ফারাবী তার এমন আচরণে অবাক হয়ে বলল, মি. ওসবর্ন কোথায় যাচ্ছেন?
- আসলে পাশের ঘরেও অনেক জিনিস আছে যা চুরি হতে পারে, তাই দেখতে যাচ্ছি।
এই বলে মি. ওসবর্ন উত্তরের অপেক্ষা না করেই চলে গেলেন। ১১টা ৫৮মিনিট, বারোটা বাজতে আর মাত্র দু মিনিট বাকি। আবিদ সজীবকে ফিসফিস করে বলল, দেখেছিস সজীব? মি. ওসবর্ন কিন্তু এখনো আসেননি! সজীব মাথা দুলিয়ে সায় দিল। এমন সময় উইলিয়ামও বললেন, আমি আসছি, একটু অপেক্ষা করো!
- আপনি এখন কোথায় যাচ্ছেন? সানজু বলল
- ওই আসলে, ওসবর্নকে আনার ছিল। আমি যাই।
ঠিক মি. ওসবর্নের মতো উইলিয়ামও চলে গেলেন। অপেক্ষা করতে লাগলো সবাই, বারোটার আগেই উইলিয়াম ফিরে আসেন তাদের কাছে। সজীব আশেপাশে চেয়ে নিচু স্বরে বলল, মি. ওসবর্ন এখনো আসেননি! আবিদ তার কথায় মাথা নাড়লো। কয়েক সেকেন্ড পরই বড় দেয়াল ঘড়িটি ঢং ঢং শব্দ করে উঠলো, বারোটা বেজেছে! ঘড়ির শব্দ শুনে সবাই চমকে উঠলো। মূহুর্তেই সমস্ত মিউজিয়ামের আলো নিভে গেল। কে যেন দুতলার সিড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে আসলো হঠাৎ! আবছা আলোতে দেখতে পেয়ে সাবিহা চিৎকার করে বলল, মাইকেল এল্ট্রো! তার কথা শুনেই ইন্সপেক্টর তার ক্যালিবার নাইন এমএম পিস্তল তাক করে বলল, হ্যান্ডস আপ! পালানোর চেষ্টাও করবে না! মাইকেল স্থির দাঁড়িয়ে থাকলো, তারপর বলল,
- ইন্সপেক্টর আকিব?
- তুমি, তুমি আমাকে চিনো? অবাক হলো ইন্সপেক্টর আকিব
- আমি চিনিনা এমন খুব কম মানুষই আছে। তবে আমি আপনাদের চিনি, কিন্তু আপনারা আমাকে চিনেন না। মজাটা তো ওখানেই!
- অনেক হয়ে গেছে এবার আত্মসমর্পণ করে নাও! ফারাবী বলল
- আত্মসমর্পণ করতে তো আসিনি।
কথার মাঝেই মাইকেল একটি বল ছুড়ে মারে সবার সামনে, মূহুর্তেই সাদা ধোঁয়া বল থেকে বেরিয়ে ঘিরে ফেলে সব। এদিক ওদিক পড়ে কাশতে শুরু করে সবাই। মাইকেল হো হো করে হেসে গিয়ে একে একে সব জুয়েলারি তার ব্যাগে ভরতে লাগলো। সবাই এখনো ধোঁয়ার কারণে কাশছে। জুয়েলারিগুলো ব্যাগে ভরে 'গুড বাই' বলেই খোলা জানালা দিয়ে বেরিয়ে গেল! এই থামো! বলতে বলতে জানালার ধারে গেল ফারাবী, তবে এখানে কেউ নেই। ধোঁয়াও সরে এসেছে, ইন্সপেক্টর আকিব ফারাবীর কাছে এসে বললেন, দেখেছেন তাকে?
- একটা মানুষ হুট করেই গায়েব হয়ে গেল কিভাবে তাই ভাবছি! ফারাবী বলল
- ফারাবী একটা বিষয় খেয়াল করেছো? সামজু বলল
- কি বিষয়? ফারাবী বলল
- ধোঁয়ার জন্য আমরা তাকাতেও পারছিলাম না অথচ মাইকেল সব চুরি করে নিয়ে গেল!
সাবিহার কথা শুনে খেয়াল হলো সবার। আসলেই এই ধোঁয়ায় মাইকেলের কিছু হয়নি। ফারাবী ভাহলো, চোর আসার সময় হলেই উইলিয়াম গায়েব হয়ে যায়, তবে আজ দুজন গিয়েও মি. ওসবর্ন এখনো ফিরে আসেননি। একটু ভেবে বলল, উইলিয়াম সাহেব পরবর্তীবার যখন আবার চুরির কথা বলবে তখন অবশ্যই আমাদের জানাবেন। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। খোলা জানালার দিকে চেয়ে অসহায় কন্ঠে বলল, আমি তো তাও জানিনা, কোন দিন এখন কিভাবে সে আসে!
পরদিন বিকেলে, মিউজিয়ামে এসে হাজির হয়েছে সবাই। উইলিয়ামের ইচ্ছে মিউজিয়ামটি তাদের পুনরায় ঘুরে দেখাবেন। তাই তাদের সবার অসময়ে এক হওয়া। উইলিয়াম তাদের একটি ঘড়ির ঘরে নিয়ে যান, যেখানে ঘড়ি আবিষ্কারের শুরু থেকে শেষ অবধি সজ্জিত। উইলিয়াম একটি ছোট ঘড়ির কাছে গেলেন। সেটা দেখিয়ে বললেন, এটা সেই প্রথম ঘড়ি যা প্রথম আবিষ্কার হয়েছিল। সাবিহা অন্য একটি ঘড়ির কাছে গিয়ে বলল, এটা কেমন ঘড়ি?
- এটাও আবিষ্কৃত তৃতীয় ঘড়ি। উইলিয়াম উত্তর দিলেন
- আচ্ছা উইলিয়াম হাসেব এই ঘরে কি একবারও চুরি হয়নি? ফারাবী জিজ্ঞেস করলো
- আপাতত না, তবে হতে আর কতক্ষণ! আসলে আমি তোমাদের নিয়ে এসেছি শুধু দেখানোর জন্যই নয়, বরং ঘরের সব ঠিক আছে কিনা তাও দেখছি। উইলিয়াম বললেন
- এখনো এখানে চুরি হয়নি শুনে অবাক লাগছে, পুরনো ঘড়িগুলোর দাম লাখের উপর হবে। আবিদ বলল
- এসো, তোমাদের পাশের তৈলচিত্রের ঘরে নিয়ে যাই।
তাদের সবাইকে তৈলচিত্রের ঘরে নিয়ে গেলেন উইলিয়াম, ঘরটির দেওয়াল জুড়ে হরেক রকমের ছবি। সজীব আশেপাশে কাকে যেন খুঁজতে লাগলো, তা দেখে ফারাবী জিজ্ঞেস করলো, কাকে খুঁজছিস?
- এই সানজুটা কই গেল?
- আরে হ্যাঁ, একটু আগেও তো সাথে! আবিদ বলল
- তোমরা শান্ত হও, আমি দেখছি।
উইলিয়াম তার পকেট থেকে একটি ডিভাইস বের করলেন। কিছুক্ষণ তা দেখে বললেন, সানজু আসছে, একটু পেচনে পড়ে গিয়েছিল। ঠিক তখনই ঘরে প্রবেশ করলো সানজু! ফারাবী কিছুটা অবাক হয়ে বলল, আপনি কিভাবে বুঝলেন সে আসছে? উইলিয়াম ডিভাইসটি তার হাতে দিয়ে বললেন, এটা এমন এক যন্ত্র যার মাধ্যমে নিজের সঙ্গে থাকা মানুষদের অবস্থান জানা যায়। তার কথা শুনে ডিভাইসটিতে চোখ বুলালো, বিভিন্ন রঙের ছয়টি বিন্দু দেখা যাচ্ছে যন্ত্রটির স্ক্রিনে।
- এইযে সাদা বিন্দুটি আমার অবস্থান, এবং লালটি তোমার। উইলিয়াম বললেন
- তার মানে, একটু ভালো করে খেয়াল করলে যা বুঝা যায়, নীলটি সাবিহা। সজীব হলুদ, আবিদ সবুজ এবং সানজু গোলাপী। ফারাবী বলল
- যন্ত্রটি বেশ কাজের। সানজু বলল
- হুম তা নাহলে তোমাকে খুজতে আমরা অন্য কোথাও চলে যেতাম, আর তুমি কেঁদে কেঁদে বেড়াতে।
বলেই হাসতে শুরু করলো সজীব, তার সঙ্গে হেসে উঠলো ফারাবী, সাবিহা, আবিদ ও উইলিয়াম।
কিছুদিন কোনো হুমকি আসলো না মাইকেলের কাছ থেকে। তবে আসতেও দেরি হলো না। মিউজিয়াম থেকে ফেরার পথে কথা বলতে বলতে একটি লিফটে উঠে ফারাবী ও সজীব। লিফটের দরজা লেগে যেতেই নিচে নামতে শুরু করলো লিফটটি। তারা কথা বলতে বলতে একসময় সজীবেরর চোখে পড়ে, লিফটের দরজার কোণে গুজে রাখা একটি ভাজ করা ছোট কাগজ।
- ফারাবী, ওটা কি? সজীব কাগজটি দেখালো
- কাগজ মনে হয়, এখানে কে কাগজ ঢুকিয়ে রাখবে! ফারাবী বলল
- দাঁড়া দেখছি।
সজীব কাগজটি নিয়ে ভাজ খুলল। ফারাবী কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
- কি লেখা?
- ‘আজ রাত বারোটায় মিউজিয়ামের সবচেয়ে দামি দুটোর মাঝে একটি চুরি করতে আসছি। আপনাদের প্রিয় চোর, মাইকেল এল্ট্রো।’
- এখানে চিঠি কেন দিল?
- প্রিয় চোর মানে কি!
- আজ রাতে আবার আসছে, চল সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে।
লিফট নিচে নামতেই তারা গিয়ে দেখা করলো উইলিয়াম ও মি. ওসবর্নের সঙ্গে। মি. ওসবর্ন তাদের ঢুকতে দেখে বললেন, আরে আপনারা! ভেতরে আসুন।
- দেখুন আমরা আমরা অযথা গল্প করতে আসিনি, এই চিঠিটা দেখুন।
কাগজটি এগিয়ে দিল ফারাবী। মি. ওসবর্ন তা পড়লো, তার চোখ বড় হয়ে ভ্রু কুচকে আসলো মূহুর্তেই। মি. ওসবর্নের এমন অবস্থা দেখে উইলিয়াম বললেন,
- কি লেখা এতে?
- ডিরেক্টর, আজ আবার চোরটা আসছে! মি. ওসবর্ন বললেন
- কি!
মূহুর্তেই উইলিয়াম উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। ফারাবী তাকে অভয় দিয়ে বলল,
- চিন্তা করবেন না উইলিয়াম সাহেব, কি চুরি করবে বলে আপনার মনে হয়? সজীব বলল
- একটা মূর্তি এবং ওয়েল পেন্টিং আছে যা মিউজিয়ামের সবচেয়ে দামী। উইলিয়াম বলল
- হুম, আপনি গতবার চুরির সময় যেভাবে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই ব্যবস্থা নিন। আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে, যা আপনাদের বলা সম্ভব নয়।
- কেন? সবাই মিলে পরিকল্পনা মুতাবেক কাজ করা সহজ হবে। উইলিয়াম বলল
- এখন আমার সন্দেহে আপনারা দুজন আছেন! ফারাবী বলল
- কিহ!
বসা থেকে উঠে প্রায় চিৎকার করে কথাটি বলল উইলিয়াম। চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে গেল মূহুর্তেই, চুপ হয়ে গেল মি. ওসবর্ন ও সজীবও। ফারাবী ও উইলিয়াম চেয়ে রইল একে অপরের দিকে। হঠাৎ নীরবতা ভাঙলো ফারাবী। বলল,
- আপনাদের উপর সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে উইলিয়াম সাহেব। চুরি হওয়ার ঠিক পাঁচ মিনিট আগেই মি. ওসবর্ন সেখান থেকে কাজের অজুহাত দেখিয়ে চলে গিয়েছিলেন, এবং চুরি হওয়ার দু মিনিট আগে আপনি চলে গিয়েছিলেন মি. ওসবর্নকে নিয়ে আসার অজুহাতে।
- হ্যাঁ কিন্তু আমি তো আবার ফিরে এসেছিলাম না?
কথাটি বলেই মি. ওসবর্নের দিকে তাকালেন উইলিয়াম। ফারাবী তাদের দুজনের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
- হুম এসেছিলেন, তবে আমি ভাবছি যাওয়ার কথাটা।
- দেখো আমার মিউজিয়ামেই চুরি হচ্ছে, আর তুমি আমাকেই সন্দেহ করছো? উইলিয়াম বললেন
- উইলিয়াম সাহেব তদন্তের সময় আমি আমার বন্ধুদেরও সন্দেহ করতে পারি, তদন্তের সামনে কেউ আপন পর হয় না। সজীব চল।
সজীবকে নিয়ে সেখান থেকে ফারাবী দরজা লাগিয়ে চলে আসলো। অবাক দৃষ্টিতে দরজার দিকে চেয়ে উইলিয়াম ও মি. ওসবর্ন।
রাত ১১টা ৪০মিনিট। একটি গ্লাসের বাক্সের ভেতর রাখা মূর্তির আশপাশে কড়া নজরদারি চলছে, অপর দিকে ওয়েল পেন্টিংয়ের ঘরেও। সাবিহা, সানজু, সজীব ও আবিদ সবাই উপস্থিত, তবে ফারাবী নেই। কোথায় গিয়েছে তাও কাউকে জানায়নি সে। মূর্তির সামনে পায়চারি করছে উইলিয়াম। একটু চিন্তিত হয়েই বলল, মিউজিয়ামের সবচেয়ে দামী জিনিস! দামী বলতে কি এই মূর্তি, নাকি স্কটল্যান্ডে তৈরি বিশেষ ওয়েল পেন্টিং যেটা তিন নম্বর চিত্র ঘরে আছে। অর্থাৎ দ্যা স্পেশাল রোমান আর্মি। কোনটাকে নিয়ে যাবে!
হঠাৎ চিত্র ঘরের ঝার বাতিটি ভেঙে পড়লো, তীব্র শব্দের সাথেই বন্ধ হয়ে গেল মেইন সুইচ! অন্ধকারে ছেয়ে গেল সব। উইলিয়াম চিৎকার করে বলল, ও তিন নম্বর চির্ত ঘরে আছে, জলদি যাও। ধরে তাকে, কোথাও যেন পালাতে না পারে! তার নির্দেশে ছুটে গেল গার্ড ও পুলিশ, সঙ্গে সাবিহা, সানজু, সজীব ও আবিদ। মূহুর্তেই সমস্ত ঘর খালি হয়ে গেল। মূর্তির দিকে ঘুরে একটানে মুখোশ খুলে ফেলল উইলিয়াম, মূর্তির গ্লাস বক্সে উইলিয়ামের চেহারার বদলে ভেসে উঠেছে মাইকেল এল্ট্রোর চেহারা! হাসতে হাসতে হাত বাড়ালো মূর্তির দিকে। এমন সময় দুতলার বারান্দা থেকে কে যেন বলে উঠলো, থামো! থমকে গিয়ে মাইকেল বলল, কে ওখানে?! উপর থেকে হাসির শব্দ শোনা গেল, মাইকেলের দিকে ঘুরে ফারাবী বলল, এবার চুরি করতে পারবে না মি. মাইকেল!
মাইকেল কিছুক্ষণ তাকিয়েই দৌড়ে গেল পাশের ঘরের দিকে। ফারাবী 'এই থামো' বলেই নিচে নেমে তার পিছু নেয়। পাশের ঘরে গিয়ে দেখে কেউ নেই। ফারাবী কিছুটা অবাক হলো। এমন সময় বাকিদের ডাক শুনে পেছন ফিরলো ফারাবী।
- কিরে তোরা? ফারাবী বলল
- তুই কোথায় ছিলি তাই বল? আবিদ বলল
- এখানেই ছিলাম, কাউকে বলিনি। বরং উইলিয়াম সাহেব আপনি কোথায় ছিলেন তাই বলুন। ফারাবী উত্তর দিল
- আমি তো ওসবর্নের সঙ্গে ছিলাম। উইলিয়াম বললেন
- মি. ওসবর্ন কোথায়? ফারাবী বলল
- সে তো বাড়ি চলে গেছে। উইলিয়াম বললেন
- মাইকেল তো চিত্র ঘরেও নেই, মূর্তিটিও অক্ষত আছে। চুরি করলোটা কি! সাবিহা বলল
- করতে পারেনি, উইলিয়াম সাহেবের রূপে এখানেই ছিল। ফারাবী বলল
- মানে! এখন কোথায়? উইলিয়াম বললেন
ফারাবী আবছা অন্ধকার ঘরটির দিকে আঙুল দিয়ে দেখালো। জানালা দিয়ে প্রবেশ করা হালকা চাঁদের আলোয় ঘরটি কিছুটা আলোকিত।
ঘরের ভেতর প্রবেশ করলো তারা, সঙ্গে ইন্সপেক্টর আকিব। সানজু কিছুটা বিরক্তির ভাব নিয়েই বলল, এই ঘরটা এমন অন্ধকার কেন? কোনো লাইট নেই? উইলিয়াম হাঁটতে হাঁটতে উত্তর দিল, আসলে এখানের সুইচে সমস্যা, তাই ঠিক করাবো বলে ঘরটি বন্ধ রেখেছিলাম। জানিনা কিভাবে খুলে গেল।
- ভূতে খুলেছে আর কি। সজীব বলল
- উফ সজীব, এমন জায়গায় ভূতের নাম নিবে না। সানজু বলল
- কেন ভয় লাগে নাকি? সজীব বলল
- না, এমনি।
- ভেবে দেখো, এখন যদি একটা ভূত এসে... .
সজীবকে কথাটি শেষ করতে না দিয়েই উইলিয়াম বললেন, আহা, মেয়ে মানুষ এভাবে ভয় দেখাচ্ছো কেন? ঝগড়া না করে এগোতে থাকো। বলেই সবাইকে নিয়ে এগিয়ে গেলেন উইলিয়াম। হঠাৎ তার পকেট থেকে লোকেশন ডিভাইসটি পড়ে গেল, ফারাবঈ সবার পেছনে ছিল বলে তার চোখে পড়লো বিষয়টা। ডিভাইসটি তুলে উইলিয়ামের দিকে যেতেই দুতলার বারান্দা থেকে লাফিয়ে সবার পথ আটকে ফেলল মাইকেল! হঠাৎ এমন ঘটনায় চমকে উঠলো সবাই, ইন্সপেক্টর আকিব পিস্তল তাক করে বললেন,
- হাত উপরে!
- যদি না তুলি? মাইকেল বলল
- নয়তো গুলি চালাতে বাধ্য হবো। ইন্সপেক্টর আকিব বলল
- দেখুন অফিসার, আপনাকে এ্যারেস্ট করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, গুলি করার নয়। যদি নিজে ফাঁসতে চান তাহলে গুলি করুন।
মাইকেলের কথা শুনে ভড়কে গেল ইন্সপেক্টর আকিব। সাবিহা প্রায় চিৎকার করেই বলল, কি চাও তুমি? মাইকেল বলল, সানজুর গলার ওই চেইনটা! কথাটি শুনে অবাক হলো সবাই। সানজু ঘাবড়ে গিয়ে বলল,
- চেইন?
- হ্যাঁ। দেখো আজ তোমাদের ফারাবী গোয়েন্দা মশায়ের কারণে চুরি করতে পারিনি, একদম তেলাপোকার মতো লুকিয়ে ছিল। চুরির হুমকি দেওয়ার পর চুরি না করলে আমার খাবার হজম হয়না। যদিও সানজুর গলার হার ওটা ওত দামীও নয়, তবুও আমার খাবার হজম করতে হবে!
বলেই হো হো করে হেসে উঠলো মাইকেল। ফারাবী কি মনে করে যেন তাকালো তার হাতে থাকা লোকেশন ডিভাইসটির দিকে। তাকিয়েই সে চমকে উঠলো, ভ্রু কুচকে চোখ তুলে তাকালো মাইকেলের দিকে।নিচু স্বরে বলল, মাইকেল! এখন আমি জানি, আসলে কে তুমি! ফারাবীর কথা শুনেই মাইকেলের হাসি বন্ধ হয়ে গেল। অবাক হয়ে ফারাবীর দিকে পেছন ফিরে তাকালো সবাই। ফারাবী পুনরায় বলল, হ্যাঁ, এবার আমি সত্যটা জেনে গিয়েছি। যে এই সব দামী দামী জিনিস চুরি করে বেড়ায় সে হলো.. ..
- হ্যাঁ সে হলো মি. ওসবর্ন! ফারাবীকে থামিয়ে চেচিয়ে উঠলো আবিদ।
- না, তুই ভুল বলছিস। ফারাবী বলল
- আরে কি বলছিস? এটা মি. ওসবর্ন! সজীব বলল
- হ্যাঁ সেদিন চুরির আগে মি. ওসবর্ন কোথাও গিয়েছিল। আবিদ বলল
- না, এই চোর হলো আমার ডিরেক্টর, উইলিয়াম সাহেব!
- কি!
ফারাবীর মুখে এই কথা শুনে অবাক হলো সবাই। সানজু বলল, কিন্তু উইলিয়াম সাহেব তো এখানেই আছেন?
- এ উইলিয়াম সাহেব নন। যখন চোর আসে তখন উইলিয়াম সাহেবের কথা অনুযায়ী তিনি চিত্র ঘরে ছিলেন, তবে মি.ওসবর্ন আমায় বলেছিলেন উইলিয়াম সাহেব থাকবেন এই ঘরেই। ফারাবী বলল
- বুঝতে পারছি না ভাই, কি বলছিস? সজীব বলল
- এই ডিভাইসটিকে ভালো ভাবে দেখো সবাই।
এই বলে লোকেশন ডিভাইসটি তুলে ধরে ফারাবী বলল, এখানে লাল বিন্দুটি আমি, নীলটি সাবিহা, হলুদটি সজীব, সবুজ আবিদ। এবং নতুন বেগুনি বিন্দুটি হলো ইন্সপেক্টর আকিব। তবে সাদাটি কে মনে আছে? সেটা উইলিয়াম সাহেব, আর তার অবস্থান দেখো? আমাদের সামনে যিনি উইলিয়াম সেজে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি হলেন এই কালো বিন্দুটি। অর্থাৎ তিনি উইলিয়াম নন বরং মাইকেলই উইলিয়াম!
ফারাবীর এমন কথায় চমকে গেল মাইকেলও। ইন্সপেক্টর আকিব অবাক হয়ে বললেন, তাহলে, উইলিয়াম কে?
- সবকিছুর উত্তর এই ডুবলিকেট উইলিয়ামই আমাদের দিবে। বলো কে তুমি?!
এই বলেই একটানে তার মুখোশ খুলে নিল ফারাবী। চেহারা দেখে সবার চোখ যেন কপালে, উইলিয়ামের চেহারার মুখোশ সরে যেতেই বেরিয়ে এসেছে মি.ওসবর্নের চেহারা!
- মি. ওসবর্ন! সাবিহা অবাক হয়ে বলল
- তার মানে, উইলিয়াম সাহেবই মাইকেল এল্ট্রো! সানজু বলল
- উইলিয়াম সাহেব, কেন করলেন আপনি এগুলো? মাইকেলের উদ্দেশে বলল ফারাবী
- আমি আসলে উইলিয়াম নই! মাইকেল বলল
- উইলিয়াম সাহেব আমরা আপনাকে সম্মান করতাম, প্লিজ বলুন কে করেছেন!
ফারাবীর কথায় মাইকেল অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে রইল, ধীরে ধীরে মুখোশটি খুলে ফেলে দিল নিচে। বেরিয়ে আসা উইলিয়ামের চেহারার দিকে সবাই চেয়ে রইল সবাই। উইলিয়াম বলতে শুরু করলেন,
'আমি তখন মিউজিয়ামটি খুলেছি প্রায় বিশ বছর, বিভিন্ন দামী জিনিস দেখে লোভ সামলাতে পারিনি। তবে আমার টাকা কম ছিল তাও নয়। তবুও, আলাদা একটি লোভ হয়ে পড়ে মাইকেল এল্ট্রোর চুরির কৌশলগুলো শুনে। আমি তার মতোই পোষাক তৈরি করলাম, সাথে মুখোশও। তার কৌশল মতো চুরির আগেই চিঠি দিতাম, এবং বারোটা বাজলেই মেইন সুইচ অফ করে সবার মাঝে থেকেই জিনিসটি সরিয়ে নিতাম। মুখোশ থাকতো বলে কেউ টের পেত না। জিনিসগুলো বিক্রি করে ভেবেছিলাম আরো কোটি পতি হবো। তবে কোথা থেকে তোমরা এসে আমার সব পরিকল্পনা নষ্ট করে ছাড়লে!
বলেই হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছলো উইলিয়াম, ইন্সপেক্টর আকিব ইতিমধ্যেই কন্সটেবলদের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে চিত্র ঘরে পৌঁছাতে বলেছে।ফারাবী কয়েক পা এগিয়ে বলল, অর্থাৎ মি. ওসবর্ন আপনাকে এসব কাজেও সাহায্য করতো?
- হ্যাঁ, চুরির সময় ওসবর্ন আমার চেহারা দ্বারা তৈরি মুখোশ পড়ে থাকতো। এবং আমি থাকতাম মাইকেল এল্ট্রোর রূপে। উইলিয়াম উত্তর দিলেন
- তবে আপনি বন্ধ ঘরেও চুরি করতেন কিভাবে? সানজু বলল
- মাইকেল এল্ট্রো এক ধরণের চাবি তৈরি করেছিল, যার মাধ্যমে যেকোনো তালা নিমিষেই খোলা সম্ভব। সেটা আমিও তৈরি করেছিলাম।
উইলিয়াম তার পকেট থেকে একটি চাবি বের করে দেখালেন। সরু ও চিকন একটি চাবি। এমন সময় ঘরে এসে প্রবেশ করলো তিনজন পুলিশ কন্সটেবল। ইন্সপেক্টর আকিব তাদের উইলিয়াম ও মি. ওসবর্নকে গ্রেফতার করার হুকুম দেয়। গ্রেফতার করা হয় দুজনকে। সবার সামনে দিয়ে তাদের নিয়ে যায় পুলিশ। অবাক হয়ে দরজার দিকে চেয়ে থাকে ফারাবী, সাবিহা, সানজু, সজীব ও আবিদ।
পরদিন, সাফিওকে বিদায় দিতে উপস্থিত হয়েছে অনেকে। গাড়িও অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। মি. উইল এগিয়ে ফারাবীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে বললেন, তোমাদের ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। অনেক সাহায্য করেছো আমাদের।
- এটা আমাদের ডিউটি ছিল মি. উইল। মুচকি হাসলো ফারাবী
- কিন্তু মিউজিয়ামটির কি হবে? সাবিহা বলল
- এটা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ইন্সপেক্টর আকিব বললেন
- অর্থাৎ আসল মাইকেল এল্ট্রোর কয়েন চুরির কারণে যেভাবে মিউজিয়াম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, ঠিক সেভাবে! সজীব বলল
- উইলিয়াম চোর হতে পারে কিন্তু মানুষ খারাপ নন, সানজুকে তিনিই খুঁজে বের করেছিলেন। আবিদ বলল
- আমি নিজেই আসতে পারতাম হুহ! সানজু বলল
- যাই হোক অবশেষে নিজের ডিবাইসের কারণেই সে ধরা পড়লো।
ফারাবীর কথা শুনে হেসে উঠলো সানজু, হেসে উঠলো উপস্থিত সবাই।
বাস ছেড়ে দিয়েছে। হাত নেড়ে বিদা। জানাচ্ছে সবাই। দেখতে দেখতেই ইমুলু টাউন পেছনে কোথাও হারিয়ে গেল। থেকে গেল শুধু সরু রাস্তা, দুপাশের সারি সারি গাছগাছালি। কেউ জানেনা, সাফিওর দ্বিতীয় কেস কতটা ভয়ানক ও রহস্যময় হতে পারে।
_______________সমাপ্ত_______________
লিখাঃ ফারহান আহমেদ ফারাবী
- আসলে পাশের ঘরেও অনেক জিনিস আছে যা চুরি হতে পারে, তাই দেখতে যাচ্ছি।
এই বলে মি. ওসবর্ন উত্তরের অপেক্ষা না করেই চলে গেলেন। ১১টা ৫৮মিনিট, বারোটা বাজতে আর মাত্র দু মিনিট বাকি। আবিদ সজীবকে ফিসফিস করে বলল, দেখেছিস সজীব? মি. ওসবর্ন কিন্তু এখনো আসেননি! সজীব মাথা দুলিয়ে সায় দিল। এমন সময় উইলিয়ামও বললেন, আমি আসছি, একটু অপেক্ষা করো!
- আপনি এখন কোথায় যাচ্ছেন? সানজু বলল
- ওই আসলে, ওসবর্নকে আনার ছিল। আমি যাই।
ঠিক মি. ওসবর্নের মতো উইলিয়ামও চলে গেলেন। অপেক্ষা করতে লাগলো সবাই, বারোটার আগেই উইলিয়াম ফিরে আসেন তাদের কাছে। সজীব আশেপাশে চেয়ে নিচু স্বরে বলল, মি. ওসবর্ন এখনো আসেননি! আবিদ তার কথায় মাথা নাড়লো। কয়েক সেকেন্ড পরই বড় দেয়াল ঘড়িটি ঢং ঢং শব্দ করে উঠলো, বারোটা বেজেছে! ঘড়ির শব্দ শুনে সবাই চমকে উঠলো। মূহুর্তেই সমস্ত মিউজিয়ামের আলো নিভে গেল। কে যেন দুতলার সিড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে আসলো হঠাৎ! আবছা আলোতে দেখতে পেয়ে সাবিহা চিৎকার করে বলল, মাইকেল এল্ট্রো! তার কথা শুনেই ইন্সপেক্টর তার ক্যালিবার নাইন এমএম পিস্তল তাক করে বলল, হ্যান্ডস আপ! পালানোর চেষ্টাও করবে না! মাইকেল স্থির দাঁড়িয়ে থাকলো, তারপর বলল,
- ইন্সপেক্টর আকিব?
- তুমি, তুমি আমাকে চিনো? অবাক হলো ইন্সপেক্টর আকিব
- আমি চিনিনা এমন খুব কম মানুষই আছে। তবে আমি আপনাদের চিনি, কিন্তু আপনারা আমাকে চিনেন না। মজাটা তো ওখানেই!
- অনেক হয়ে গেছে এবার আত্মসমর্পণ করে নাও! ফারাবী বলল
- আত্মসমর্পণ করতে তো আসিনি।
কথার মাঝেই মাইকেল একটি বল ছুড়ে মারে সবার সামনে, মূহুর্তেই সাদা ধোঁয়া বল থেকে বেরিয়ে ঘিরে ফেলে সব। এদিক ওদিক পড়ে কাশতে শুরু করে সবাই। মাইকেল হো হো করে হেসে গিয়ে একে একে সব জুয়েলারি তার ব্যাগে ভরতে লাগলো। সবাই এখনো ধোঁয়ার কারণে কাশছে। জুয়েলারিগুলো ব্যাগে ভরে 'গুড বাই' বলেই খোলা জানালা দিয়ে বেরিয়ে গেল! এই থামো! বলতে বলতে জানালার ধারে গেল ফারাবী, তবে এখানে কেউ নেই। ধোঁয়াও সরে এসেছে, ইন্সপেক্টর আকিব ফারাবীর কাছে এসে বললেন, দেখেছেন তাকে?
- একটা মানুষ হুট করেই গায়েব হয়ে গেল কিভাবে তাই ভাবছি! ফারাবী বলল
- ফারাবী একটা বিষয় খেয়াল করেছো? সামজু বলল
- কি বিষয়? ফারাবী বলল
- ধোঁয়ার জন্য আমরা তাকাতেও পারছিলাম না অথচ মাইকেল সব চুরি করে নিয়ে গেল!
সাবিহার কথা শুনে খেয়াল হলো সবার। আসলেই এই ধোঁয়ায় মাইকেলের কিছু হয়নি। ফারাবী ভাহলো, চোর আসার সময় হলেই উইলিয়াম গায়েব হয়ে যায়, তবে আজ দুজন গিয়েও মি. ওসবর্ন এখনো ফিরে আসেননি। একটু ভেবে বলল, উইলিয়াম সাহেব পরবর্তীবার যখন আবার চুরির কথা বলবে তখন অবশ্যই আমাদের জানাবেন। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। খোলা জানালার দিকে চেয়ে অসহায় কন্ঠে বলল, আমি তো তাও জানিনা, কোন দিন এখন কিভাবে সে আসে!
পরদিন বিকেলে, মিউজিয়ামে এসে হাজির হয়েছে সবাই। উইলিয়ামের ইচ্ছে মিউজিয়ামটি তাদের পুনরায় ঘুরে দেখাবেন। তাই তাদের সবার অসময়ে এক হওয়া। উইলিয়াম তাদের একটি ঘড়ির ঘরে নিয়ে যান, যেখানে ঘড়ি আবিষ্কারের শুরু থেকে শেষ অবধি সজ্জিত। উইলিয়াম একটি ছোট ঘড়ির কাছে গেলেন। সেটা দেখিয়ে বললেন, এটা সেই প্রথম ঘড়ি যা প্রথম আবিষ্কার হয়েছিল। সাবিহা অন্য একটি ঘড়ির কাছে গিয়ে বলল, এটা কেমন ঘড়ি?
- এটাও আবিষ্কৃত তৃতীয় ঘড়ি। উইলিয়াম উত্তর দিলেন
- আচ্ছা উইলিয়াম হাসেব এই ঘরে কি একবারও চুরি হয়নি? ফারাবী জিজ্ঞেস করলো
- আপাতত না, তবে হতে আর কতক্ষণ! আসলে আমি তোমাদের নিয়ে এসেছি শুধু দেখানোর জন্যই নয়, বরং ঘরের সব ঠিক আছে কিনা তাও দেখছি। উইলিয়াম বললেন
- এখনো এখানে চুরি হয়নি শুনে অবাক লাগছে, পুরনো ঘড়িগুলোর দাম লাখের উপর হবে। আবিদ বলল
- এসো, তোমাদের পাশের তৈলচিত্রের ঘরে নিয়ে যাই।
তাদের সবাইকে তৈলচিত্রের ঘরে নিয়ে গেলেন উইলিয়াম, ঘরটির দেওয়াল জুড়ে হরেক রকমের ছবি। সজীব আশেপাশে কাকে যেন খুঁজতে লাগলো, তা দেখে ফারাবী জিজ্ঞেস করলো, কাকে খুঁজছিস?
- এই সানজুটা কই গেল?
- আরে হ্যাঁ, একটু আগেও তো সাথে! আবিদ বলল
- তোমরা শান্ত হও, আমি দেখছি।
উইলিয়াম তার পকেট থেকে একটি ডিভাইস বের করলেন। কিছুক্ষণ তা দেখে বললেন, সানজু আসছে, একটু পেচনে পড়ে গিয়েছিল। ঠিক তখনই ঘরে প্রবেশ করলো সানজু! ফারাবী কিছুটা অবাক হয়ে বলল, আপনি কিভাবে বুঝলেন সে আসছে? উইলিয়াম ডিভাইসটি তার হাতে দিয়ে বললেন, এটা এমন এক যন্ত্র যার মাধ্যমে নিজের সঙ্গে থাকা মানুষদের অবস্থান জানা যায়। তার কথা শুনে ডিভাইসটিতে চোখ বুলালো, বিভিন্ন রঙের ছয়টি বিন্দু দেখা যাচ্ছে যন্ত্রটির স্ক্রিনে।
- এইযে সাদা বিন্দুটি আমার অবস্থান, এবং লালটি তোমার। উইলিয়াম বললেন
- তার মানে, একটু ভালো করে খেয়াল করলে যা বুঝা যায়, নীলটি সাবিহা। সজীব হলুদ, আবিদ সবুজ এবং সানজু গোলাপী। ফারাবী বলল
- যন্ত্রটি বেশ কাজের। সানজু বলল
- হুম তা নাহলে তোমাকে খুজতে আমরা অন্য কোথাও চলে যেতাম, আর তুমি কেঁদে কেঁদে বেড়াতে।
বলেই হাসতে শুরু করলো সজীব, তার সঙ্গে হেসে উঠলো ফারাবী, সাবিহা, আবিদ ও উইলিয়াম।
কিছুদিন কোনো হুমকি আসলো না মাইকেলের কাছ থেকে। তবে আসতেও দেরি হলো না। মিউজিয়াম থেকে ফেরার পথে কথা বলতে বলতে একটি লিফটে উঠে ফারাবী ও সজীব। লিফটের দরজা লেগে যেতেই নিচে নামতে শুরু করলো লিফটটি। তারা কথা বলতে বলতে একসময় সজীবেরর চোখে পড়ে, লিফটের দরজার কোণে গুজে রাখা একটি ভাজ করা ছোট কাগজ।
- ফারাবী, ওটা কি? সজীব কাগজটি দেখালো
- কাগজ মনে হয়, এখানে কে কাগজ ঢুকিয়ে রাখবে! ফারাবী বলল
- দাঁড়া দেখছি।
সজীব কাগজটি নিয়ে ভাজ খুলল। ফারাবী কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
- কি লেখা?
- ‘আজ রাত বারোটায় মিউজিয়ামের সবচেয়ে দামি দুটোর মাঝে একটি চুরি করতে আসছি। আপনাদের প্রিয় চোর, মাইকেল এল্ট্রো।’
- এখানে চিঠি কেন দিল?
- প্রিয় চোর মানে কি!
- আজ রাতে আবার আসছে, চল সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে।
লিফট নিচে নামতেই তারা গিয়ে দেখা করলো উইলিয়াম ও মি. ওসবর্নের সঙ্গে। মি. ওসবর্ন তাদের ঢুকতে দেখে বললেন, আরে আপনারা! ভেতরে আসুন।
- দেখুন আমরা আমরা অযথা গল্প করতে আসিনি, এই চিঠিটা দেখুন।
কাগজটি এগিয়ে দিল ফারাবী। মি. ওসবর্ন তা পড়লো, তার চোখ বড় হয়ে ভ্রু কুচকে আসলো মূহুর্তেই। মি. ওসবর্নের এমন অবস্থা দেখে উইলিয়াম বললেন,
- কি লেখা এতে?
- ডিরেক্টর, আজ আবার চোরটা আসছে! মি. ওসবর্ন বললেন
- কি!
মূহুর্তেই উইলিয়াম উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। ফারাবী তাকে অভয় দিয়ে বলল,
- চিন্তা করবেন না উইলিয়াম সাহেব, কি চুরি করবে বলে আপনার মনে হয়? সজীব বলল
- একটা মূর্তি এবং ওয়েল পেন্টিং আছে যা মিউজিয়ামের সবচেয়ে দামী। উইলিয়াম বলল
- হুম, আপনি গতবার চুরির সময় যেভাবে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই ব্যবস্থা নিন। আমার কাছে একটা প্ল্যান আছে, যা আপনাদের বলা সম্ভব নয়।
- কেন? সবাই মিলে পরিকল্পনা মুতাবেক কাজ করা সহজ হবে। উইলিয়াম বলল
- এখন আমার সন্দেহে আপনারা দুজন আছেন! ফারাবী বলল
- কিহ!
বসা থেকে উঠে প্রায় চিৎকার করে কথাটি বলল উইলিয়াম। চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে গেল মূহুর্তেই, চুপ হয়ে গেল মি. ওসবর্ন ও সজীবও। ফারাবী ও উইলিয়াম চেয়ে রইল একে অপরের দিকে। হঠাৎ নীরবতা ভাঙলো ফারাবী। বলল,
- আপনাদের উপর সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে উইলিয়াম সাহেব। চুরি হওয়ার ঠিক পাঁচ মিনিট আগেই মি. ওসবর্ন সেখান থেকে কাজের অজুহাত দেখিয়ে চলে গিয়েছিলেন, এবং চুরি হওয়ার দু মিনিট আগে আপনি চলে গিয়েছিলেন মি. ওসবর্নকে নিয়ে আসার অজুহাতে।
- হ্যাঁ কিন্তু আমি তো আবার ফিরে এসেছিলাম না?
কথাটি বলেই মি. ওসবর্নের দিকে তাকালেন উইলিয়াম। ফারাবী তাদের দুজনের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
- হুম এসেছিলেন, তবে আমি ভাবছি যাওয়ার কথাটা।
- দেখো আমার মিউজিয়ামেই চুরি হচ্ছে, আর তুমি আমাকেই সন্দেহ করছো? উইলিয়াম বললেন
- উইলিয়াম সাহেব তদন্তের সময় আমি আমার বন্ধুদেরও সন্দেহ করতে পারি, তদন্তের সামনে কেউ আপন পর হয় না। সজীব চল।
সজীবকে নিয়ে সেখান থেকে ফারাবী দরজা লাগিয়ে চলে আসলো। অবাক দৃষ্টিতে দরজার দিকে চেয়ে উইলিয়াম ও মি. ওসবর্ন।
রাত ১১টা ৪০মিনিট। একটি গ্লাসের বাক্সের ভেতর রাখা মূর্তির আশপাশে কড়া নজরদারি চলছে, অপর দিকে ওয়েল পেন্টিংয়ের ঘরেও। সাবিহা, সানজু, সজীব ও আবিদ সবাই উপস্থিত, তবে ফারাবী নেই। কোথায় গিয়েছে তাও কাউকে জানায়নি সে। মূর্তির সামনে পায়চারি করছে উইলিয়াম। একটু চিন্তিত হয়েই বলল, মিউজিয়ামের সবচেয়ে দামী জিনিস! দামী বলতে কি এই মূর্তি, নাকি স্কটল্যান্ডে তৈরি বিশেষ ওয়েল পেন্টিং যেটা তিন নম্বর চিত্র ঘরে আছে। অর্থাৎ দ্যা স্পেশাল রোমান আর্মি। কোনটাকে নিয়ে যাবে!
হঠাৎ চিত্র ঘরের ঝার বাতিটি ভেঙে পড়লো, তীব্র শব্দের সাথেই বন্ধ হয়ে গেল মেইন সুইচ! অন্ধকারে ছেয়ে গেল সব। উইলিয়াম চিৎকার করে বলল, ও তিন নম্বর চির্ত ঘরে আছে, জলদি যাও। ধরে তাকে, কোথাও যেন পালাতে না পারে! তার নির্দেশে ছুটে গেল গার্ড ও পুলিশ, সঙ্গে সাবিহা, সানজু, সজীব ও আবিদ। মূহুর্তেই সমস্ত ঘর খালি হয়ে গেল। মূর্তির দিকে ঘুরে একটানে মুখোশ খুলে ফেলল উইলিয়াম, মূর্তির গ্লাস বক্সে উইলিয়ামের চেহারার বদলে ভেসে উঠেছে মাইকেল এল্ট্রোর চেহারা! হাসতে হাসতে হাত বাড়ালো মূর্তির দিকে। এমন সময় দুতলার বারান্দা থেকে কে যেন বলে উঠলো, থামো! থমকে গিয়ে মাইকেল বলল, কে ওখানে?! উপর থেকে হাসির শব্দ শোনা গেল, মাইকেলের দিকে ঘুরে ফারাবী বলল, এবার চুরি করতে পারবে না মি. মাইকেল!
মাইকেল কিছুক্ষণ তাকিয়েই দৌড়ে গেল পাশের ঘরের দিকে। ফারাবী 'এই থামো' বলেই নিচে নেমে তার পিছু নেয়। পাশের ঘরে গিয়ে দেখে কেউ নেই। ফারাবী কিছুটা অবাক হলো। এমন সময় বাকিদের ডাক শুনে পেছন ফিরলো ফারাবী।
- কিরে তোরা? ফারাবী বলল
- তুই কোথায় ছিলি তাই বল? আবিদ বলল
- এখানেই ছিলাম, কাউকে বলিনি। বরং উইলিয়াম সাহেব আপনি কোথায় ছিলেন তাই বলুন। ফারাবী উত্তর দিল
- আমি তো ওসবর্নের সঙ্গে ছিলাম। উইলিয়াম বললেন
- মি. ওসবর্ন কোথায়? ফারাবী বলল
- সে তো বাড়ি চলে গেছে। উইলিয়াম বললেন
- মাইকেল তো চিত্র ঘরেও নেই, মূর্তিটিও অক্ষত আছে। চুরি করলোটা কি! সাবিহা বলল
- করতে পারেনি, উইলিয়াম সাহেবের রূপে এখানেই ছিল। ফারাবী বলল
- মানে! এখন কোথায়? উইলিয়াম বললেন
ফারাবী আবছা অন্ধকার ঘরটির দিকে আঙুল দিয়ে দেখালো। জানালা দিয়ে প্রবেশ করা হালকা চাঁদের আলোয় ঘরটি কিছুটা আলোকিত।
ঘরের ভেতর প্রবেশ করলো তারা, সঙ্গে ইন্সপেক্টর আকিব। সানজু কিছুটা বিরক্তির ভাব নিয়েই বলল, এই ঘরটা এমন অন্ধকার কেন? কোনো লাইট নেই? উইলিয়াম হাঁটতে হাঁটতে উত্তর দিল, আসলে এখানের সুইচে সমস্যা, তাই ঠিক করাবো বলে ঘরটি বন্ধ রেখেছিলাম। জানিনা কিভাবে খুলে গেল।
- ভূতে খুলেছে আর কি। সজীব বলল
- উফ সজীব, এমন জায়গায় ভূতের নাম নিবে না। সানজু বলল
- কেন ভয় লাগে নাকি? সজীব বলল
- না, এমনি।
- ভেবে দেখো, এখন যদি একটা ভূত এসে... .
সজীবকে কথাটি শেষ করতে না দিয়েই উইলিয়াম বললেন, আহা, মেয়ে মানুষ এভাবে ভয় দেখাচ্ছো কেন? ঝগড়া না করে এগোতে থাকো। বলেই সবাইকে নিয়ে এগিয়ে গেলেন উইলিয়াম। হঠাৎ তার পকেট থেকে লোকেশন ডিভাইসটি পড়ে গেল, ফারাবঈ সবার পেছনে ছিল বলে তার চোখে পড়লো বিষয়টা। ডিভাইসটি তুলে উইলিয়ামের দিকে যেতেই দুতলার বারান্দা থেকে লাফিয়ে সবার পথ আটকে ফেলল মাইকেল! হঠাৎ এমন ঘটনায় চমকে উঠলো সবাই, ইন্সপেক্টর আকিব পিস্তল তাক করে বললেন,
- হাত উপরে!
- যদি না তুলি? মাইকেল বলল
- নয়তো গুলি চালাতে বাধ্য হবো। ইন্সপেক্টর আকিব বলল
- দেখুন অফিসার, আপনাকে এ্যারেস্ট করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, গুলি করার নয়। যদি নিজে ফাঁসতে চান তাহলে গুলি করুন।
মাইকেলের কথা শুনে ভড়কে গেল ইন্সপেক্টর আকিব। সাবিহা প্রায় চিৎকার করেই বলল, কি চাও তুমি? মাইকেল বলল, সানজুর গলার ওই চেইনটা! কথাটি শুনে অবাক হলো সবাই। সানজু ঘাবড়ে গিয়ে বলল,
- চেইন?
- হ্যাঁ। দেখো আজ তোমাদের ফারাবী গোয়েন্দা মশায়ের কারণে চুরি করতে পারিনি, একদম তেলাপোকার মতো লুকিয়ে ছিল। চুরির হুমকি দেওয়ার পর চুরি না করলে আমার খাবার হজম হয়না। যদিও সানজুর গলার হার ওটা ওত দামীও নয়, তবুও আমার খাবার হজম করতে হবে!
বলেই হো হো করে হেসে উঠলো মাইকেল। ফারাবী কি মনে করে যেন তাকালো তার হাতে থাকা লোকেশন ডিভাইসটির দিকে। তাকিয়েই সে চমকে উঠলো, ভ্রু কুচকে চোখ তুলে তাকালো মাইকেলের দিকে।নিচু স্বরে বলল, মাইকেল! এখন আমি জানি, আসলে কে তুমি! ফারাবীর কথা শুনেই মাইকেলের হাসি বন্ধ হয়ে গেল। অবাক হয়ে ফারাবীর দিকে পেছন ফিরে তাকালো সবাই। ফারাবী পুনরায় বলল, হ্যাঁ, এবার আমি সত্যটা জেনে গিয়েছি। যে এই সব দামী দামী জিনিস চুরি করে বেড়ায় সে হলো.. ..
- হ্যাঁ সে হলো মি. ওসবর্ন! ফারাবীকে থামিয়ে চেচিয়ে উঠলো আবিদ।
- না, তুই ভুল বলছিস। ফারাবী বলল
- আরে কি বলছিস? এটা মি. ওসবর্ন! সজীব বলল
- হ্যাঁ সেদিন চুরির আগে মি. ওসবর্ন কোথাও গিয়েছিল। আবিদ বলল
- না, এই চোর হলো আমার ডিরেক্টর, উইলিয়াম সাহেব!
- কি!
ফারাবীর মুখে এই কথা শুনে অবাক হলো সবাই। সানজু বলল, কিন্তু উইলিয়াম সাহেব তো এখানেই আছেন?
- এ উইলিয়াম সাহেব নন। যখন চোর আসে তখন উইলিয়াম সাহেবের কথা অনুযায়ী তিনি চিত্র ঘরে ছিলেন, তবে মি.ওসবর্ন আমায় বলেছিলেন উইলিয়াম সাহেব থাকবেন এই ঘরেই। ফারাবী বলল
- বুঝতে পারছি না ভাই, কি বলছিস? সজীব বলল
- এই ডিভাইসটিকে ভালো ভাবে দেখো সবাই।
এই বলে লোকেশন ডিভাইসটি তুলে ধরে ফারাবী বলল, এখানে লাল বিন্দুটি আমি, নীলটি সাবিহা, হলুদটি সজীব, সবুজ আবিদ। এবং নতুন বেগুনি বিন্দুটি হলো ইন্সপেক্টর আকিব। তবে সাদাটি কে মনে আছে? সেটা উইলিয়াম সাহেব, আর তার অবস্থান দেখো? আমাদের সামনে যিনি উইলিয়াম সেজে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি হলেন এই কালো বিন্দুটি। অর্থাৎ তিনি উইলিয়াম নন বরং মাইকেলই উইলিয়াম!
ফারাবীর এমন কথায় চমকে গেল মাইকেলও। ইন্সপেক্টর আকিব অবাক হয়ে বললেন, তাহলে, উইলিয়াম কে?
- সবকিছুর উত্তর এই ডুবলিকেট উইলিয়ামই আমাদের দিবে। বলো কে তুমি?!
এই বলেই একটানে তার মুখোশ খুলে নিল ফারাবী। চেহারা দেখে সবার চোখ যেন কপালে, উইলিয়ামের চেহারার মুখোশ সরে যেতেই বেরিয়ে এসেছে মি.ওসবর্নের চেহারা!
- মি. ওসবর্ন! সাবিহা অবাক হয়ে বলল
- তার মানে, উইলিয়াম সাহেবই মাইকেল এল্ট্রো! সানজু বলল
- উইলিয়াম সাহেব, কেন করলেন আপনি এগুলো? মাইকেলের উদ্দেশে বলল ফারাবী
- আমি আসলে উইলিয়াম নই! মাইকেল বলল
- উইলিয়াম সাহেব আমরা আপনাকে সম্মান করতাম, প্লিজ বলুন কে করেছেন!
ফারাবীর কথায় মাইকেল অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে রইল, ধীরে ধীরে মুখোশটি খুলে ফেলে দিল নিচে। বেরিয়ে আসা উইলিয়ামের চেহারার দিকে সবাই চেয়ে রইল সবাই। উইলিয়াম বলতে শুরু করলেন,
'আমি তখন মিউজিয়ামটি খুলেছি প্রায় বিশ বছর, বিভিন্ন দামী জিনিস দেখে লোভ সামলাতে পারিনি। তবে আমার টাকা কম ছিল তাও নয়। তবুও, আলাদা একটি লোভ হয়ে পড়ে মাইকেল এল্ট্রোর চুরির কৌশলগুলো শুনে। আমি তার মতোই পোষাক তৈরি করলাম, সাথে মুখোশও। তার কৌশল মতো চুরির আগেই চিঠি দিতাম, এবং বারোটা বাজলেই মেইন সুইচ অফ করে সবার মাঝে থেকেই জিনিসটি সরিয়ে নিতাম। মুখোশ থাকতো বলে কেউ টের পেত না। জিনিসগুলো বিক্রি করে ভেবেছিলাম আরো কোটি পতি হবো। তবে কোথা থেকে তোমরা এসে আমার সব পরিকল্পনা নষ্ট করে ছাড়লে!
বলেই হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছলো উইলিয়াম, ইন্সপেক্টর আকিব ইতিমধ্যেই কন্সটেবলদের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে চিত্র ঘরে পৌঁছাতে বলেছে।ফারাবী কয়েক পা এগিয়ে বলল, অর্থাৎ মি. ওসবর্ন আপনাকে এসব কাজেও সাহায্য করতো?
- হ্যাঁ, চুরির সময় ওসবর্ন আমার চেহারা দ্বারা তৈরি মুখোশ পড়ে থাকতো। এবং আমি থাকতাম মাইকেল এল্ট্রোর রূপে। উইলিয়াম উত্তর দিলেন
- তবে আপনি বন্ধ ঘরেও চুরি করতেন কিভাবে? সানজু বলল
- মাইকেল এল্ট্রো এক ধরণের চাবি তৈরি করেছিল, যার মাধ্যমে যেকোনো তালা নিমিষেই খোলা সম্ভব। সেটা আমিও তৈরি করেছিলাম।
উইলিয়াম তার পকেট থেকে একটি চাবি বের করে দেখালেন। সরু ও চিকন একটি চাবি। এমন সময় ঘরে এসে প্রবেশ করলো তিনজন পুলিশ কন্সটেবল। ইন্সপেক্টর আকিব তাদের উইলিয়াম ও মি. ওসবর্নকে গ্রেফতার করার হুকুম দেয়। গ্রেফতার করা হয় দুজনকে। সবার সামনে দিয়ে তাদের নিয়ে যায় পুলিশ। অবাক হয়ে দরজার দিকে চেয়ে থাকে ফারাবী, সাবিহা, সানজু, সজীব ও আবিদ।
পরদিন, সাফিওকে বিদায় দিতে উপস্থিত হয়েছে অনেকে। গাড়িও অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। মি. উইল এগিয়ে ফারাবীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে বললেন, তোমাদের ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। অনেক সাহায্য করেছো আমাদের।
- এটা আমাদের ডিউটি ছিল মি. উইল। মুচকি হাসলো ফারাবী
- কিন্তু মিউজিয়ামটির কি হবে? সাবিহা বলল
- এটা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ইন্সপেক্টর আকিব বললেন
- অর্থাৎ আসল মাইকেল এল্ট্রোর কয়েন চুরির কারণে যেভাবে মিউজিয়াম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, ঠিক সেভাবে! সজীব বলল
- উইলিয়াম চোর হতে পারে কিন্তু মানুষ খারাপ নন, সানজুকে তিনিই খুঁজে বের করেছিলেন। আবিদ বলল
- আমি নিজেই আসতে পারতাম হুহ! সানজু বলল
- যাই হোক অবশেষে নিজের ডিবাইসের কারণেই সে ধরা পড়লো।
ফারাবীর কথা শুনে হেসে উঠলো সানজু, হেসে উঠলো উপস্থিত সবাই।
বাস ছেড়ে দিয়েছে। হাত নেড়ে বিদা। জানাচ্ছে সবাই। দেখতে দেখতেই ইমুলু টাউন পেছনে কোথাও হারিয়ে গেল। থেকে গেল শুধু সরু রাস্তা, দুপাশের সারি সারি গাছগাছালি। কেউ জানেনা, সাফিওর দ্বিতীয় কেস কতটা ভয়ানক ও রহস্যময় হতে পারে।
_______________সমাপ্ত_______________
লিখাঃ ফারহান আহমেদ ফারাবী