বিহাইন্ড (পর্ব ১)



"তোর দেবরের তোর দিক কু-নজর আছে,তাই নারে আপা?"
জয়ার কথায় নয়না মৃদু হাসল।এরপর পরনের কাপড় ঠিক করতে করতে বলল:
"ছিঃ।কি যে বলিস না তুই? মৃদুলতো ছোট।ও এসবের কি বুঝে?"
"হু,ছোট না ছাই।শয়তানের হাড্ডি।তুই যখন গোসল করে ছাদে কাপড় শুকাতে যাস তখন মৃদুল ছাদের চিলকোঠায় দাড়িয়ে তোকে কেমন চোখে যেন দেখে"
নয়না এবার গামছা নিয়ে চুল আচরাতে আচরাতে বলল:
"না রে জয়া।তোর কোথাও ভুল হচ্ছে।মৃদুল ওমন ছেলেই নয়।ও কত ভদ্র-নম্র ছেলে.!"
"হু হু।ওসব ছেলেকে আমার অনেক আগেই চেনা হয়ে গেছে।আপা,তোকে কিন্তু আমি আগে-ভাগেই বলে রাখলাম।দেখিস,আমার কথা না শুনে পড়ে আবার পস্তাস না যেন।"
নয়না মৃদু হেসে দুই কদম এগিয়ে গিয়ে জয়ার গাল টেনে বলল:
"ই। এসেছে কোন নবাবজাদীরে।উনি নাকি আমায় সতর্ক করছে।যা ভাগ এখান থেকে"
নয়নার কথায় জয়া মন খারাপ করে বিছানা থেকে নেমে গেল।খুব রাগ হলো ওর।- "আপাকে কথাটা বললাম আর ও বিশ্বাস করল না। আমার চেয়ে ওই লম্পট মৃদুলকেই বিশ্বাস করল।"
"ধুর.!ভাল্লাগেনা"
জয়ার কান্ড দেখে নয়না মুচকি হাসি দিলেও মনে মনে খুব চিন্তা হচ্ছে ওর। বেশ কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছে ওর দেবর মৃদুল ওর দিকে কেমন করে যেন তাকায়।পরনের কাপড়ের একটু বে-খেয়াল হলেই মৃদুল কেমন জানি ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে সেদিকে।তখন ব্যাপারটাকে ওতো পাত্তা দেয় নি নয়না। তবে আজকে জয়ার যা বলল সেটা শুনে নয়নার কেমন জানি অসস্তি হচ্ছে। সত্যিই কি মৃদুল এমন.?
নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে নয়না।মাধুর্যের সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়েছে।অবশ্য নিম্নবিত্ত হলেও জামাইকে খুশি করার কম চেস্টা করেন নি ফেলু নাথ।জামাই যখন যা চেয়েছে তখনি তাই দেয়ার চেস্টা করেছে।তবে এইবার যা চেয়েছে সেটা উনার সাধ্যের বাইরে। ২ লাখ টাকা চেয়েছে। উত্তরের চরের দুটো জমির একটা অনেক আগেই বিক্রি করেছেন তিনি।বাকি যেটা ছিল সেটা রেখেছেন ছোট মেয়ে জয়ার জন্য।এহেন অবস্হায় টাকা দিতে না পারায় নয়নাকে এখন দু-বেলা শারীরিক-মানসিক দুই অত্যাচারিই সহ্য করতে হয়।নয়না মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না।আগে থেকে নয়না খুব শান্ত আর সাবলীল মেয়ে।তবে জয়া নয়নার বিপরীত।জয়ার সামনে যদি নয়নার এতটুকুও খোটা খায়,তাহলে নয়না ক্ষেপে নয়নার শশুর-শাশুড়িকে মাথায় তুলেন। এ জন্যও কম কথা শুনতে হয় না নয়নাকে।
·
সন্ধ্যায় মাধুর্য এসেছে। নয়নার যেন উৎফুল্লের শেষ নেই।কত ধরনের খাবারের আয়োজন করেছে। নিজ হাতে রান্না করেছে সব।- "জয়াটা কাল চলে গেছে।মেয়েটা না!.বললাম আর দুটো দিন থাক।আজকে থাকলে দুটো খেয়ে যেতে পারত।থাকলে,কেমন রেধিছে সেটা ঠিকি বলত জয়াটা?"
মনে মনে বলল নয়না।খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বাসন-কোসন মেঝে ঘড়ে ঢুকল।ঘড়ে ঢুকতেই শুরু হলো টর্চার।অনেক বারন করা সত্যেও শুনল না মাধুর্য।ক্ষুধার্ত হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়ল নয়নার উপর।সারাদিনের ক্লান্তি আর অবশ শরীর নিয়ের ধকল নয়না আর নিতে পারল না।অজ্ঞান হয়ে গেল।ইদানিং প্রায়ই হুটহাট করে অজ্ঞান হয়ে যায় নয়না।
স্নান ঘড়ে স্নান করার সময় নয়না টের পেল দুটো চোখ নয়নার অর্ধ-আবৃত শরীর দেখছে।কেমন জানি অসস্তিতে পড়ল নয়না।শরীর ঢেকে তাড়াতাড়ি স্নান ঘড় হতে বেরুল নয়না।বের হতেই দেখল মৃদুল বাথরুমের পিছনটায় দাড়িয়ে আছে। নয়নাকে দেখে মৃদুল তড়িঘড়ি সরে গেল। নয়নার কেমন জানি সন্দেহ হলো? তবুও মৃদুলকে কিছু বলল না।ভাবল,মাধুর্যকে বলবে ব্যাপারটা।
·
(রাত্রিবেলা)
চেয়ারে বসে আপন মনে সিগারেট টানছে মাধুর্য।নয়না অনেকবার মাধুর্যকে সিগারেট খেতে বারন করছিল।কিন্তু মাধুর্য সে কথা কানেই নেয় নি।উল্টো নয়নাকে বলেছিল:
"শালি,আমি সিগারেট খাই তাতে তোর কি সমস্যা? যদি খুব বেশি সমস্যা হয় তাইলে তোর বাপের বাড়ি চলে যা।আমি তোর বাপের টাকায় সিগারেট খাই না। এ নিয়ে আর একটা কথাও বলবিনা তুই।
ই আসছে আলগা পিরিত দেখাতে?"
তখন থেকেই মাধুর্যকে সিগারেট নিয়ে আর কিছু বলে না নয়না।প্রথম প্রথম সিগারেটের ধোয়ায় খুব কাশিঁ হতো নয়নার।তবে এখন বেশ সয়ে গেছে।
পাকঁঘরের কাজ শেষ করে আচলঁ দিয়ে হাত মুছতে মুছতে ঘড়ে ঢুকল নয়না।বিছানা ঝাড় দিতে দিতে বলল:
"ওগো শুনছো।তোমাকে একটা কথা বলতাম?"
মাধুর্য গম্ভীর গলায় উত্তর দিল:- "বল"।
"রাগ করবে নাতো?"
নয়নার কথায় মাধুর্য হালকা চটে গিয়ে বলল- "এই বেশি ঢং করবি নাতো।বললে বল না বললে চুপ-চাপ করে শুয়ে পড়"
নয়না চমকিল না।মাধুর্যের এই রুপের সাথে এর আগেও তার সাক্ষাত হয়েছে।কোমল কন্ঠে বলল:
"মৃদুলকে না আমার কেমন কেমন ঠেকে?"
নয়নার কথায় মাধুর্য চমকে গিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাড়াল।ভুরু কুচকে বলল:
"মানে? কি বলতে চাচ্ছিস তুই?"
"না মানে।আমার দিকে মৃদুল কেমন কেমন করে যেন তাকায়।আবার আজকে গোসল করার সময়"....
এইটুক বলে থেমে গেল নয়না।মাধুর্য তিব্র কৌতুহল নিয়ে বলল:
"কি? কি হয়েছে গোসলখানায়?"
"মৃদুল আমার গোসল দেখছিল।"
কথাটা বলার সাথে সাথেই মাধুর্য নয়নাকে ডান হাত দিয়ে কষে থাপ্পর মারল।সাথে সাথেই নয়না "ও মাগো" বলে চিৎকার দিল।
"শালি আমার ভাইকে নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে আমার কাছে মিথ্যা বলছিস? আমার ওমন সুন্দর ভাইটাকে তুই লম্পট বলছিস।দ্বারা"....
এই বলে মাধুর্য নয়নার হাত ধরে টানতে বাইরে নিয়ে এসে চিৎকার করে "মা,বাবা।এই দেখে যাও তোমার হতচ্ছারি বউয়ের কান্ড" চিৎকার করে বলতে থাকল।
"শালি তুই আমার ভাইকে লম্পট বলিস?"
নয়নার চুল টেনে আরো দুইটা থাপ্পর দিল মাধুর্য।নয়না কিছু বলতে পারছে না।শুধু "ও মাগো" - বলেই চিৎকার দিচ্ছে।এর মধ্যেই বাড়িতে এতো হট্টগোল শুনে দরজা খুলে মাধুর্যের বাবা-মা,মৃদুল বের হয়ে আসল।মাধুর্যের বাবা দোতালা থেকে সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল:
"কি হয়েছে রে? এভাবে ভর-রাতে ষাড়ের মতো ডাকছিস?"
"ডাকছি কি আবার স্বাদে? তোমার এই গুনধর বউ মৃদুলের নামে কান ভারি করছে? বলে কিনা 'মৃদুল নাকি চুপিচুপি ওর গোসল দেখে'।হতচ্ছারি"
আবার মারতে শুরু করল মাধুর্য।এবার শুধু থাপ্পর নয়।সাথে স্ব-জোড়ে লাথিও দিতে লাগল নয়নার পেটে।মাধুর্যর কথা শুনে মৃদুল ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলল:
"দেখছো মা।আমি তোমাকে বললাম না,ভাবি আমাকে নিয়ে মনে মনে কোন প্লান কষছে।আজ দেখলে তো।ছিঃ।শেষ পর্যন্ত এত্তোবড় মিথ্যা কথা।"
মৃদুল এবার মাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে শুরু করল।মৃদুলের মা এবার প্রচন্ড চটে গেলেন।হাঠু পর্যন্ত কাপড় তুলে সিড়ি দিয়ে গদাম গদাম কররে নেমে এসে নয়নার চুলের মুঠি ধরে বলল:
"হতচ্ছারি।তুই আমার ছেলেকে লম্পট মনে করিস"
বলেই ঠাস ঠাস করে থাপ্পর দিতে থাকল।নয়না কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে ধরলেও তার সেটা বলা হলো না।স্ব-জোড়ে ধাক্কা খেল দেয়ালে পিলারের সাথে।মাথা ফেটে রক্ত বেরুতে থাকল।চোখ-মুখ অন্ধকার হয়ে আসবে মনে হচ্ছে ।সেই সময়ও মাধুর্যের এলো-পাতাড়ি পা দিয়ে লাথি মারা থামল না।শরীর আস্তে আস্তে অশার হয়ে আস্তে লাগল।জ্ঞান হারানোর শেষ মহুর্তে অস্পষ্ট গলায় শুনতে পেল - "মাধুর্য।মার শালিকে মার।শেষে কিনা আমার..." আর কিছু শুনে নিই নয়না।তার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।।
·
তিস্তার পাড়ে তিনটা অজ্ঞাত লাশ পাওয়া গেছে।লাশগুলো সব বস্তার মধ্যে বন্দি।হাত-পা বাধা ছিল।লাশের গায়ে কোন কাপড় ছিল না।দেখে মনে হচ্ছে,দুইটা পুরুষ আর একটা মহিলার লাশ।কিন্তু লাশের মুখ আইডিন্টিফাই করা যাই নি।লাশের মুখ সম্ভবত এসিড দিয়ে ঝলসানো হয়েছিল।তাই হয়ত লাশগুলোর শরীর থেকে চামড়া ছিড়ে-ছিড়ে গেছে।ইতিমধ্যেই ওই থানার অন্তর্গত পুলিশ সুপার ঘটনাস্হল পরিদর্শন করেছেন।তদন্তের জন্য লাশ ফরেনসিক টিমের কাছে হস্তান্তর করা হয়ে হয়েছে।পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের আশ্বস্ত করেছেন:
"খুনি যেই হোক তাকে অতি শিঘ্রই আইনের হেফাজতে নেওয়া হবে।"
গত তিনদিন ধরে রায় বাড়িতে আলো ঢুকে নি।ঢুকে নি বলতে বাড়ির ভিতর আলো ঢুকার জন্য কোন দরজা বা জানালা খোলা হয় নি।যে রায় বাড়িতে প্রতিদিন সামন্য বিষয় নিয়ে হট্টগোল লেগেই থাকত,সেই রায় বাড়িতে কোন মানুষের পায়ের আওয়াজই শুনা যায় নি।বিষয়টা খুব গোলমেলে ঠেকেছে রায় বাড়ির পাশের প্রতিবেশি সুধির বাবুর কাছে।সম্পের্ক রায় বাড়ির সাথে তার রক্তের টান।বলা নেই কওয়া নেই হুট করে সব গেল কোথায়?বাড়ির ভিতর যে কেউ নেই সেটা তিনি ভালই টের পেয়েছেন।শুধু তিনি কেন আশে-পাশের বাড়িগুলোর লোকজনও টের পেয়েছে।সেদিন রাতে বাড়ির ভিতর যে বড় কিছু সেটাও তারা বেশ টের পেয়েছেন।- "কি করবেন কি করবেন?" ভাবতে ভাবতে বাধ্য হয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকল সবাই।ভিতরে ঢুকে তাদের চোখ চড়কগাছ।টর্চের আলোয় স্পস্ট দেখা যাচ্ছে একটা মেয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে।সমস্ত ফ্লোর জুড়ে রক্ত।
(চলবে...)

Written by - Sohanur Rahman Sohan

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম