অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতায় ৬ রাত ৭ দিনের কলকাতা এবং দার্জিলিং ভ্রমন

Kolkata ana derjiling tour

০৭-০৫-১৯
সকাল ৭:০৫ এ ক্যান্টনমেন্ট থেকে ট্রেনে যাত্রা শুরু। আমরা ৩ জন এর একটা কেবিন নিয়েছি। কেবিন ভাড়া পড়েছে ৭৩০০ টাকার মত। এসি কেবিন। খুব ভাল পরিবেশ। ১ জন শুয়ে থাকার মত জায়গাও আছে। ট্রেনে সকালের নাস্তা নিয়ে আসলো একটু পরেই। প্রতি প্লেট ১০০ টাকা করে। পাউরুটি, টিকা, চিকেন। ভালোই লাগছিল। খুব আরামে গল্প গুজব করে যাচ্ছিলাম ৩ জন। এভাবে ধীরে ধীরে ১২ঃ৩০ থেকে ১ টার মধ্যে পৌঁছে যাই দর্শনা। নামতে হয় বাংলাদেশী ইমিগ্রেশনে। ফর্ম পুরন করে লাইনে দাড়াতে হয়। লাগেজ নিয়ে নামতে হয়না এখানে। বিরক্তিকর লাগলো লাইনে দাঁড়ানো, ফর্ম পুরন করা সবকিছুই। ৩০ মিনিট গরমে লাইনে দাঁড়িয়ে, ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে ট্রেনে যাই। ট্রেন ছাড়তে ছাড়তে দেড় ঘন্টার মত সময় নেয়। আবার ট্রেন চলতে শুরু করে। যেই মুহুর্তে আবার ভাল লাগা শুরু হবে ঠিক তখনি আবার ট্রেন থামে ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশনের জন্য। মহাবিরক্তিকর ১টা প্রক্রিয়া। সব লাগেজ নিয়ে নামতে হবে। কিছুই রাখা যাবেনা ট্রেনে। গরম আর লম্বা লাইন। ফর্ম পুরন করে প্রায় ১ ঘন্টার মত যুদ্ধ শেষ করে ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন কমপ্লিট করি। টুকটাক কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছে তারা। কিন্তু এই বিরক্তিকর প্রক্রিয়ার পর সিদ্ধান্ত নেই জীবনেও আর ট্রেনে অথবা বাসে করে ইন্ডিয়া যাবনা। আরে ভাই ঘুরতে যাচ্ছি। এত প্যাড়া কার ভালো লাগে? তারপর ট্রেনে গিয়ে বসি। দুপুরের খাবার চলে আসে। ১৫০ টাকা করে প্রতি প্যাকেট। খাবার তেমন সুস্বাদু না। ভাত, মুরগী, ডাল আর সবজী। উদরপুর্তির জন্য খাবার খেয়েছি শুধু। ট্রেন চলতে থাকে। আশপাশ দেখতে দেখতে যেতে থাকি। মাঝে মাঝে চা খাই। ভাল লাগে। এভাবে কলকাতা পৌছাই কলকাতা সময় ৮টার দিকে। তারপর ষ্টেশনের বাইরে আসার পর দেখি অনেক ট্যাক্সি ডাকাডাকি করছে। দরদাম করে ২৫০ রুপিতে নিউমার্কেটের দিকে রওয়ানা দেই। পাশেই মারকিউ স্ট্রিট। ডলার ভাংঙ্গাবো এখান থেকে। ১০০ ডলারে ৬৬০০ রুপি পাই। এখন হোটেল এর ব্যাপারে ভাবনা শুরু করি। ঝাকে ঝাকে দালাল ঘোরাঘোরি করে এখানে। তারা হোটেল এর ব্যাপারে কৃত্তিম সঙ্কট তৈরি করে রাখে। তারা আপনাকে বলবে হোটেল নেই, অমুক তমুক অনেক কথা। আমার এক অলস বন্ধুর অলসতায় হোটেল নিজে খোজার ইচ্ছা থাকলেও খুজতে পারিনি।বন্ধুর ঝিমানি দেখে দালালের দেখিয়ে দেয়া এক হোটেলেই উঠি মারকিউ স্ট্রীট এর পাশেই। হোটেল এর নাম হিরা ইন্টারন্যাশনাল। এসি, ওয়াইফাই, ফ্রিজ সব সুবিধা পাবেন এই হোটেল এ। ভাড়া পড়বে প্রতি রাত ৩০০০ রুপি। অলস বন্ধু অলসতা না করলে এরকম রুম ২০০০ রুপিতেই ম্যানেজ করতে পারতাম। হোটেল এ কিছুক্ষন রেস্ট নিয়ে রাতে খাবারের জন্য বের হই। আশেপাশে অনেক হোটেল আছে। আমরা অনেক ঘুরাঘুরি করে সেখানের অনেক ভাল ১টা হোটেলে প্রবেশ করি। হোটেল এর নাম হোটেল আরশালান। সেখানে ভাত মুরগী ভর্তা আর ডাল দিয়ে রাতের খাবার শেষ করি। বিল আসে ৮৫০ রুপির মত যা খাবারের মানের তুলনায় দাম অনেক বেশী। তারপর খাওয়া শেষে একটু হাটাহাটি করে রুমে চলে আসি। গল্পগুজব করে সেদিনের মত ঘুমিয়ে পড়ি।


০৮-০৫-১৭
ঘুম থেকে উঠতে উঠতে ১১ টার মত বেজে যায়। ফ্রেস হয়ে বের হই ১২ টার মধ্যে। উদ্দেশ্য দার্জিলিং যাবার টিকিট কাটবো। কিন্তু বিধি বাম। দার্জিলিং যাবার কোন টিকিট নাই। নিউ জলপাইগুড়ি ( দার্জিলিং যেতে হলে এখানের টিকিট কাটতে হবে) যাবার এসি কেবিন টিকিটের দাম ১৩০০ রুপি করে। কিন্তু কোন টিকেট নাই। এত বড় জার্নি আমরা বাসে করবোনা। ট্রাভেল এজেন্সির লোক বললো ইমার্জেন্সি টিকিটের জন্য এপ্লাই করতে। সেক্ষেত্রে ১৩০০ রুপির টিকিটের দাম পড়বে ২১০০ রুপি করে। তাও কনফার্ম না টিকিট মিলবে কিনা। পরদিন তারা জানাবে টিকিট পাওয়া গেল কিনা, না পাওয়া গেলে টাকা ফেরত দেয়া হবে এই শর্তে টাকা দিলাম। তারপর দুপুরের খাওয়া দাওয়া করি দাওয়াত হোটেলে। ৩ জন খেতে প্রায় ৬০০ রুপির মত খরচ হয়। তারপর ট্যাক্সিতে করে মুভি দেখতে যাই। সিনেপ্লেক্সের নাম hind i nox. খুব ভাল সিনেপ্লেক্স। বাহুবলি ২ দেখে মন ভরে গেছে। টিকিটের দাম নিয়েছে মাথাপিছু ১৭৫ রুপি। শো টাইম ছিল ৪:২৫ এ। মুভি দেখে নিউমার্কেটে ঘুরতে যাই। হালকা কেনাকাটা করি। ষ্ট্রীট ফুড খাই। পাও ভাজি, পানি পুরি, মুড়ি ভর্তা এবং আরো বেশ কিছু সুস্বাদু খাবার। দাম খুব বেশী না। মার্কেটে ঘুরাফেরা করে রাত ১০ টার দিকে রুমে চলে আসি। আর ১টা কথা, ট্র্যাভেল এজেন্সি থেকে ফোন করে বলেছে দার্জিলিং যাবার টিকিট এর ব্যাবস্থা হয়ে গেছে। ৯ তারিখ রাত ১০-০৫ মিনিটে শিয়ালদাহ স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়বে নিউ জলপাইগুড়ির উদ্দেশে।


০৯-০৫-১৯
সকাল ৫:৩০ এ ঘুম থেকে উঠি। এখন ফেয়ারলি প্লেস থেকে ১৩ তারিখ সকালে ঢাকা যাবার টিকিট কেটে রাখবো। খুব সকালে এ গিয়ে ফর্ম পুরন করে লাইনে দাড়ালে লাইন ছোট থাকে। ৭:৩০ এ ফেয়ারলি প্লেস এর লাইনে দাড়াই। ফর্ম পুরন করে টোকেন নিয়ে বসে থাকি। সে এক বিরাট ইতিহাস। এত সকালে গিয়েও আমাদের টিকিট কাটতে কাটতে ১১ টার মত বেজে যায়। টিকিট কাটতে গিয়ে শুনি আরেক কাহিনি। ৩ জন এর জন্য কেবিন নিলেও নাকি এক সাথে সিট পড়বে এমন নিশ্চয়তা তারা দিতে পারবেনা। এটা নাকি তাদের সফটওয়্যারে নেই। বিচিত্র ব্যাপার। যাই হোক টিকিট কেটে তাড়াতাড়ি হোটেলে যাই। কারন চেক আউট করতে হবে রুম থেকে। চেক আউট করতে করতে আমাদের ১২:২০ এর মত বেজে যায়। তখন হোটেল এর ম্যানেজার বলে ২০ মিনিট দেরি হয়েছে তাই ৫০০ রুপি জরিমানা দিতে হবে। অনেকক্ষণ কথা বলেও লাভ হয়নি। ৫০০ রুপি ই দিতে হয়েছে।
আমরা হোটেল এর নিচে লাগেজ রেখে বড় বাজার রওয়ানা দেই। লাগেজ রাখার সময় ম্যানেজার কে জিজ্ঞেস করে নিয়েছি এটার জন্য আবার এক্সট্রা চার্জ দিতে হবে কিনা? তারা বলেছে এক্সট্রা চার্জ দিতে হবেনা। আমি উত্তর শুনে ধন্য হয়েছি। তারপর বড় বাজার গিয়ে দেখি দালালের ছড়াছড়ি। দালাল আপনাকে ননস্টপ বিভিন্ন দোকানের সাজেশন দিয়েই যাবে। প্রতি দোকানের জন্যেই মনে হয় ১ জন দালাল ফিট করা থাকে। শপিং করতে গিয়ে যা বুঝলাম তা হল, শাড়ির দাম সত্যি কম কিন্তু থ্রি পিসের দাম আমার কাছে তেমন কম মনে হয়নি। প্রায় অনেক সময় নিয়ে সেখানে ঘোরাঘরি করি। টুকটাক কেনাকাটা করি। তারপর ১টা ট্যাক্সি নিয়ে রাতের হাওড়া ব্রিজ দেখে আমরা হোটেল এর দিকে যাই লাগেজ আনতে। সেখান থেকে লাগেজ নিয়ে আমরা রওয়ানা দিব শিয়ালদাহ ষ্টেশনের দিকে। এর ফাকে ১টা কথা বলতেই হয় রাতের হাওড়া ব্রিজ, আমাদের রাতের হাতিরঝিলের সৌন্দর্যে কে ছাপিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছে। তারপর ৪০-৫০ মিনিটে শিয়ালদাহ ষ্টেশন পৌঁছে যাই। নিউ জলপাইগুড়ির ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করি। ট্রেন আসে। ট্রেনের কেবিনে যাই। মোহিত হই। সুন্দর ব্যাবস্থা। চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমাতে ঘুমাতে কনকনে এসিতে পথ চলা শুরু হয় জলপাইগুড়ির উদ্দেশে।


১০-০৫-১৯
সকাল ১০ টায় ঘুম ভেঙ্গে দেখি জলপাইগুড়ি চলে এসেছি। সাধারনত ৮টার মধ্যেই চলে আসে ট্রেন। কিন্তু এদিন একটু দেরি হল। ধীরে ধীরে ট্রেন থেকে নামি। এখান থেকে প্রাইভেট ট্যাক্সি করে দার্জিলিং যাব। ১৫০০ রুপিতে দরদাম ঠিক করি। শেয়ারে গেলে আরো কমে যাওয়া সম্ভব। ট্যাক্সিতে যেতে যেতেই দার্জিলিং এর রূপে অবগাহন শুরু হয়ে যাবে। মন্ত্র মুগ্ধের মত আশেপাশের সৌন্দর্য পান করে যাচ্ছি। আমি সাজেক ঘুরে এসেছি। প্রথম প্রথম মনে হচ্ছিল সাজেক এর সাথে অনেক মিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দার্জিলিং আমার কাছে ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। এভাবে ধীরে ধীরে আমরা দার্জিলিং চলে আসি দুপুর ১টার দিকে আর অনুভব করি শীতের তীব্রতা। ট্যাক্সি থেকে আমরা মল এর পাশেই নামি। সেখান থেকে আমরা ১০ মিনিট হেটে পৌছাই আমাদের আগেই বুকিং দেয়া হোটেল টাওয়ার ভিউ তে। এটা জাকির হোসেন রোড এ। রুমের ভাড়া ১৫০০ রুপি। গরম পানি, ওয়াইফাই এর ব্যাবস্থা আছে এবং সবচেয়ে বড় কথা ১টা অনেক সুন্দর বারান্দা আছে যেখান থেকে অনেক মুগ্ধকর দৃশ্যের মাঝে ডুব দিতে পারবেন প্রিয় কোন সময়ে। যেই হোটেলেই উঠবেন আগে থেকে খোজ নিয়ে নিবেন গিজার আছে কিনা। কারন পানি বরফের মত ঠান্ডা। আমরা হোটেল এ বসে কিছুক্ষন রেস্ট নেই। তারপর বিকালে খানাপিনার উদ্দেশে বের হই। হোটেল মহাকালে ভাত, মাংস, মাছ এসব দিয়ে ভাত খাই। ৩ জনের ৫০০ রুপির মত বিল আসে। খাবার মোটামোটি। আরো কমে খাওয়া যাবে এমন অনেক হোটেল আছে। তারপর মল রোডের ওদিকে ঘোরাঘোরি করি। একটা ট্যাক্সির সাথে দরদাম করি। পরদিন তারা ভোর ৪ টা থেকে ৫/৬ টা প্লেস ঘোরাবে। ভোর ৪টায় যেতে হবে নাহয় টাইগার হিলের সুর্যোদয় দেখা সম্ভব না। টাইগার হিল, রোপ কার, ঘুম মনেষ্ট্রি, জাপানিজ টেম্পল, রক গার্ডেন এই কয়টা প্লেস তারা নিয়ে যাবে ২৫০০ রুপির বিনিময়ে। এর কমে কেউ রাজি হয়নি। তারপর আমরা রুমে এসে গল্প গুজব করে তাড়াতাড়ি করে ঘুমাতে যাই কারন খুব ভোরে উঠতে হবে।


১১-০৫-১৯
ঠিক ভোর ৪ টায় ট্যাক্সি ড্রাইভার হোটেল এ এসে আমাদের নিয়ে যায় এবং টাইগার হিলে সুর্যোদয় দেখে আমাদের সৌন্দর্য অবলোকন শুরু। তারপর একে একে রক গার্ডেন, টি গার্ডেন, রোপ কার, জাপানিজ টেম্পল সবকিছু উপভোগ করি। টি গার্ডেন এর সেখান থেকে দার্জিলিং এর বিখ্যাত চা পাতা কিনি। প্রতি প্যাকেট ২০০ রুপি থেকে ৩৫০ রুপি পর্যন্ত দাম হয়। আর রোপ কার এ উঠতে হলে বিকাল ৪টার আগে যেতে হবে। নাহয় বন্ধ হয়ে যায়। টিকিট মাথাপিছু ১৭৫ রুপি করে। আর রক গার্ডেনের প্রবেশ মুল্য ১০ রুপি করে। সব শেষে জাপানিজ টেম্পল এ যাই। সেখানে ঘুরতেও ভাল লাগে। ঘুম মনেস্ট্রি ৪ টায় বন্ধ হয়ে যায় তাই সেখানে যাওয়া হয়নি। যে কয়টা জায়গার নাম বললাম, তাদের রুপের বর্ননা দিতে বললে ১টা কথা বলবো, আমি নগন্য সাধ্য কি আমার লিখি তোমায় (দার্জিলিং) নিয়ে? সব ঘুরাফেরা শেষে বিগ বাজার এ যাই মল এর পাশে। আমরা দেখেছি বসুন্ধরা সিটি, আমরা দেখেছি যমুনা ফিউচার পার্ক তাই খুব আহামরি লাগেনি এই বিগ বাজার। এই বিগ বাজারে কিছুক্ষন ঘুরাফেরা করি। টুকটাক কেনাকাটা করি। কিছু কিনার পরে তারা ব্যগ পর্যন্ত দেয়না। সেই ব্যগ কিনে নিতে হবে। ৩ রুপি/৫ রুপি করে ১টা ব্যগের দাম। তারপর এখান থেকে বের হয়ে মলের আশেপাশে হাটাহাটি করি। স্ট্রিট ফুড খাই। মম, চাওমিন তো চারদিকে ভরপুর। একটা ভেজেটেরিয়ান রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে রাতের খাবার খাই। তবে ১টা কথা বলতেই হয় যে দার্জিলিং এর পরিবেশ অনেকটাই নেপালের মত হয়েছে আমার কাছে। কখনো কখনো থাইল্যান্ডের মতোও লাগে। দার্জিলিং এ শীতের পোষাকের দাম অনেকটাই সস্তা কিন্তু অন্যান্য জিনিষের দাম বেশি। তারপর ১টা ট্র্যাভেল এজেন্সি থেকে পরদিন কলকাতা যাবার টিকিট কাটি। পর দিন সন্ধ্যা ৭:২৫ এ ট্রেন যা জলপাইগুড়ি থেকে ছাড়বে।


১২-০৫-১৯
সকালে ঘুম থেকে উঠি ১০ টার দিকে। তারপর একেবারে চেক আউট করে হোটেল থেকে বের হই ১১ টার দিকে। কারন এখানেও বলা আছে চেক আউট করতে ১২ টা থেকে ১ মিনিট দেরি হলেও নাকি জরিমানা দিতে হবে। এখন জু তে যাব। হোটেল থেকে বেশি দূরে নয় জু। ১৫ মিনিটের মধ্যে পৌছে যাই জু তে। জু এর এন্ট্রি ফি সার্কভুক্ত কান্ট্রির জন্য ৬০ রুপি আর অন্য ফরেনারদের জন্য ১০০ রুপি। জু দেখার জন্য হাতে অবশ্যই সময় নিয়ে যাবেন। কারন অনেক সময় নিয়ে ঘুরে দেখলে ভাল লাগবে। মিনিমাম ৫ ঘন্টা সময় রাখা দরকার ভাল করে জু ঘুরে দেখার জন্য। ভিতরে মিউজিয়াম ও আছে। পরিচ্ছন্ন এই জু দেখতে কারো খারাপ লাগবেনা। তারপর হোটেল এ যাই। সেখান থেকে লাগেজ নিয়ে জলপাইগুড়ির উদ্দেশে রওয়ানা দিব। যদিও ট্রেন ৭:২৫ এ। তবুও একটু আগে আগে যাওয়াই উত্তম। কারন মাঝে মাঝে দার্জিলিং থেকে জলপাইগুড়ি যেতে ভালোই জ্যাম পড়ে। তারপর আমরা জলপাইগুড়ি এসে ষ্টেশনের পাশেই একটা হোটেলে খেয়ে নেই। মাছ সহ থালি ১০০ রুপি। খাবার মোটামোটি। একটু পড়েই ট্রেনে উঠি যেটা আমাদের হাওড়া নিয়ে যাবে সকালে।


১৩-০৫-১৯
ভোরে হাওড়া এসে নামি। হাওড়া থেকে কলকাতা রেলওয়েতে যাই ট্যাক্সি করে। আমাদের তাড়াহুড়ো ছিল কারন আমাদের ঢাকার ট্রেন ছাড়বে ৭:১০ এ। তাই ট্যাক্সি ভাড়া যা চায় তাই দিয়ে উঠে পড়ি। ৩৫০ রুপি ভাড়া দেই যা আমার মনে হয় সর্বোচ্চ ২০০ রুপি হলে ঠিক ছিল। কুলি দিয়ে মাল টানালে চিন্তা ভাবনা করে নিবেন। কারন কুলিরা অল্প একটু মাল টেনেই আপনার কাছে ২০০ রুপি চেয়ে বসে থাকবে। আর ট্রেনে উঠার আগে চেস্টা করবেন নাস্তা করে নিতে। কারন ট্রেনে নাস্তা তো দুরের কথা পানি পর্যন্ত পাবেন না। একেবারে বাংলাদেশী ইমিগ্রেশন পার হবার পরে লাঞ্চ, পানি পাবেন। ট্রেন চলতে থাকে। ভাল লাগে। কিন্তু আবারো সেই ইমিগ্রেশন ঝামেলার কারনে ট্রেন জার্নি অসহনীয় বোধ হয়। ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশনে প্রায় দেড় ঘন্টার মত সময় লাগে। টুকটাক প্রশ্ন করেছে তবে তেমন ঝামেলা হয়নি। তাদের ব্যাবহার আমার কাছে ভালোই লেগেছে। কোন টাকা পয়সা দিতে হয়নি। তবে এখানে ১ জন সাজেশান দিয়েছে, ফর্ম এ হ্যান্ড ব্যাগ এর কথা উল্লেখ না করে শুধু লাগেজ এর কথা উল্লেখ করাই উত্তম। ভালোয় ভালোয় ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন শেষ হয়। তবে লাগেজ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়ানো চরম বিরক্তির ১টা ব্যপার। কিছুক্ষন পর চলে আসে বাংলাদেশী ইমিগ্রেশন। এখানেও লাগেজ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সব শেষ করে ট্রেনে গিয়ে বসি। ধীরে ধীরে চলে আসি আমাদের গন্তব্যে।


উল্লেখযোগ্য কিছু দিকঃ
১. কলকাতা ফেয়ারলি প্লেসের পাশে চা খেয়ে তৃপ্তি পেয়েছি।
২. তাদের মাটির ১ টাইম কাপে চা দেয়ার প্রথাটি ভাল লেগেছে।
৩. কোন দালালের কথায় কান না দিয়ে নিজে নিজে হোটেল খুজবেন।
৪. কলকাতায় আমি খাবার খেয়ে তেমন আরাম পাইনি। শুধু দাওয়াত হোটেলের খাবার একটু ভাল মনে হয়েছে। তবে তাদের ব্যাবহার সন্তোষজনক নয়।
৫. যদি সম্ভব হয় বেশী বেশী বাংলা টাকা নিবেন। কারন, ১০০ ডলারে আমি পেয়েছি ৬৬০০ রুপি। এই ১০০ ডলার করতে আমার খরচ পড়েছে ৮৩০০ টাকা। তার মানে ৮৩০০ টাকায় আমি পেলাম ৬৬০০ রুপি। কিন্তু আমি যদি সরাসরি ৮৩০০ বাংলা টাকা নিয়ে যেতাম, তাহলে আমি পেতাম ৭৩০০ রুপি। তাহলে প্রতি ১০০ ডলারে আমার লস হচ্ছে প্রায় ৭০০ টাকা যদি আমি ডলার নেই।
৬. কলকাতা থেকে মানি একচেঞ্জ করে নিবেন। দার্জিলিং এ রেট কম পাওয়া যায়।
৭. মে- জুন মাসে দার্জিলিং যেতে হলে চেষ্টা করবেন অনলাইন থেকে অথবা অন্য কোন সোর্স থেকে হোটেল বুক করে যেতে।
৮. পিক সিজনে সব ধরনের টিকিট আগে থেকেই কেটে যাবার চেষ্টা করবেন না হয় টিকিট কাটতে কাটতেই সময় চলে যাবে।
৯। ভাল লেগেছে, কলকাতায় ট্রাফিক সিগনাল মেনে চলে খুব সুন্দরভাবে, যেখানে সেখানে ট্যাক্সি পার্ক করেনা এবং যেখানে সেখানে ময়লা ফেলেনা।
১০. খারাপ লেগেছে, কারো ব্যাবহার আন্তরিক মনে হয়নি এবং খাবার দাবার তেমন সুস্বাদু ছিলনা এবং খাবার হোটেল ঢাকার মত আধুনিক হতে পারেনি এখনো।
পরিশেষে একটা কথা বলি, প্লিজ কেউ কথায় কথায় অথবা গল্প করতে করতে বাংলাদেশের বদনাম বলা শুরু করবেন না। আমাদের প্রিয় দেশ নিয়ে কথা বলার সময় আমাদের দেশের ভাল দিক নিয়ে কথা বলুন দেখবেন নিজের ভিতরেই ১টা ভাল লাগা কাজ করবে।

Tamzidul Islam

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম