গোলাপের ফুল-পাতা-কলি শুধু নয়, কন্টকও সুন্দর। শুধু সুন্দর নয়, ভয়ঙ্করও। প্রেসিডেন্ট লিঙ্কন বলতেন, গোলাপে কাঁটা আছে বলে আমরা অভিযোগ করতে পারি কিন্তু উৎফুল্লও হতে পারি কাঁটার মাথায় গোলাপ দেখে। গোলাপ-কাঁটার মাথা সর্বদাই থাকে নিচের দিকে বাঁকানো, কিরীচের মতো। কিরীচ না রেখে উপায় কি, গাছ বেয়ে ওঠা ক্ষুদ্র প্রাণীর তো অভাব নেই। গাছ থেকে পাতা খাওয়ার সময় গবাদি প্রাণীর লম্বা জিভ নিচ থেকে উপরের দিকে ওঠে, সঙ্গে মাথাটাও। ভয়ঙ্কর কিরীচের কারণে গোলাপের পাতা খাওয়ার শখ এসব প্রাণীর হয় না। মনুষ্য-প্রাণীরা অবশ্য কৌশলে গোলাপ খায়, সারা জগৎ জুড়ে কয়েক হাজার বছর ধরে খাচ্ছে; এদের পাপড়ি ছাড়া গুলকন্দের মতো অসাধারণ উপাদেয় খাবার তৈরি হয় না। কিন্তু গোলাপ সংগ্রহের জন্য মাঝে মাঝে আমাদের জরিমানা দিতে হয়, এমন কি জীবনের বিনিময়ে।
সুষ্ঠু প্রমাণের অপেক্ষা থাকলেও বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা যায়, কাঁটার ভিতর ব্যাক্টেরিয়া ও ফাঙ্গাস লালন করে গাছ, যা খোঁচার সঙ্গে আক্রমণকারীর দেহে প্রবেশ করে, মিশে যায় রক্তের সাথে। খোঁচা খাওয়া জায়গাটা গোলাপি বা বেগুনি হয়ে যায় প্রথমে, বিশেষ ব্যথাও থাকে না। কিন্তু একসময় ফুলে গিয়ে ক্রনিক ক্ষতে পরিণত হয়। এই ক্ষত যদি সময়মত না সারানো হয় তবে তা দেহের সন্ধিতে ও ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ে যক্ষা, নিউমোনিয়া হতে পারে, এবং শেষ পর্যায়ে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম ও মস্তিষ্ক আক্রমণ করতে পারে।
এর পর কী হয় তা জানতে পারি নোবেল লরেট আর্নেস্ট হেমিংওয়ের বিখ্যাত ছোটগল্প ‘দি স্নোজ অব কিলিমাঞ্জরো’ পড়লে। হ্যারি ও হ্যালেন গেছে সাফারিতে, আফ্রিকার সাভানায়। ট্রাক নষ্ট হয়ে আটকে পড়েছে তারা। এ সময় জলের ধারে চড়ে বেড়ানো হরিণ, ওয়াটারবাকের ছবি তুলতে গিয়ে হঠাৎ হাঁটুতে কাঁটা ফুটিয়ে বসে হ্যারি... তারপর গ্যাংগ্রিন এবং একদিন মৃত্যুঘোরে উড়ে যায় কিলিমাঞ্জরো পর্বতের উপর দিয়ে। গোলাপের কাঁটা ফুটে ফাঙ্গাসজনিত যে রোগ হয় তার নাম ‘রোজ গার্ডেনারস ডিজিজ’, স্পরো-ট্রিকোসিস (Sporotrichosis)। শুধু গোলাপ কাঁটায় নয়, বাগানের মাটি বা খড়-বিচালির মধ্যেও এই ফাঙ্গাস থাকতে পারে এমন কি গৃহপালিত বিড়ালের শরীরেও। বয়স্ক এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন মানুষই এর বেশি শিকার হয়, তবে যে-ই আক্রান্ত হোক, প্রথমেই এর চিকিৎসা করা ভাল; কিছুদিন যাবৎ ক্ষত শুকাচ্ছে না, এমন অবস্থা অশুভ লক্ষণ।
বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা ও আবহাওয়ার কারণে পৃথিবীর বহু দেশে তৈরি হয়েছে বিস্তৃত তৃণাঞ্চল যেমন উত্তর আমেরিকায় প্রেইরি, দক্ষিণ আমেরিকায় পাম্পাস, ইউরোপে স্টেপ ও আফ্রিকায় সাভানা। তৃণভোজী প্রাণীদের সঙ্গে সঙ্গে এসব তৃণাঞ্চলে বাস করে মাংসাশী প্রাণীও। খোলা জায়গায় যা কিছু গাছ জন্মায়, তৃণভোজীদের বিরূদ্ধে বেঁচে থাকার জন্য তাদের অভিযোজন লক্ষ্য করার মতো। সাভানার ভিতর দিয়ে চলার সময় গাড়ির জানালা বন্ধ করে রাখে যাত্রীরা, নইলে কাঁটাঝোপের আঁচড়ে ছড়ে যাবে হাতের চামড়া। আত্মরক্ষার জন্য গাছদের কাঁটা হয়, কাঁটা দিয়ে গাছ বিকর্ষণ করে, আমরা যদিও কখনো কাঁটার সৌন্দর্যে আকর্ষণ বোধ করে থাকি।
কাঁটাগাছ নিয়ে বিজ্ঞানীদের অনেক গবেষণা হয় এসব তৃণাঞ্চলে, বিশেষত বাবলা গাছ নিয়ে। কাঁটা তৈরি করার জন্য জলহীন পুষ্টিহীন পরিবেশেও গাছের অনেক শক্তির প্রয়োজন হয়, যে-কারণে যেসব গাছে কাঁটা বেশি হয় তাদের ফল হয় কম। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় গাছের নিচের দিকে বড় কাঁটা কিন্তু উপরের দিকে তা ক্রমশ ছোট হয়ে গেছে। কিছু লেবু গাছে প্রথমাবস্থায় বড় কাঁটা জন্মায় কিন্তু পরে উপরের দিকে একেবারেই থাকে না, কারণ অকারণ শক্তি ব্যয় করে ফলহীন হলে বংশবিস্তারে বিঘ্ন ঘটবে। এসব সমস্যার সমঝোতা করেই কাঁটা ও ফল তৈরি করে গাছ (Milewski, 1991)
পরাগায়নকারী পোকাকে প্রলুব্ধ করার জন্য গাছ ফুলকে যথাসম্ভব আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করে, একে রূপসী করে তোলে পাপড়ি আর মঞ্জরীপত্র দিয়ে, কখনো এর ভিতর সুঘ্রাণ আর মধু তৈরি করে। ফল পুষ্ট হওয়ার সময়ে এর বর্ণ বদলে যায়, শরীর রসালো ও ঘ্রাণযুক্ত হয়, প্রাণীকে আকর্ষণ করে বংশবিস্তারের সুবিধার জন্য। এসব জরুরি কাজের মতো কাঁটাকেও রং ও ভয়ঙ্করতা দিয়ে সাজায় গাছ, এর কারণ আত্মরক্ষাকে মজবুত করা। আগে মনে করা হতো তীব্র রং দিয়ে কেবল প্রাণীরাই তাদের বিষাক্ততা প্রকাশ করে যা এপোসিমেটিজম (Aposematism) নামে পরিচিত, যেমন দেখা যায় লেডিবার্ড বিটল, প্রজাপতি, কিং-স্নেক, ডার্ট ফ্রগ ইত্যাদি প্রাণীর ভিতর। কিন্তু পরবর্তীকালে বোঝা গেছে, কিছু গাছও এই এপোসিমেটিক আচরণ করতে পারে, যেমনটা দেখা যায় বিষাক্ত হেমলক গাছের কাণ্ডে। এদের গায়ের রক্তাক্ত ছোপ দেখে বিষাক্ততা আঁচ করে কিছু পাখিও দূরে থাকে। আত্মরক্ষার জন্য একটি গাছের কাঁটাও রঙিন হতে পারে, ভয়ঙ্কর আকৃতি নিতে পারে।
কাঁটা মূলত গাছের বিভিন্ন অঙ্গের পরিবর্তিত রূপ যা বহু রকমের হতে পারে। আমরা সহজ ভাষায় ‘খাওয়া’ ক্রিয়াপদটি নানারকম ভাব প্রকাশে ব্যবহার করি যেমন, পেটপুরে ভাত খাই, চা খাই, সিগারেট খাই, হোঁচট খাই, আছাড় খাই, দিব্যি দিয়ে মাথা খাই আরো কতো কি! কাঁটার ব্যবহারও এমনভাবেই বিস্তৃত, তবে উদ্ভিদবিদ্যার ভাষায় কাঁটার শাব্দিক রূপান্তর আছে। গোলাপের গায়ে যে কাঁটা থাকে তা গাত্র-কন্টক (Prickle) যা সৃষ্টি হয় কাণ্ডের বহিস্তক (Epidermis) থেকে। খেজুর কাঁটা বা আগাভির যে কাঁটা তা পত্র-কন্টক বা স্পাইন (Spine) যা পত্রের পরিবর্তিত রূপ। বাগানবিলাস, কাঁটামেন্দি, করমচা, বৈঁচি ইত্যাদির কাঁটা শাখা বা কাণ্ডের পরিবর্তিত রূপ বলে শাখা-কন্টক বা থর্ন (Thorn) যা বেশ শক্ত ও কাষ্ঠল এবং এদের ভিতর সংবাহী নালিকা বা ভাস্কুলার বান্ডল্ (Vascular bundle) থাকে যার উপস্থিতি দেখা যায় পত্র-কন্টকের ভিতরেও। বাবলা ও বরই গাছের কাঁটা উপপত্রের রূপান্তরিত রূপ। আরেক প্রকার কাঁটা আছে যা আদতে ত্বকীয় রোম বা ট্রাইকোম (Trichome) যেমনটা দেখা যায় বেগোনিয়া, চুত্রা (Urtica sp.) পাতা, লাউয়ের পাতা ও ফলে। নগন্য মনে হলেও গাছেরা নিছক সৌন্দর্যের কারণে এই ট্রাইকোম তৈরি করে না। রোমের কারণে তাপমাত্রা, জলীয় বাষ্প, বায়ুপ্রবাহ, ধুলোবালি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ হয় এবং পোকামাকড় সরাসরি নরম ত্বক নষ্ট করতে পারে না।
মানুষের শরীরে গাছের মতো কাঁটা নেই, প্রাণীর মতো নখ-দন্ত নেই কিন্তু তাতেও সমস্যা নেই; মানুষ এদের উভয়কে ব্যবহার করে নিরাপত্তা মজবুত করতে পারে। বাগানে ফুল চুরি, দামি গাছ চুরি ঠেকানোর জন্য বেশ হিসাব করে বিদেশে কাঁটা গাছ লাগানো হয়, যাদের উচ্চতা রাখা হয় কম, কারণ বেশি উচ্চতা থাকলে চোরের নিরাপত্তা বাড়ে, আরামে চোখের অলক্ষ্যে চুরি করতে পারে। ব্যাপারটা অনেকটা বিদেশের ব্যাঙ্ক-ভল্টের অবস্থানের মতো; আগে মাটির নিচে রাখাতে টানেল কেটে ভল্ট থেকে চুরি হতো, এখন রাস্তার মাঝখানেও রাখা হয় যাতে আমজনতাই এর নিরাপত্তার অনেকটা দায়দায়িত্ব নিতে পারে। কাঁটা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান অপ্রতুল, বিজ্ঞানীরা এতে মনোযোগী হয়েছেন, যে সব গবেষণা থেকে নানারকম হাইপথেসিস বের হয়ে আসছে ভবিষ্যতের জন্য।
Zayed Farid
Bangladesh University of Engineering and Technology
সুষ্ঠু প্রমাণের অপেক্ষা থাকলেও বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে জানা যায়, কাঁটার ভিতর ব্যাক্টেরিয়া ও ফাঙ্গাস লালন করে গাছ, যা খোঁচার সঙ্গে আক্রমণকারীর দেহে প্রবেশ করে, মিশে যায় রক্তের সাথে। খোঁচা খাওয়া জায়গাটা গোলাপি বা বেগুনি হয়ে যায় প্রথমে, বিশেষ ব্যথাও থাকে না। কিন্তু একসময় ফুলে গিয়ে ক্রনিক ক্ষতে পরিণত হয়। এই ক্ষত যদি সময়মত না সারানো হয় তবে তা দেহের সন্ধিতে ও ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ে যক্ষা, নিউমোনিয়া হতে পারে, এবং শেষ পর্যায়ে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম ও মস্তিষ্ক আক্রমণ করতে পারে।
এর পর কী হয় তা জানতে পারি নোবেল লরেট আর্নেস্ট হেমিংওয়ের বিখ্যাত ছোটগল্প ‘দি স্নোজ অব কিলিমাঞ্জরো’ পড়লে। হ্যারি ও হ্যালেন গেছে সাফারিতে, আফ্রিকার সাভানায়। ট্রাক নষ্ট হয়ে আটকে পড়েছে তারা। এ সময় জলের ধারে চড়ে বেড়ানো হরিণ, ওয়াটারবাকের ছবি তুলতে গিয়ে হঠাৎ হাঁটুতে কাঁটা ফুটিয়ে বসে হ্যারি... তারপর গ্যাংগ্রিন এবং একদিন মৃত্যুঘোরে উড়ে যায় কিলিমাঞ্জরো পর্বতের উপর দিয়ে। গোলাপের কাঁটা ফুটে ফাঙ্গাসজনিত যে রোগ হয় তার নাম ‘রোজ গার্ডেনারস ডিজিজ’, স্পরো-ট্রিকোসিস (Sporotrichosis)। শুধু গোলাপ কাঁটায় নয়, বাগানের মাটি বা খড়-বিচালির মধ্যেও এই ফাঙ্গাস থাকতে পারে এমন কি গৃহপালিত বিড়ালের শরীরেও। বয়স্ক এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন মানুষই এর বেশি শিকার হয়, তবে যে-ই আক্রান্ত হোক, প্রথমেই এর চিকিৎসা করা ভাল; কিছুদিন যাবৎ ক্ষত শুকাচ্ছে না, এমন অবস্থা অশুভ লক্ষণ।
বৃষ্টিপাতের স্বল্পতা ও আবহাওয়ার কারণে পৃথিবীর বহু দেশে তৈরি হয়েছে বিস্তৃত তৃণাঞ্চল যেমন উত্তর আমেরিকায় প্রেইরি, দক্ষিণ আমেরিকায় পাম্পাস, ইউরোপে স্টেপ ও আফ্রিকায় সাভানা। তৃণভোজী প্রাণীদের সঙ্গে সঙ্গে এসব তৃণাঞ্চলে বাস করে মাংসাশী প্রাণীও। খোলা জায়গায় যা কিছু গাছ জন্মায়, তৃণভোজীদের বিরূদ্ধে বেঁচে থাকার জন্য তাদের অভিযোজন লক্ষ্য করার মতো। সাভানার ভিতর দিয়ে চলার সময় গাড়ির জানালা বন্ধ করে রাখে যাত্রীরা, নইলে কাঁটাঝোপের আঁচড়ে ছড়ে যাবে হাতের চামড়া। আত্মরক্ষার জন্য গাছদের কাঁটা হয়, কাঁটা দিয়ে গাছ বিকর্ষণ করে, আমরা যদিও কখনো কাঁটার সৌন্দর্যে আকর্ষণ বোধ করে থাকি।
কাঁটাগাছ নিয়ে বিজ্ঞানীদের অনেক গবেষণা হয় এসব তৃণাঞ্চলে, বিশেষত বাবলা গাছ নিয়ে। কাঁটা তৈরি করার জন্য জলহীন পুষ্টিহীন পরিবেশেও গাছের অনেক শক্তির প্রয়োজন হয়, যে-কারণে যেসব গাছে কাঁটা বেশি হয় তাদের ফল হয় কম। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় গাছের নিচের দিকে বড় কাঁটা কিন্তু উপরের দিকে তা ক্রমশ ছোট হয়ে গেছে। কিছু লেবু গাছে প্রথমাবস্থায় বড় কাঁটা জন্মায় কিন্তু পরে উপরের দিকে একেবারেই থাকে না, কারণ অকারণ শক্তি ব্যয় করে ফলহীন হলে বংশবিস্তারে বিঘ্ন ঘটবে। এসব সমস্যার সমঝোতা করেই কাঁটা ও ফল তৈরি করে গাছ (Milewski, 1991)
পরাগায়নকারী পোকাকে প্রলুব্ধ করার জন্য গাছ ফুলকে যথাসম্ভব আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করে, একে রূপসী করে তোলে পাপড়ি আর মঞ্জরীপত্র দিয়ে, কখনো এর ভিতর সুঘ্রাণ আর মধু তৈরি করে। ফল পুষ্ট হওয়ার সময়ে এর বর্ণ বদলে যায়, শরীর রসালো ও ঘ্রাণযুক্ত হয়, প্রাণীকে আকর্ষণ করে বংশবিস্তারের সুবিধার জন্য। এসব জরুরি কাজের মতো কাঁটাকেও রং ও ভয়ঙ্করতা দিয়ে সাজায় গাছ, এর কারণ আত্মরক্ষাকে মজবুত করা। আগে মনে করা হতো তীব্র রং দিয়ে কেবল প্রাণীরাই তাদের বিষাক্ততা প্রকাশ করে যা এপোসিমেটিজম (Aposematism) নামে পরিচিত, যেমন দেখা যায় লেডিবার্ড বিটল, প্রজাপতি, কিং-স্নেক, ডার্ট ফ্রগ ইত্যাদি প্রাণীর ভিতর। কিন্তু পরবর্তীকালে বোঝা গেছে, কিছু গাছও এই এপোসিমেটিক আচরণ করতে পারে, যেমনটা দেখা যায় বিষাক্ত হেমলক গাছের কাণ্ডে। এদের গায়ের রক্তাক্ত ছোপ দেখে বিষাক্ততা আঁচ করে কিছু পাখিও দূরে থাকে। আত্মরক্ষার জন্য একটি গাছের কাঁটাও রঙিন হতে পারে, ভয়ঙ্কর আকৃতি নিতে পারে।
কাঁটা মূলত গাছের বিভিন্ন অঙ্গের পরিবর্তিত রূপ যা বহু রকমের হতে পারে। আমরা সহজ ভাষায় ‘খাওয়া’ ক্রিয়াপদটি নানারকম ভাব প্রকাশে ব্যবহার করি যেমন, পেটপুরে ভাত খাই, চা খাই, সিগারেট খাই, হোঁচট খাই, আছাড় খাই, দিব্যি দিয়ে মাথা খাই আরো কতো কি! কাঁটার ব্যবহারও এমনভাবেই বিস্তৃত, তবে উদ্ভিদবিদ্যার ভাষায় কাঁটার শাব্দিক রূপান্তর আছে। গোলাপের গায়ে যে কাঁটা থাকে তা গাত্র-কন্টক (Prickle) যা সৃষ্টি হয় কাণ্ডের বহিস্তক (Epidermis) থেকে। খেজুর কাঁটা বা আগাভির যে কাঁটা তা পত্র-কন্টক বা স্পাইন (Spine) যা পত্রের পরিবর্তিত রূপ। বাগানবিলাস, কাঁটামেন্দি, করমচা, বৈঁচি ইত্যাদির কাঁটা শাখা বা কাণ্ডের পরিবর্তিত রূপ বলে শাখা-কন্টক বা থর্ন (Thorn) যা বেশ শক্ত ও কাষ্ঠল এবং এদের ভিতর সংবাহী নালিকা বা ভাস্কুলার বান্ডল্ (Vascular bundle) থাকে যার উপস্থিতি দেখা যায় পত্র-কন্টকের ভিতরেও। বাবলা ও বরই গাছের কাঁটা উপপত্রের রূপান্তরিত রূপ। আরেক প্রকার কাঁটা আছে যা আদতে ত্বকীয় রোম বা ট্রাইকোম (Trichome) যেমনটা দেখা যায় বেগোনিয়া, চুত্রা (Urtica sp.) পাতা, লাউয়ের পাতা ও ফলে। নগন্য মনে হলেও গাছেরা নিছক সৌন্দর্যের কারণে এই ট্রাইকোম তৈরি করে না। রোমের কারণে তাপমাত্রা, জলীয় বাষ্প, বায়ুপ্রবাহ, ধুলোবালি ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ হয় এবং পোকামাকড় সরাসরি নরম ত্বক নষ্ট করতে পারে না।
মানুষের শরীরে গাছের মতো কাঁটা নেই, প্রাণীর মতো নখ-দন্ত নেই কিন্তু তাতেও সমস্যা নেই; মানুষ এদের উভয়কে ব্যবহার করে নিরাপত্তা মজবুত করতে পারে। বাগানে ফুল চুরি, দামি গাছ চুরি ঠেকানোর জন্য বেশ হিসাব করে বিদেশে কাঁটা গাছ লাগানো হয়, যাদের উচ্চতা রাখা হয় কম, কারণ বেশি উচ্চতা থাকলে চোরের নিরাপত্তা বাড়ে, আরামে চোখের অলক্ষ্যে চুরি করতে পারে। ব্যাপারটা অনেকটা বিদেশের ব্যাঙ্ক-ভল্টের অবস্থানের মতো; আগে মাটির নিচে রাখাতে টানেল কেটে ভল্ট থেকে চুরি হতো, এখন রাস্তার মাঝখানেও রাখা হয় যাতে আমজনতাই এর নিরাপত্তার অনেকটা দায়দায়িত্ব নিতে পারে। কাঁটা সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান অপ্রতুল, বিজ্ঞানীরা এতে মনোযোগী হয়েছেন, যে সব গবেষণা থেকে নানারকম হাইপথেসিস বের হয়ে আসছে ভবিষ্যতের জন্য।
![]() |
গোলাপ কাটা |
Zayed Farid
Bangladesh University of Engineering and Technology