চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারত যাত্রা

India tour for medical purpose

( ভিসা প্রাপ্তি ও কোলকাতা গমন)
কোন ভিসা করবেন: ভারতে যাবার জন্যে প্রথম পূর্বশর্ত হল ভিসা। আপনার যদি সাধারণ সাস্থ পরীক্ষার জন্যে ভারতে যাবার ইচ্ছা থাকে সেক্ষেত্রে আপনি চাইলে ভ্রমন ভিসা (Tourist visa ) নিয়ে ভারতে যেতে পারেন। তবে নিয়ম হল ভারতে চিকিৎসার জন্যে যেতে হলে আপনাকে চিকিৎসা ভিসা (Medical visa) নিয়েই যেতে হবে। সুতরাং নিয়ম মেনে যাওয়াই ভাল কারন যদি আপনার জটিল কোনও রোগ ধরা পরে বা হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় সেক্ষেত্রে চিকিৎসা ভিসা না নিয়ে গেলে আপনাকে ফেরত পাঠানো হতে পারে।

মেডিকেল ভিসার জন্য যা যা প্রয়োজন :
১। অনলাইনে পূরণকৃত ভিসা ফর্ম
২। ২x২ ইঞ্চি সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের ছবি
৩। বিদ্যুৎ বিল/ গ্যাস বিল/টেলিফোন বিল এর কপি
৪। ডলার এন্ডরস্মেন্ট/ ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট/ ক্রেডিট কার্ড
৫। পাসপোর্ট এবং আগের ভিসা (যদি থাকে) এর ফটোকপি
৬। বাংলাদেশের ডাঃ এর সকল প্রেসক্রিপশন ও মেডিকেল রিপোর্ট এর ফটোকপি এবং অরিজিনাল কপি
৭। বাংলাদেশী ডাঃ এর রেফার লেটার
৮। ইন্ডিয়ান ডাঃ বা হাস্পাতালের এপয়েন্টমেন্ট লেটার
৯। চাকরীজিবী হলে বা ব্যাবসায়ি হলে ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি, ছাত্র হলে আইডি কার্ড।
১০। এনআইডি বা জন্ম নিবন্ধন এর ফটোকপি।

যা যা মনে রাখা দরকার :
১. নকল ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট দেবেন না, ওরা যাচাই এর সময় জাল পেলে ভিসা তো পাবেন ই না হয়রানি হবে শুধু শুধু।
২. আবেদনকারীই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরে হলে অবশ্যই অবসর এর কাগজ জমা দিন। সামরিক/আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হলে অতিরিক্ত আরেকটি ফর্ম পুরন করে জমা দিবেন।
৩. ভিসা আবেদনের সময় আপনি কোন সীমান্ত বন্দর দিয়ে ভারত প্রবেশ করতে ইচ্ছুক তা লিখতে হয়। বেনাপোল, দর্শনা দিয়ে সড়ক ও রেলপথে এবং বিমানপথে যে কেউ ভ্রমন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনার ভিসায় কোন বন্দরের কথা লিখা আছে সেটা বিবেচনায় আসবে না। কিন্তু এই তিনটি ছাড়া অন্য কোন বন্দর ( যেমন হিলি, সোনা মসজিদ) দিয়ে আপনি ভারত প্রবেশ করতে চাইলে সেটি অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে ভিসা আবেদনের সময়।
৪. অনলাইন আবেদন এর ছবি এবং ফর্ম এ আঠা দিয়ে লাগানো ছবি একই হতে হবে। ছবিতে চশমা পরার নিয়ম নেই। অনেক সময় চশমা পরা ছবি দিয়ে পার পেয়ে জেতে পারেন, কিন্তু ঝামেলা হবার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
৫. কিছু সময় হাতে রেখে ভিসা করতে দিন কারন অনেক সময় ভিসা করতে অতিরিক্ত সময় লেগে যায়।
৬. প্রথমবার মেডিকেল ভিসা নিয়ে যেতে চাইলে সাধারনত বাংলাদেশি ডাক্তার এর রেফার লেটার লাগেই, কিন্তু পরেরবার থেকে ইন্ডিয়ান ডাক্তারের রেফার লেটার ও এপয়েন্টমেন্ট হলেই হবে।
৭. ভিসার আবেদন এর কাগজপত্র জমা দেয়ার একটি নির্দিষ্ট ক্রম আছে , সেটা মেনে কাগজ সাজান।

কোলকাতা গমনঃ কোলকাতা যাবার জন্য আপনাদের হাতে কয়েকটি বেছে নেবার সুযোগ আছে। সেগুলো হল - বাস, ট্রেন ও ব্যাক্তিগত পরিবহন। প্রতিটির আলাদা আলাদা ভাল ও খারাপ দিক আছে। আমি সংক্ষেপে সেগুলো বলার চেষ্টা করছি।

বাসঃ বাসে যাবার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল আপনার বেছে নেবার অনেক সু্যোগ। প্রতিদিন প্রচুর বাস চলাচল করে ঢাকা থেকে কোলকাতা রুট এ । আর বাস বিভিন্ন যায়গা থেকে ছাড়ে সুতরাং দেশের ভেতরে আপনার অবস্থান অনুযায়ী আপনি সুবিধামত যায়গা থেকে বাস এ যেতে পারবেন। ভাড়া বাস ভেদে বিভিন্ন রকম আছে। সবচেয়ে বেশি ভাড়া ডিরেক্ট বর্ডার পার হওয়া গাড়িগুলোতে। এই গাড়িগুলোর ইকোনমি এসি এর ভারা ১৯০০ টাকা (বেনাপোল-পেট্রাপোল হয়ে) । সাধারন সব বাসের একি নিয়ম, তারা আপনাকে স্থল বন্দরে নামায়ে দিবে এবং সীমান্ত পার হবার যেসব নিয়মকানুন আছে সেগুলো পূরনে আপনাদের সাহায্য করবে। সাথে পার হবার পরে একই কোম্পানির অন্য একটি বাস সিমান্তের ওপার থেকে আপনাদের নিয়ে যাবে। ডিরেক্ট বাসের ব্যাপারটা একটু ভিন্ন, এক্ষেত্রে আপনি যে বাসে যাচ্ছেন সেই বাসটি সীমান্ত পার হয়ে আপনাদের কোলকাতা পৌছে দেবে। এই বাসগুলো আপাতত শুধুমাত্র বেনাপোল বর্ডার দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে। বেনাপোল সীমান্ত দিয়েই যেহেতু সবচেয়ে বেশি লোক ভারতে প্রবেশ করে তাই সীমান্ত অতিক্রমে অনেক সময় লেগে যায়। আবার সীমান্তের ওপারে যশোর রোড বেশ সরু তাই অনেকটা সময় লেগে যায় কোলকাতা পৌছাতে (৫-৬ ঘন্টাও লাগতে পারে গাড়ির চাপ বেশি থাকলে) । তবে বাস এ গেলে আপনি সীমান্ত পার হবার পরে আপনার সুবিধামত সময়ে নেমে যেতে পারবেন। আর বাস এর শেষ স্টপেজ যেটা নিউ মার্কেট নামে পরিচিত সেখানে প্রচুর হোটেল, মানিএক্সচেঞ্জ এবং ভ্রমণকারীদের প্রয়োজনীয় অন্যান্য সুযোগ সুবিধা আছে। তাই বাস থেকে নেমে আপনার অন্য কোথাও যেতে হবে না। কোম্পানী ভেদে ১৫ থেকে ৩০ দিন আগে টিকিট বুক করতে পারবেন।

ট্রেনঃ ট্রেন এ ভারতে যাওয়া অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে এখন। বিমানবন্দরের মত এন্ড-এন্ড ইমিগ্রেশনের কারনে। এর মানে হল আপনি ঢাকা থেকে ইমিগ্রেশন-কাস্টমস শেষ করে বোর্ডিং পাস নিয়ে ট্রেন উঠে বসবেন এবং একেবারে কোলকাতা স্টেশনে গিয়ে নেমে ইমিগ্রেশন-কাস্টমস শেষ করে বেরিয়ে যাবেন। মাঝে বর্ডারে নামা-উঠার কোন ঝামেলা নেই আর যেহেতু শুধু মাত্র ট্রেনের যাত্রিরাই এই পথে ভারতে প্রবেশ করেন তাই ভিড় ও তুলনামুলক কম। ট্রেন এর মান ও বেশ ভাল। ঢাকা-কোলকাতা মৈত্রি এক্সপ্রেস সপ্তাহে ৪ দিন (শুক্র, শনি, রবি, বুধ) ও খুলনা কোলকাতা বন্ধন এক্সপ্রেস আপাতত সপ্তাহে ১ দিন (বৃহষ্পতিবার) ভারত যায়। সুতরাং আপনি যদি ঢাকা বা খুলনার আসেপাশে না থাকেন তবে আপনার জন্যে ট্রেন এ যাওয়াটা হয়ত অতটা সুবিধার হবে না। ট্রেন এর টিকিট কাটতে হলে আপনাকে সশরীরে কমলাপুর ষ্টেশনে পাসপোর্ট এর মুল কপি নিয়ে এসে তারপরে কাটতে হবে। ঠিক ২৯ দিন আগে টিকিট বিক্রি শুরু হবে ( ২৯ ই ৩০ নয়, অনেকেই বলেন ৩০ কিন্তু সফটওয়ার এর জটিলতার কারনে আসলে ২৯ দিনের আগে টিকিট বিক্রি করতে পারে না ওরা) । একজন সর্বোচ্চ ৪ টি টিকিট কাটতে পারবেন। এবং যাদের টিকিট কাটবেন তাদের সবার পাসপোর্ট লাগবে।
ট্রেইন এর ভাড়া রেগুলার এসি সিট ২৫০০ টাকা।
সীমান্তের নিয়মকানুন ঠিকমত জানা থাকলে ব্যাক্তিগত ব্যাবস্থায় সীমান্তে গিয়েও আপনি সীমান্ত পার হতে পারবেন। ইমিগ্রেশন/কাস্টমস অফিসের কোন কর্মকর্তা ছাড়া কখোনই কারো কাছে আপনার পাসপোর্ট দেবেন না। কেউ দেখতে চাইলে আগে তার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তারপরে দেখাবেন। আর অফিসের বাইরে কারো কাছেই দেবেন না। এবং যে যাই বলুক বর্ডার থেকে বেশি ডলার ভাঙ্গাবেন না। বর্ডারে অনেক কম রেট পাওয়া যায়।

বিমানঃ ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কোলকাতা ও চেন্নাই যাবার বেশ কিছু ফ্লাইট রয়েছে। এছাড়া ভারতের অন্যান্য কিছু স্টেট এর সাথেও ফ্লাইট রয়েছে। তবে সরাসরি ফ্লাইট মুলত কোলকাতার গুলোই। অন্যগুলোতে অনেক সময়ই স্টপ থাকে। বিমানের ভাড়া ডাইনামিক প্রাইসিং হবার কারনে নির্দিষ্ট ভাড়া বলা কঠিন। তবে ঢাকা-কোলকাতা সর্বনিন্ম ৫৫০০-৬০০০ ও ঢাকা-চেন্নাই সর্বনিন্ম ১২০০০-১৩০০০ এ পেতে পারেন। এবং চট্টগ্রাম-কোলকাতা সর্বনিন্ম ১১০০০-১২০০০ টাকা ও চট্টগ্রাম-চেন্নাই ২০০০০ টাকায় পেতে পারেন। মনে রাখবেন এগুলো গড় ভাড়া নয়। সম্ভাব্য সর্বনিন্ম ভাড়া যেটা আপনি চাহিদার সল্পতা ও অনেক আগে বুকিং এর ক্ষেত্রে পেতে পারেন।

কোলকাতায় থাকাঃ বাংলাদেশ থেকে যারা কোলকাতা যান তাদের একটা বড় অংশই নিউমার্কেট এলাকায় থাকেন। এর কারন বাসগুলো এখানেই এসে থামে। সেই মতই এই এলাকার সমস্ত কিছু গড়ে উঠেছে। এবং চিকিৎসা বা ভ্রমন যে কারনেই আসেন না কেন নিউমার্কেট এলাকায় আপনার থাকা সবচেয়ে সুবিধাজনক হবে কারন আপনার প্রয়োজনীয় সবকিছুই এখানে হাতের কাছে পাবেন এবং অনেক হোটেল-গেস্ট হাউস থেকে পছন্দ করে নিতে পারবেন। তবে এই এলাকার ভাড়া অন্যান্য এলাকার তুলনায় কিছুটা বেশি। এছাড়াও এয়ারপোর্ট এলাকাতেও অনেক হোটেল লজ আছে। অই দিকটাতে খরচ একটু কম। বিমানে যাতায়াত করলে এয়ারপোর্ট এর আসেপাশে থাকতে পারেন। এছাড়াও অনেক বাড়িতে আপনি পেয়িং গেস্ট হিসেবেও থাকতে পারবেন। যেহেতু বাংলাদেশ ও কোলকাতার সংস্কৃতি অনেকটা একিরকম তাই পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকতেও আপনার খারাপ লাগবে না।


( কোলকাতা টু ভেলোর যাওয়া ও ভেলোরে থাকা)
ভারতে চিকিৎসা করতে আসা অধিকাংশ বাংলাদেশী চিকিৎসার জন্যে তামিলনাড়ু রাজ্যের ভেলোর জেলায় অবস্থিত ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ (CMC) তে জান। এর পেছনের মূল কারন হলো ভেলোরের উন্নত চিকিৎসা সেবা এবং তুলনামুলক কম খরচ। শুধু বাংলাদেশী নয় ভারতীয় অন্যান্য রাজ্যের লোকজনের কাছেও সি,এম,সি একটি ভরসার নাম। ভেলরে রোগীর সংখ্যা প্রচুর বেড়ে এখন প্রায় তাদের নিয়মিত ক্ষমতার ২-৩ গুন রোগীকে তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। কিন্তু তারপরেও তাদের চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে বিন্দুমাত্র আপোষ তারা করে নি। এখন আমি আপনাদেরকে কোলকাতা থেকে ভেলোর যাত্রাপথের প্রয়োজনীয় সবকিছু জানাবো। প্রথমেই শুনুন কি কি উপায়ে আপনি ভেলোর যেতে পারেন। ভেলোর যাবার উপায় দুটি ট্রেন ও বিমান।

বিমানপথে ভেলোরঃ ভেলোরে কোন বিমান বন্দর নেই। বিমানপথে আপনি ভেলর যেতে চাইলে আপনি ভেলরের কাছাকাছি দুটি বিমানবন্দরের যেকোনটি ব্যাবহার করতে পারেন। একটি হল চেন্নাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যা আনুমানিক ১৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং অন্যটি হল কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বেঙ্গালুরু যা আনুমানিক ২২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এক্ষেত্রে আপনাকে বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে বাস, ট্রেন বা ট্যাক্সি করে ভেলোর আসতে হবে। চেন্নাই থেকে আসা তুলনামূলক সহজ এবং সাশ্রয়ী। চেন্নাই থেকে ট্যাক্সি (৪ সিটের এ,সি সেডান) করে ভেলোর যেতে আপনার ২৫০০ রুপির মত খরচ হবে। বেঙ্গালুরু এর ক্ষেত্রে আপনার খরচ হবে ৫০০০ রুপি এর মত। আর বিমান ভারা সর্বনিন্ম ৩৫০০ রুপি থেকে শুরু হয়ে অতিরিক্ত চাহিদার দিন আমি ২২০০০ রুপি পর্যন্ত দেখেছি। এছাড়া চেন্নাই সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে ভেলর কাঠপড়ি ষ্টেশন যেতে পারেন। ভাড়া পরবে সর্বনিন্ম ৮০ রুপি। এছাড়া বাস এ যেতে পারেন। এসি বাসের ভাড়া শুরু হয় সর্বনিন্ম ৩০০ রুপি থেকে। বেঙ্গালুরু এয়ারপোর্ট এর ক্ষেত্রেও আপনারা নেমে ট্রেন ও বাস এ যেতে পারবেন ট্রেন এ যাবার জন্যে বেঙ্গালুরু এর বেশ কিছু ট্রেন ষ্টেশন ব্যাবহার করতে পারেন একেকটা থেকে একেক দূরত্ব। আর বাস এ যেতে চাইলে এ,সি, বাসের ভাড়া ৫০০ রুপি থেকে শুরু। তবে বেঙ্গালুরু যাবার চেয়ে চেন্নাই এয়ারপোর্ট হয়ে যাওয়া অনেক সহজ যেহেতু দূরত্ব প্রায় অর্ধেক।

ট্রেনঃ ভারতের লোকেরা বলে থাকে ট্রেন হল তাদের গর্ব। বাস্তবিকই তাদের ট্রেন সেবার তুলনা হয় না। এত বিশাল দেশে এত নিপুন ভাবে ট্রেন সেবা পরিচালনা করা আসলেই অনেক কষ্টসাধ্য কাজ। যাই হোক মুল কথায় আসা যাক। ট্রেনে আসতে চাইলে আপনাকে হাওড়া/সাতরাগাছি/শালিমার এই তিন ষ্টেশন এর যেকোন একটা থেকে আসতে হবে। ভারতে ট্রেন এর টিকেট সাথে সাথে পাওয়া যায় না তাই আপনাদেরকে আগেই টিকিট কেটে রাখতে হবে। সাধারন টিকিট ট্রেন ভেদে ১০দিন -৩ মাস আগে পাওয়া যায় আর তৎকাল টিকিট ভ্রমনের আগের দিন বেশ বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়। কোলকাতা থেকে যাবার সময় আমার প্রথম পছন্দ হল হাওড়া ষ্টেশন কারন এটি ভারতের বৃহত্তম ষ্টেশন। আর সবকিছুই এখানে অন্যান্য ষ্টেশনের তুলনায় গোছানো। যাই হোক এবার আসি ট্রেন এর বেপারে। প্রতিদিন ই ভেলোর যাবার একাধিক ট্রেন থাকে কোলকাতা থেকে সাথে চেন্নাই যাবার ট্রেন ও থাকে। আপনি যদি সরাসরি ভেলোরের টিকিট কাটতে পারেন তাহলে আপনার কষ্ট কিছুটা কম হবে। ট্রেন এর মান এর তারতম্য থাকলেও সব ট্রেন ই মোটামুটি একটা নূন্যতম মান বজায় রাখে। আমার মতে সাপ্তাহিক এ,সি, এক্সপ্রেস ট্রেনগুলো এবং হামসফর (ভাড়া কিছুকটা বেশি) এক্সপ্রেস সবচেয়ে ভাল। ট্রেন এ এসি বগিগূলো তিন ভাগে বিভক্ত থাকে 1A, 2A ও 3A . এর মধ্যে 1A এর ভাড়া সবচেয়ে বেশি এবং এটি সবচেয়ে বিলাসবহুল টিকিট। তারপরেই 2A ক্লাস ও সবচেয়ে সাশ্রয়ী এ,সি, শ্রেনী হল 3A। তবে 3A সবচেয়ে সাশ্রয়ী হলেও যথেষ্ট আরামদায়ক ভ্রমন করতে পারবেন এই শ্রেনী তেও। নন এ, সি, রিজার্ভেশন বগিগুলোকে বলে স্লিপার। স্লিপার এর যাত্রাও খুব বেশি সমস্যা নয়। অধিকাংশ ভারতীয়রা স্লিপার এ গিয়েই অভ্যস্ত কিন্তু সমস্যা হল দক্ষিন ভারতের অসহ্য গরমে আমাদের দেশের লোকজনের জন্যে ২৮ ঘন্টা ট্রেন এ যাওয়া বেশ কঠিন ই হয়ে যায়। সেই জন্যে আমার উপদেশ হবে অবশ্যই এ,সি, তে টিকিট করার চেষ্টা করবেন। কিছু বিষয় বিষেশভাবে মনে রাখার চেষ্টা করবেন –
• ট্রেন টিকিট এ বয়স্ক লোক থাকলে যেন লোয়ার বার্থ এর অন্তত একটি টিকিট করার চেষ্টা করবেন।
• ট্রেনে দীর্ঘ সময় থাকতে হবে তাই একটি ৫ লিটার পানির বোতল কিনে নেবেন ষ্টেশনে যাবার আগেই কারন ষ্টেশনের ভেতরে ৫ লিটার তো দুরের কথা ২ লিটারের বোতল পাওয়াও অনেক কষ্টকর। এই পানি শেষ হয়ে গেলে যেসব ষ্টেশনে বেশি সময় ট্রেন দাঁড়াবে সেখান থেকে পানি ভরে নিবেন। বিশুদ্ধ পানি কেনার বুথ পাবেন অসংখ্য । এছাড়া ভারতীয় রেইলওয়ের বিনামুল্যে পানের পানি তো আছেই।
• খাবারের বেপারে কিছুটা সাবধান থাকবেন। ভাল হয় অন্তত ১ বেলার খাবার হাওরা ষ্টেশন এর জন আহার রেস্তোরা বা অন্য বাঙ্গালী রেস্তোরা থেকে নিয়ে উঠতে। কিছু ট্রেনের ভেতরে খাবার মোটামুটি ভাল খাবার পরিবেশন করা হয়। একটু বেশি দাম হলেও সেগুলো খেতে অসুবিধা হবে না আশা করি। যদি ট্রেন এর খাবার ভাল না লাগে বা ট্রেন এ পান্ট্রি কার না থাকে তো আপনারা চাইলে বড় ষ্টেশন যেমন- বিশাখাপত্তনম, ভিজয়ওয়াড়া, খুরদা রোড এ প্লাটফরম এর রেস্তোরা থেকে কিনতে পারেন। তবে খাবার কেনার আগে খুব ভালমত বুঝে নেবেন কি কিনছেন কারন দক্ষিনি স্বাদের খাবার সবাই খেতে পারে না। সবচেয়ে সেফ আন্ডা বিরিয়ানি খাওয়া ৬০-৭০ রুপিতে পেয়ে যাবেন এটা।
• ট্রেনে নিজের গুরুত্বপূর্ণ জিনিস সাবধানে রাখবেন। যদিও এ,সি, কামরায় চুরির হার কম তারপরেও সাবধান থাকা উচিত। বিশেষ করে নিজের পাসপোর্ট এবং টাকা সবসময় নিজের শরীরের সাথে রাখবেন। এছাড়া দক্ষিনি লোকজনের সাথে ঝামেলায় জড়ানো মোটেই ঠিক হবে না।
• কোলকাতা থেকে মোবাইল সিম কিনে থাকলে সেটা এখানে আর কম রেট দেবে না। আর ট্রেনে চলাচলের সময় আপনি চাইলেও রিচার্জ করতে পারবেন না। তাই ট্রেন এ ওঠার আগেই প্রয়োজনীয় রিচার্জ করে নিন।
• কাঠপড়ি ষ্টেশনে ট্রেন মাত্র ২ মিনিট থামে তাই ষ্টেশনে পৌছানোর টাইম দেখে আগে থেকে প্রস্তুত থাকুন।
ষ্টেশনে নেমে আপনার সাথে যদি বেশি লাগেজ না থাকে তাহলে বাসের জন্যে অপেক্ষা করতে পারেন বাস একদম ষ্টেশনের ভেতরে এসে আপনাকে তুলে নেবে। ভাড়া ৪ রুপি/জন থেকে শুরু। এছাড়া বাইরে বেরুনোর পরেই অনেক অটো অলা আপনাকে ডাকাডাকি করবে সি,এম,সি যাবার জন্যে। এগুলোর ভাড়া হল ১৫০ রুপি। লজ আগে থেকে বুক করা থাকলে সরাসরি লজের ঠিকানা বলুন। নাহলে হাসপাতালের মুল ফটকের সামনে চলে যান। সেখানে নেমে বৃদ্ধ বা মহিলা থাকলে তাদের হাসপাতালের ভেতরে কোথাও অপেক্ষার জন্যে রেখে আপনি চলে যান লজ খুজতে। একেবারে ২০০ রুপি থেকে শুরু করে ৫০০০-৭০০০ রুপি পর্যন্ত ভাড়ার লজ আছে আপনার পছন্দ অনুযায়ী লজ বেছে নিন। তবে ভালমত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই লজ ভাড়া নেবেন। কারন আপনি রোগের চিকিৎসা করতে এসে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থেকে নতুন অসুখ বাধিয়ে ফেলতে পারেন। এখানে প্রায় সব লজেই হাড়ি-পাতিল, বাসন-কোসন, চুলা ১০-১৫ রুপি/দিন ভাড়ায় কিনতে পাওয়া যায়। সেখান থেকে কিনে খেতে পারবেন। এছাড়া বেশ কিছু বাঙালি হোটেল আছে যেখানে সল্পমূল্যে কিনে খেতে পারবেন। তবে দীর্ঘদিন থাকার ক্ষেত্রে কিনে খাওয়ার চেয়ে রেধে খাওয়াই ভাল হবে।

ভেলরে এবং এর আসে পাশে বেশ কিছু হাসপাতাল থাকলেও বিদেশি রোগীরা মূলত ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ যা সি,এম,সি নামে বহুল পরিচিত সেখানেই চিকিৎসা করতে আসেন। এছাড়া সি,এম,সি, এর অতিরিক্ত ভীরের কারনে অনেক রোগী ই এখন ভেলোরে অবস্থিত শ্রী নারায়নী হাসপাতালে দেখিয়ে থাকে। আমি মূলত সি,এম,সি নিয়েই কথা বলব এখন। তো সি,এম,সি, তে চিকিৎসা করতে আসলে সব রোগীকেই প্রথমে যেটা করতে হয় সেটা হল IRO অফিসে রেজিষ্ট্রেশন। এটি করতে হয় 900B রুম এ । এটি আসলে মূল হাসপাতালের বাইরে। পাশের লাগোয়া বিল্ডিং এ। তো এই রেজিষ্ট্রেশনের জন্যে আপনার তথ্য আগে থেকে পূরণ করে নিয়ে গেলে ভাল। এটি আপনি নিজে বা কম্পিউটার ব্যাবহারে পারদর্শী কাউকে দিয়ে দেশ থেকে করিয়ে নিয়ে গেলে বেশি ভাল আর যদি কোন কারনে করিয়ে নিয়ে যেতে না পারেন তাহলে IRO এর পাশের ভবনের বেসমেন্টে একটা দোকানে এই তথ্য পূরণের কাজ করে , ওখান থেকে ৩০ রুপি দিয়ে করিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। 900B তে রেজিষ্ট্রেশনের ক্ষেত্রে আপনি ৬ টার দিকে গিয়ে লাইনে দারাতে পারেন, তাহলে খোলার পরেই আপনার কাজ তারাতারি হয়ে যাবে। এখানে মূলত আপনাদের পাসপোর্ট রেজিষ্ট্রেশন করা হয়। এখানে যাবার আগে আপনারা এক পরিবারের যে কজন গিয়েছেন সবার পাসপোর্ট নিয়ে যেকোন একজন যাবেন। আপনি যতবার ভেলোর আসবেন ততবারই সবার প্রথমে এখানে আসতে হবে। এমনকি ৩০ দিনের বেশি হয়ে গেলেও আপনাকে নতুন করে এখানে গিয়ে পাসপোর্ট এন্ট্রি করিয়ে নিয়ে আসতে হবে। তবে প্রথমবারের কিছু অতিরিক্ত কাজ আছে , যেমন তথ্য পুরণ। দ্বিতীয়বার থেকে আর এগুলো করতে হবে না। প্রথমবার যাবার ক্ষেত্রে আপনাদেরকে অবশ্য্ই আপনাদের চিকিৎসার সমস্ত কাগজপত্র সাথে নিয়ে যেতে হবে। কারন এই রুম এর ভেতর থেকেই কাগজপত্র দেখে আপনাকে বলবে যে কোন ডাক্তার দেখানো উচিত এবং সে অনুযায়ী ডাক্তার এর এপয়েন্টমেন্ট দেয়া হবে। সাথে দেয়া হবে ক্রিস কার্ড নামক একটি কার্ড। এই কার্ড একি সাথে হাসপাতালে আপনার পরিচয়পত্র ও ডেবিট কার্ড হিসেবে কাজ করবে। এই কার্ড এর মাধ্যমে আপনি হাসপাতালের সমস্ত বিল পরিশোধ করতে পারবেন। এমনকি কার্ডে টাকা থাকলে অনেক কাজই আপনি অনলাইনেও করতে পারবেন। এই রুম থেকে আপনাকে সোজা চলে যেতে হবে সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের MRO এর কাছে, MRO আপনার কাগজ জমা রেখে আপনাকে একটি সিরিয়াল নম্বর দেবে সেটি নিয়ে আপনি ডাক্তারের জন্যে অপেক্ষা করতে থাকবেন। এই পর্যন্ত পরে ডাক্তার দেখানো যতটা সহজ মনে হচ্ছে আসলে ব্যাপারটা অতটা সহজ নয়। সি,এম,সি তে ডাক্তার দেখাতে হলে আপনার প্রচুর ধৈর্যের দরকার আছে, সাথে দরকার আছে সঠিক তথ্যের। এই হাসপাতালের ৯০ ভাগ ডাক্তার ও সেবিক/সেবিকাদের ব্যাবহার আপনার আশার চেয়ে বেশি ভাল। তবে বাকি ১০ ভাগ এবং সিকিউরিটি গার্ড ও নিচু শ্রেনীর কর্মচারীদের ব্যাবহারে আপনি মনক্ষুন হতে পারেন। তাই বারবার তাদেরকে বিভিন্ন জিনিস জিজ্ঞেস করার ঝামেলায় না যাওয়াই ভাল। আরেকটা জিনিস মনে রাখবেন এই হাসপাতালের সবাই নিয়ম এবং আইন খুব কড়াকড়িভাবে মেনে চলেন তাই আপনারা নিয়ম ভাঙ্গার চেষ্টা করবেন না। প্রথমে চলুন সি,এম,সি কোন কোন ভবন আছে এবং সেখানে আপনার কি কি সম্ভাব্য কাজ থাকতে পারে তা জেনে নিন।

OPD Building – এই ভবনেই অধিকাংশ ডাক্তার আপনাকে দেখাবে। এছাড়া নিচের তলায় আছে রক্তের পরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা, ইসিজি, এক্স-রে, স্কিন ল্যাব এইসব এ এইখানে। এই ভবনে প্রবেশের তিনটা দরজা আছে, গেট দিয়ে প্রবেশের সময় আপনাকে হাতে পরার জন্যে দুইটি ব্যান্ড দেয়া হবে। রোগী ও একজন এটেনডেন্টের জন্যে। এটি হাতে থাকলেই আপনি নিচতলা থেকে সিড়ি বা লিফটে উপরে উঠতে পারবেন। ব্যান্ড দেয়া হবে শুধু ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট থাকলে। অন্য কোন প্রয়োজন থাকলে রিসেপশনের পাশের কাউন্টার ১২ তে আপনার প্রয়োজন বলুন এবং প্রয়োজন প্রমানকারি কাগজ দেখান। ১২ থেকে যদি মনে করে যে আপনার এখনি উপরে যাওয়া দরকার তাহলে আপনাকে ব্যান্ড দেয়া হবে। নতুবা ২ টার পরে আসবেন। ২ টার পরে এই নিয়ম থাকে না। এছাড়াও এই ভবনের নিচ তলায় কিছু ক্যাশ কাউন্টার ও ২ টি ক্রিস কার্ড এর কাউন্টার আছে।

ISSCC Building- এই ভবনে অধিকাংশ সময় আপনার যাওয়া হবে কোন কাজের টাকা জমা করতে। এই ভবনের নিচ তলায় প্রায় ১৪ টা কাউন্টার আছে টাকা পয়সা জমা করার। ১,২ কাউন্টার দুটি দিয়ে শুধু ক্রিস কার্ডে টাকা ভরতে ও উত্তোলন করতে পারবেন, ৩,৪ কাউন্টার এ আপনি ক্রিস কার্ড ব্যাবহার করে আপনার প্রয়োজনীয় বিল পরিশোধ করতে পারবেন। ৫-১২ নম্বর কাউন্টার রেগুলার ক্যাশ কাউন্টার, ১৩ নম্বর কাউন্টার ফাস্ট ট্র্যাক কাউন্টার এইটাতে আপনার যদি শুধু মেডিকেল রিপোর্ট বা ১ টা আইটেম এর কোন বিল থাকে তবে দীর্ঘ লাইনে না দাঁড়িয়ে এখান থেকে কাজ শেষ করতে পারবেন। ১৪ নম্বর কাউন্টারটি শিশুদের জররী বিভাগের জন্যে বরাদ্দ। শিশুদের জরুরী বিভাগ এই ভবনের ই নিচের তলায়। এছাড়া এই ভবনের ২য় তলায় আছে শিশু বিভাগ ও মানসিক সাস্থ বহির্বিভাগ। আর ৭ম তলায় রয়েছে পালমোনারি মেডিসিন (শ্বাস প্রশ্বাস বিষয়ক) বিভাগের ল্যাবরেটরি।

Main Old Building- এই ভবনে রয়েছে মুল চ্যাপেল, রেডিওলোজী বিভাগ, ব্লাড ব্যাংক, নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিভাগ, বিভিন্ন ওয়ার্ড, কিছু বিভাগের অফিস, আলফা ক্লিনিক সহ আরো অনেক বিভাগ।

PMR Building – এটি ফিজিওথেরাপি মূল ভবন, এখানে সমস্ত থেরাপি, এক্সারসাইজ শেখানোর কাজ, স্ট্রোক ক্লিনিক এর আউটডোর এই সবকিছু এই ভবনে হয়।

OT Building – এইখানে মূলত হেমাটলজি আউটডোর, এবং কিছু বিশেষ টেস্ট এর কাজ হয়,

এখন চলুন জেনে নেই কিছু অতি প্রয়োজনীয় ও বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর।
১। আমি অনেক দেরি করে এপয়েন্টমেন্ট পেয়েছি, বা অন্য কোন কারনে পরিবর্তন করতে হবে ডেট, কি করব এখন?
- প্রথমেই জেনে রাখুন যে সি,এম,সি, তে প্রচুর রোগীর ভিড় তাই ডেট পেতে অনেক ক্ষেত্রে দেরি হয়। আপনি রোগীকে ও তার পাসপোর্ট নিয়ে চলে যান ISSCC Building এর নিচ তলার জি-৩২ কাউন্টারে (এটি ১ নম্বর ক্রিস কার্ড কাউন্টারের পাশেই) ওখান থেকে কারো ক্যান্সেলেশন থাকলে আপনাকে আগে ডেট দেয়া হতে পারে। আবার আপনি চাইলে পেছাতেও পারবেন। তবে আপনাকে ১ বার ই এই সুযোগ দেয়া হবে ডেট বদলানোর। তবে যদি এখানে আপনার কাজ না হয় তবে আপনাকে পাঠানো হতে পারে সিলভার গেটে। সিলভার গেটেই মূলত আপনার ডেট বদলানোর জন্যে গেলে পাসপোর্ট ছাড়া ঢুকতে দেয়া হবে না। টাকা পয়সা লেনদেন করবেন না অবৈধ ভাবে।

২। টাকা জমা দেয়ার লাইন এতো বড় কেন, আর কোন উপায় কি আছে?
- অবশ্যই আছে। একটু বুদ্ধি খাটালেই হল। সাধারনত ক্রিস কার্ডের লাইনে ভিড় কম থাকে তাই ক্রিস কার্ডে টাকা ভরে রাখুন। ঝামেলা অর্ধেক কমে যাবে। আর ক্রিস কার্ডে টাকা থাকলে বাইরের কম্পিউটার দোকান বা আপনার নিজের মোবাইল বা কম্পিউটার থেকেও অনেক বিল দিতে পারবেন।

৩। আমার দুই ডাক্তার আমাকে একি টেস্ট দিয়ে ফেলেছেন ভুলে আমি দুইটার এ টাকা দিয়ে ফেলছি। এখন দেখলাম একি টেস্ট। কিছু করার আছে, নাকি টাকাগুলো গচ্চা গেল?
- মোটেই না। প্রথমত এমন ভুল হবার সম্ভাবনা খুব ই কম কারন এখাঙ্কার সব ডাক্তারের কাছেই আপনি কোথায় কোন ডাক্তার দেখাচ্ছেন আর কি কি করছেন তার আপডেট থাকে কম্পিউটারের সার্ভারে। তারপরেও যদি ভুল হয়েই যায় তবে টাকা পরিশোধের স্লিপ নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তার লিখে দিলে সেই স্লিপ নিয়ে কোথায় যেতে হবে সেটাও বলে দেবে। জি-৩২ অথবা মুল ভবনের ২য় তলার একাউন্টস ডিপার্টমেন্ট।

৪। আমি টেস্ট করেছি কিন্তু রিপোর্ট কোথায় পাবো?
- সি,এম,সি, এর প্রায় কোন টেস্ট এর রিপোর্ট ই রোগীর হাতে দেয়া হয় না। চিন্তার কোন কারন নেই। আপনার টেস্টের রিপোর্ট সার্ভারে চলে গেছে। আপনি যে ডাক্তারের কাছেই যান আপনার একাউন্টে ঢুকে সে সব দেখতে পারবে। তবে চিকিৎসা শেষে ডাক্তার আপনাকে লাল স্লিপ এ মেডিকেল রিপোর্ট এর অর্ডার দিয়ে দেবে। সেটা কাউন্টারে জমা করে অই বিভাগের অফিসে গেলেই আপনি রিপোর্ট পেয়ে যাবেন। মেডিকেল রিপোর্টে আপনার চিকিৎসার পূরো বর্ণনা থাকবে সাথে সমস্ত টেস্ট এর রিপোর্ট (শুধু এক্স-রে এবং রেডিওলজি ইমেজিং এর গুলো বাদে। এই রিপোর্টগুলোর জন্যে আপনাকে যেতে হবে মুল ভবনের রেডিওলজি বিভাগে।

৫। ডাক্তার বলেছে পরের ভিজিট ১২ তারিখ , কিন্তু কাউন্টার থেকে বলছে এই মাসেই কোন সিরিয়াল নেই, কি করব?
- চিন্তার কিছু নেই , ডাক্তার যখন দেখবেন বলেছেন তো কোন সমস্যা নেই। আপনি সাথে সাথেই ওই ডাক্তারের কাছে চলে যান এবং গিয়ে বলুন যে অই তারিখে এপয়েন্টমেন্ট খালি নেই। তাহলেই ডাক্তার তার কম্পিউটার থেকে আপনার জন্যে স্পেশাল পারমিশন দিয়ে দেবেন। এরপরে যেকোন কাউন্টারে গেলেই এপয়েন্টমেন্ট পেয়ে যাবেন।

৬। ডাক্তার বলেছে ১২ তারিখে পরের ভিজিট কিন্তু সিটি স্ক্যানের সিরিয়াল তো ১৩ তারিখ তাহলে কি করব আগেই ডাক্তারকে দেখাবো ?
- আপনি চলে যান জি-৩২ বা সিলভার গেট এ। সেখান থেকে এপয়েন্টমেন্ট তারিখ পরিবর্তন করুন। খালি না থাকলে ৫ নম্বরের মত ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তারকে না পেলে MRO এর কাছেও যেতে পারেন।

৭। আমি তো হিন্দি যানি না ?
- এতক্ষনে একটা কথা বলেছেন যেটার সলিউশন নাই আমার কাছে। হিন্দি জানতে হবে আপনাকে। অন্তত একেবারে বেসিক লেভেল হলেও। মোটামুটি হিন্দি বা ইংরেজী জানা কাউকে নিয়ে যান। সেটা যদি সম্ভব না হয় তো অন্যান্য বাঙ্গালীর সাহায্য নিয়ে মোটামুটি কিছুকটা কাজ চালিয়ে নেয়া যাবে।

৮। ভাই আমার টাকা পয়সা তো বেশি নাই, চিকিৎসা করতে গিয়ে কি সর্বশান্ত হব?
- এখানে চিকিৎসার খরচ অনেক কম। অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে ও কম। তারচেয়ে বড় কথা হল এই যায়গায় আপনার যেটা দরকার শুধু সেইটাই খরচ হবে। এরা আপনার টাকা খাবার জন্যে উল্টাপাল্টা কিছু করবে না।

৯। আমি ভেবেছিলাম চিকিৎসায় এত টাকা খরচ হবে না। কিন্তু আসার পরে কিছু জটিল চিকিৎসায় বেশ টাকা খরচ হয়েছে। টাকা শেষ হয়ে গেছে, কি করব?
- এখানে অনেকগুলো দোকানেই বাংলাদেশ থেকে টাকা আনা যায়, সো নো টেনশন। এমনকি বিকাশের মাধ্যমেও আনতে পারবেন। ঝামেলাও বেশি একটা বেশি না। এছাড়া মুল ভবনের চ্যাপেল এর উপরে দোতলায় একাউন্টস ডিপার্টমেন্ট এ গেলে আপনাকে ওরা ওদের কাছে টাকা পাঠানোর একটা কাগজ দেবে, সেই কাগজ আপনি দেশে ইমেইল করে দিন। অই কাগজের তথ্য ব্যবহার করে দেশ থেকে সরাসরি সি,এম,সি, হাসপাতালে টাকা পাঠাতে পারবেন। তবে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোতে কিছু জটিলতা থাকায় কিছু সময় বেশি লাগতে পারে।

১০। আমি বেশি সময় নিয়ে আসি নি, কিছুতেই এপয়েন্টমেন্ট পেলাম না, সিলভার গেটেও চেষ্টা করেছি, তাহলে কি আমার আসা বৃথা। চেন্নাই চিকিৎসা করাতেও তো অনেক খরচ, কি করব?
- আপনি শ্রী নারায়নী হাসপাতালে চলে যান। ওইটা সি,এম,সি, এর মত এত নামকরা না হলেও একেবারে খারাপ না। ওখানেও বেশ ভাল চিকিৎসা পাবেন আর সময়ও অনেক কম লাগবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম