা করেছিলো সেরেসাকে?)


লিখাঃ প্রজেশ দত্ত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম