ডোপামিন এর কারসাজি


ভূমিকাঃ- মানবদেহে যে চারটি হরমোন আনন্দ বা খুশিভাব উৎপন্ন করার জন্য দায়ী তার একটি হল ডোপামিন (dopamine)।
বাকিরা হলো,
1.এন্ডোরফিন (endorphin)
2. সেরোটোনিন (serotonin)
3. অক্সিটোসিন (oxitocin)
এই চারটি জৈব রাসায়নিক যারা হরমোনের মত কাজ করে, তাদের প্রত্যেকের কর্মপদ্ধতি আলাদা।

কোথায় নিঃসৃত হয়ঃ- হরমোন হিসেবে কাজ করার সাথে সাথে ডোপামিন neurotransmitter হিসেবেও কাজ করে। বিশেষ কিছু স্নায়ু কোষ বা নিউরন থেকে ডোপামিন ক্ষরিত হয়। প্রধানত মস্তিষ্ক এর মধ্যভাগে দুটি বিশেষ অঞ্চলের স্নায়ুকোষ কলা(tissue) থেকে ডোপামিন নিঃসৃত হয়। এই দুটি অঞ্চলের নাম substantia nigra এবং ventral tegmental area। এছাড়া মানবদেহে অন্যান্য অঙ্গ (organ)থেকেও ডোপামিন নিঃসৃত হয় ও বিশেষ কাজ সম্পন্ন করে। যেমন বৃক্ক, অগ্ন্যাশয়।

[ neurotransmitter - মস্তিষ্কে তথ্য পরিবহনের কাজ করে স্নায়ুকোষ। দুটি বা ততোধিক স্নায়ুকোষের মাঝে যে ফাঁক (synaps) থাকে সেই স্থানে এক কোষ থেকে আর এক কোষে তথ্য পৌঁছে দেয় কিছু রাসায়নিক যাদের আমরা neurotransmitter বলি।]

কি কাজ করেঃ- আমাদের সার্বিক মুড(mood) বা মনের ভাবকে নিয়ন্ত্রণ করে ডোপামিন। আবেগ বা উত্তেজনায় আমরা কিভাবে সাড়া দেব, তাও ডোপামিন নিয়ন্ত্রণ করে। ডোপামিনকে কখনো 'feel-good' হরমোন বলা হয়।যে কাজে পুরস্কার লাভের সম্ভাবনা আছে সেই কাজ করার প্রেরণা যোগায় ডোপামিন। যেমন একজন ছাত্র জানে যে ভালো করে পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো ফল হবে। সেখান থেকে ভালো চাকরি হবে। ভালো চাকরি হলে সে ভালো বাড়ি, মনের মত গাড়ি, শখের জিনিস এসব কিনতে পারবে। তাই তাকে পড়াশোনা করতে প্রেরণা যোগাবে ডোপামিন।
ডোপামিন এর প্রভাবে একটি তাৎপর্যপূর্ণ কাজ(যেমন ভালো পরীক্ষা দেওয়া, বিশেষ কোনো কাজ আয়ত্ত করা যেমন সাইকেল চালানো বা সাঁতার শেখার মত কাজ) করে আমরা তৃপ্তির আস্বাদ পাই। আরো ভালো করে কাজ করার প্রেরণা পাই।
বলতে গেলে, ডোপামিনেরই অনুপ্রেরণায় আমরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিজেকে নিযুক্ত করতে পারি। এর মধ্যে পড়ে স্কিইং, স্কাই ডাইভিং, সি সার্ফিং,প্যারা গ্লাইডিঙ,রিভার রাফটিং,মাউন্টেনিয়ারিং বা স্কুবা ডাইভিং এর মত এডভেঞ্চারাস স্পোর্টস।
ডোপামিন শুধু মন বা মস্তিষ্কে নয়, শরীরের প্রধান তন্ত্র (system)গুলি যাতে সুন্দরভাবে কাজ করে, তার দায়িত্বে থাকে। রক্তবহ নালিগুলিকে প্রসারিত করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। শরীরের দুটি প্রধান বর্জ্য পদার্থ(নাম লিখলাম না)শরীর থেকে বের করে দেওয়ার কাজও নিয়ন্ত্রণ করে ডোপামিন। একটু বয়স্ক লোকেদের কনস্টিপেশন এর প্রধান কারণ ডোপামিন এর মাত্রা কমে যাওয়া। অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন এর ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করাও ডোপামিন এর কাজ।

উপসংহারঃ- মস্তিষ্কে ডোপামিন এর মাত্রা কোনো কারণে স্বাভাবিকের থেকে কম বা বেশি হতে পারে।কম হলে সেই ব্যক্তি নিদ্রাহীনতা, অবসাদ বা পার্কিনসন্স ডিজিজে ভুগতে পারেন। একদল বিশেষজ্ঞ মনে করেন ডোপামিন মাত্রা কমে গেলে মানুষ সহজে নেশাসক্ত হন। সিগারেট খেলে এমনকি কম্পিউটারে ভিডিও গেম খেললেও একই রকম সাময়িক ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করে, যার দায় কিন্তু সেই ডোপামিন এর।

অন্য একদল বিশেষজ্ঞর মতে ডোপামিন দরকারি মাত্রার চেয়ে বেশি হলে তা স্কিজোফ্রেনিয়ার মত কঠিন মানসিক ব্যাধির কারণ হতে পারে।
তবে ডোপামিন মাত্রা কমে যাওয়ার সংখ্যাই বেশি। তাই গবেষকদের মূল লক্ষ্য প্রাকৃতিক উপায়ে ডোপামিনের মাত্রা বাড়াবার উপায় কি তার খোঁজ করা।
সুষম খাদ্য গ্রহণ, শান্তিপূর্ণ ঘুম ও পরিমিত ব্যায়াম শরীরে তথা মস্তিষ্কে ডোপামিন এর সঠিক মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে বলে অনুমান।
এই উত্তরটা কজন পড়বেন জানিনা, তবে বই ও ইন্টারনেট ঘেঁটে উত্তরটি লেখার পর আমার একটা তৃপ্তির অনুভূতি হচ্ছে যার ক্রেডিট অবশ্যই আমার মস্তিষ্ক এ ক্ষরিত ডোপামিনকে দিতে হবে।


Writer: Gopal Kundu

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম