ফিবোনাচ্চি সিরিজটির নামকরণ করা হয়েছে এর আবিষ্কর্তা লিওনার্দো ফিবোনাচ্চির নামে। তাকে মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ হিসাবে ধরা হয়। ফিবোনাচ্চি রাশিমালা শুধুমাত্র গণিত নয় বরং প্রকৃতিরও অনেক রহস্যে উন্মোচন ঘটাতে সক্ষম বলে অনেকের ধারণা।
☆ এই ব্যাপারে ফিবোনাচ্চি নিজেই বলে গেছেনঃ''প্রকৃতির মূল-রহস্য এই রাশিমালায় আছে''।
☆ সিরিজটি হল এই রকমঃ
০,১,১,২,৩,৫,৮,১৩,২১,৩৪,৫৫,৮৯,১
৪৪,২৩৩,৩৭৭,… …
এই সিরিজটির বৈশিষ্ট্য হলোঃ
১। এই সিরিজের যে কোন সংখ্যাতার পূর্ববর্তী দুটি সংখ্যার যোগফলের সমান।
যেমনঃ ০+১=১
১+১=২,
২+১=৩,
৩+২=৫,
৫+৩ =৮, … … … ইত্যাদি।
গাণিতিক রাশিমালার সাহায্যে বলা যায়ঃ
F(n)=F(n-1)+F(n-2); যেখানে F(0)=0এবং F(1)=1 । ঠিক বিপরীতভাবে যেকোন সংখ্যা তার পরবর্তী দুটি সংখ্যার বিয়োগফলের সমান।
২। এই সিরিজের যেকোন ৪টি সংখ্যা নেয়া হলে ১ম ও ৪র্থ সংখ্যার যোগফলথেকে ২য় ও ৩য় সংখ্যার যোগফল বিয়োগদিলে সবসময় ওই ৪ট সংখ্যার ১ম টি পাওয়া যাবে। আবার ১ম ও ৪র্থ সংখ্যার গুনফল থেকে ২য় ও ৩য় সংখ্যার গুনফল বিয়োগ দিলে সবসময় বিয়োগফল ক্রমান্বয়ে ১ এবং -১।
☆ যেমনঃ আমরা ফিবোনাচ্চি সিরিজ থেকে যেকোন ৪টি সংখ্যা নিলামঃ ৫,৮,১৩,২১। এখন এর মাঝেঃ
১ম ও ৪র্থ সংখ্যার যোগফল= ৫+২১=২৬
২য় ও ৩য় যোগফল= ৮+১৩=২১
বিয়োগফল= ২৬-২১=৫(ওই ৪টি সংখ্যার১ম সংখ্যা)
১ম ও ৪র্থ সংখ্যার গুনফল= ৫x২১=১০৫
২য় ও ৩য় সংখ্যার গুনফল= ৮x১৩=১০৪
বিয়োগফল= ১০৫-১০৪=১
আবার পরের চারটি মানে ৮,১৩,২১,৩৪ এর জন্য হিসাব করে দেখুন এক্ষেত্রে বিয়োগফল পাবেন -১। বিশ্বাস না হলে মিলেয়ে দেখুন।
৩। এবার ফিবোনাচ্চি সিরিজের মজারএকটি বৈশিষ্ট্যে যাই, সবগুলি সংখ্যার শেষ ডিজিটে যেই নাম্বার গুলো আছে সেগুলো খেয়াল করুনঃ
০,১,১,২,৩,৫,৮,১৩ ,২ ১ ,৩ ৪ ,৫ ৫ ,৮ ৯ ,১৪ ৪ ,২৩ ৩ ,৩৭ ৭ ,৬১ ০,৯৮ ৭ ,……………….
সেই ডিজিটগুলো আলাদা করিঃ
৩,১,৪,৫,৯,৪,৩,৭,০,৭,……………………
মিলিয়ে দেখুন এরাও ফিবোনাচ্চি ক্রমে আছে। এবং এরাও আগের বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করে। এক্ষেত্রে যদি পূর্ববর্তী দুটি সংখ্যার যোগফল একের অধিক বা দুই ডিজিটের হয় তবে তার শেষ ডিজিট আসবে। ফিবোনাচ্চি সিরিজের প্রতি ৬০টি সংখ্যার পর এই ডিজিটগুলো আবার রিপিট করে। যেমন ফিবোনাচ্চিসিরিজের
☆ ৬০ তম সংখ্যা= ১৫৪৮০০৮৭৫৫৯২০
☆ ৬১ তম সংখ্যা= ২৫০৪৭৮০৭৮১৯৬১
☆ ৬২ তম সংখ্যা= ৪০৫২৭৩৯৫৩৭৮৮১
☆ ৬৩ তম সংখ্যা= ৬৫৫৭৪৭০৩১৯৮৪২
☆ ৬৪ তম সংখ্যা= ১০৬১০২০৯৮৫৭৭২৩
☆ ৬৫ তম সংখ্যা= ১৭১৬৭৬৮০১৭৭৫৬৫
মজার ব্যাপার হল একই ভাবে ফিবোনাচ্চি সিরিজের প্রতিটি সংখ্যার শেষ দুই ডিজিট, শেষ তিন ডিজিট ,চার ডিজিট এরকম করে সব ডিজিটের এর মাঝেই ফিবোনাচ্চি সংখ্যার বৈশিষ্ট্যগুলো খুজে পাওয়া যায়। বিশ্বাস নাহলে সব গুলো সংখ্যার জন্য মিলিয়ে দেখুন।
এই সিরিজের প্রায় ৩০০টি সংখ্যা পাবেন এই
লিঙ্ক এঃ maths.surrey.ac.uk/
hosted-sites/R.Knott/Fibonacci/
fibtable.html
৪ . এখন আমরা কয়েকটি ফিবোনাচ্চি সংখ্যার ভাগ করে দেখিঃ ২/১=২
৩/২=১.৫
৫/৩=১.৬৬৭
৮/৫=১.৬
১৩/৮=১.৬২৫
২১/১৩=১.৬১৫
অর্থাৎ প্রথম দুটি ভাগফল বাদ দিলে বাকি ভাগফল গুলোর মান প্রায় সমান বা ধ্রুবক। এই ধ্রুবক সংখ্যাটি"সোনালী
অনুপাত" বা"স্বর্গীয় অনুপাত", ইংরেজীতে "Giolden Ratio" নামে পরিচিত। সোনালী অনুপাত বা স্বর্গীয় অনুপাত 'ফাই' (phi) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এর মান ১.৬১৮০৩৩৯৮৯ (প্রায়)। একে স্বর্গীয় অনুপাত বলার কারন হল মানবদেহের কয়েকটি অংশের অনুপাতের সাথে এর মিলে যাওয়া।
☆ যেমনঃ
আমাদের forearm এর সাথে হাত এর অনুপাতের মান হল ১.৬১৮
☆ আমাদের মুখের দৈর্ঘ্যের সাথে নাকের প্রস্থের অনুপাত ১.৬১৮
☆ আমাদের fingertip থেকে এলবোর দৈর্ঘ্য এবং কবজি থেকে এলবোর দৈর্ঘ্যের অনুপাত ১.৬১৮
৫। আমাদের দেহের বিভিন্ন অংশে ফিবোনাচ্চির বেশ কিছু ক্রম পাওয়াযায়। আগের তিনটি উদাহরন তো দিলামঃ
আমাদের মধ্যমার হাড়গুলো ভালভাবে লক্ষ্য করে দেখুন হাড়গুলোর দৈর্ঘ্য ফিবোনাচ্চি সংখ্যার ক্রম। তাছাড়া আমাদের দুটি হাত, হাতের আঙ্গুল ৫টি ,তার মাঝে ৮টি আঙ্গুল আছে যেগুলো কিনা তিনটি ভাগে বিভক্ত। যার প্রতিটিই ফিবোনাচ্চি সংখ্যা।
ফিবোনাচ্চি নিয়ে বলে শেষ করা যাবেনা। ধারণা করা হয় প্রকৃতির অনেক কিছুই ফিবোনাচ্চি সিরিজকে অনুসরণ করে। তাছাড়া গণিতের বেশ কিছু জটিল সমস্যা সমাধানে ফিবোনাচ্চি খুবই সাহায্যকারী। ডাটা স্ট্রাকচারেও অনেক সমস্যা ফিবোনাচ্চি সিরিজ দিয়ে সমাধান করা যায়।
☆ ফিবোনাচ্চি ইদুরের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছিলেন যে তারা ফিবোনাচ্চি ক্রম অনুসারে বংশবৃদ্ধি করে।
ঈশান (BUET)