বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষিতে যে বিষয়ে আইন করা একান্তই প্রয়োজন এবং যে বিষয়ে আপাতত কোন যুগোপযোগী আইন নেই এবং অদূর ভবিষ্যতে হবে বলেও মনে হয়না, সেটা হচ্ছে ‘পরকীয়া’।
সরি টু সে, বাংলাদেশের আইনে (এট লিস্ট আইনের ধারা অনুযায়ী, কেস ল তে থাকলে থাকতে পারে) পরকীয়ার কোন সংজ্ঞা দেয়া হয়নি।
বাংলাদেশী পণ্ডিতরা যেহেতু এ বিষয়ে নীরব, তাই এই ফাকে আমিই একটু পণ্ডিতি করি। আশা করি আমার পাঠকরা আমার এই অপচেষ্টা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আমার মতে পরকীয়া হচ্ছে_ ‘একজোড়া বা ততোধিক নরনারীর মধ্যে, যার মধ্যে অন্তত একজন বিবাহিত, এমন কোন পারস্পরিক মানসিক বা দৈহিক সম্পর্ক যা সেই সময়ের সমাজ ব্যাবস্থায় প্রচলিতভাবে গ্রহনযোগ্য বা প্রচারযোগ্য নয়’।
বলে রাখা ভাল এটা নিতান্তই আমার দেয়া সংজ্ঞা এবং যেহেতু আমি কোন সার্টিফায়েড স্কলার না, আইনের ছাত্ররা পরীক্ষার খাতায় আমার দেয়া পরকীয়ার এই সংজ্ঞা লিখলে নিশ্চিত ভাবেই ‘ধরা’ খাবে।
জেনে রাখা ভাল পরকীয়ার উপাদান হিসেবে সম্পর্কে জড়িতদের মধ্যে অন্তত একজনের বিবাহিত থাকাটা মাস্ট! আপনি যতই গাইগুই করুন না কেন, আপনার সাথে ‘সম্পর্ক’ থাকা অবস্থায় আপনার অবিবাহিত গার্লফ্রেন্ড যদি অপর কোন ছেলের সাথে ‘সেইরাম’ সম্পর্কে জড়ায়, সেটাকে আপনি আর যাই বলুন না কেন, টেকনিক্যালী ‘পরকীয়া’ বলতে পারেন না!
পরকীয়াকে বাংলাদেশের আইনে এখনো সংজ্ঞায়িত না করায় এবং এ সম্পর্কে যুগোপযোগী আইন না থাকায় বর্তমানে আমাদের সমাজে এমন কিছু পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যা আমাদের বাপ দাদারা কল্পনাও করতে পারতেন না।একটি উদাহরন দেই দবিরের স্ত্রী সালেহা রাত জেগে সবিরের সাথে মোবাইলে ফুসুর ফাসুর করে, সেক্সটিং করে, ই মেইলে নগ্ন ছবি পাঠায় (আমার এক কেসের কাহিনী আসলে), তো এক্ষেত্রে সালেহা বা সালেহার প্রেমিক সবিরের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আইনে দবিরের প্রতিকার কি?
জানলে আর্শ্চয্য হবেন, বাংলাদেশের আইনে দবিরের এ ব্যাপারে আদৌ কোন প্রতিকার নেই। দবির সালেহা বা সবিরের বিরুদ্ধে ‘আইনগত’ কোন ব্যাবস্থাই নিতে পারবে না (ব্যাবস্থা থাকলে তো!)।
উদাহরন হিসেবে সালেহার কথা উল্লেখ করলাম, নারীবাদীরা আবার ধরে নিবেন না যেন আমি নারী মাত্রেই পরকীয়ায় আসক্ত বুঝিয়েছি।
সত্যি কথা বলতে বাংলাদেশী সমাজে পরকীয়া ব্যাপারটা অত্যন্ত নোংরা আকারে আসতে পারে এবং ব্যাপারটার জটিলতা এমন পর্যায়ে যেতে পারে যা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না।
বাংলাদেশের আইনে পরকীয়াকে কিছুটা (আবারও বলছি কিছুটা) কভার করে এমন একটা ‘সবেধন নীলমণি’ আইন হচ্ছে বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৪৯৭ ধারা, এটা আবার সরাসরি পরকীয়াকে কভার করেনা, এই আইনটা হচ্ছে আসলে ‘ব্যাভিচারের’ শাস্তির ব্যাপারে।
জেনে রাখা ভাল ব্যাভিচারের সামাজিক আর আইনগত সংজ্ঞা এক নয়। আপনারা যেটাকে সাধারনভাবে ব্যাভিচার বলে মনে করেন, আইন সেটাকে ‘ব্যাভিচার’ বলে মনে করেনা।
দন্ডবিধির ধারা ৪৯৭ অনুসারে যদি কোন ব্যাক্তি এমন কোন মেয়ের সাথে সেক্স করে থাকে যাকে সে অন্য কারো বৌ হিসেবে জানে বা অন্য কারো বৌ মনে করার কারন আছে এবং সেই সেক্স করাটা যদি রেপ না হয় (রেপ হলে রেপের আইন প্রযোয্য) এবং এই রকম সম্পর্কে যদি মেয়েটার স্বামীর সম্মতি না থাকে (তার মানে স্বামী যদি বৌকে কারো কাছে ভেট হিসেবে পাঠায় ‘টেকনিক্যালি’ সেটা এই আইনে পরবে না) তাহলে সেই ব্যাক্তি ব্যাভিচারের অপরাধে দন্ডনীয় হবে, তবে এই ব্যাপারে মেয়েটাকে অপরাধী হিসেবে গন্য করা যাবে না।
মানে কি হল? মানে হল ব্যাভিচারের এই আইন কেবল পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। একটা মেয়ে (বিবাহিত হোক বা না হোক) যার সাথে খুশি সেক্স করুক না কেন, সেটা বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ‘ব্যাভিচার’ বলে গন্য নয়। এই আইনটা পড়ে আমার মনে সবার আগে যে প্রশ্নটা জেগেছিল সেটা হচ্ছে, এই আইনটার প্রতিবাদ আজ পর্যন্ত কেউ কেন করলেন না কেন !?! সরি, বলে রাখা ভাল, বাংলাদেশের আইনে ব্যাভিচারের শাস্তি সর্বোচ্চ পাচ বছরের জেল বা জরিমানা বা উভয়ই।
আপনারা কি জানেন ব্যাভিচার সম্পর্কে এই আইন কবে পাশ হয়েছিল? সেই ১৮৬০ সালে, ব্রিটিশরা করে দিয়ে গিয়েছিল, এর পর আর কেউ এই আইন নিয়ে আর চিন্তা ভাবনা করেনি।
আসলে এখন আমাদের উচিত নিজেদের সমাজের জন্য যুগোপযোগী আইন তৈরি করা। নাহলে ভবিষ্যতে চরম সামাজিক ঝুকির সৃষ্টি হবে।
Kazi Wasimul Haque
Tags:
Crime