মনস্টার (সাইন্স ফিকশন)



(এক)
-আমরা এখানে না এলেও পারতাম সুনীল।
-হ্যাঁ রে। এত ঘন জঙ্গল। গত কয়েক মাসে এই জঙ্গলের নামে কত ঘটনাই রটেছে।
-আমরা সেটাই তো দেখতে এসেছি রিমি। আর জিহান, রিমি এত ভয় পাস না তোরা। সাথে লাইসেন্স করা রিভলবার এনেছি আমি।
-দেখ, আমরা কিন্তুু পুলিশের নিষেধ না শুনে এখানে এসেছি। উল্টাপাল্টা কিছু হয়ে গেলে...
-রিল্যাক্স দোস্ত। কিছুই হবেনা। চল চল, আর অল্প একটু পথ বাকী।

(দুই)
রূপপুরের জঙ্গল। জঙ্গলটা অনেক বড় আর ঘন। আগে এখানে বনবিড়াল, বনমুরগী, বেজি, কাঠবিড়ালির মতো ছোটখাটো প্রাণী দেখা যেত। কিন্তু গত ৫ মাসে জঙ্গলটার চেহারা যেন বদলে গিয়েছে। এর ঠিক মাঝামাঝি এলাকায় এখন আর তেমন কোনো পশুপাখি নেই। রাতারাতি যেন সব বিলুপ্ত হয়ে গেছে। জঙ্গলটা যেন রহস্যজনক হয়ে উঠেছে ৬ মাস আগে এখানে একজনের লাশ পাওয়ার পর। তার লাশ পাওয়া যায় জঙ্গলের ঠিক মাঝামাঝি এলাকায়। মৃত্যুর সময় রাত ৩ টার আশেপাশে।
সেই মৃত্যুর সমাধান হতে না হতেই আরও জটিল রহস্যে ঢেকে যায় রূপপুর জঙ্গল।
গত একমাসে একই জায়গায় আরও চার টা লাশ পাওয়া গেছে। সব গুলোর মৃত্যুর ধরণ একই। কেউ ভিক্টিমদের শরীর থেকে মাংস খুবলে খেয়েছে। আধো খাওয়া শরীর। সবগুলো মৃত্যুই ঘটে রাত ২-৪ টার মধ্যে। প্রথম দুইটা লাশ ছিলো দুই চোরের। চুরি করে পালানোর সময় নাইট ডিউটিতে থাকা পুলিশের তাড়া খেয়ে আশ্রয় নেয় জঙ্গলে।
শেষ দুইটা মৃত্যু হয়েছে জিহানের দুই ক্লাসমেটের। তারা কিছুদিন ধরে কি নিয়ে যেনো অনেক ব্যস্ত ছিলো। কিছু একটা রহস্য ভেদ করতে চাইছিলো। কিন্তু তার আগেই....
পুলিশ জায়গাটা কয়েকবার এসে ঘুরে গেছে। কিন্তু তারা জঙ্গলটাতে কিছুই পায়নি। সাময়িক সময়ের জন্য তারা সেখানে মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
জিহানের মোটেও ব্যাপারটা পছন্দ হয়নি; মৃত্যুগুলো ঘটে রাত ২-৪ টার মধ্যে। তাই ওই সময়ে সেখানে যেয়ে দেখা উচিত এই ঘনজঙ্গলে কি ঘটছে। এছাড়া কিভাবে কয়েকমাসের মধ্যেই জঙ্গলটা এমন প্রাণীশূণ্য হয়ে উঠছে? রাতারাতি কোনো ভয়ংকর প্রাণী বাঘ-সিংহ এখানে আসা সম্ভব না।
তারা তিনবন্ধু মিলে তাই আজ চলে এসেছে এই রহস্যের সমাধান করতে।

(তিন)
রাত ২ঃ১৫। তারা পৌছেছে জঙ্গলের ঠিক সেই এলাকায় যেখানে লাশগুলো পাওয়া গিয়েছিল। ঘন অন্ধকার। ছোটো ছোটো ঝিঁঝিঁপোকার ডাক শোনা যায়। তাদের সবার কাছে একটা করে টর্চ। তারা আলো ফেলে চারদিকটা দেখতে লাগলো।
অদ্ভুত তেমন কিছুই চোখে পড়ছে না তাদের।
-জিহান, সুনীল, কিছু দেখছিস তোরা?
-কি দেখাতে চাচ্ছিস?
-এই জায়গা গুলো দেখ। গাছগুলো কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে না? সব দেখ শুকনো গাছের পাতায় ভরে গেছে আশপাশ। কয়েক ফিট পুরু হয়ে গেছে গাছের মৃত পাতায়।
-হ্যাঁ। কিন্তু মন্দের ভালো! ওই চত্ত্বরটা দেখ। পুরো সবুজ। জঙ্গলের প্রাণ বাঁচিয়ে রেখেছে এই গাছ-লতাগুলো।
-হুহ।
রিমি মুগ্ধ হয়ে চারদিকে শুকনো গাছগুলোর মধ্যে ওই সবুজ ঘেরা অংশটা দেখতে থাকলো। হঠাৎ যেন তার মনে কোথাও খটকা দিল।
-এই, তোরা দেখ তো, এই লতা-পাতা, এই সবুজ, এটা কি একটা গাছ?
-কি বলছিস তুই পাগলের মতো? এতো বড় লতানো গাছ হয় নাকি?
-না তুই দেখ। সব লতা, ডাল, শিকড় একই রকম দেখতে, আর প্রতিটা লতানো ডাল যেনো একই দিকে গিয়ে শেষ হয়েছে।
সবাই এবার লক্ষ্য করলো বিষয়টা। খুবই অবাক তারা। তিনটা বাজে। হঠাৎ সুনীলের ঘড়িতে টিক টিক এলার্ম বেজে উঠলো। সাথে সাথে শুকনো পাতার একটা মড়মড় আওয়াজ শুনে চমকে উঠলো তারা।

(চার)
-রঘু।
-জি স্যার।
-আবার ও তিনটা আধো খাওয়া লাশ। কি হচ্ছে এই জঙ্গলে?
-বুঝছি না স্যার। এখনো যা ফরেনসিক রিপোর্ট পেয়েছি তাতে স্যার খুবই ভয়ংকর কোনো প্রাণী হবে স্যার। বাঘ সিংহ থেকেও ভয়ংকর।
-হুম। লাশগুলো ফরেনসিকে পাঠাও।
কনস্টেবল রঘুকে নির্দেশ দিয়ে গাড়িতে উঠলেন ইনস্পেকটর মঈন। তার কপালে চিন্তার রেখা স্পষ্ট।

(পাঁচ) 
ছয় মাস আগে-
ডঃ অসিমভ। জেনেটিক্স নিয়ে গবেষণা করে কাটিয়ে দিয়েছেন ৪৫ টা বছর। তাঁর স্বপ্ন মানুষকে এমন ভাবে জেনেটিক্যালি উন্নত করা যেন মানুষ তার সব দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারে আর মানুষভেদে তার বিশেষ গুণগুলো আরও উন্নত হয়। সারাজীবনের পরিশ্রমের শেষে একটা ফর্মুলা বানিয়েছেন তিনি। এটা কোনো প্রজাতীর জীবের জিনোম ডিকোড করে সে অনুসারে ইনহ্যান্স করবে। কিন্তু মানুষের উপর তার ফর্মুলা ব্যবহারের আগে তিনি সেটা উদ্ভিদের উপর ব্যবহার করে দেখতে চাইলেন। তাই তিনি ২ দিন আগে আফ্রিকা থেকে এমন এক উদ্ভিদ আনিয়েছেন যেটা বছরে একবার সুগন্ধি ফুল দেয়। তার ফর্মুলা ঠিক হলে ফর্মুলা প্রয়েগের দুদিনের মধ্যেই গাছটি তার পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা পেয়ে যাবে। প্রচুর সুগন্ধি ফুলে ভরে উঠবে গাছটির শাখা প্রশাখা।
বুড়ো বয়সে চোখের, ঘ্রাণের সমস্যা তাই গাছটা কেমন তা ভালো বুঝতে পারেন নি তিনি।
আজ তিনি যাচ্ছেন সেই গাছটির কাছে। তিনি রূপপুরের জঙ্গলে বপন করে এসেছেন ২ দিন আগে। নিজের ৪৫ বছরের সাধনার ফলাফল দেখতে তিনি খুবই এক্সাইটেড। সব কিছু গুছিয়ে বেড়িয়ে গেলেন তিনি। তার বেড়িয়ে যাওয়ার ঠিক ৫ মিনিট পর তার কাছে একটা মেইল আসল। যে এজেন্সির মাধ্যমে তিনি উদ্ভিদটি আনিয়েছেন সেই এজেন্সি থেকে,
"খুবই দুঃখিত স্যার। আপনার কাঙ্খিত উদ্ভিদটি না থাকায় আমাদের আফ্রিকান এজেন্সি অন্য একটি উদ্ভিদ পাঠিয়ে দিয়েছে। উদ্ভিদটি কার্নিভোরাস। Nepenthes. কিন্তু ভয় পাবেন না স্যার। এটা ছোটো ছোটো পোকামাকড়, ব্যাঙ খেলেও মানুষের কোনো ক্ষতি করেনা। আমরা খুব শীঘ্রই এসে উদ্ভিদটি পরিবর্তন করে নিয়ে যাব। ধন্যবাদ।"


লিখাঃ প্রজেশ দত্ত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম