মাঙ্কিপক্সের ভাইরাস নিয়ে যেটুকু তথ্য পাওয়া গেছে, এটা ছড়ায় রোগীর সাথে ক্লোজ কন্ট্যাক্টে থাকলে। বডি ফ্লুইড যেমন কফ, থুতু থেকে আরেকজন আক্রান্ত হতে পারে।
তাহলে এই ভাইরাসটা যখন একজনের দেহে থাকবে, তাহলে আরেকজনের দেহে যেতে অবশ্যই রোগীর 'কাছাকাছি সংস্পর্শে' থাকতে হবে।
রিসেন্ট মাঙ্কিপক্সের যে কেইসগুলো পাওয়া গেছে, সেখানে গে/বাইসেক্সুয়াল মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। তাহলে এটা থেকে কী বলা যায় যে এটা শুধু সমকামীদের আক্রমণ করছে?
ব্যাপারটা আসলে এতো সহজ না। এখানে বেশকিছু ফ্যাক্টর আছে।
ন্যাচারসহ বেশকিছু জার্নালের লেখা পড়ে দেখলাম। ব্যাপারটা এরকম গেস করা হচ্ছে যে, মাঙ্কিপক্সের ভাইরাসের কোনো বাহক ছিল সমকামী। স্বাভাবিকভাবেই, তার সাথে বেশি ক্লোজ সংস্পর্শে যারা ছিল, তারা আক্রান্ত হয়েছে। এটা খেয়াল করেন, একজন সমকামীর সাথে ক্লোজ সংস্পর্শে থাকা মানুষ সমকামী হওয়ার ই কথা । সেখান থেকে আবার তাদের পার্টনারের মধ্যে একভাবেই ছড়াইছে। পুরা বিষয়টা 'কাকতালীয়' হিসাবেই উল্লেখ করা সবখানে।
সমকামীদের শরীরে আলাদা কিছু নাই, যে ভাইরাস শুধু তাদের ই আক্রমণ করবে।
মাঙ্কিপক্সের ভাইরাস যৌনবাহিত কিনা সেরকম কিছু এখনও পাওয়া যায়নি। হলে সেটা পুরুষ-পুরুষ কিংবা নারী-পুরুষ মিলনেও ছড়াতে পারে। এটা একটা কমন সেন্সের ব্যাপার। HIV কিন্তু সব সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশনের মানুষের মধ্যেই ছড়ায়। যাদের একাধিক পার্টনার আছে, তাদের আক্রান্ত হওয়ার রিস্ক বেশি।
ধরুণ করোনায় আক্রান্ত কয়েক কোটি মানুষের মধ্যে আপনি র্যান্ডম ১০ জন বেছে আনলে সেখান থেকে আপনি কোনোকিছুই শিউরলি বলে দিতে পারবেন না।আরও দশজনকে আনলে আপনি আরেকরকম রেজাল্ট পাবেন।
কিংবা আপনি ইচ্ছা করেই কোনো জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে বেছে বেছে এনে রিপোর্ট প্রকাশ করলেন যে অমুক জনগোষ্ঠীতেই রোগ ছড়ায়। বড় একটা জায়গা থেকে টার্গেট করে ছোট স্যাম্পল বাছাই করে সেটা থেকে তথ্য দেয়ার ব্যাপারটাকে বলে বায়াস স্যাম্পলিং।
এটার খুব ভালো উদাহরণ টিভিতেই দেখতে পাবেন, '১০ জন ডাক্তারের মধ্যে ৯ জন ডাক্তার ই রেকোমেন্ড করেছেন অমুক টুথপেস্ট'। দেশে লাখ লাখ ডাক্তার থাকতে আপনি যদি বেছে বেছে আপনার পক্ষের ৯ জন ডাক্তারকে আনেন, তাহলে রেজাল্ট টুথপেস্ট মালিকের মনমতোই হবে। এই পরিসংখ্যানের আদোও ভিত্তি আছে?
জনস্বাস্থ্যের উপর কোনো টেস্ট করতে লাগে প্রচুর স্যাম্পল আর ডেটা, তারপর একটা সিদ্ধান্তে আসা যায়।
মাঙ্কিভাইরাস নিয়ে এখনও খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি, আক্রান্তের সংখ্যাও একদম ই কম। এতো কম ডেটা থেকে কোনোকিছুই বলা যায়না। আক্রান্তের সংখ্যা যখন আরও বেড়ে যাবে।
লাস্ট একটা উদাহরণ। ধরুণ কোনো একটা লোক সম্পুর্ণ নতুন একটা ভাইরাস 'urmum' শরীরে বহন করে নিয়ে এলো। তার থেকে তার পরিবারের লোক+ কাছের আরো লোক আক্রান্ত হলো। রোগটা এখনো বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে ছড়ানো শুরু করেনি। ওনার সোসাইটির বেশিরভাগ লোকজন ফর্সা হলেও কাকতালীয়ভাবে তার ক্লোজ লোকজনরা অধিকাংশই কালো।
আপনিও প্রচন্ড রেসিস্ট লোক, কালো মানুষ পছন্দ করেন না। নিউজে হেডলাইন দিয়ে দিলেন, "হু হু করে বাড়ছে urmum ভাইরাসে আক্রান্তর সংখ্যা। সাবধান থাকতে বলা হচ্ছে সকল কালো মানুষকে"
এই ঘটনা থেকে আপনি বলতেই পারেন যে, নতুন ভাইরাসে আক্রান্ত কালো লোকদের সংখ্যা বেশি। কিন্তু এটা কখনই বলতে পারেন না যে 'urmum' ভাইরাসে শুধু কালো লোকরাই আক্রান্ত হচ্ছে।
মাঙ্কিপক্সের কেসও সেম। যে অল্প কয়েকজন আক্রান্ত পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে হোমোসেক্সুয়ালিটির মানুষদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি-এটা সত্যি। WHO এর কোথাও এই লাইন লেখা নাই যে মাঙ্কিপক্স সমকামীদের রোগ।
কিন্তু "সমকামীরাই আক্রান্ত হচ্ছেন মাঙ্কিপক্সে/ মাঙ্কিপক্স সমকামীতার কারণে হচ্ছে" এটা চরম স্টুপিড কথা। ক্লিকবেইট টাইটেল দিয়ে মানুষ ভিউ কামাচ্ছে।
গুজবটা মানুষ খাচ্ছেও ভালো।এটা দুইলাইনে পোস্ট দিলেই যথেষ্ট ছিল, কিন্তু কিছু জায়গায় মানুষের এরকম কমেন্ট দেখলাম-
'সমকামিতা ছাড়া কী অন্য কোনো কারণে এ রোগ ছড়ায়?'
'আমি তো সমকামী না, আমার এই রোগ হবেনা'
'ভালোই হলো, দেশে রোগ আসলে সমকামীদের চেনা যাবে'
না ভাই, একটু মাথা খাটান। অনেকগুলা মানুষ ধরেই নিয়েছে যে স্ট্রেইট হওয়ায় তাদের মাঙ্কিপক্স হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নাই। ভাইরাসটা যদিও তেমন ভয়াবহ না, তাও ভুল ধারণা নিয়ে নিজেকে এতো সেফ ভাবাটা বোকামি। আপনার নিজের জন্যই সেটা রিস্কি।
Writer: Nupur Dev