আমরা কি আমাদের মস্তিষ্কের ১০০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারবো? যদি পারি তাহলে আমরা কি কি করতে পারবো?আইনস্টাইন
এই প্রশ্নগুলো আমাদের অনেকের মনেই ঘুরপাক খায়।তো আজ আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো
আমাদের ব্রেনের ওজন প্রায় ১৫০০ গ্রাম।এতে প্রায় ৮৬ বিলিয়ন নিউরন রয়েছে।যা সমগ্র প্রাণীজগতের মধ্যে সর্বোচ্চ।সাধারণ ত আমাদের মস্তিষ্ককে সচল রাখতে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের নিত্যদিনের গ্রহণ করা মোট গ্লুকোজের ২০ শতাংশ ব্যায় হয়।শিশুদের ক্ষেত্রে তা ৫০ শতাংশ আর নবজাতকদের ক্ষেত্রে তা ৬০ শতাংশ।এত পরিমাণ শক্তি আমাদের আর কোনো শারীরবৃত্তীয় কাজেই ব্যবহৃত হয়না।তাই আমাদের মস্তিষ্ককে অলস বলা মোটেও উচিত না।আমাদের মস্তিষ্ক প্রতি মিনিটে ৩.৪x১০^২১ এটিপি খরচ করে। তবু এটা আমাদের ৮৬ বিলিয়ন নিউরনকে একত্রে কাজ করাতে সক্ষম নয়।আমাদের দেহে ক্রমাগত শ্বাস প্রশ্বাস চলছে,হৃদসম্পদন চলছে,খাদ্য পরিপাক ও শ্বসন হচ্ছে আরো অনেক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া চলমান।আবার আমাদের মস্তিষ্ক ও আমাদের শরীরবৃত্তীয় অনেক প্রক্রিয়াতে সহয়তা করে।তাই মস্তিষ্ক চাইলেই সকল শক্তি নিউরন সক্রিয় করার জন্য দিতে পারবেনা।মস্তিষ্ ক এক মূহুর্তে শুধুমাত্র অল্প কিছু নিউরনকেই উজ্জীবিত করে।মস্তিষ্ক কোন সময় কোন নিউরনকে সক্রিয় করবে তা নিয়ন্ত্রিত হয় হয় স্পারস কোডিং দ্বারা।মস্তিষ্ক এক মুহূর্তে মোট নিউরনের ১-১৬ শতাংশ পর্যন্ত সক্রিয় করতে পারে।
তাহলে কি আসলেই আমাদের মস্তিষ্কের বেশিরভাগই ব্যবহৃত হয়না?না এটা আসলে সত্য নয়।যদি ৯০ শতাংশ মস্তিষ্ক আসলেই অলস থাকত তাহলে বিবর্তনের ধারায় তা বিলুপ্ত হয়ে যেতো।আসলে আমাদের মস্তিষ্ক একটি শক্তি সঞ্চয়ী প্রক্রিয়াতে কাজ করে।মস্তিষ্ক তার প্রয়োজন অনুযায়ী নির্ধারণ করে তার কোন নিউরনটা কাজ করা দরকার। সে অনু্যায়ী সে কাজ করে এবং আমাদের সকল কার্যক্রম চলমান থাকে।সে আসলে সব নিউরনই ব্যবহার করে কিন্তু একসাথে না।তার মানে আসলে আমরা আমাদের জীবনকালে আমাদের সম্পূর্ণ মস্তিষ্কই ব্যবহার করি।
তাহলে ঐ ১০% ব্যবহার সক্ষমতার ব্যপারটা আসলো কিভাবে? আচ্ছা বলছি আমাদের মস্তিষ্কের চারটি লোব আছে। ফ্রন্টাল,প্যারাইটাল,অক্টিপিটাল এবং টেপোরাল।
বিংশ শতাব্দীর আগে শুধু অক্টিপিটাল আর টেপোরাল লোবের কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত ছিলেন।বলে রাখা ভালো,অক্টিপিটাল লোব চোখের ছবি প্রসেস এবং সংরক্ষণ করে।আর টেপোরাল লোব গন্ধ, স্বাদ,শব্দ প্রসেস আর স্মৃতি সংরক্ষণে কাজ করে। যেহেতু তার ফ্রন্টাল আর প্যারাইটাল লোবের কাজের ব্যাপারে তারা জানতেন না।তাই তারা এই বিশাল অংশকে নীরব অংশ বলে অভিহিত করেন।আদপে এই অংশ ছাড়া আমরা মানুষই হতে পারতাম না।চিন্তা আর বুদ্ধিভিত্তিক প্রায় সকল কাজই এই অংশ নিয়ন্ত্রণ করে।আরো একটা ধারণা ছিল যে মস্তিষ্কের ১০% নিউরন আর ৯০% গ্লিয়াল সেল যারা নিউরনের মত তথ্য আদান প্রদান করেনা তারা নিউরনকে খাদ্য সরবরাহ করে আর অনেকটা কাভারের মত কাজ করে।এইজন্য এই ধারণাটির উদ্ভব হয় যা আজো অনেক মানুষ বিশ্বাস করে তবে অনেক বিজ্ঞানীই এই ব্যাখাকে অগ্রাহ্য করেন।
বিংশ শতাব্দীর আগে শুধু অক্টিপিটাল আর টেপোরাল লোবের কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত ছিলেন।বলে রাখা ভালো,অক্টিপিটাল
আচ্ছা তাহলে হাইস্কুলে রেজাল্টে এত তফাৎ কেনো? কেনো সবাই বুয়েটে ফার্স্ট হয় না? এখানে এখন একটি নতুন জিনিস বলবো সেটা হলো নিউরোপ্লাস্টিসি টি।আমাদের মেধা আর বিচারবুদ্ধি নির্ধারিত হয় আমাদের নিউরনের সংযোগের মাধ্যমে।কিন্তু এই সংযোগ গুলো স্থায়ী নয়।আমরা একই কাজ বার বার করার বা আমাদের পছন্দের কাজ নিয়মিত করি।তাহলে আমাদের মস্তিষ্ক এই কাজ গুলোকে গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করে।যদি কোনো কারণে মস্তিষ্ক আঘাত পায় বা নিউরন সংযোগ ব্যহত হয়।তাহলে এই নিউরোপ্লাস্টিসি টি এ ক্ষতি পূরণ করে নিতে পারে। নিউরোপ্লাস্টিসিটি মূলত নতুন নিউরন সংযোগ তৈরির ক্ষমতা,যা আমাদের দ্রুত আর কার্যকরীভাবে নতুন জিনিস শিখতে সাহায্য করে।আবার আমাদের মস্তিষ্কের দুইটি ভাগ আছে,ডান ভাগ আর বাম ভাগ।আমাদের মস্তিষ্কের ডান ভাগ সৃষ্টিশীলতা, কোনো ঘটনাকে বড় প্রেক্ষাপটে বিচার করার কাজ করে।আর বাম অংশ যুক্তি,কারণ নির্ণয়,বৈজ্ঞানি ক দক্ষতা এর সূক্ষ্ম কাজে সহয়তা করে।বলা হয় যে যার মস্তিষ্ক এই দুইভাগের মধ্যে যত দ্রুত সিগন্যাল আদান প্রদান করতে পারবে সে সমাজে তত মেধা প্রদর্শন করতে পারবে।এই দুইটি ফ্যাক্টরের কারণে এত তারতম্য।যেটা আসলে পুরোটাই নিজের চেষ্টার উপর।তবে ব্রেনের নিউরোপ্লাস্টিসি টির ক্ষমতা ২৫ বছর বয়সের পর ধীরে ধীরে কমতে থাকে।তখন নিউরন গুলো স্থায়ী হয়ে যেতে শুরু করে,তো আপনার বদ অভ্যাস থাকলে এখনি বদলে ফেলার চেষ্টা করুন।তবে আশার কথা হলো কখনোই একদম থামেনা।একজন ষাটোর্ধ লোক হয়ত একটা টিন এজারের মত দ্রুত স্মার্টফোনের কাজ শিখতে পারেনা।কিন্তু ধৈর্য্য ধরে চেষ্টা করলে ঠিকই অনেকটা শিখে যায়।
আচ্ছা তাহলে আইস্টাইনের ব্যাপারটাই বা কি?
আচ্ছা ছবিতে যদি খেয়াল করেন তাহলে আইস্টানের মস্তিষ্কের একটি অংশ নেই।যেটা তার মস্তিস্কের ম্যাথ সমাধান করার অংশটিকে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।তবে এটা বিবেচনা করে যদি আপনি ভাবেন আল্লাহ আইস্টাইনকে দিছে আপনাকে দেয় নাই,আপনি কি করবেন।আচ্ছা আইস্টাইন তো তার মস্তিষ্কের এই ক্ষমতা জানতেন না।এই সত্য তার মৃত্যুর পর আবিষ্কৃত হয়।তো উনি যদি চেষ্টা না করতেন তাহলে হয়ত তিনি সেই পেটেন্ট অফিসের কেরানিই থেকে যেতেন।আইনস্টাইন বাদেও ৯৩৪ জন নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন,তাদের আর আমার আপনার মস্তিষ্ক তো একই।অথবা আপনার মস্তিষ্ক ও হয়ত আইনস্টাইনের মত,কিন্তু আপনি কাজে লাগাচ্ছেন না।
তো আমরা মস্তিষ্ককে কিভাবে কর্মক্ষম করব?কিছুই না,পরিমিত ঘুম,পুষ্টিকর খাবার আর যে কাজে দক্ষ হতে চান সেটা নিয়মিত চেষ্টা করুন।বাকিটা নিজেই বুঝবেন।মস্তিষ্ক আমাদেরকে এ গ্রহের সেরা জীব করেছে,৮৬ বিলিয়ন নিউরন সবকিছু করতে পারে শুধু আপনার ইচ্ছাটাই জরুরি।আর হ্যাঁ আপনি কখনো নিজের মস্তিষ্কের সম্পূর্ণ ব্যবহার করতে পারবেন না এটা ভেবে শক্তি অপচয় করবেন না।সর্বদা খুশি থাকুন।এটাও নিউরন বিকাশের জন্য জরুরি।
আরো জানতে,
১।Sparse Coding- http:// www.scholarpedia .org/article/ Sparse_coding
২।Neuroplastici ty- https:// brainworksneurot herapy.com/ what-neuroplasti city
Writer: Md Ashakur Rahman