গল্পে গল্পে চুম্বকের ছলা কলা



(এক)
বাবা মার একমাত্র সন্তান অপু |বাবা মার সপ্ন ছেলে বড় হয়ে ডাক্তার হবে|কিন্তু ছেলেতো পড়াশুনা করতে নারাজ|তাই বাবা মা একজন হোম টিউটর নিযুক্ত করলেন ,যিনি কিনা শর্টকাট পড়িয়ে যে কাউকে এ প্লাস পায়িয়ে দিতে পারে| আর তাইতো তাকে সবাই ঘেচাং মাস্টার নামেই চিনে|অন্য দিকে আছেন আমাদের সবার প্রিয় তপু ভাইয়া|ভার্সিটিতে চান্স না পাওয়ার পর একটা কলেজে ভর্তি হয়ে এখন নিজ এলাকাতেই আছেন|অবশ্য এলাকার সবার কাছে তিনি আমড়া কাঠের ঢেকি,এলাকার ছেলে মেয়েদের বিজ্ঞানের মজার গল্প শুনানো আর তাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া ছাড়া আর তার কোন কাজ নেই|আজও অনেকেই গল্প শুনতে আর প্রশ্ন করতে এসেছে,তাদের সাথে আজ গল্প শুনতে এসেছে অপু|এইদিকে তার বাসায় স্যার আসার সময় হয়ে গেছে ,তাই বেচারা গল্পের আসর রেখে বাসায় চলে আসলো|স্যার আজ চৌম্বক আর চৌম্বকের আচার আচরন পড়াচ্ছেন|

স্যার: প্রতিটা চুম্বকের দুইটা মেরু থাকে ,এর একটা হল উত্তর মেরু আর একটা হল দক্ষিন মেরু|এই চুম্বকের আকর্ষন করার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আছে|সেই ক্ষমতা দিয়ে সে ধাতুদের আকর্ষন করে|বুজলে??
অপু:জি স্যার ,কিন্তু স্যার অধাতুকে কেন করে না?
স্যার: এইটাই নিয়ম যে ধাতুকে করবে অধাতুকে করবে না|
অপু:কিন্তু কেন করবে না স্যার|
স্যার:ধমকের সুরে ,এইটাই নিয়ম |এত কেন কেন না করে মুখস্ত করতে বলতেসি মুখস্ত করবা|
বেচারা অপু আর কথা না বলে চুপচাপ বসে রইল |স্যার যাওয়ার পর রাতে পড়া কমপ্লিট করার সময় বইতে দেখলো যে, চুম্বক পারদকে আকর্ষন করে না | কিন্তু স্যার বলেছিল সব ধাতুকে আকর্ষন করে,আবার বই বলতেসে পারদকে করে না| তার মানে হচ্ছে সবাইকে করবে কিন্তু পারদকে করবে না|কিন্তু প্রশ্ন হলো পারদকে কেন করে না বেটা দোষটা করলো কি?
মনের মাঝে তার এই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে আর খেতে খেতে এক সময় নিজেই ঘুমিয়ে যায় অপু|

পরের দিন সে যায় সকল মুস্কিল আসান তপু ভাইয়ার কাছে
অপু: ভাইয়া,চুম্বক সব ধাতুকে আকর্ষন করে কিন্তু পারদকে কেন করে না???
তপু ভাইয়া:শোন ,চুম্বক আসলে ওই সব ধাতুদের আকর্ষন করে যাদের শেষ শক্তিস্তরে বিজোড় সংখক ইলেকট্রন থাকে|পারদের শেষ শক্তিস্তরে জোড় সংখক ইলেকট্রন আছে ,তাই পারদকে করে না|
অপু : ভাইয়া জোড় থাকলে করে না কিন্ত বেজোড় থাকলে করে কেন??
তারপর তপু আস্তে আস্তে বলতে শুরু করেন ওয়েরস্টেডের চুম্বক ক্ষেত্রের গল্প |
তপু ভাইয়া:বিজ্ঞানী ওয়েরস্টেড একদিন দেখলেন যে কোন তড়িৎ পরিবাহীর কুন্ডলী দিয়ে যদি তড়িৎ প্রবাহিত হয় , কুন্ডলির মাঝে একটা চুম্বক ক্ষেত্রে জন্ম হয়| এই চুম্বক ক্ষেত্র একটা ভেক্টর রাশি|তারমানে হচ্ছে এর একটা দিক আছে|এতটুকু বুঝতে পারছ??
অপু: জি ভাইয়া বুজতে পারছি||
একটু হাল্কা কাশি দিয়ে আবার শুরু করলো তপু|
তপু ভাইয়া : আমাদের আশেপাশে আমরা যা দেখতেসি সব কিছু ইলেকট্রন , প্রোটন ,নিউট্রন দ্বারা গঠিত| এদের মাঝে প্রোটন আর নিউট্রন থাকে পরমানুর কেন্দ্রে আর ইলেকট্রন বাইরে শক্তিস্তরে থাকে| এই শক্তিস্তর গুলার আবার উপশক্তি স্তর আছে এদের আমরা বলি অরবিটাল|এই অরবিটাল গুলোতে ইলেকট্রন গুলো জোড়ায় জোড়ায় থাকে আর ঘুরাঘুরি করে কেন্দ্রে চারপাশে আর আর নিজের অক্ষের উপর|
এই পর্যন্ত ক্লিয়ার??
অপু : জি ভাইয়া ক্লিয়ার|
তপু ভাইয়া: চল তাহলে এবার আবার চলে যাই ওয়েরস্টড এর কাছে|আচ্ছা তিনি বলে ছিলেন কোথাও তড়িত প্রবাহিত হলে সেখানে একটা চুম্বক ক্ষেত্রের জন্ম হয়|আচ্ছা তাহলে বলতো তড়িৎ প্রবাহ কি???
অপু:তড়িৎ প্রবাহ হচ্ছে চার্জের প্রবাহ বা ইলেকট্রন এর প্রবাহ|
তপু ভাইয়া: ভেরি গুড|আচ্ছা তারমানে হচ্ছে কোথাও যদি ইলেকট্রন গতিশীল থাকে তাহলে সেখানে তড়িৎ এর জন্ম হবে আর তার সাথে একটা চুম্বক ক্ষেত্রের জন্ম হবে||এই অব্দি ক্লিয়ার???
অপু: জি ভাইয়া ক্লিয়ার|
তপু ভাইয়া: আচ্ছা , তাহলে শুন পরমানুতে ইলেকট্রন গুলা গতিশীল , আর তাহলে প্রতিটা ইলেকট্রন এর জন্য সেখানে ছোট ছোট চুম্বক ক্ষেত্রের জন্ম হয়| ক্লিয়ার??
অপু : জি ভাইয়া ক্লিয়ার|
তপু ভাইয়া: এইবার শুন ,আমরা জানি অরবিটাল গুলোতে ইলেকট্রনরা জোড়ায় জোড়ায় থাকে|কিন্তু প্রতিটা জোড়ার ইলেকট্রন এর নিজ অক্ষের উপর ঘুরার দিক হলো উল্টো|তার মানে একজন দক্ষিনমুখী তো আর একজন উত্তর মুখী| ঘুরার জন্যেই যেহেতু চুম্বক ক্ষেত্রে জন্ম হয় সেহেতু ঘুরার দিক ভিন্ন হবার কারনে চুম্বক ক্ষেত্রের দিক ও ভিন্ন হবে|| বুঝতে পারছ এই অব্দি??
অপু: জি ভাইয়া বুঝতে পারছি|
তপু ভাইয়া: একটা নির্দিষ্ট অরবিটাল এর ইলেকট্রন গুলার চুম্বক ক্ষেত্রের মান সমান হয় কিন্তু দিক হয় ভিন্ন|তাই প্রতিটা অরবিটালে অবস্থানরত ইলেকট্রন এর প্রতিটা জোড়ার ইলেকট্রন গুলার নিট চুম্বকত্ব হয় শুন্য| কারন চুম্বকক্ষেত্রে মান সমান আর দিক বিপরীত হবার কারনে একটা দিক পজিটিভ ধরলে আর একটা দিক নিগেটিভ হয়ে একটা আর একটাকে কেন্সেল করে দিয়ে নীট চুম্বকত্ব হয়ে যায় শুন্য||এই পর্যন্ত ক্লিয়ার??
অপু: জি ভাইয়া||
তপু ভাইয়া: তাহলে এইবার ভাবো যেই ধাতু গুলার জোড় সংখ্যক ইলেকট্রন আছে তাদের প্রতিটা অরবিটাল এ নীট চুম্বকত্ব শুন্য,কারন জোড় সংখ্যক হওয়ার কারনে প্রতিটা অরবিটাল এ ইলেকট্রন জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে| আর এর ফলে একটা ইলেকট্রন এর চুম্বকত্ব আরেক টার টাকে কেন্সেল আউট করে দেয় ,যার ফলে পুরা পরমানুটাতে নীট চুম্বকত্ব হয় শুন্য|ক্লিয়ার??
অপু: জি ভাইয়া ক্লিয়ার|
তপু ভাইয়া: এইবার ভাবো যাদের বেজোড় সংখ্যক ইলেকট্রন আছে তাদের ক্ষেত্রে কি হবে?
তাদের ক্ষেত্রে দেখা যাবে এদের নীট চুম্বকত্ব শুন্য হয় না কারন বেজোড় সংখ্যক ইলেকট্রন থাকার কারনে এদের যেকোন একটা অরবিটাল এ একটা ইলেকট্রন থাকে | আর এই একটা ইলেকট্রন এর তৈরি চুম্বক ক্ষেত্রকে কেন্সেল আউট করার মত অন্য কোন চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি করার কোন ইলেকট্রন থাকে না| বুঝতে পারছো??
অপু: জি ভাইয়া|
তপু ভাইয়া:আর চুম্বক তাদের আকর্ষন করে যাদের মাঝে চুম্বকত্ব আছে|আর তাই যাদের শেষ শক্তিস্তর এ জোড় সংখ্যক ইলেকট্রন আছে তাদের আকর্ষন করে না ,আর যাদের বিজোড় সংখ্যক ইলেকট্রন আছে তাদের আকর্ষন করে|||
কথা কি ক্লিলিয়ার নাকি কোন ভেজাল আছে??
অপু: না ভাইয়া এক্কেবারে ক্লিলিয়ার|||
তপু ভাইয়া:আমি কি ঘ্যাচাং মাস্টার কে গালি দিয়েছি??
অপু:হাহাহা না ভাইয়া।



সকাল সকাল তপু ভাইয়ের কাছে চুম্বকের ছলা কলা আর ইলেকট্রন এর নানান কাজসজি শুনার পর কেন জানি শান্তির ঢেকুর তুলতে পারছে না অপু|মনের মাঝে কি জানি একটা খচখচ করতেসে|এই খচখচানির পেছনে অনেক খুজাখুজির পর অপু তার খচখচানির কারন আবিষ্কার করলো|কারন্টা আর কিছুই না ,একটা প্রশ্ন শুধু|প্রশ্নের খচখচানিতে মনে শান্তি নেই অপুর,তাই বিকেল হতে না হতেই দৌড়ে যায় তপুর কাছে|


তপু ভাইয়া: কি খবর ভবিষ্যৎ ডাক্তারবাবু,আবার কি প্রশ্ন নিয়ে এসেছেন|
অপু: ধাতু গুলাতে তো সামান্য চুম্বক্ষেত্র আছে তাহলে সে অন্য কিছুর উপর কেন প্রভাব বিস্তার করেনা??
তপু ভাইয়া:গুড কোয়েশ্চেন |আচ্ছা মনে করে দেখ চুম্বক্কক্ষেত্র একটা ভেক্টর রাশি |আর মনে রাখবে ভেক্টর রাশিগুলার যোগ,বিয়োগ,গুন এইগুলা বীজগনিতের নিয়মে হয় না ,হয় জ্যামিতিক নিয়মে তার কারন এই রাশিটা মান আর দিক দুইটার উপরই নির্ভরশীল |বুজতে পারছো?
অপু: জি ভাইয়া
তপু:চুম্বক যে পদার্থকে আকর্ষন করে তাদেরকে বলে ফেরোচুম্বক পদার্থ বলে|আর ফেরোচুম্বকের অল্প চুম্বকক্ষেত্রের জন্ম হয় বেজোড় ইলেকট্রনটার ঘূর্ননের কারনে|কারন বেজোড় ইলেকট্রন এর চুম্বকক্ষেত্র কেন্সেল করার মত কেউ থাকে না,আর জোড় গুলার কেন্সেল হয়ে যায়| তার মানে ভেবে দেখ মাক্সিমাম ক্ষেত্রই কেন্সেল হয়ে যায় আর বাকি থাকে অল্প কিছু ক্ষেত্র|অন্য দিকে একটা চুম্বকের কথা ভাবো ,একটা চুম্বক কে অনেক ছোট ছোট খন্ডে পরিনতকরলে পাওয়া যাবে অনুচুম্বক|খেয়াল করলে দেখা যাবে প্রতিটা টুকরা উত্তর দক্ষিন মুখি হয়ে আছে ,তার মানে হচ্ছে এদের সবার চুম্বকক্ষেত্রের দিক সেইম|আবার এই ছোট টুকরা গুলাদিয়ে বড় চুম্বক যদি বানাই তাহলে কি এদের কি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে??মোটেই না , তারমানে হচ্ছে বড় চুম্বক ছোট ছোট চুম্বক নিয়ে গঠিত আর ছোট গুলার ক্ষেত্রেই দিক যেহেতু সেইম সেহেতু এইখানে কোন চুম্বক ক্ষেত্রই কেন্সেল হবে না| তাহলে বল কার মাঝে চুম্বকক্ষেত্রের মান বেশি হবে?ধাতু নাকি চুম্বক??
অপু:চুম্বকের অনেক বেশি হবে ভাইয়া
তপু: ইয়েস| তার মানে হচ্ছে ধাতুর চুম্বক্ষেত্রে মান অনেক অনেক অনেক কম আর তা ছাড়াও একটা ধাতু টুকরার এক একটা পরমানুর চুম্বকক্ষেত্রের দিক ভিন্ন ভিন্ন হয় ,যার কারনে খন্ডটাতে মোট চুম্বকক্ষেত্রে মান হয়ে যায় শুন্য এর কাছাকাছি|আর তাই ধাতু অন্য কিছুর উপর প্রভাব বিস্তর করতে পারে না||কথা কি কিলিয়ার নাকি ভেজাল আছে???
অপু:এক্কেবারে কিলিয়ার |
এইবার শান্তির ঢেকুর তুলে বাড়ি গেলো অপু|কিন্তু তাউ যেন শান্তি নেই কারন ঘেচাং মাস্টার আসার সময় হয়ে গেছে|
অপু বই নিয়ে টেবিলে , সামনে ঘেচাং মাস্টার ||
ঘেচাং মাস্টার:এই যে এই লাইন টা খুবই ইম্পরট্যান্ট
"পৃথিবী একটা বিরাট চুম্বক " ডা:উইলিয়াম গিলবার্ট এই কথা বলেছেন
অপু: পৃথিবী চুম্বক!!কিন্তু কিভবে??(মনে মনে)মনে মনে আবার খচখচানি শুরু হয়ে গেছে অপুর|সকাল হলেই যেতে হবে ভাইয়ের কাছে|কিন্তু এখনতো রাত আর সকালটা যেন হতেই চাচ্ছে না||


(দুই)
গিলবার্ট সাহেবের কথা শুনার পর থেকেই মনকে যেন কোন ভাবেই শান্ত করতে পারছিলনা অপু।এটাই মনে হয় বিজ্ঞানের মজা, যে কোন কিছুর জন্য অস্থির থাকবেন কিন্তু একবারের জন্যেও বিরক্তি আসবে না।ধরা যায় না, ছোয়া যায় না, কিন্তু অনুভব করা যায়।যাই হোক অপেক্ষার রাত যেন পার হয় না অপুর।অবশেষে রাত যেন বিদায় নিয়েছে। সকালে উঠেই নাস্তা সেরে এক দৌড়ে গিয়ে পৌছলো তপু ভাইয়ের কাছে।অপুকে দেখেই তপু নিজের সেই একান্ত মলিন কিন্তু প্রাঞ্জল হাসিটা দিয়ে বরাবরের মতই বললেন...
তপু ভাইয়া : গুড মর্নিং ডাক্তার সাহেব।
অপু :মর্নিং গুড করার জন্যই আসলাম ভাইয়া।
তপু ভাইয়া:আচ্ছা, তাহলে এইবার প্রশ্নটা বলে ফেলুন।
অপু :ভাইয়া তুমি তো বলেছিলা যে একটা চুম্বকে ভাঙ্গলে অনুচুম্বক পাওয়া যায়,আর সবগুলো চুম্বকের চুম্বক্ষেত্রের দিক থাকে সেইম তার মানে হচ্ছে ইলেকট্রন গুলা সেই দিকে ঘুরে।
তপু ভাইয়া:হুম বলেছি।কিন্তু প্রশ্নটা কি জনাব?
অপু: উইলিয়াম গিলবার্ট বলেছেন যে,পৃথিবী একটা বিশাল চুম্বক,তাহলে আমরা যদি পৃথিবীকে ভেংগে ছোট ছোট করি তাহলে কি অনুচুম্বক পাবো??
তপু ভাইয়া:না ভাইয়া, পাব না। আমরা কেবল চুম্বক পদার্থগুলাকে ভাংগলেই অনুচুম্বক পাবো।আর পৃথিবী চুম্বক পদার্থ না।।
অপু:কিন্তু ভাইয়া গিলবার্ট সাহেব তো বলেছেন যে,পৃথিবী একটা বিরাট চুম্বক।
তপু ভাইয়া:গিলবার্ট মশাই এই কথা বলেছেন তার একটা মজার কারন আছে।আর কারনটা হলো, আমাদের পৃথিবীর একটা বিরাট চুম্বক ক্ষেত্র আছে।এখানের আসল মজা, পৃথিবী চুম্বক না কিন্তু পৃথিবীর চুম্বক ক্ষেত্র আছে।পৃথিবী চুম্বক না বলেই আমরা পৃথিবী থেকে তুলনামূলক সহজ ভাবে ধাতু উত্তলন করতে পারি।
অপু:ভাইয়া চুম্বক পদার্থের চুম্বক ক্ষেত্র থাকেই আর ধাতুর সৃষ্টি হয় ইলেকট্রন এর ঘূর্ণনের ফলে।কিন্তু পৃথিবীর চুম্বক ক্ষেত্রে কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে?
তপু ভাইয়া:গুড কোয়েশ্চেন লিটল গিলবার্ট।এইবার তাহলে শুনুন পৃথিবীর চুম্বক ক্ষেত্রে গল্প।অনেক আগে ধারনা করা হতো পৃথিবীর চুম্বক ক্ষেত্রের জন্ম হয়েছে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে থাকা চুম্বকায়িত শিলার জন্য।কিন্তু এই ধারনা বিজ্ঞান মহলে বেশিদিন টিকে নি।কারন আমাদের পৃথিবীর ভেতরের দিকের তাপমাত্রা কয়েক হাজার ডিগ্রি সেটিগ্রেড যা লোহার কুরি তাপমাত্রার চেয়েও অনেক বেশি, আর এই তাপমাত্রায় ফেরোচুম্বক পদার্থ প্যারাচৌম্বক পদার্থে পরিনত হয়।
ক্লিয়ার?
অপু:জি ভাইয়া ক্লিয়ার কিন্তু প্যারাচুম্বক আর ফ্যারোচুম্বক জিনিসটা ঠিক ঠাক বুজলাম না।
তপু ভাইয়া:অকে ভাইয়া বলতেসি।আসলে ফেরোচুম্বক হচ্ছে তারা যারা চুম্বক ক্ষেত্র দ্বারা প্রবল ভাবে আকর্ষিত হয়, আর কোন চুম্বক ক্ষেত্রে স্থাপন করলে নজে চুম্বকায়িত হয়ে নিজেও চুম্বক ক্ষেত্রের সৃষ্টি করতে পারে।আর অন্যদিকে প্যারাচুম্বক তারা, যারা চুম্বক দ্বারা তেমন আকর্ষিত হয় না।ক্লিয়ার?
অপু:জি ভাইয়া বুঝেছি,কিন্তু পৃথিবীর চুম্বক ক্ষেত্রটা সৃষ্টি হলো কিভাবে?
তপু ভাইয়া:আচ্ছা,আসলে পৃথিবীর চুম্বকের উৎস কী,তা আসলে আমরা কেউ সঠিক ভাবে জানি না,তবে ধারনা করা হয় খুব সম্ভবত ডায়নামো ক্রিয়া জড়িত।যার মানে হল আমরা তো জানি যে পৃথিবীর ভেতরের দিকে তাপমাত্রা অনেক আর এই তাপমাত্রায় ধাতু গুলো গলিত অবস্থায় থাকে,আর সেগুলো কেদ্রের চার দিকে ধুরপাক খেতে থাকে।ব্যাপারটা কিরকম চিন্তা করে দেখ,সবকিছু ঘুরতেসে তার উপর পদার্থের অবস্থা অনেকটা প্লাজমার মত,যাতে প্রচুর পরিমানে ফ্রি ইলেকট্রন থাকে।। যার ফলে সব ইলেকট্রন গতিশীল থাকে।আর আমরা জানি ইলেকট্রন ফ্লো হলেই চুম্বকক্ষেত্রের জন্ম হয়।আর এই গলিত ধাতুদের ফ্লোয়ের ফলেই পৃথিবীর চুম্বক ক্ষেত্রের জন্ম হয়েছে।।
কথা কি ক্লিলিয়ার নাকি ভেজাল আছে?
অপু:জি ভাইয়া টোটাল ক্লিয়ার।কিন্তু ভাইয়া এই চোম্বক ক্ষেত্রের প্রয়োজনীয়তাটা কী?
তপু ভাইয়া:বাহ বেশ ভাল প্রশ্ন।দেখ প্রতিটা চুম্বকক্ষেত্রেরদুটো মেরু থাকে একটা উত্তর মেরু আরেকটা দক্ষিন মেরু।এই দুইটা কাজে লাগিয়ে কম্পাস বানানো যা দিক নির্নয়ে সাহায্য করে। কিন্তু শোন আমরা যেটাকে পৃথিবীর উত্তর মেরু বলি সেটা আসলে পৃথিবীর চুম্বক ক্ষেত্রের দক্ষিন মেরু।আর চুম্বক ক্ষেত্র থাকার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দিক হল,এইটা আমাদের বায়ুমন্ডলকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে।।
অপু:কিহ!! বায়ুমন্ডল কে সাহায্য করে?কিন্তু কিভাবে?
তপু ভাইয়া:হুম করে।একটা সময় ছিল যখন মঙ্গল গ্রহের বায়ুমন্ডল ছিল,কিন্তু আজ নেই।তার কারন হচ্ছে সৌরঝড়। সূর্যে প্রতিনিয়ত সৌরঝড় হয় আর এতে বিভিন্ন মৌলের আয়ন সৃষ্ট হয়।যা মঙ্গলের বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে বায়ুমন্ডলকে নষ্ট করে দিয়েছে।।
অপু:ভাইয়া তাহলে তো এই সৌরঝড় আমাদের পৃথিবীর জন্যেও আ্যলার্মিং।।
তপু ভাইয়া:এলার্মিং হত যদি আমাদের চুম্বক ক্ষেত্র থাকতো। সৌরঝড়ের আয়নগুলা আমাদের বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করার আগেই আমাদের চুম্বকক্ষেত্র ওদেরকে পাকরাও করে নিষ্কৃয় কর ফেলে।।।আর বেচে যায় আমাদের বায়ুমন্ডল।।।
বুঝা গেছে পুরাপুরি???
অপু:(মুখ ভর্তি একটা হাসি দিয়ে) জি ভাইয়া একদম বুঝে গেছি।।
এখন যাই ভাইয়া ঘ্যাচাং সাহেব আসার সময় হয়ে গেছে।।।
তপু ভাইয়া: আচ্ছা, ডাক্তার সাহেব।তবে শুনে যান পৃথিবীর চুম্বক মেরু কিন্তু চেঞ্জ হয়।আজ উত্তর দক্ষিন মেরু একটা সময় আসবে যখন দিকটা চেঞ্জ হয়ে অন্য কোনমুখি হয়ে যাবে.....
অপু:অ্য্য...
তপু ভাইয়া: অ্য না বলেন হ্যা।।বাসায় যান এখন, না হয় ঘ্যাচাং সাহেব আবার বাসায় না পেলে চটে যাবে।।।।

লিখাঃ ইয়াসির আরাফাত সাব্বির 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম