সোনা রূপা কিংবা তামা জাতীয় কিছু ধাতব রঙের প্রতি মানুষের অসাধারণ দুর্বলতা আছে। এর একটি কারণ, এদের ধাতব-দ্যুতি বা মেটালিক লাস্টার। এমন রং আমাদের চৌপাশের প্রকৃতিতে দেখা যায় না, দেখা গেলেও তা বিরল। প্রতিটি ধাতব রঙই আপন মহিমায় উজ্জ্বল, তা যেমন আছে সোনা-রূপার তেমনি আছে তামার। কিন্তু প্রকৃত তামা-রং প্রকৃতিতে খুব দুর্লভ কারণ অক্সিজেনের সংস্পর্শে জারিত হয়ে এই রং ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে সবুজ হয়ে যায় যা পানাপুকুরের সবুজের মতো নিরেট, একটানা। এই জারণের কারণে পৃথিবীর বহু প্রাচীন ইমারতের ছাদ শতশত বর্ষব্যাপী টিকে আছে তা সত্যি, কিন্তু এসব কীর্তি দেখে মনে হয়, এদের প্রকৃত তাম্রকান্তির উপরে ছেয়ে আছে ৬০ দশকের রেডিও-মোড়কের মতো ময়লা গেলাফ। শ্রীলঙ্কার তাম্রমন্দির ‘লোয়া-মাহা-পায়া’ বা আমেরিকার স্ট্যাচু অব লিবার্টিরও একই দশা, সিদলে পড়া। এদের প্রকৃত তাম্ররূপ দেখতে না পারার অস্বস্তিটা কষ্টদায়ক। এর চেয়ে একখণ্ড ইলেক্ট্রিক তামার তারও যেন রঙের মহিমা প্রকাশ করতে পারে। উদ্ভিদজগতে এই রঙের উপস্থিতি খুব কম। শিলকড়ই (Albizia procera) বা কণকচূড়া (Peltophorum pterocarpum) গাছের সিডপড বেশ তামাটে রঙের কিন্তু সবচেয়ে বেশি নিরেট মনে হয় ইপিল-ইপিল (Leucaena leucocephala) গাছের পুষ্ট বীজাধারের রঙকে। এই দৃশ্য একবার যে দেখে সে কখনো ভুলতে পারে না, আমার এমনই বিশ্বাস।
ইপিল-ইপিল গাছটিকে বাংলাদেশে এখন আর তেমন দেখা যায় না যদিও একসময় বিশ্বব্যাপী এই গাছটিকে সত্তুর-আশির দশকে বলা হতো ‘মির্যাকল ট্রি’ বা অলৌকিক গাছ। অতীতে এই গাছের অলৌকিক হওয়া বা অধুনা সেই আসন থেকে নেমে আসার পেছনে রয়েছে কিছু অভাবনীয় কারণ। ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে স্পেনীয়রা মেক্সিকো অধিকার করে নেয়ার পর ফিলিপাইনের সঙ্গে গড়ে উঠেছিল তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক। এই সম্পর্ক চলাকালে মেক্সিকোর আদিবাসী ইপিল-ইপিলের বীজ জাহাজে উঠে চলে গেছে ফিলিপাইনে। অনুমিত হয়, ইপিল-ইপিল শব্দটিও স্প্যানিশ থেকে ফিলিপাইনের ট্যাগালগ ভাষায় প্রবেশ করেছে তবে ফিলিপাইনে এর আরেকটি প্রচলিত নাম ‘সান্টা এলেনা’ (Santa Elena)।
প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দেয়ার পর এই গাছ বিস্তৃত হয়েছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায়, হিমালয়ের পাদদেশে, পাঞ্জাব, আফ্রিকা এমন কি অস্ট্রেলিয়াতেও। নতুন পরিবেশে এই গাছের ব্যবহারও বেড়ে গেছে নানাবিধ। এর পাতাকে ব্যবহার করা হয়েছে উত্তম পশুখাদ্য (Fodder) হিসাবে যা এদের আদি নিবাস মেক্সিকোতে শুরু হয়েছিল ৪০০ বছর আগে। রান্না ছাড়াও এই গাছের কাঁচা সিডপড খুলে এমনিই খেতে পারে মানুষ, তবে পরিমাণে অতিরিক্ত নয় কারণ এর ভিতর ‘মিমোসিন’ নামক বিষাক্ত এনজাইম থাকে। গবাদি পশুর জন্য যে কাঁচা বা শুকনো পুষ্টিসম্পন্ন খাবার দেয়া হয় তাতেও মেশাতে হয় অন্যান্য খাবার যাতে মিমোসিনের বিষক্রিয়া না হয়। ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে নারকেল বাগানে এই গাছকে লাগানো হয়েছে ভ্যানিলা গাছের বাহক হিসাবে এবং ফিলিপাইনে চা কফি কোকো গাছের শেডিং প্ল্যান্ট হিসাবে। এসব অঞ্চলের খাঁজকাটা পাহাড়ের ঢালে জমির আইলে গাছগুলো লাগানো হয় ভূমিক্ষয় রোধ করার জন্য। এই গাছের কাঠ শুধু উৎকৃষ্ট জ্বালানি নয় এর মণ্ড থেকে কাগজ এবং উৎকৃষ্ট মানের কয়লাও তৈরি হয় যা উৎপাদনের সময় ছাই কম হয় এবং বিব্রতকর ধোঁয়া ওঠে না।
ইপিল-ইপিলকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাহাড়ি পরিবেশেও দেখা যায় আবার ভারতীয় উপমহাদেশের কাদামাটিতেও এরা জন্মাতে পারে। এর জন্য ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসসমৃদ্ধ মাটিই বেশি উপযোগী। টানা রোদে এই গাছ ভাল জন্মায়, শৈত্যে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উত্তর অক্ষাংশে যত ঠাণ্ডা বাড়তে থাকে তত এর উচ্চতা ও বৃদ্ধি সীমিত হতে থাকে। এই গাছ কেটে ফেললে দ্রুত কপিস (Coppice) তৈরি হয় অর্থাৎ গজারি গাছের মতো নতুন করে ডাল গজিয়ে আবার নতুন গাছ হয়। ইপিল-ইপিলের বীজ চকচকে, মোমযুক্ত। অঙ্কুরোদ্গমের জন্যে একে গরম পানিতে ভেজালে বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্কারিফিকেশন (Scarification) বা বীজত্বক ঘষে নিলে দ্রুত চারা জন্মাতে পারে।
গাছের উচ্চতা ও বৃদ্ধি অনুসারে ইপিল-ইপিলকে মোটামুটি ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। একটি গুল্মাকার, হাওয়াইয়ান টাইপ, উচ্চতা কম। এই গুল্মজাতীয় গাছই ১৬০০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রথমে ছড়িয়েছে। দ্বিতীয়, পেরুভিয়ান টাইপ যার বেশ ডালপালা হয় এবং বীজের উৎপাদনও বেশি, উচ্চতা ৮-১০ মিটারের মধ্যে সীমিত থাকে। আর তৃতীয়টি জায়েন্ট ইপিল-ইপিল যা ২০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, যার ডালপালা কম, কাঠ সুন্দর এবং অন্যান্য বৃক্ষজাত দ্রব্যের উৎপাদনও উঁচু মানের। দ্বিতীয় প্রকারের পেরুভিয়ান জাতের গাছ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে বীজ উৎপাদন হয়, বীজ তোলার জন্য ব্যবহৃত হয় ‘ওভারহেড বিম’ প্রযুক্তি। তবে কুইন্সল্যান্ডে ১৯৮৬-৮৭ সালে যেখানে বীজের উৎপাদন ছিল ৫ টন তা একবছরের মধ্যে ৩ টনের নিচে চলে এসেছিল সিলিড পোকার আক্রমণের কারণে। সমসাময়িক কালে এর আক্রমণ দেখা যায় বাংলাদেশ, মিয়ানমার, নেপাল, আন্দামান, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশেও।
সিলিড (Heteropsylla cubana) এক প্রকার ছোট আকারের এফিড-জাতীয় পোকা। এরা গাছের কচি ডগা ও পাতা থেকে রস চুষে খায়। রসের ভিতর যে প্রোটিন আছে তা খেয়ে অবশিষ্ট সুগার, ট্যানিন ইত্যাদি অব্যবহৃত পদার্থ ‘হানি ডিউ’ হিসাবে বের করে দেয়। এতে গাছের কিছু পাতা কুঁকড়ে যায়, কিন্তু আক্রমণ তীব্র হলে পাতা ঝরে যায় এবং হানি-ডিউয়ের কারণে ফাঙ্গাসের আক্রমণ দেখা দেয়। এই ফাঙ্গাসের কারণে ফুল-ফল হতে পারে না এবং কিছু গাছের মৃত্যু ঘটে। তবে প্রকৃতিতে বহু ধরনের সিলিড আছে যারা কিছু ক্ষেত্রে আমাদের পরোক্ষ উপকারে আসে। জার্মানীর যে নামকরা ব্ল্যাকফরেস্ট হানি আমরা উচ্চমূল্যে কিনে থাকি নানা উপকারের জন্য তা মূলত সিলিড পোকার বর্জ্য, হানি-ডিউ থেকে তৈরি।
সারা পৃথিবী জুড়ে সিলিড পোকার তীব্র আক্রমণের পর ‘মিরাক্যাল’ ইপিল-ইপিল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে বলে মনে করেছেন অনেকে। তবে বিজ্ঞানীরা এর সমাপ্তি টানেননি, অবিরাম গবেষণা চালিয়ে বেশ কিছু উপকারী হাইব্রিড তৈরি করেছেন যাতে ফলন ভাল হবে আবার সিলিডের আক্রমণও প্রতিহত করা যাবে; লিউকিনা প্যালিডার (Leucaena pallida) বীজ উৎপাদন ক্ষমতা খুব বেশি, এর সঙ্গে ক্রস করা হয়েছে লিউকিনা লিউকোসেফালার (Leucaena leucocephala)। লিউকিনা ডাইভার্সিফোলিয়ার (Leucaena diversifolia) সঙ্গে ক্রস করে এমন একটি হাইব্রিড পাওয়া গেছে যা অধিক শৈত্যেও ফলনশীল থাকতে পারে এবং এর সাংবাৎসরিক বৃদ্ধি হতে পারে ১০-১৫ ফুটের মতো। এ-কারণে একে দ্রুত বনায়নের কাজে ব্যবহার করা যাবে। হাইব্রিড, বীজহীন ট্রিপলয়েড হাইব্রিড ছাড়াও ভেবে দেখা হয়েছে জৈব-নিয়ন্ত্রণের কথা। সিলিড পোকা ভক্ষণ করে এমন এক ধরনের বিটল Curinus Coeruleus. বেনলেট ও ক্যাপ্টান নামক কিছু উৎকৃষ্ট ছত্রাক নিবারণকারী ওষুধও বাজারজাত হয়েছে।
ইপিল-ইপিলের যাবতীয় সমস্যা এখন সমাধানের পথে, হাইব্রিড তৈরি করা, বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোলের জন্য পোকামাকড় খুঁজে বের করা, ফাঙ্গিসাইড নির্বাচন করা ইত্যাদি। এই বিদেশি গাছ বহু দেশে পরিবেশানুগ হয়েছে, মানুষের অনেক উপকারে লেগেছে; আমরা যা পরীক্ষা করার সুযোগ পাইনি, কারণটা খুব সঙ্গত, তার আগেই আমরা সিলিড-আক্রমণের শিকার হয়েছি।
Zayed Farid
Bangladesh University of Engineering and Technology
ইপিল-ইপিল গাছটিকে বাংলাদেশে এখন আর তেমন দেখা যায় না যদিও একসময় বিশ্বব্যাপী এই গাছটিকে সত্তুর-আশির দশকে বলা হতো ‘মির্যাকল ট্রি’ বা অলৌকিক গাছ। অতীতে এই গাছের অলৌকিক হওয়া বা অধুনা সেই আসন থেকে নেমে আসার পেছনে রয়েছে কিছু অভাবনীয় কারণ। ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে স্পেনীয়রা মেক্সিকো অধিকার করে নেয়ার পর ফিলিপাইনের সঙ্গে গড়ে উঠেছিল তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক। এই সম্পর্ক চলাকালে মেক্সিকোর আদিবাসী ইপিল-ইপিলের বীজ জাহাজে উঠে চলে গেছে ফিলিপাইনে। অনুমিত হয়, ইপিল-ইপিল শব্দটিও স্প্যানিশ থেকে ফিলিপাইনের ট্যাগালগ ভাষায় প্রবেশ করেছে তবে ফিলিপাইনে এর আরেকটি প্রচলিত নাম ‘সান্টা এলেনা’ (Santa Elena)।
প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দেয়ার পর এই গাছ বিস্তৃত হয়েছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায়, হিমালয়ের পাদদেশে, পাঞ্জাব, আফ্রিকা এমন কি অস্ট্রেলিয়াতেও। নতুন পরিবেশে এই গাছের ব্যবহারও বেড়ে গেছে নানাবিধ। এর পাতাকে ব্যবহার করা হয়েছে উত্তম পশুখাদ্য (Fodder) হিসাবে যা এদের আদি নিবাস মেক্সিকোতে শুরু হয়েছিল ৪০০ বছর আগে। রান্না ছাড়াও এই গাছের কাঁচা সিডপড খুলে এমনিই খেতে পারে মানুষ, তবে পরিমাণে অতিরিক্ত নয় কারণ এর ভিতর ‘মিমোসিন’ নামক বিষাক্ত এনজাইম থাকে। গবাদি পশুর জন্য যে কাঁচা বা শুকনো পুষ্টিসম্পন্ন খাবার দেয়া হয় তাতেও মেশাতে হয় অন্যান্য খাবার যাতে মিমোসিনের বিষক্রিয়া না হয়। ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে নারকেল বাগানে এই গাছকে লাগানো হয়েছে ভ্যানিলা গাছের বাহক হিসাবে এবং ফিলিপাইনে চা কফি কোকো গাছের শেডিং প্ল্যান্ট হিসাবে। এসব অঞ্চলের খাঁজকাটা পাহাড়ের ঢালে জমির আইলে গাছগুলো লাগানো হয় ভূমিক্ষয় রোধ করার জন্য। এই গাছের কাঠ শুধু উৎকৃষ্ট জ্বালানি নয় এর মণ্ড থেকে কাগজ এবং উৎকৃষ্ট মানের কয়লাও তৈরি হয় যা উৎপাদনের সময় ছাই কম হয় এবং বিব্রতকর ধোঁয়া ওঠে না।
ইপিল-ইপিলকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাহাড়ি পরিবেশেও দেখা যায় আবার ভারতীয় উপমহাদেশের কাদামাটিতেও এরা জন্মাতে পারে। এর জন্য ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসসমৃদ্ধ মাটিই বেশি উপযোগী। টানা রোদে এই গাছ ভাল জন্মায়, শৈত্যে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উত্তর অক্ষাংশে যত ঠাণ্ডা বাড়তে থাকে তত এর উচ্চতা ও বৃদ্ধি সীমিত হতে থাকে। এই গাছ কেটে ফেললে দ্রুত কপিস (Coppice) তৈরি হয় অর্থাৎ গজারি গাছের মতো নতুন করে ডাল গজিয়ে আবার নতুন গাছ হয়। ইপিল-ইপিলের বীজ চকচকে, মোমযুক্ত। অঙ্কুরোদ্গমের জন্যে একে গরম পানিতে ভেজালে বা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্কারিফিকেশন (Scarification) বা বীজত্বক ঘষে নিলে দ্রুত চারা জন্মাতে পারে।
গাছের উচ্চতা ও বৃদ্ধি অনুসারে ইপিল-ইপিলকে মোটামুটি ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। একটি গুল্মাকার, হাওয়াইয়ান টাইপ, উচ্চতা কম। এই গুল্মজাতীয় গাছই ১৬০০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রথমে ছড়িয়েছে। দ্বিতীয়, পেরুভিয়ান টাইপ যার বেশ ডালপালা হয় এবং বীজের উৎপাদনও বেশি, উচ্চতা ৮-১০ মিটারের মধ্যে সীমিত থাকে। আর তৃতীয়টি জায়েন্ট ইপিল-ইপিল যা ২০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, যার ডালপালা কম, কাঠ সুন্দর এবং অন্যান্য বৃক্ষজাত দ্রব্যের উৎপাদনও উঁচু মানের। দ্বিতীয় প্রকারের পেরুভিয়ান জাতের গাছ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে বীজ উৎপাদন হয়, বীজ তোলার জন্য ব্যবহৃত হয় ‘ওভারহেড বিম’ প্রযুক্তি। তবে কুইন্সল্যান্ডে ১৯৮৬-৮৭ সালে যেখানে বীজের উৎপাদন ছিল ৫ টন তা একবছরের মধ্যে ৩ টনের নিচে চলে এসেছিল সিলিড পোকার আক্রমণের কারণে। সমসাময়িক কালে এর আক্রমণ দেখা যায় বাংলাদেশ, মিয়ানমার, নেপাল, আন্দামান, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশেও।
সিলিড (Heteropsylla cubana) এক প্রকার ছোট আকারের এফিড-জাতীয় পোকা। এরা গাছের কচি ডগা ও পাতা থেকে রস চুষে খায়। রসের ভিতর যে প্রোটিন আছে তা খেয়ে অবশিষ্ট সুগার, ট্যানিন ইত্যাদি অব্যবহৃত পদার্থ ‘হানি ডিউ’ হিসাবে বের করে দেয়। এতে গাছের কিছু পাতা কুঁকড়ে যায়, কিন্তু আক্রমণ তীব্র হলে পাতা ঝরে যায় এবং হানি-ডিউয়ের কারণে ফাঙ্গাসের আক্রমণ দেখা দেয়। এই ফাঙ্গাসের কারণে ফুল-ফল হতে পারে না এবং কিছু গাছের মৃত্যু ঘটে। তবে প্রকৃতিতে বহু ধরনের সিলিড আছে যারা কিছু ক্ষেত্রে আমাদের পরোক্ষ উপকারে আসে। জার্মানীর যে নামকরা ব্ল্যাকফরেস্ট হানি আমরা উচ্চমূল্যে কিনে থাকি নানা উপকারের জন্য তা মূলত সিলিড পোকার বর্জ্য, হানি-ডিউ থেকে তৈরি।
সারা পৃথিবী জুড়ে সিলিড পোকার তীব্র আক্রমণের পর ‘মিরাক্যাল’ ইপিল-ইপিল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছে বলে মনে করেছেন অনেকে। তবে বিজ্ঞানীরা এর সমাপ্তি টানেননি, অবিরাম গবেষণা চালিয়ে বেশ কিছু উপকারী হাইব্রিড তৈরি করেছেন যাতে ফলন ভাল হবে আবার সিলিডের আক্রমণও প্রতিহত করা যাবে; লিউকিনা প্যালিডার (Leucaena pallida) বীজ উৎপাদন ক্ষমতা খুব বেশি, এর সঙ্গে ক্রস করা হয়েছে লিউকিনা লিউকোসেফালার (Leucaena leucocephala)। লিউকিনা ডাইভার্সিফোলিয়ার (Leucaena diversifolia) সঙ্গে ক্রস করে এমন একটি হাইব্রিড পাওয়া গেছে যা অধিক শৈত্যেও ফলনশীল থাকতে পারে এবং এর সাংবাৎসরিক বৃদ্ধি হতে পারে ১০-১৫ ফুটের মতো। এ-কারণে একে দ্রুত বনায়নের কাজে ব্যবহার করা যাবে। হাইব্রিড, বীজহীন ট্রিপলয়েড হাইব্রিড ছাড়াও ভেবে দেখা হয়েছে জৈব-নিয়ন্ত্রণের কথা। সিলিড পোকা ভক্ষণ করে এমন এক ধরনের বিটল Curinus Coeruleus. বেনলেট ও ক্যাপ্টান নামক কিছু উৎকৃষ্ট ছত্রাক নিবারণকারী ওষুধও বাজারজাত হয়েছে।
ইপিল-ইপিলের যাবতীয় সমস্যা এখন সমাধানের পথে, হাইব্রিড তৈরি করা, বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোলের জন্য পোকামাকড় খুঁজে বের করা, ফাঙ্গিসাইড নির্বাচন করা ইত্যাদি। এই বিদেশি গাছ বহু দেশে পরিবেশানুগ হয়েছে, মানুষের অনেক উপকারে লেগেছে; আমরা যা পরীক্ষা করার সুযোগ পাইনি, কারণটা খুব সঙ্গত, তার আগেই আমরা সিলিড-আক্রমণের শিকার হয়েছি।
![]() |
| ইপিল-ইপিলের তামাটে সিডপড সূূূত্রঃ asergreev.com |
![]() |
| বাবলার মতো গোলাকার ফুল সূত্রঃ ফ্লিকার |
![]() |
| খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত পাতা সূত্রঃ FAO |
![]() |
| খোলা পুষ্ট বীজ সূত্রঃ ইউজফুল ট্রপিক্যাল |
Zayed Farid
Bangladesh University of Engineering and Technology
Tags:
উদ্ভিদ ও বৃক্ষ



